আমি বিবর্তনবাদের একজন আগ্রহী শিক্ষার্থী। এই তত্ত্বটি নানা সময়ে আক্রান্ত হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে, তবে হামলাবাজরা আক্রমণেই আনন্দ পেয়েছেন বেশি, ব্যাপারটা নিয়ে লেখাপড়ার বা পড়াশোনার উদ্যোগ তেমন নেননি। ডারউইন, জীবজগতে বিবর্তনবাদের অনেক প্রবক্তার মধ্যে প্রথমেই তাঁর নাম আসা উচিত, তাঁর আমলে এর বিরুদ্ধে ঢালতলোয়ার তুলেছিলেন যাজকগোষ্ঠী, ডারউইনের হয়ে লড়েছিলেন টমাস হেনরি হাক্সলি।
বিবর্তন শুধু প্রাণীজগতেই হয় না, ভাবজগতেও হতে পারে, এমন একটি প্রস্তাবনা থেকে রিচার্ড ডকিন্স (ডকিন্স নিওডারউইনিজম বলে একটি ভাবনার ঘরানার প্রবক্তাদের একজন, যাঁরা বিবর্তনবাদের প্রয়োগে প্রাণীজগতে বিভিন্ন আচরণের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের বিদ্যাচর্চার দিকটি এথোলজি বা আচরণবিদ্যা নামেই পরিচিত) মিম বলে একটি শব্দের প্রবর্তন করেন তাঁর সেলফিশ জিন বইটিতে। প্রাণীজগতে বিবর্তনের পেছনে প্রধান বিনিময়যোগ্য উপাদান জিন যেমন, ভাবজগতে তেমনি উপাদান হচ্ছে মিম, এ হচ্ছে একটি ভাবনার একক, যা ছড়িয়ে পড়ে মন থেকে মনে।
প্রাণীজগতে বিবর্তনবাদের মূল মডেলটি অনেকটা এমন। ধরা যাক কোন একটি প্রাণী কুমড়োপটাশ কোন একটি পরিবেশ খিলখিল্লির মুল্লুকে বাস করছে, তারই ভাই ঝিঙ্গাপটাশ বাস করে দূরে টাকচূড়ো নগরে। আমরা ঝিঙ্গাপটাশের কথা আবার পরে শুনবো, এখন কুমড়োপটাশই নায়ক। কুমড়োপটাশের দৈহিক আকৃতি, আচরণ, সবই খিলখিল্লির মুল্লুকের সাথে খাপ খাওয়ানো। খিলখিল্লির মুল্লুকের নানা প্যারামিটারের সাথে একই মেজাজে কুমড়োপটাশের সব কিছু বাঁধা। এখন কোন কারণে যদি খিলখিল্লির মুল্লুকে কোন একটি বা একাধিক প্যারামিটারে পরিবর্তন ঘটে, তাহলে কুমড়োপটাশের দিক থেকে চেষ্টা থাকবে সে পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবার।
এখন প্রসঙ্গ আসে খাপ খাইয়ে নেবার পদ্ধতির সাথে। প্রাণীর দেহে অনিয়মিত হারে তার জিনতথ্যে পরিবর্তন ঘটে, যাকে মিউটেশন বলা হয়। এই পরিবর্তিত জিনের স্থায়িত্ব নির্ভর করে প্রাণীদেহে সে জিনের প্রভাব প্রাণীর টিকে থাকা ও বংশবিস্তারের উপযোগী কি না তার ওপর। কাজেই, এই পরিবর্তিত জিনের প্রভাব যদি কোনভাবে খিলখিল্লির মুল্লুকের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে কুমড়োপটাশ খিলখিল্লির মুল্লুকের পরিবর্তিত পরিবেশের সাথেও টিকে থাকতে পারবে।
পরিবেশের পরিবর্তন অনুযায়ী মিউটেশন না-ও হতে পারে, বরং না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, এবং অতীতে খিলখিল্লির মুল্লুকের মতো আরো আরো মুল্লুক থেকে কুমড়োপটাশের মতো অসংখ্যা প্রাণী লোপ পেয়েছে, একেবারে নির্বংশ হয়ে গেছে। আমাদের কুমড়োপটাশ আলোচনার খাতিরে সৌভাগ্যবান, সে টিকে যাক।
তো এভাবে বছরের পর বছর চলতে থাকলো, খিলখিল্লির মুল্লুকের বিভিন্ন পরিবেশগত প্যারামিটার পাল্টাতেই থাকলো, আর সৌভাগ্যবান কুমড়োপটাশের বংশধরেরা তার সাথে তাল মিলিয়ে নিজের জিনতথ্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে চললো।
এভাবে কয়েক মিলিয়ন বছর চলার পর কুমড়োপটাশের এক দূর বংশধরের সাথে সেই ঝিঙ্গাপটাশের এক দূর বংশধারিণীর দেখা হলো। একজন তো আরেকজনকে দেখে অবাক। চেহারায় কত তফাৎ, কত তফাৎ আচরণে! এ যা খায় ও তা ছুঁয়েও দেখে না। এর দাঁত মস্তো, ওর দাঁত খুদে। এ ছোটে ধীরেসুস্থে, ও ছোটে বিদ্যুতের মতো। ব্যাপারটা কী?
যা-ই হোক, অসভ্য এই নতুন প্রজন্ম একজন আরেকজনের প্রেমে পড়ে গেলো। নিরোধ ছাড়াই শুরু করে দিলো উদ্দাম প্রেম। কিন্তু না, অনেক নষ্টামোর পরও ঝিঙ্গাপটাশের বংশধারিণী গর্ভবতী হলো না। হতাশ হয়ে তারা গেলো এক পশুচিকিৎসকের কাছে। তিনি সব দেখে শুনে বললেন, বাচ্চা হবে না, আর হলেও হবে নপুংসক। কারণটা কী? ডাক্তার বললেন, স্পেসিয়েশন হয়ে গেছে। দু'জনের জিনে এখন অনেক তফাৎ।
চাকচূড়ো নগরেও তো অনেক পরিবেশগত পরিবর্তন হয়েছে, তার সাথে খাপ খাইয়ে পরিবর্তিত হয়েছে ঝিঙ্গাপটাশের বংশধরদের জিন। তাই ইবনে কুমড়োপটাশ আর বিনতে ঝিঙ্গাপটাশের শরীরে এখন দু'রকম জিন, একটা আরেকটার সাথে মেশে না।
যেমনটা হয়েছে মানুষের আর গোরিলায়, বাঘে আর বেড়ালে।
মোদ্দা কথা হলো, প্রাণী টিকে থাকবে তার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে। যদি দু'রকম পরিবেশে একই প্রাণীর দু'রকম প্রজাতি নিজেদের মধ্যে কোন রকম "যোগাযোগ" ছাড়া বহুবছর বাস করে, এবং এই দুই পরিবেশের উপাদান দু'রকমভাবে পরিবর্তিত হয়, তবে সম্ভাবনা আছে তারা দু'জনে দু'টি প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়বে। যেমন কুমড়ো আর ঝিঙ্গার দুই দূর-নাতিনাতনী পটাশদ্বয়।
ডারউইনের সময় বিবর্তনের ব্যাখ্যায় জিনপ্রবাহের কথাটি ছিলো না (কারণ জিন আবিষ্কৃত হয়েছে গত শতকের ষাটের দশকে), নিওডারউইনবাদে এটি সংযুক্ত হয়েছে।
প্রাণীজগতে বিবর্তনবাদের হামলাবাজরা যে একটি ব্যাপারে মনোযোগ দেন না, তা হচ্ছে সময়। প্রাণীজগতে বিবর্তন একটি শ্লথ প্রক্রিয়া, এক পুরুষে দেখার নয়। কয়েক লক্ষ পুরুষে গিয়ে এই প্রজাতিতে ভাগ হয়ে যাওয়া বা স্পেসিয়েশন১. ব্যাপারটি চোখে দেখে ঠাহর করা যায়। তবে তেজস্ক্রিয়তার পাল্লায় পড়লে জিনে মিউটেশন ঘটে দ্রুত, চেরনোবিল এলাকার লতাগুল্ম দেখলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে।
সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বিবর্তনবাদ আরো দ্রুত ক্রিয়াশীল। সাধারণত উচ্চস্তরের প্রাণীদেহে জিনপ্রবাহ ঘটে যৌন প্রজননের ধারায়, তাই এটির পর্যায়কাল ন্যূনতম এক পুরুষ। মিমপ্রবাহ ঘটে আরো অনেক অল্প সময়ে, হয়তো একটি বই পাঠ করে, কিংবা একটা ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে।
আমি কথা বলতে চাই বিস্তৃত অর্থে বাঙালি সমাজের স্পেসিয়েশন নিয়ে।
১৯৪৭ সালে ভারতবিভাগের সময় বাঙালি সমাজ একটি বড় দাগে বিভক্ত হয়েছে, ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাপে ভৌগলিক সীমারোপের মধ্য দিয়ে (ব্যতিক্রম খুলনা ও মুর্শিদাবাদ)। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গ নামে দু'টি ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশে বিভক্ত বাঙালি সমাজে তার পরও দীর্ঘদিন মিম বিনিময় ঘটেছে নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পরিচয় লোপের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্মের পর আরো একটি বিভাজন ঘটে, পশ্চিম পাকিস্তান ওরফে পাকিস্তানে মূলছিন্ন হয়ে রয়ে যান অনেক বাঙালি। তাঁদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে এই পরিবেশের মধ্যে মিমি বিনিময় সংকুচিত হয়ে এসেছে। পাশাপাশি প্রবাসে বেড়ে ওঠা একটি "তৃতীয় বাংলা" বিবর্তিত হয়েছে নিজের ভিন্ন পরিবেশে। আমার ব্যক্তিগত মত, সাংস্কৃতিক স্পেসিয়েশন ঘটে গেছে এবং আরো ঘটছে এই সমাজগুলোর মধ্যে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ল্যাটিন আমেরিকায় সেটলার ইয়োরোপীয়রা, যাদের পূর্বপুরুষ কয়েকশো বছর আগে সেখানে আড্ডা গেড়েছে, এবং যারা পরবর্তীতে ইয়োরোপের চিন্তার বিবর্তনের সাথে পরিচিত নন, তারা প্রাচীন ইয়োরোপের গোঁড়ামিগুলো প্রায় পূর্ণমাত্রায় বহন করেন। সাংস্কৃতিক স্পেসিয়েশনের এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তাছাড়া শুনেছি এবং পড়েছি যে অস্ট্রেলিয়ানরা নাকি ব্রিটিশদের চেয়েও অধিকমাত্রায় ব্রিটিশ। এখানেও সেই স্পেসিয়েশন, আদিভূমিপুত্ররা বিবর্তিত হয়েছে, দখলভূমিপুত্ররা হয়নি।
আমি সাংস্কৃতিক স্পেসিয়েশনের পক্ষে বা বিপক্ষে নই। আমি আগ্রহী এই স্পেসিয়েশনের বিভিন্ন মাত্রা সম্পর্কে জানতে। আমার এই জিজ্ঞাসা মেটাতে পারে ব্লগ, আরো ভালোভাবে বলতে, সচলায়তন।
পশ্চিমবঙ্গ ও পাকিস্তানবাসী বাঙালিরা ব্লগিঙের মাধ্যমে তাঁদের সাংস্কৃতিক মন্ডলসম্পর্কে আমাদের আরো অবহিত করবেন, এমন আশাই করছি। প্রবাসী বাঙালি গোষ্ঠী ব্লগে অনেক সক্রিয়, তাই তাঁদের কথা আর নতুন করে বলছি না।
উৎস ভাই, আপনার ব্যস্ততা বা অবসাদ জলদি কাটুক। মিস করছি আপনাকে, ভাই।
[]
মন্তব্য
স্পেসিয়েশন = প্রজাতিকরণ (আমার ধারণা)
ভাল লেখা, আমি এককালে মিম নিয়ে মুক্তমনায় লিখেছিলাম। লিঙ্কটা দিয়ে দেব।
তবে স্পেসিয়েসনের ফলে ভালবাসাবাসি হয়েও অপত্য হবেনা, এরকম নয়। মানুষে আর গরিলাতে বাচ্চা হবে কিনা আমি নিশ্চিত নই, তবে গাধা আর ঘোড়ায় হয়। আরো অনেক বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বাচ্চা হয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ওয়েল ডান!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
আন্তপ্রজাতি সংকর প্রায়ই হয়, তবে সেগুলি প্রজনেন অক্ষম হয়। দিগন্তের কথা ঠিক। যেসব প্রজাতির মধ্যে প্রজননক্ষম বাচ্চা হয়, সেগুলি পুরোপুরি ভিন্ন প্রজাতি নয়, উপপ্রজাতি। প্রজাতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কিন্তু এই বংশধারা রক্ষার কথা বলা হয়।
দিগন্ত, আপনি ইচ্ছে করলে আপনার পূর্বের কোন লেখা পুনর্প্রকাশ করতে পারেন, যদি পূর্বের প্রকাশনামাধ্যমের আপত্তি না থাকে। লেখার শেষে ইচ্ছে করলে উল্লেখ করতে পারেন পূর্বে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিলো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
পড়লাম। অন্যদের কমেন্ট পড়ে নেই।
আবার কমেন্টাতে আসবো।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
মিম নিয়ে লিখেছিলাম, কিন্তু সেটা বর্ণসফটে লেখা। তাই এখনই সেটাকে কনভার্ট করতে পারছি না।
লিঙ্ক হল এখানে।
আরেকটা লেখা আছে সেটাতে রিচার্ড ডকিন্সের ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে ... মিমতত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যাও আছে তাতে। সেটাও একই কারণে আমি কনভার্ট করছি না। সেটা পাবেন এখানে।
প্রজাতির সংজ্ঞায় আমার ধারণা যারা স্বাভাবিকভাবে জননে লিপ্ত হয় না তাদের বিভিন্ন প্রজাতি বলে গণ্য করা হয়। তবে ল্যাবে স্পেসিয়েশনের পরীক্ষা অনেককাল আগেই হয়েছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পুরনো লেখার এই একটা সমস্যা ইউনিকোডে রূপান্তর করার।
অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করেন কি?
হাঁটুপানির জলদস্যু
এখন করি, কিন্তু যখন এগুলো লিখেছিলাম তখন করতাম না ... ভুল পথে বেশীদিন ছিলাম না ...
যাহোক বিবর্তনে আগ্রহ থাকলে আপনি আমার এই লেখাটাও পড়তে পারেন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনি জ্যারেড ডায়মন্ডের "গানস, জার্মস অ্যান্ড স্টীল" পড়েছেন কি?
ডায়মন্ড অনেক এথোলজিস্টের জন্যে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন পাপুয়া নিউগিনিতে তাঁর তিন দশকের অভিজ্ঞতা থেকে। পাপুয়া নিউগিনি মোটামুটি বিচ্ছিন্ন ছিলো "সভ্য" দুনিয়ার কাছ থেকে, গত শতকের চতুর্থ শতক পর্যন্ত। ভৌগলিক কারণে পাপুয়া নিউগিনি অসংখ্য ভাষাভাষী ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত। ধারণা করা হয় শিকারী-সংগ্রাহক পর্যায়ে সব মানুষই এমন ছিলো।
ডায়মন্ড দেখেছেন, পাপুয়া গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এক গোষ্ঠীর সদস্য আরেক গোষ্ঠীর সদস্যদের মুখোমুখি হলে যদি প্রথম দর্শনেই একজন আরেকজনকে খুন না করে ফেলে, তাহলে বিরাট এক আলাপে বসে। সে আলাপের মুখ্য বিষয় হচ্ছে, আত্মীয়তার চার্ট। কার আত্মীয় কোন গোষ্ঠীতে কোন জায়গায় বাস করে, ইত্যাদি। এই আলাপের কারণ হচ্ছে, কোন অভিন্ন বা পরিচিত আত্মীয় পেলে আর খুনাখুনির মধ্য দিয়ে যেতে হয় না।
ডায়মন্ড ধারণা করেন, আত্মীয়তাহীন দু'টি গোষ্ঠীকে এই দ্বন্দ্ব থেকে দূর করতেই "অভিন্ন উৎসাহ" হিসেবে শিকারী-সংগ্রাহক মানুষের সমাজে ধর্মের আবির্ভাব।
হাঁটুপানির জলদস্যু
দিগন্ত, সাংস্কৃতিক প্রজাতিভবন [স্পেসিয়েশনের পরিভাষা হিসেবে প্রজাতিকরণ কথাটার পেছনে কর্তার ব্যাপারটা চলে আসে, তাই প্রজাতিভবন লিখছি] নিয়ে আপনার বক্তব্য শুনলাম না এখনও।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এটা পড়িনি, কিন্তু আমার এমনিতে ডকিন্সের ধারণাগুলো ভালই লেগেছে। বিশেষত কার্গো কাল্টের উদাহরণ। ধর্ম বিস্তার হয়েছে মিম-পথে, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই অবশ্য ...
যাহোক, স্পেসিয়েশন নিয়ে এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন, আমার এককালে খুব ভাল লেগেছিল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দুঃখিত আমি প্রসঙ্গ থেকে অনেক দূরে চলে গেছি।
বাঙালীদের মধ্যে ঠিক কোনো স্পেসিয়েশন ঘটেছে বলে আমার মনে হয়নি। আমার বাবা ভারতে এসেছেন ৭১এ, কিন্তু মা খঁটি কলকাতার। আবার আমার বৌ ঢাকার, বাংলাদেশের বর্তমান বাসিন্দা। আমি সবার মধ্যে সংস্কৃতির মূলধারার কোনো পরিবর্তন দেখিনা।
তবে থিয়োরি হিসাবে আমি আপনার সাথে একমত। সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হল আমি এখন যেখানে আছি - চিন। এরা বহুকাল পাশ্চাত্যের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে সম্পূর্ণ অন্য একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। যেখানে আমি বা আপনি ঢুকলে অন্য প্রজাতির বাসিন্দা বলেই নিজেকে মনে হয়।
আবার কি জানেন, এই চিনাদেরই আরেকটা ভার্সান ঘুরে বেড়ায় দক্ষিণ আমেরিকায় ... ইনকা বা আরো অন্য উপজাতিরা মূলত চিন থেকেই যাওয়া।
প্রবাসীরা হল সংকর প্রজাতি। যেহেতু নিজের পরিবারের সংস্কৃতিক প্রভাব খুবই বেশী, তাই মোটের ওপর এরা মিশ্র সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠে - একের পরে এক জেনারেশন কমতে থাকে মূল প্রভাব।
তবে কতটা মূল সংস্কৃতি আর কতটা বিদেশী সংস্কৃতির মিশ্রণ হবে সংকর সংস্কৃতি, সেটা নির্ভর করে পরিবেশের গন্ডিটা কতটা স্ট্রিক্ট তার ওপর। কনসারভেটিভ পরিবারের একটা ভারতীয় মেয়ে আর উদারপন্থী ছেলের ক্ষেত্রে এর মিশ্রণে দেশী আর বিদেশী সংস্কৃতির অনুপাত আলাদা হবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভালো বিষয়।
আইচ্ছা
ছ্যাঙ্গা থেইক্কা যে প্রজাপতি হয় হে কী আবার ছ্যাঙ্গার প্রেমে পড়তারে?
ধরলাম পড়লো।
তাগো পক্ষে কী রতিক্রীড়া সম্ভব?
ধরলাম সম্ভব।
তাইলে প্রডাকশানটা কী আইবো, ছ্যাঙ্গা না প্রজাপতি নাকি ছ্যাঙ্গাপতি নাকি উচ্চতর কোন জন্তু?
মিমের থিমে পরে আসি।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
জোক করে প্রশ্নটা করলেন কীনা বুঝি নাই। তাও উত্তরটা দেই।
আসলে ছ্যাংগা আর প্রজাপতি দুটা আলাদা প্রজাতি। আর প্রজাতির সংজ্ঞামতেই, একজন আরেকজনের সাথে রতিক্রিয়া করতে পারবেনা। যদি জোর করে করেও, লাভ নেই।
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
ছ্যাঙ্গাকে যদি কোন প্রজাপতি মহব্বৎ করে ফ্যালে, তাহলে সেটাকে পেডোফিলিয়াই বলা উচিত (লার্ভোফিলিয়া, টু বি মোর প্রিসাইজ)। আর বাচ্চা হয়ে গেলে তো ফৌজদারি মামলা করা উচিত। মামলা নিষ্পত্তি হবার পর দেখতে হবে আলোচ্য বাচ্চাটাকে কী ডাকা যায়।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হুম!
বিষয়টা গভীর ভাবনা জাগায়।
ছ্যাঙ্গা থেকে কদম ফুল হইলে অবাক হইতাম না,
প্রজাপতির ব্যাপারটাই চিন্তার বিষয়।
আমার মনে হয় বাচ্চাটা হইবো
পাখাওয়ালা কদম ফুলের মতো।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
ছ্যাঙ্গাপতি
অনেকটা এইরকম।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
হাহ হা। ছবিটা সেরম হইসে।
ওরে কঠিন!!! আইডিয়া মাথায় গিজগিজ করে নাকি বস?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ডেনিয়েল ডেনেট-এর নাম বলতে যাবো, তার আগে দিগন্ত সরকারের লিংক গুতালাম। লেখা পড়ে মুগ্ধ।
আমিও আগ্রহী, এ বিষয়ে জানতে।
'আমার প্রিয় পোস্ট' বা বুকমার্ক-এর ব্যবস্থা চালু হয়েছে? আবদার ছিল একটা।
এখন একটু ইশকুলের চাপ, ছাতার মাথা, কনট্রাভেরিয়েন্ট টেন্সর বিশ্লেষণ, এর চেয়ে উত্তম খেতা পোড়ানো; তবে ঢুঁ মারবো মাঝে মাঝে।
_____________________________
জিকোবাজি | ফটো গ্যালারি | ইমেইল
_____________________________
জিকোবাজি | ফটো গ্যালারি | ইমেইল
কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম একটা বিতর্কের সূচনা করব।
তার মধ্যে এই ব্যাপারটাও হয়ত চলে আসবে।
______ ____________________
suspended animation...
দারুন লাগল লেখাটা। নাহ জ্যারেড ডায়মন্ড পড়তেই হয় দেখছি।
উৎস ভাইকে খুব মিস করছি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমার নাতির পোলাটার যে কি হবে!!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
কি আর হইবো, আপনারে জিগাইবো, কি দাদু, ডরাইলা ?
______ ____________________
suspended animation...
আপনার নাতির পুলার আমলে অনেক কিছুই হইতারে।
মনে করেন, ছেলে-ছেলে মেয়ে-মেয়ে প্রেমটাই ফ্যাশন হবে হয়তো!
হেটেরোসেক্সুয়ালিটি ব্যাকডেটেড বইলা বাতিলের খাতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কাজেই, খিয়াল কইরা, বিবর্তনের বাতাস যে কুনদিকে যায়!
