বিপ্লব রহমান ভালোমানুষ। কারো সাতে নেই, শুধু পাঁচে থাকেন।
আমরা গল্পের খাতিরে ধরে নিলাম, বিপ্লব রহমান থাকেন শান্তিনগরে, পাঁচতলা বাড়ির দুই কামরার চিলেকোঠায়। একা মানুষ, এখনো বিয়েশাদী করেননি, বিয়ে করলে বাসা পাল্টে মিরপুরে চলে যাবেন ঠিক করেছেন। মাঝে মাঝে নিজেই রান্না করে খান, মাঝে মাঝে হোটেলে খেয়ে বাবুর্চিকে বকাবকি করেন।
একদিন রাতে অফিস থেকে ফিরে বিপ্লব দেখলেন, তাঁর ঘরের দরজায় পেরেক দিয়ে গাঁথা একটি চিঠি। কিমাশ্চর্যম ভেবে তিনি চিঠিটা খুলে পাঠ করেন। পড়ে তাঁর মুখে খুশির হাসি ফুটে ওঠে। যা ভাবেননি তা-ই। প্রেমপত্র।
কোন এক নারী লিখেছে, সে বিপ্লব রহমানকে ঘটনাচক্রে কয়েকবার দেখেছে। তাঁর চেহারা অবয়ব আর স্বভাবচরিত্র দেখে বিপ্লব রহমানের প্রেমে পতিতা না হয়ে সে পারেনি। বিপ্লব রহমান কি এই অভাগিনীর প্রেমের স্বীকৃতি দান করে তাকে ধন্য করতে পারেন?
বিপ্লব রহমান ঘরে ঢুকে প্যান্ট পাল্টে লুঙ্গি পরেন। আজকে হোটেলে রুই মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে বাবুর্চিকে বকাবকি করেছেন। তিনি বিছানায় বসে টিভি ছেড়ে দিয়ে চিঠিটা আবার পড়েন। কী শৈলী ভাষায়! মাঝে আবার রবি ঠাকুরের কবিতা কোট করা আছে।
বিপ্লব রহমান ঠিক করেন, এ চিঠির একটা উত্তর তিনি লিখবেন। কিন্তু পাঠাবেন কোন ঠিকানায়? এ প্রশ্নের উত্তর ভেবে না পেয়ে তিনি ক্ষুণ্ন মনে ঘুমিয়ে পড়েন।
পরদিন অফিসে গিয়ে বিপ্লব রহমান চুপিচুপি কথাটা অমি রহমান পিয়ালকে খুলে বলেন। অমি রহমান পিয়াল খুব ঘাগু লোক, ব্যাপারটার একটা ক্যামনে কী সমাধান দিতে পারঙ্গম বলেই মনে হয়। কিন্তু অমি রহমান পিয়াল সম্প্রতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ, তাই বিপ্লব রহমানের উত্তেজিত বয়ান শুনে ঢুলুঢুলু নয়নে তাকিয়ে তিনি শুধু শোনেন, কোন সমাধান বলেন না।
বাধ্য হয়ে বিপ্লব রহমান বলেন, কাউকে বলবেন না কিন্তু!
অমি রহমান পিয়াল বলেন, ঠিকাছে।
বিপ্লব রহমান সেদিন পা টিপে টিপে বাড়ি ফেরেন। জুতো খুলে হাতে নিয়ে নিঃশব্দে সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন, তারপর অতর্কিতে কমান্ডো ইশটাইলে ডিগবাজি দিয়ে গড়িয়ে ঢোকেন ছাদে, যেন তাঁর দরজায় পেরেক গাঁথার কাজে রত সেই ললনাকে তিনি হাতে নাতে গেরেফতার করবেন। কিন্তু হা হতোস্মি, তাঁর দরজায় শুধুই চাঁদের আলো। আর আরেকটা চিঠি।
বিপ্লব রহমান চিঠিটা খুলে নিয়ে ঘরে ঢোকেন। আজকের চিঠির বক্তব্য অভিমানে ভরা। চিঠির জবাব না পেয়ে দুঃখে কাতর। আজকে কোট করা হয়েছে মৈমনসিংহ গীতিকা মলুয়া থেকে। চিঠি পাঠ করে বিপ্লব রহমান চোখ মোছেন। বেড়ে লিখেছে।
চিঠির লেখিকা জানিয়েছে, বিপ্লব রহমান যাতে নিজের দরজায় পেরেক গেঁথে জবাব দিয়ে যান।
বিপ্লব রহমান সমাধান খুঁজে পান। তিনি আলমারি থেকে গোলাপি সুগন্ধী প্যাড খুঁজে বার করেন। ঘাবড়ানোর কিছু নেই, চিঠি লেখার প্যাড।
তারপর তিনি লিখতে বসে যান।
একদিন পর অমি রহমান পিয়াল অফিসে বসে লাঞ্চের ফাঁকে কার সাথে যেন হাসিমুখে টেলিফোনে খুব বিড়বিড় আলাপ করছিলেন, এমন সময় উসকোখুসকো বিপ্লব রহমান তাঁর কাছে এসে হাজির হলেন। অমি রহমান পিয়াল ভ্রুকুটি হেনে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তিনি এখন ব্যস্ত, বিপ্লব রহমান যাতে পরে আসে, কিন্তু বিপ্লব রহমান ইশারাইঙ্গিতের অর্থ অনুধাবনে তেমন পারঙ্গম নন, তিনি হাউমাউ করে উঠলেন। অগত্যা ফোনে বিদায় নিয়ে অমি রহমান পিয়ালকে বিপ্লব রহমানের মুখোমুখি হতে হয়।
বিপ্লব রহমান বলেন, "মিরপুরে আপনার চেনাজানা কোন বাড়িঅলা আছে?"
অমি রহমান পিয়াল হাসিমুখে বলেন, "কংগ্রাটস, কবে বিয়া করলেন ভাই? দাওয়াত দিলেন না? আমি আপনারে দাওয়াত দেই নাই বইলা কি আপনিও আমারে দাওয়াত দিবেন না? এইটা একটা কথা? এইটা একটা কাম?"
বিপ্লব রহমান বলেন, "কী আপদ, বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃখে! বাসা খুঁজি। শান্তিনগরে আর থাকা যাবে না।"
অমি রহমান পিয়াল এবার বিপ্লব রহমানকে ভালো করে জেরা করেন। তাতে যা কাহিনী বেরিয়ে আসে, তা হচ্ছে, প্রেমপত্রের জবাব নিজের দরজায় গেঁথে গতকাল সকালে বিপ্লব রহমান বেরিয়ে এসেছিলেন। সারাদিন অফিস শেষে আড্ডাগুড্ডা মেরে খেয়েদেয়ে তৃপ্ত মুখে ঘরে ফিরে দেখেন, বাড়িওয়ালি একটা বটি হাতে দাঁড়িয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। আশঙ্কায় তিনি কুঁকড়ে যান। বাড়িওয়ালি পাড়া মাথায় তুলে তাঁকে গালমন্দ করেন, তাঁর ননদের প্রতি অশালীন ইঙ্গিত করার অভিযোগ আনেন। বিপ্লব রহমান আকাশ থেকে পতিত হন। কিন্তু বাড়িওয়ালির ঘোর কৃষ্ণাঙ্গিনী ব্যায়ামপুষ্টা ননদটি একটি গোলাপি চিঠি হাতে গুটিগুটি পায়ে অকুস্থলে হাজির হয়। সে জানায়, বিপ্লব রহমান তাকে এই চিঠি স্বহস্তে দিয়েছেন নাকি। হাতের লেখা তুলনা করলেই এর সত্যতা যাচাই করা যাবে, সে জানায়। বিপ্লব রহমান বোঝানোর চেষ্টা করেন, একটা বিরাট ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, কিন্তু বাড়িওয়ালি তিলেকমাত্র কালবিলম্ব না করে বটি হাতে তাঁকে সামুরাই আক্রমণ করে বসে। প্রাণ হাতে নিয়ে বিপ্লব রহমান বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।
অমি রহমান পিয়াল বিরক্ত হয়ে বলেন, "চিঠিতে কী লিখছিলেন?"
বিপ্লব রহমান অসহায় মুখে বলেন, "সবসময় যা লিখি।"
অমি রহমান পিয়াল বলেন, "কী লিখেন সবসময়?"
বিপ্লব রহমান বলেন, "আপনাকে ৫ দিলাম!"
[সমাপ্ত]
মন্তব্য
আসুক আসুক। অপেক্ষাইতাছি।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
বেশি দেরি কইরেন না।
লোহা গরম থাকতেই বাড়ি দিতে হয়।
------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
বেশি দেরি কইরেন না।
লোহা গরম থাকতেই বাড়ি দিতে হয়।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
আইত্তার!!!!!! ক্যামনে কি?????????????
..................................
তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
আপনার জন্য ৫!
(বিপ্লবী কমেন্ট)
আপনের দেখি ভালো বিপ্লবোফিলিয়া হয়েছে!
------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
বিপ্লব রহমান নিরীহ লোক। লেখক ভাই ওনাকে বেশী কষ্ট দিয়েন না।
কিন্তু কষ্ট কম বেশি যাই হোক। ব্রেক তো বেশি লম্বা হয়ে যাচ্ছে।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
রহস্য সিরিজ পিয়ালীর বিয়ের কেইসটা আবার তাওয়ায় সেঁকা লাগবে মনে হচ্ছে। সন্দেহের তালিকায় এপিল্ড লোকজন প্রকাশ্য দিবালোকে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বিপ্রব রহমান এর পরে কী করিল@হিমু?
ব্রেক তো বিটিভির মতো হইয়া যাইতাচে।
ব্রেক এতো লম্বা হইলো যে আগে কি হইছিল সেই কাহিনী ভুইলা গেলাম।!
বিপ্লব রহমান ওরফে পাঁচু কে এই মিথ্যা গল্প সত্যি সত্যিই পড়ানো দরকার
--------------------------
আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
"ছুঁয়ে গেল, আপনাকে আমি ৫ দিলাম!"
(বিপ্লবী কমেন্ট ২)
************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
পাঁচু ভাই এইটা পড়লে মনে মনে হিমুকে হিমায়িত করার ব্যবস্থা করিবে।
আর গল্পের বিষয়ে কি বলিব? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ....
পাঁচুদার মতো নিরীহ লোককে পঁচানোর কোন ইচ্ছা আমার ছিলো না। কিন্তু ... পাঁচজনের পাঁচকথায় একটা কী যেন ঘটে গেলো আর কি ...।
হাঁটুপানির জলদস্যু
তারপর?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
পাঞ্চালি নিয়ে এরকম পেজগি লাগানো ঠিক না। এটা সামহোয়ারে দিয়ে আসেন।
-----------------------------------------------
গাধারে সাবান দিয়া গোসল দেয়ানোটা গাধাপ্রীতির উজ্জ্বল নমুনা হতে পারে; তবে ফলাফল পূর্বেই অনুমান করা সম্ভব, গাধার চামড়ার ক্ষতি আর সাবানের অপচয়।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
হিমু তোমার অনেক লেখা বাকি পড়ে আছে কিন্তু।
5
আপনাকে ৫ দিলাম @ হিমু
হাসতেই আছি হা হা!
(বিপ্লব)
---
কৈফিয়ৎ: কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এই মজার লেখাটি আমার আগে পড়া হয়নি। আজ প্রিয় ব্লগার হিমু দার ব্লগ ঘাঁটতে গিয়ে লেখাটি পড়লাম (হুমম, নিজের নিরীহপনার জন্য এখন নিজেকেই ৫ দিতে ইচ্ছে করছে ) ।...
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন