আমি দীর্ঘসময় প্রথম প্রজাতির রেইনকোট পরে চলাফেরা করেছি। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ওতে তেমন একটা লাভ হয় না। প্যান্টের নিচের অংশটা ভিজে গিয়ে খুব বিশ্রি একটা ব্যাপার হয়। অবশ্য ঢাকায় বৃষ্টি হলে রাস্তায় দন্ডায়মান জলসীমা যেভাবে পা বেয়ে উঠে পড়ে, তাতে প্যান্ট গোটাতেই হয়। প্যান্ট যদি গুটিয়েই ফেলবেন বলে স্থির করেন, তাহলে ক্যাটেগরি ক, অর্থাৎ আলখাল্লা রেইনকোট আপনার জন্যে ভালো হবে।
ক্যাটেগরি খ, অর্থাৎ পায়জামা জ্যাকেটের জোটবদ্ধ রেইনকোট ভেজালের জিনিস। আপনাকে প্যান্টের ওপর আবার আরেকটা জিনিস চড়াতে হবে, এবং তা করতে হতে পারে জুতো খুলে। গেরো।
আমি তাই পাজামাটা স্যুভেনির হিসেবে তুলে রেখেছি। জ্যাকেটটা ব্যবহার করি। এতে করা যা হয়, আমার ঊর্ধ্বাঙ্গ মোটামুটি শুষ্ক থাকলেও নিম্নাঙ্গ ভিজে জবজব হয়ে থাকে। ভেজা নিম্নাঙ্গ ব্যাপারটা শুনতে যেমন অশ্লীল শোনায়, তেমনি অশ্লীল। খুবই বাজে একটা ব্যাপার, ভেজা প্যান্ট নিয়ে হাঁটা।
তবে হাঁটা নয়, ঢাকায় তেমন বৃষ্টি হলে আপনার ভরসা রিকশা। কারণ বেশির ভাগ গাড়ির এনজিন এগজস্ট পানির নিচে তলিয়ে যায়।
রিকশায় বসলে আপনি আরেকটু নিরাপদ, কারণ রিকশাওয়ালা আপনাকে একটা পাতলা প্লাস্টিকের চাদর দেবে ঢেকেঢুকে বসার জন্য। ইদানীং এ চাদরের আকার ছোট হয়ে এসেছে, আগে বেশ বড়সড় চাদর পাওয়া যেতো। যারা বৃষ্টির দিনে বান্ধবীকে নিয়ে ঘোরেন, তাদের উচিত এই চাদর দেখে রিকশা ঠিক করা।
তবে আপনি রেইনকোট পরে, চাদর এঁটে বসলে কী হবে, রিকশাওয়ালা বেচারা কিন্তু কোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর হিমেল বৃষ্টি হয় ঢাকায়, বোধ করি মেঘগুলি বায়ুমন্ডলে কিছুটা বেশি উঁচুতে চললেই, ঠুসঠাস করে বড়সড় বৃষ্টির রামফোঁটা পড়ে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন রিকশাওয়ালা বেচারা হি হি করে কাঁপছে, ফোঁপাচ্ছে প্যাডেল দিতে গিয়ে।
এমন পরিস্থিতিতে আপনি প্রথমেই যা দান করতে পারেন, সেটি হচ্ছে উপদেশ। রেইনকোটের উপকারিতা নিয়ে এক পশলা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা হয়ে যেতে পারে। তবে রিকশাওয়ালা এর উত্তরে আপনাকে রেইনকোটের দাম ও তার আয় নিয়ে কিছু হতাশাব্যঞ্জক তথ্য দিতে পারে, যা বিচার করে আপনি বুঝতে পারবেন, রিকশাওয়ালার পক্ষে নিজের আয়ে একটি রেইনকোট কেনা সম্ভব না। রিকশাওয়ালাকে একটা রেইনকোটের পয়সা দান করার মতো ঔদার্য আপনার না-ও হতে পারে, এবং নিজেকে অনুদার ভাবতে চান না বলে আপনি একটা যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেলবেন, পয়সা দিলে তো লোকটা রেইনকোট কিনবে না, অন্য কাজে খরচ করে ফেলবে।
এখন আপনি তো আর রিকশাওয়ালাকে দান করার জন্য রেইনকোট সাথে নিয়ে ঘুরছেন না। কাজেই চার-পাঁচটাকা অতিরিক্ত রিকশাভাড়া দিয়ে নিজে শুকনো থাকার গ্লানি থেকে বাঁচার জন্যে আপনি প্রাণপণে ভাবতে থাকেন, কী করা যেতে পারে এই মানুষগুলির জন্য। এরা কি রোজ এভাবে ভিজে ভিজে রিকশা চালাবে? যদি জ্বর হয়? যদি জ্বর হয়ে একদিন রিকশা চালাতে না পারে, তাহলে ও খাবে কী? আরো নানা চিন্তা আসে আপনার মনে, কিন্তু অতখানি গভীরে খুঁড়তেও চান না আপনি। তখন আপনার কাছে মনে হয়, সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব যদি প্রতিটি রিকশাওয়ালার একটা করে রেইনকোট থাকে।
আপনি তখন ঠিক করেন, ব্লগে একটা পোস্ট দেবেন এটা নিয়ে। বড় বড় কর্পোরেট কর্তারা যাতে বিজ্ঞাপনের একটা তরিকা গ্রহণ করেন, নিজেদের পণ্যের ছাপ্পা মুদ্রিত কিছু সস্তা খসখসে রেইনকোট কিছু রিকশাওয়ালাকে বিনামূল্যে উপহার দেয়া হয়। মুঠোফোন হোক, কন্ডম হোক, ফর্সা-হবার-আশ্চর্য-মলম হোক, হোক যা কিছু, যা কিছু চিহ্ন ব্যাটারা বহন করে চলুক এই গম্ভীর মৌসুমী বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, কিন্তু মানুষগুলো শুকনো থাকুক, বাঁচুক, আপনাকে রেহাই দিক অর্থহীন বিবেক দংশন থেকে।
মন্তব্য
সব কথা নিজে কইলেন, রিক্সালারে একটা কথা কইতে দিলেন না এতবড় পোস্টে?
তবে লেখা ভালো হইছে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনি অমনোযোগী পাঠক। দ্রুত চোখ বুলাতে বুলাতে তো চোখের অসুখ বাঁধিয়ে বসলেন। আর বৃষ্টিতে ভিজে রিকশাওয়ালার কি আর এত কথা বলার মুড থাকে? যা বলার আপনাকেই বলতে হয়।
হাঁটুপানির জলদস্যু
খবর্দার আমারে অমনোযোগী কইলে।
এইটা তো ভদ্রলোক নিজের মনে চিন্তা করছে। রিক্সালা কয় নাই।
ধরবো নাকি কোট প্যাঁচাইয়া?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
এমন বিপ্লবিয়া মন্তব্য করে লজ্জায় আমাকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার কুচক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি বলতে চাই এ চক্রান্ত তোর সফল হবে না রে শয়তান, কারণ আমার লজ্জা নাই ... অজ্জা নাই ... অজ্জা নাই ...।
আপনার প্রোফাইলের ছবিটা সেইরকম। ক্যামেরার পেছনের মেয়েটা কে?
হাঁটুপানির জলদস্যু
মজা পাইলাম।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
মজার মাঝে একটা বিষন্নতা লুকিয়ে আছে। সেটাই বেশি করে খোঁচা দিয়ে গেলো।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ঝরাপাতার সাথে একমত।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
খুব ভালো আইডিয়া! কিন্তু কতটুকু বাস্তবমুখী?
কি মাঝি? ডরাইলা?
কারে জিগান?
হাঁটুপানির জলদস্যু
আপাতত লেখককেই জিগাইলাম।
কি মাঝি? ডরাইলা?
দেশ ছেড়ে আসার আগে নিজের ম্যানেজারকে দিয়ে তার ওপরওয়ালার কাছে আইডিয়াটা পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কোন ফল হয়েছে বলে শুনিনি।
এসব প্রশ্ন করে জাতির বিবেক-কে কেন দংশন করছেন হিমু?
রেইনকোটে আমার কখনই কাম হয় না, তাই আমি পড়ি পঞ্চো, পুরা প্রমিথিউসের বিপ্লবের মত , তবে দেইখা কিন্তে হবে যেন জুতা পর্যন্ত পৌছায়।
পঞ্চো
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
উপরে যেমনটা নিজেই বললি, কোনো ফল হয় নি। হবেও না। আমরা কোনো রকমে নিজের শরীরটা বাঁচিয়ে চলে চিপা দিয়ে চলে যাই আস্তে করে, অন্যে ভিজলো কি শুকনা থাকলো, সেটা ভাবতে আমাদের বয়েই গেছে আরকি!
রিক্সামালিকদের এটা দায়িত্বের মধ্যে ফেলানো দরকার। একটা রিক্সার সাথে প্যাসেঞ্জারের জন্য যেমন একটা পর্দা থাকে, তেমনি চালকের জন্যও একটা রেইনকোট থাকা বাধ্যতামূলক। এতে করে একজন প্যাসেঞ্জার বিবেকের দংশন এবং চালক হিমহিম বৃষ্টির দংশন থেকে মুক্তি পাবে।
আমি কয়েকজন চালককে দেখেছি বেশ ইনোভেটিভ। তাঁরা স্বরচিত রেইনকোট পরেই বৃষ্টির মধ্যে রিক্সা নিয়ে বেরিয়েছে। সারের বস্তা দেখছোস? বেশ ভালো মানের পলিথিন। সেটা কেটে তার ভেতর দিয়ে মাথা বের করে বাকিটা শরীরে ফেলে দিলেই হলো। হয়ে গেলো দারুণ এক রেইনকোট। তবে এক্ষেত্রে মাথায় পাথলা টাইপের কিছু একটা ব্যবহার করতে হয়। আরেকটা পদ্ধতি দেখেছি, বস্তার একটা কোনা কেটে মুখের সামনে টুকু বের করে রাখতে। এক্ষেত্রে বুকের বা পেটের কাছে একটা কিছু দিয়ে গিট্টু মেরে রাখা লাগে যাতে রেইনকোট উড়ে বা পড়ে না যায়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি অনেককেই অনেক ইনোভেটিভ উপায় ব্যবহার করতে দেখি।
পাথলা -> 'পাতলা'? পলিথিনের প্যাকেট মাথায় বেন্ধে নিতে দেখিতো হামেশাই।
রেইনকোট কিন্তু খরচের ব্যাপার না আসলে, ইচ্ছা করলে কিন্তু অনেক কম খরচে একটু মোটা প্লাস্টিকের সিম্পল রেইনকোট বানায় ফেলা যায়, যেটা রিকশা-আলারা সহজেই কিনতে পারবেন। দরকার কারো উদ্যোগটা নেয়া।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন