বদরুল মুন্সি একটু নার্ভাস বোধ করে। লোকটা এমন চোখ গোল করে তাকিয়ে আছে কেন তার দিকে?
"মিস্টাহ বোদহ্রুল", কেমন করে যেন বলে লোকটা, "আপনি কেমন আছেন?"
বদরুল ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলে, "ভালো আছি। আমার রিপোর্টটা কি তৈরি?"
"হ্রিপোখত, হ্রিপোখত ...", বিড়বিড় করে লোকটা, "হ্যাঁ, ওটা তৈরি। এই যে।" একটা নীল খাম ধরিয়ে দেয় সে।
বদরুল নীল খাম থেকে একটা কাগজ বের করে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু লেখাগুলি পড়ে সে কিছুই বোঝে না। নানারকম সাংকেতিক কথাবার্তা লেখা।
"আচ্ছা, এর মানে কী?" বদরুল জানতে চায়।
লোকটা এবার ঝুঁকে পড়ে তার দিকে। "মিস্টাহ বোদহ্রুল, আপনি নিজে আমাদের কাছে এ টেস্ট করাতে এসেছেন, আর আপনি বলতে চাচ্ছেন, আপনি এগুলি বোঝেন না?"
বদরুল মাথা নাড়ে। "না।"
লোকটা এবার উৎসাহের সাথে শার্টের হাতা গুটিয়ে বসে কাউন্টারের ওপর হাতের ভর রেখে। "খুব ভালো। তাহলে আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলি। ... আপনার ডিএনএ থেকে জানা গেছে, আপনি পৃথিবীর অন্যতম এক আশ্চর্য।"
বদরুল হাসে বোকার মতো। "কীরকম?"
লোকটা হাসে। ঠান্ডা হাসি। "বলছি বলছি। আপনি কি জানেন, আপনার শরীরের একটা অংশ শুধু মায়ের কাছ থেকে আসে? তাকে বলে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ।"
বদরুল উৎসাহ বোধ করে না। বলে, "তো?"
লোকটা বকে যায়। "মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ জিনিসটা নিউক্লিয়ার ডিএনএর চেয়ে অনেক ছোট, যাচাই বাছাই করা সহজ। তো, আমরা আপনার মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে হাইপারভ্যারিয়েবল সিকোয়েন্সটা আলাদা করে নিয়েছি।"
বদরুল বলে, "আলাদা করে নিয়ে কী পেলেন?"
লোকটা এবার থেমে চুপ করে দেখে বদরুলকে। "যা দেখলাম তা অতি আশ্চর্য তথ্য, মিস্টাহ বোদহ্রুল।"
বদরুল বলে, "কী তথ্য?"
লোকটা কাউন্টারে আঙুল দিয়ে এক পশলা তবলা বাজায়। "মানুষের সাথে মানুষের বেশ পার্থক্য ধরা পড়ে এই সিকোয়েন্সে। গড়ে এই ইন্টারস্পেসিফিক পার্থক্য হচ্ছে ৮ এর মতো। মানে, যে কোন দু'জন মানুষের সিকোয়েন্স পাশাপাশি রাখলে আপনি আট জায়গায় পার্থক্য পেতে পারেন।"
বদরুল এবার একটু আগ্রহ বোধ করে, "তাই?"
লোকটা হাসে। "হ্যাঁ। আবার ধরুন, মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির তুলনা করলে, এই পার্থক্য দাঁড়ায় গড়ে ৫৫।"
বদরুল এবার একটু সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। "আমার সাথে কি মানুষের ৫৫ টা পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন?"
লোকটা মাথা নাড়ে। "উঁহু।"
বদরুল বলে, "তাহলে ক'টা?"
লোকটা বদরুলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, "২৬ টা।"
বদরুল চমকে ওঠে। ভাঙা গলায় বলে, "এত কেন?"
লোকটা একটা টিস্যু এগিয়ে দেয় বদরুলের দিকে। "কপালের ঘাম মুছে ফেলুন। ... আপনি কি জানেন, মানুষের সাথে ২৬ টা পার্থক্য পাওয়া গেছে, এমন কেস আমরা আগেও পেয়েছি?"
বদরুল বলে, "কে সেই লোক?"
লোকটা এবার বাঁকা চোখে তাকায় বদরুলের দিকে। "নিয়ান্ডার্টাল মানব।"
বদরুল কেঁপে ওঠে। "মানে?"
লোকটা এবার টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। "ধারণা করা হয়, নিয়ান্ডার্টালরা মানুষের একটা অন্য ধারা। আপনি তো জানেন না বোধহয়, আজ মানুষের প্রজাতি একটাই। আমরা সবাই হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স। নিয়ান্ডর্টাল মানুষেরা ছিলো হোমো নিয়ান্ডার্টালেন্সিস। বেশ খানিকটা অন্যরকম। ধারণা করা হতো, এই দুই প্রজাতির মধ্যে কোন ধরনের মিশ্রণ ঘটেনি। মিশ্রণ ঘটলে অবশ্য আর এদেরকে দুটো আলাদা প্রজাতি ধরা হতো না ... যাই হোক।"
বদরুল বলে, "আমি কি তাহলে নিয়ান্ডার্টাল?"
লোকটা বলে, "আপনার চেহারা বা খুলির গড়ন সেটা বলে না। আপনি দেখতে একদমই হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স। কিন্তু আপনার ডিএনএ বলছে, মানুষের সাথে আপনার অনেক পার্থক্য।"
বদরুল প্রায় কেঁদে ফেলে, "এখন আমি কী করবো?"
লোকটা বদরুলকে অভয় দেয়, "চিন্তার কিছু নেই। আপনার ডিএনএর কিছু স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে মিউনিখে, ডক্টর স্ভান্তে প্যাবোর বিখ্যাত ল্যাবে। সেখানে নিয়ান্ডার্টাল মানবের ডিএনএ স্যাম্পল রক্ষিত আছে, আপনারটা ওর সাথে মিলিয়ে দেখা হবে। যদি মিল পাওয়া যায় ...।" লোকটা আঙুল মটকাতে থাকে চিন্তিত মুখে।
বদরুল ঢোঁক গেলে, "মিল পাওয়া গেলে?"
লোকটা এবার মুখ তুলে তাকায়। "আপনি কখনো কোন নিয়ান্ডার্টালের চেহারার পুনর্নির্মাণ দেখেছেন?"
বদরুল বলে, "না, কেন?"
লোকটা নাক সিঁটকায়। "দেখতে ভালো না। ভয়ানক কুচ্ছিত বললেই চলে। আপনার সাথে কোন নিয়ান্ডার্টালের ডিএনএর মিল পাওয়া গেলে বুঝতে হবে, আমাদের পূর্বপুরুষ বা পূর্বমহিলাদের কেউ একজন বিরাট বদরুচির ছিলো।"
বদরুল ক্ষেপে যায়, "বলছেন কী এসব যা তা?"
লোকটাও ক্ষেপে ওঠে, "আরে মশাই, ডিএনএ কি উড়ে এসে ঢুকেছে নাকি আপনার শরীরে? বংশে কেউ একজন কোন নিয়ান্ডার্টাল মাগীর সাথে আকামকুকাম করেছে দেখেই তো এই অবস্থা, নাকি?"
বদরুল নীল খামটা ছুঁড়ে ফেলে লম্বা লম্বা পা ফেলে ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসে। পেছনে লোকটা চেঁচাতে থাকে, "ঠিকানাফিকানা সব টোকা আছে আমার কাছে। একদম ঘর থেকে পাকড়াও করে নিয়ে আসবো, পালাবেন কোথায় মশাই ...?"
মন্তব্য
সপ্তাহখানেক আগে আমার নিজের ডিএনএ সিকোয়েন্স করেছিলাম, ভাবছিলাম একটা পোস্ট দেব। এখন আর দেব না। ভাই হিমু, আমি মোটেই নিয়ান্ডার্টাল নই, আপনার অনুমান ভুল। আর হলেই বা কি, সেটা নিয়ে লজ্জার কোন কারন দেখি না।
তাহলে আর এত রাখঢাক কেন। পোস্ট দেন বস পোস্ট দেন। আমরাও শুনি ক্যামনে কী।
হাঁটুপানির জলদস্যু
তবে ফিকশনটা ভালো হয়েছে। নিজের ডিএনএ এখন থেকে পেটেন্ট করে রাখতে হবে। কেজানে বদরুলের মতো হয়তো এরকম রেয়ার বৈশিষ্ট্য আমাদের অনেকেরই আছে।
হিমুর মাথায় এইসব আসে কোথা থেকে?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
- আমি বুঝলাম না, কী লিখতে কী লিখলো হতচ্ছাড়াটা!
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বহুত কষ্ট করছে হিমু।
যাক মুন্সি টা কেডা?
-----------------------------------------------
গাধারে সাবান দিয়া গোসল দেয়ানোটা গাধাপ্রীতির উজ্জ্বল নমুনা হতে পারে; তবে ফলাফল পূর্বেই অনুমান করা সম্ভব, গাধার চামড়ার ক্ষতি আর সাবানের অপচয়।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
মোক্ষম!
************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
হায় হায়!!কয় কী!!!
-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...
হিমু কি আসলেই মানুষ? সে কি মলত্যাগ করে?কেউ কি প্রমাণ দিতে পারবেন? হিমুর মাথায় এইসব আসে কোথা থেকে তাহলে বলা সম্ভবপর হবে।
__________
কি মাঝি? ডরাইলা?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ভয়াবহ!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন