ভূতের গুল্প ০১

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ০১/০৮/২০০৭ - ১২:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

খুব বিষ্টি পড়ছে তো?

পড়ছে।

কারেন্টও চলে গেছে?

গেছেই তো।

ঠান্ডা ভেজা বাতাস চালিয়েছে না?

আবার জিগস!

অ্যাই, এসব আবার কী কথা?

এসবই তো আমরা বলি রে বুড়ো!

বুড়ো? আমি বুড়ো? ষাট বছর বয়সে কেউ বুড়ো হয়?

হয় তো।

যা ফোট। তোদের দাদাবাড়ির লোকের মতো দুবলা না আমি। এখনও সতেজ, নবীন। একটু পেকেছি আর কি। এখনও গেন্ডারি ছুলে খাই দাঁত দিয়ে। এই দ্যাখ কি থোকা থোকা মাসল, গেঞ্জি পরে বারান্দায় দাঁড়ালে তোদের পাশের বাড়ির মেয়েরা বারান্দায় এসে গুলুগুলু চোখ করে তাকিয়ে থাকবে, হুঁ ...।

গেঞ্জি নাই তোমার?

শাহালোমের মা ধুতে দিয়েছে বোধহয় ... যাকগে, মুড়ি হলে ভালো হতো।

এখন অন্ধকার, মুড়ি বানানো যাবে না।

মুড়ি বানানো না গেলেও মাখানো তো যাবে!

ওটাকেই বানানো বলি আমরা।

ক্যানো ঘরে কি মোম্বাতি নাই?

মুড়ি ছাড়াই বলো।

কী?

গল্প।

গল্প আবার কোত্থেকে এলো? হচ্ছিলো মুড়ির কথা।

বিষ্টি হচ্ছে, কারেন্নাই, ভেজা বাতাস, খ্যাতামুড়ি দিয়ে এখন সবাই গল্প শুনবো।

তাহলে তো মুড়ি ফরজ।

বুলি তুই বানিয়ে নিয়ে আয় তো এই বকাবাজ বুড়োটার জন্য।

আই বেগ ইয়োর পার্ডন?

আই বেগ ইয়োর পার্ডন?

কোন মাপ নাই কারো। বুড়োটার মুড়ি বুলি বানাবে।

তাহলে আমি না আসা পর্যন্ত কোন গল্প হবে না।

কবুল।

রাজি।

আমিও।

২.

মুড়ি বানানো খারাপ হয়নি। যদিও চানাচুরটা মন খারাপ করে আছে, আচারের তেলটাতে ঝাঁঝ কম, পেঁয়াজগুলোও বোকাটে মার্কা ... এটা কী, য়্যাঁ?

গরুর মাংসের কুচি।

বলিস কী? মুড়িতে মাংস খাওয়া শুরু করে দিয়েছিস নাকি? নানীর মতো মোটা হয়ে যাবি তো!

ব্যাম করি দাদু, ব্যাম করি।

অ। বা, বেশ। ভালো মুড়ি।

এবার গল্প বলো।

হে হে হে, আমি বকবো তোরা খাবি তা কি হয়?

খাবো না। আমরা শুনবো। আমাদের অতো মুড়ির বায়না নাই।

আহহা, গুড গুড। আমি একাই খাই।

শুরু করো।

কীসের গল্প শুনবি? শিকারের?

তুমি শিকার করেছো?

আরে না, ছিহ। অকারণে প্রাণীহত্যা মহাপাপ।

নানী যে ঐদিন বললো তোমার বন্দুকের টিপ নাকি খুব ভালো ছিলো?

ছিলো কেন? আজও আছে। কিন্তু শিকারফিকার করিনি। গুলি করেছি দরকারে।

বলো কী!

হুঁ। জানোয়ার মেরেছি কয়েকটা ... যাই হোক, সে অন্য গল্প। তাহলে কীসের গল্প শুনবি?

ভূতের।

হুমম। শেষ মেশ ভূত? এই ২০০৭ সালে এসে?

হ্যাঁ।

আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু গল্পের মাঝে কোন প্রশ্ন করা চলবে না। প্রশ্নোত্তর সেশন চলবে গল্পের পর, ঠিকাছে?

ঠিকাছে।

৩.

আমার বন্ধু বদরুলই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো হাসমতের সাথে। বলে, এই হচ্ছে হাসমত, মহা অলস। অন্যদের খাটিয়ে মারে।

বদরুল কে?

অ্যায় তো! অ্যায় তো! জানতাম আমি, গল্পের মধ্যে প্রশ্ন করবি। যাহ, তারচে মুড়িটা আরাম করে চিবাই ...।

না না না না, আর প্রশ্ন করবো না।

ঠিক্তো?

হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক্তো।

আচ্ছা ... বলি।

...

৪.

বদরুল আমার খুব ভালো একজন বন্ধু। মাথায় কিছু সমস্যা ছিলো, তাই বন্ধুত্ব টিকে গেছে। গল্প বলতে গেলেই বদরুল চলে আসে গল্পে। যাই হোক, বদরুল বেছে বেছে বিদঘুটে লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হয়, তাই হাসমতকে বেশি পাত্তা দিলাম না আমি। লোকটা বাঁশের মতো সরু, কিন্তু হাতে মোষের মতো জোর, করমর্দন করতে গিয়ে সে আমার হাতটা প্রায় ভর্তা বানিয়ে ফ্যালো আর কি।

জানলাম, বদরুল ব্যবসা করে নানারকম। আপাতত সে কাঠের ব্যবসা করছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বদরুল নাকি কোথায় কার সঙ্গে কী এক পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে হাসমতের দেখা পেয়েছে, খুব খাতির হয়ে গেছে তার সাথে।

আমি বললাম, অন্যকে খাটিয়ে মারে মানে?

হাসমত হাসিমুখে বললো, দেখুন সর্দার সাহেব, আপনার বন্ধুর কথার ছিরিটা দেখুন, খালি পদে পদে খোঁটা দেন।

বদরুল কিন্তু কথা ফেরায় না। বলে, উঁহু, আমাকে চাটগাঁ থেকে ঢাকা গোটা রাস্তা গাড়ি চালাতে হয়েছে বলে বলছি না, আমি দেখেছি, হাসমত সাহেব তাঁর লোকদের রীতিমতো ঘাম ছুটিয়ে ছাড়েন।

হাসমত হাসে, একেবারে হায়েনার হাসি যাকে বলে। হাসি শেষে বলে, আমরা খেটে খাওয়া লোক বদরুল সাহেব, নিজে খাটি বলেই অন্যকে খাটাই।

বদরুল বলে, এই খাটাখাটনি উপলক্ষে তাহলে হবেনাকি একটু বোতলসেবন?

ছি দাদু, তুমি মদ খেতে?

নাহ। তবে বদরুল খেতো। আমাকে সাধাসাধি করতে করতেই সিকি বোতল খেয়ে ফেলতো।

হুম।

গল্পের মাঝখানে প্রশ্ন করলে কী শাস্তি তা জানিস?

চা বানিয়ে আনা।

গুড! ভেরি গুড!

মিলি তুই বানাবি চা, আমি মুড়ি মাখিয়ে এনেছি।

আই বেগ ইয়োর পার্ডন?

কোন মাপ নেই, আমার চা মিলিকেই বানাতে হবে।

তাহলে আমি না আসা পর্যন্ত গল্প সামনে বাড়বে না।

তথাস্তু।

৫.

চা বেশ ভালো হয়েছে।

ধন্যবাদ। এবার আবার শুরু হোক।

হুমমম। কী বলছিলাম? ওহ। তো সেদিন বদরুলের বাড়িতে আমি আর বদরুলের খানসামা মতি ছাড়া সবাই মাতাল হয়ে গেলো।

আর কে ছিলো ওখানে?

বদরুল আর হাসমত।

ওহ।

তারা দু'জনে মিলেই পাঁচজনের সমান মাতাল হয়ে গেলো। বদরুল মাতাল হলে চমৎকার গান ধরে। ওর গলা খুবই সুরেলা ছিলো, কিন্তু কথাগুলি উল্টাপাল্টা হয়ে যেতো আর কি। হাসমতও তার হায়েনার গলায় একটা গান ধরলো, পাতলা কোমর ত্যারছা নজর ...।

বলো কী? তখনও ছিলো এসব?

এসব আজীবন থাকবে। যাই হোক, গল্পের মধ্যে বকাবি না। আমি দুই মাতালের কান্ড দেখতে দেখতে কাবাব খাচ্ছিলাম। তো, মাতাল বদরুল মাতাল হাসমতকে জিজ্ঞেস করলো, হাসমত সাহেব, আপনি এতো টাকাপয়সা কিভাবে বানালেন বলুন তো? চোরাকারবার করেন না তো? মাতাল হাসমত বললো, আরে বদরুল সাহেব, চোরাকারবার না করে কেউ পয়সা বানাতে পারে আজকাল?

এটা কোন সময়ের কথা?

ঊনিশশো তিরাশি ... বা চুরাশি। তো, আমি বললাম, কীসের চোরাকারবার করেন আপনি?

হাসমত সোফায় আধশোয়া হয়ে বলে কী, মদ পিলিয়ে পেটের গোপন কথা বার করে নিচ্ছেন? বলবো না। কিছুতেই বলবো না যে আমি সোনা চোরাচালান করি।

আমি বেশ মজা পেলাম। বদরুল হতভাগাটা বলে কি, সেদিন যে আমাকে সারাটা রাস্তা ধরে গাড়ি চালাতে হলো বদরুল সাহেব, কাজটা কি ঠিক হলো? সোনার কারবার করেন, আর একটা ড্রাইভার রাখতে পারেন না?

হাসমত মজা পেয়ে গেলো। বলে, আমার নাম তো বদরুল নয়। আপনি মাতাল হয়ে কী আজেবাজে বকছেন? এই বলে কী হ্যা হ্যা করে হাসি তার। বদরুলটাও মাতালের হাসি দিতে লাগলো দাঁত কেলিয়ে।

হাসমত সোফায় আরো কাত হয়ে শুয়ে বললো, কী করবো বদরুল ভাই, আমার ড্রাইভার টেকে না।

বদরুল বললো, টিকবে কেন? ওরকম খাটিয়ে মারলে ড্রাইভার টেকে নাকি?

হাসমত জড়ানো গলায় বলে, না না না, আমি ভালো ড্রাইভারের খুব কদর করি। কিন্তু ওরা ভয় পায়। নোকরি ছেড়ে ভাগে।

আমি বলি, কীসের ভয়?

হাসমত বলে, ভূতের।

(চলবে ... একটু রয়েসয়ে আর কি ...)


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বাকিটা কই?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

শ...শ...শ... গল্পের মধ্যে প্রশ্ন করতে মানা আছে। গল্প ঘুমিয়ে পড়লেও না! দেঁতো হাসি

rajputro এর ছবি

Muri khan

কেমিকেল আলী এর ছবি

বাকি অংশ চাই জলদি জলদি

ধুসর গোধূলি এর ছবি
এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেস্ট

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেস্ট ২
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি
তারেক এর ছবি

বাকি অংশ নাযিলের অপেক্ষা...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

অতিথি এর ছবি

সাবলীল শুরু। চলুক।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হিমুর ঘটনা কি? এক একটা সিরিজ ধরো । শেষ না করেই আরেকটা ।

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

একমত। যতোগুলো সিরিজ শুরু হয়েছে, এগুলো সামলাতে অনেক জোড়া হাত-পা লাগবে। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সৌরভ এর ছবি

বাকিটা ভৌতিক।
সবাই পড়তে পারবেনা।
আমি পারছি।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আরিফ জেবতিক এর ছবি

খুব সুন্দর গল্প।লেখার আগেই মুগ্ধ হইয়া পইড়া ফালাইছি।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

অতিথি এর ছবি

এইটাও বুঝলেন না?? ছোটগল্পের কারেক্টার আর হিমুর কারেক্টার মিলে কারেন্ট যাওয়ার মতো লোডশেডিং হইছে :)।
ভাল্লাছে।

ঝরাপাতা এর ছবি

গল্পের মাঝে প্রশ্ন করা যাবে না। তাই কর্লাম না।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।