ফাকরুল ভাইকে বহুদ্দিনবাদে হোটেল গিলগামেশ বার অ্যান্ড রেস্তোরাঁর এক পরিচিত চিপায় দেখতে পেয়ে উল্লসিত হই। মাঝে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন, বোধহয় যৌথ বাহিনীর ভয়ে। গিলগামেশের কিয়দংশ বুলডোজারের ষন্ডামোতে ভাঙা হয়েছে, বসার জায়গা কিছুটা কমে গেছে, কিন্তু ফাকরুল ভাই ফিরে এসেছেন এটাই বড় কথা।
আমি হইহই করে তাঁর সাথে আহ্লাদি করি। "কই ছিলেন? ক্যামন আছেন?"
ফাকরুল ভাই অর্ধনিমীলিত নয়নে আমার দিকে করুণ দৃষ্টিবাণ হানেন। চেয়ে দেখি, মদের ঝোঁকে নয়, বাম চোখে কালসিটে পড়ে আছে।
আমি ফিসফিস করে বলি, "কেসটা কী ছিলো?"
ফাকরুল ভাই করুণ কণ্ঠে বলেন, "কেস তো কয়েকটা ছিলো ... কার্লসবার্গ, ফস্টারস ... কিন্তু খাইয়া ফালাইছি তো!"
আমি থতমত খেয়ে বলি, "আরে না, ঐ কেস না, কোন কেসে মাইর খাইলেন?"
ফাকরুল ভাই দুইটা হাতিমার্কা বিয়ার দিতে বলেন আর্তনাদ করে। সাথে অনুপান হিসাবে বাদামের ইল্লিবিল্লি।
না, যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মার খাননি ফাকরুল ভাই। তিনি ন্যায়নিষ্ঠ ভদ্দরলোক, মোটেও সুশীল ঘরানার লোক নন। নিয়মিত ট্যাক্স দ্যান, ডানে বামে নানা শুল্ক দ্যান, মদ খাওয়ার লাইসেন্সও তাঁর রয়েছে, তাঁকে ফাঁসানোর মতো অপরাধ তিনি তাঁর জানামতে করেননি। এ ক'দিন তাহলে কেন গা ঢাকা দিয়েছিলেন, এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না দিয়ে তিনি আমার হাতে ধরা হাতি মার্কা ক্যানটা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেন। আমি প্রসঙ্গ পাল্টাই।
"চোখের দাগটা?" ফাকরুল ভাই শান্ত হন। এক ঢোঁক পিয়ে বলেন, "ঐটা বাংলা ভাষার দোষ।"
"কে এই বাংলা ভাষা?" আমিও এক ঢোঁক গিলে গর্জে উঠি।
ফাকরুল ভাই অনেকখানি গলায় ঢেলে ঢুলুঢুলু চোখে আমাকে দেখে নিয়ে বলেন, "মদে ধরছে তোমারে। বাংলা ভাষারে চিনো না।"
আমি আবারও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাই, কিন্তু ফাকরুল ভাই শুরু করে দ্যান।
কিছুদিন পূর্বে তাঁর মোবাইলে সিজ্যুস নাম্বার থেকে একটি কিন্নরীকণ্ঠ তাঁর সাথে কথাবার্তা বলার আগ্রহ ব্যক্ত করে। সেই মহিলার কণ্ঠ বেশ সিজ্যুস করার মতোই, মাংসের চাটের মতোই সিডাকটিভ কথাবার্তা নাকি শুরু থেকেই চলতো, তাই ফাকরুল ভাই সিদ্ধান্ত ন্যান তিনি কিছুদিন ঘরে বসে পান করবেন। কথা বলতে বলতে গিলবেন, গিলতে গিলতে বলবেন।
কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর বলতে বলতে গেলা আর গিলতে গিলতে বলার নেশা ধরে যায়। মহিলাটি জনৈকা বাংলার শিক্ষিকা, কী এক কলেজে তিনি ব্যাদড়া ছেলেমেয়েদের বাংলা সাহিত্য পড়ান, বয়স নাকি বেশি নয়, একা বাস করেন। নিঃসঙ্গ বোধ করেন বলে তিনি মাঝে মাঝে অপরিচিত ব্যাটাছেলেদের সাথে ফোনে গপ্পোসপ্পো করেন। তাঁর দুর্ভাগ্য, এই ড়্যানডম নাম্বারের লোকগুলি এযাবৎ বেশির ভাগই লুচ্চা এবং অসংস্কৃত প্রমাণিত হয়েছে। তারা সাক্ষাতের আগে নানারকম মধুময় কথাবার্তা বললেও একসময় সাক্ষাতের জন্য ক্ষেপে ওঠে, এবং সাক্ষাতের পর নানা অশালীন ইঙ্গিত করে বন্ধুত্বের সম্পর্কের মূলেই কুঠারাঘাত করে। পুরুষগুলি সবাই নাকি ইতর, তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
শুনে ফাকরুল ভাইও পুরুষদের ওপর ক্ষেপে ওঠেন। নামঠিকানাফোন্নাম্বার জানতে চান সেইসব ছোটলোকগুলির, তিনি একদম যৌথ বাহিনী দিয়ে প্যাঁদাবেন শালাদের, এমন কঠিন সংকল্প উচ্চারণ করেন। মহিলা রিনিকিঝিনিকি হাসেন, বলে না না, তোমাকে এসব করতে হবে না। পালোয়ানগিরি না করে আমার সাথে কথা বলো।
তবে অচিরেই ফাকরুল ভাইও সাক্ষাতের জন্যে কিছুটা আগ্রহী হয়ে ওঠেন, এবং বারম্বার এই আগ্রহের কথা আকারে ইঙ্গিতে ঘুরপথে মহিলার গোচরে আনেন। মহিলা প্রথমবার শুনে ক্ষিপ্ত হন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির কথা স্মরণ করেন, পুরুষদেরকে আরেকপ্রস্থ ইতর বলেন, কিন্তু পরে আস্তে আস্তে সুর নরম করেন। এক শুভ মাঝরাতে তিনি সাক্ষাতে সম্মতি জানান, তিনদিন পর তিনি ভড়ং ক্যাফেতে ফাকরুল ভাইয়ের সাথে দেখা করবেন। তাঁর পরনে থাকবে কালোর কাজ করা সাদা শাড়ি, সাদার কাজ করা কালো ব্লাউজ, কালো নাইলনের ব্রা, ঘিয়া রঙের পেটিকোট, চিকন লেসের কালো স্যান্ডাল, হাতে থাকবে একটা কালো হাতব্যাগ, ঠোঁটে কালচে লাল লিপস্টিক, কানে কালো পাথরের দুল, গলায় একটা কালো পাথরের হার।
ফাকরুল ভাই পরদিন সকালেই তাঁর এক ভাগ্নিকে ফোন করেন। জানান যে তিনি তাঁর এক সহকর্মীর স্ত্রীকে জন্মদিনে কিছুমিছু উপহার দেবেন ঠিক করেছেন, এমন কিছু দিতে চান যা অন্য কেউ দেবার কথা ভাববে না। ভাগ্নি কিছুক্ষণ ভেবে বলে, মামা, ছম্মাকছল্লো থেকে কপালের টিপ কিনে দাও।
ফাকরুল ভাই পরদিনই ছম্মাকছল্লো ফ্যাশন হাউসের বেইলিরোডস্থ বিক্রয়কেন্দ্রে হানা দেন, এবং এক হাজার একটি নানা রঙের টিপ কেনেন। তাঁর ফোনান্তরের শেহরজাদিকে তিনি এক হাজার এক রাতে পরার টিপ উপহার দেবেন, প্রতি রাতে একটি টিপ ললাটে লিখে সে ললনা লীলালাস্যে তাঁর সাথে গল্প করে যাবেন।
হ্রঁদেভুতে হানা দিয়ে ফাকরুল ভাই সেই শিক্ষিকাকে শনাক্ত করে ফ্যালেন তার দু'দিন পর। মহিলা মধ্যযৌবনা, রীতিমতো সেইরম, মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যৌনাবেদন মাইকিং করে বলে যাচ্ছে, একটি জরুরি ঘোষণা, একটি জরুরি ঘোষণা ...। কালোর কাজ করা পাতলা সাদা শাড়ির নিচে সাদার কাজ করা পাতলা কালো ব্লাউজের নিচে কালো নাইলনের ব্রায়ের নকশা আড়ে আড়ে চেয়ে দেখে দরদর করে ঘামতে ঘামতে ফাকরুল ভাই কোনমতে হাল্কা খাবারের অর্ডার দ্যান। কামড়ে খাবার জিনিস সমুচা সেই সুন্দরী কিভাবে শোষণ করে খেলেন, সে দৃশ্য নাকি বর্ণনার শত্রু। ফাকরুল ভাই তিন বোতল মিনারেল ওয়াটার গিলে ফ্যালেন।
সাক্ষাতপর্ব শেষে, বিলটিল চুকিয়ে ফাকরুল ভাইয়ের চোখ পড়ে সুন্দরী মহিলাটির অনলঙ্কৃত কপালে, তিনি তখন হাসিমুখে পকেটে হাত ঢোকান।
"ইয়া ... কী জানি বলে ... তোমারে একটা কথা বলতে চাই ...।" ঢোঁক গিলে শুরু করেন তিনি।
মহিলার তখনই আঁচল খসে পড়ে যায় দৈবাৎ, হয়তো ভস্মীভূত মদনা হারামির শরের মোমেন্টামে। ফাকরুল ভাই এক বিঘৎ হাঁ করে সেই যবনিকাপাত দেখেন।
সুন্দরী অবশ্য আঁচল পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনে যথেষ্ঠ সময় ও কসরৎ নেন। বলেন, "হ্যাঁ, বলো ...।"
গদগদ গলায় ফাকরুল ভাই চোখ না সরিয়েই তাঁর উপহারের প্রসঙ্গ টানেন, "আমি তোমারে অনেকগুলি টিপ দিতে চাই!"
আমি গম্ভীর মুখে বলি, "বাংলা ভাষা আসলেই লোক খারাপ।"
মন্তব্য
হুম, মনে পড়লো মাঝে মাঝে হিমু এখানে ওখানে মন্তব্য করে একটা গল্প হতে পারে এ থেকে।
সেরকমই একটা গল্প।
কিন্তু ফাকরুল ভাইকে এমন বিপদে ফেলা ঠিক হয় নাই। বেচারা রোমান্টিক লোক।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আমি তো আপনাকে আরেকটু হলেই শোহেইল একমতাহির চৌধুরী নাম দিয়ে বসছিলাম ... ওয়েলকাম্ব্যাক!
হাঁটুপানির জলদস্যু
ওরে রে!!!!! অসাধারণ!!!!!
শেষ পর্যন্ত ফাকরুল ভাই কি টিপ দিতে পেরেছিলো??
কি মাঝি? ডরাইলা?
গল্প অসাধারণ হইছে কিন্তু বিকল্প সমাপ্তি চাই।
তারপর ভদ্রমহিলা তার ভুল বুঝলেন কিনা তাতো বুঝলাম না!!
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
লেখার ধরনে গলা খুলে হাসতেই হয়।
তবে শেষের ক্লাইমেক্সটা জমেনি!
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
হুমম। বাংলা ভাষাটা সেইরম আসলে।
এইখানে চুমুও খায়, কেসও খায়, মাইর - সেটাও খায়। আরো অনেক কিছু খায়, সেইগুলান লিখবো না।
এমনিতেই এই পোস্ট ১৮ এর উর্ধ্বে হয়ে গেছে।
তবে, "টিপ" উপহারের জন্যে খুব ভালো বস্তু।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
বিয়া কর।
______ ____________________
suspended animation...
সৌরভ:
টিপ দিসো কাউকে? হিমু জানলে খবরই আছে তোমার!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
জটিল হইছে। শিক্ষণীয় গল্প।
হা হা হা ...
ভাগ্যিস ভদ্রমহিলা চাপ খাইতে চায় নাই। ইয়ে মানে গরুর গরম গরম চাপ-পরোটা আরকি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
- টিপ কি দিতে পারছিলো নাকি বুঝলাম না।
নেক্সট এপিসোডে মামুর পো খানিক টিপিটিপি বারসা পানি ঢাইলো হালায় এতো শুকনা গল্প হুনতে হুনতে আর ভাল্লাগেনা!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হিমুর পানশালা। পান না করিলেও নেশা হইবে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আজকের গল্পই বলি। ক্যাশ রেজিস্টারে কাজ করছিলাম। এক অষ্টাদশী সহকর্মিনী খেয়াল করলো যে সামনের ডিসপ্লের LED কাজ করছে না। আমাকে বলে বসলো, "Are you turned on?"
বিস্ফারিত চোখে অধমের জবাব, "What did you just ask me?"
সুন্দরী ততক্ষণে লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছে। আমি চোখ টিপে বললাম, এখনো নই।
ঠিক মত বলতে না পারলে ইংরেজিও বিপজ্জনক হতে পারে।
জট্টিল!!!
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
বাংলা ভাষা আসলেই লোক খারাপ।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
গল্প দারুণ, সব ঠিকঠাক, সাদা-কালো ভালো মিলেছিল। কিন্তু সেই সাদা শাড়ির সাথে ঘিয়া পেটিকোট কেন বুঝলাম না।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
বোঝা গেলো হিমু বিবাহ করে নাই
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
পুরা হিমুময়।
-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..
_________________
[খোমাখাতা]
"ঘিয়া পেটিকোটের" ব্যাপারটা ছাড়া পুরাটা সেরাম হইছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
(বাংলায়) ---
কড়িকাঠুরে
শেষটা ভয়ংকর রমকের জটিল।
ডাকঘর | ছবিঘর
নতুন মন্তব্য করুন