স্পেসিয়েশনের কথা যখন উঠলোই, তখন আমাদের একটা বাংলাদেশের মধ্যে যে নানান প্রজাতির আবির্ভাব হইছে, সেইটা না মেন্শন কইরা পারলাম না। ইংরেজ বিদায় হইছে ৬০ বছর আগে, কিন্তু মানসিক ভাবে আমাদের শাসকশ্রেণী/এলিট গোষ্ঠীরে পুরাপুরি কলোনাইজ কইরা চইলা গেছে, এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সমস্যাটা ভারত বা পাকিস্তানের থাইকাও আমাদের দেশে একটু বেশি প্রকট। এমন ছেলেমেয়েও আমাদের স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশে বড় হইতেছে প্রতিনিয়ত যারা নিজেদের আপন বাংলা ভাষা লেখতে পারে না বা ভালমতো পড়তে পারে না। নিজ দেশে প্রবাসী তৈয়ার করা হয় এইভাবে, যাদের কাছে সমগ্র দেশের গন্ডী ঢাকা শহরের কিছু স্পেসিফিক এলাকায় সীমাবদ্ধ। সবচেয়ে দুঃখজনক এই যে তারা নিজের আপন ভাষা, পিত্রৃপুরুষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যে একদমই অজ্ঞ শুধু তাই না, বরং পুরাপুরি উদাসীনও বটে। এইখানে সর কারের শিক্ষানীতির একটা খুব বড় ঘাটতি আছে। বিশেষ কইরা ইংরেজী মিডিয়াম শিক্ষা ব্যবস্থার একটা বড়সড় রি-অরিয়েন্টেশান দরকার যাতে দেশ ও দশ তাতে আরো বড় ভাবে স্বীকৃতি পায়। এবং একজন এক্স-ইংলিশ মিডিয়াম ছাত্র হিসেবেই এইটা বলতেছি।
ভারতেও এরকম একটা শ্রেণী আছে। শশী থারুর বলে এক জাতিসংঘের বড় হর্তাকর্তা, সে মহাসচিব পদে অল্পের জন্যে চান্স পায় নাই বান-কি-মুনের কাছে হাইরা গিয়া, কিন্ত তা বাদেও সে ইংরেজীতে উপন্যাস-প্রবন্ধও লেখে-টেখে। তার সাম্প্রতিক এক বইয়ের রিভিউ থেকে উদ্ধৃতি - "The strongest pieces in the collection explore the role of British literature in the deracination of the Indian elite. Here, Tharoor speaks of the paradox of his position without grandstanding. Claiming Enid Blyton and P.G. Wodehouse as the standard-bearer and gold standard, respectively, of his literary ideal, he champions the colonial literature that granted him a lasting love of reading. "English did give me access to a broader world," he writes, though he concedes that the extremely effective Anglicization of his parents' class and generation has denied him such intimacy with the native stories of his country."
এই ডিরেসিনেশান বা নিজের জাতিগত আইডেন্টিটি ফালাইয়া অন্যের আইডেন্টিটি হাইজ্যাক করার প্রবণতা - সেইটা আমাদের দেশেও দুঃখজনকভাবে বিদ্যমান।
চমৎকার সংযোজন মুস্তফিদা :)। নাজিনার ব্লগে এক দারুণ শব্দজোট পড়েছিলাম সেদিন, রিপাবলিক অব গুলশান!
হাঁটুপানির জলদস্যু
হিমু সাহেব, আমি আপনার "স্পেসিয়েশন" শব্দটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। আপনি যে "স্পিসিয়েশন" বোঝাতে চাইছেন তা "প্রজাতিকরণ" শব্দ থেকে ধারনা করেছি।
প্রেমিক মহোদয়, এভাবে বিসমিল্লায় গলদ করে পোস্টের মজা বহুদূর পর্যন্ত মাটি করায় আমি লজ্জিত। এরপর থেকে আমি সর্বদা স্পিশিয়েশন লিখবো, ব্র্যাকেটে রোমান হরফে আংরেজি কথাটিও লিপিবদ্ধ করবো ...
হাঁটুপানির জলদস্যু
জানতাম না তো!
রিপাবলিক অফ গুলশান, হাহ হাহ!
মুহাম্মদ সেলফিস জিন অনুবাদ করা শুরু করেছিল। দুই পাতা করেই ক্ষ্যামা দিসে। ইশশ যদি কাজটা ও শেষ করতো, ভালো হতো খুব।
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
বাহ, এইরকম মুচমুচে লেখা আর নাই? কোন এক কমেন্টে জানি হিমু ভাইরে বিবর্তনের বিশদ ব্যাখ্যা দিতে দেখছিলাম। ঐটা খুঁইজা পাই না। এইটাও সহজে পামুনা। ট্যাগ সংশোধন করে অন্তত "বিবর্তন" জুড়ে দেয়া যায় না, হিমু ভাই?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন