পিচ্চিতোষ গল্প ০২: কাঙারুর লেজে ব্যথা পাবার পর

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৯/২০০৭ - ২:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাঙারু একদিন পথে চলতে চলতে চলতে, মানে লাফাতে লাফাতে লাফাতে হঠাৎ একটা কলার খোসার ওপর লেজ পিছলে পড়ে লেজে দারুন ব্যথা পেলো। একদম বয়ে য ফলা থয়ে আকার ব্যথা।

কাঙারুর তো হাত ছোট, তাই সে ঠিকমতো লেজ মালিশও করতে পারে না। সে একটা ভালোমানুষের মতো দেখতে গেছো বাঁদরকে বললো, "ভাই, আমার লেজটা একটু ডলে দাও না, দারুণ ব্যথা পেয়েছি।"

গেছো বাঁদর দেখতে ভালোমানুষের মতো হলেও সে আসলে দারুণ পাজি। সে কিছুক্ষণ মিটমিট করে কাঙারুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, "দিতে পারি, কিন্তু দশ টাকা লাগবে।"

কাঙারু শুনে খুব ক্ষেপে গেলো। বললো, "দশ টাকা? অসুস্থ একজন কাঙারুর লেজে মালিশ করে দেয়ার জন্য দশ টাকা? তোমার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব বলে কিছু নাই?"

গেছো বাঁদর বললো, "উঁহু, ওসব মেছো বাঁদরদের থাকে। গেছো বাঁদরদের মনুষ্যত্ব ছেলেবেলায় কামিয়ে ফেলা হয়।"

কাঙারু খুব চটেমটে পকেট থেকে একটা ময়লা দশটাকার নোট বার করে গেছো বাঁদরকে দিলো। গেছো বাঁদর একটা আতশ কাঁচ বার করে সেটা দেখতে দেখতে বললো, "আরে, এই দশ টাকার নোটটা কি তুমি নিজে ছেপে এনেছো, নাকি টাঁকশাল থেকে ছাপানো?"

কাঙারু আরো চটে উঠলো। বললো, "আরে, আমার প্রিন্টারে কি এত কালি আছে নাকি? ওটা টাঁকশালের জিনিস, দেখো নম্বর দেয়া আছে।"

গেছো বাঁদর নম্বরটা মন দিয়ে পড়ে বললো, "এখানে মনে হয় একটা অঙ্ক কম আছে!"

কাঙারু বললো, "হতেই পারে না, সরকারী জিনিসে কোন নম্বর কম পড়তে পারে না।"

গেছো বাঁদর বললো, "তাহলে এটা অন্য কোন প্রিন্টারে ছাপা হয়তো!"

কাঙারু বললো, "তুমি আমার লেজে মালিশ করে দেবে নাকি দেবে না?"

গেছো বাঁদর বললো, "উঁহুহু, আগে টাকাটা ভালোমতো পড়ে নিই! দাঁড়াও ওখানে গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে। এটা কার ছবি টাকার গায়ে?"

কাঙারু বললো, "ওটা মিষ্টি মেয়ে ডাগরীর ছবি, আবার কার?"

গেছো বাঁদর খুঁত ধরে শুধু, বলে, "টাকার গায়ে মিষ্টি মেয়ে ডাগরীর ছবি কেন? ওখানে তো বেলগাছিয়া পোস্ট অফিসের ছবি থাকার কথা!"

কাঙারু রেগে আগুন, সে বলে, "আরে বাঁদর, ওটা তো পাঁচ টাকার নোটে থাকে, আর ডালকুমড়ার ফুলের ছবি থাকে পনেরো টাকার নোটে, জানো না?"

বাঁদর বললো, "ওহ! হুমম! ঠিকাছে। আর উল্টোপিঠে এটা কী লেখা, চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দশ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে?"

কাঙারু বললো, "ওসব টাকার গায়ে লেখা থাকতে হয়। নিচে সই দ্যাখো।"

বাঁদর বললো, "সই নেই তো, টিপসই আছে শুধু!"

কাঙারু বললো, "একটা হলেই হোলো!"

বাঁদর ধীরে সুস্থে টাকাটা নিজের মানিব্যাগে ভরে বললো, "এসো দেখি তোমার লেজটা একটু ডলে দেই। লেজ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে এসেছো তো?"

কাঙারু খুব রেগে গেলো এ কথা শুনে। সে বলে, "রাস্তার মধ্যে গরম পানি পাবো কিভাবে?"

বাঁদর বললো, "সে কী! তোমার ময়লা লেজে হাত লাগাতে বলছো?"

কাঙারু তখন টের পেলো, কথা বলতে বলতে তার ব্যথাটা আর আগের মতো নেই। সে বললো, "লাগবে না আমার ময়লা লেজে তোমার হাত দেয়া। আমার দশ টাকা আমাকে ফিরিয়ে দাও।"

বাঁদর বললো, "টাকা তো ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। চাইলে এক জোড়া পাখা নিতে পারো। গত হরতালে পথে কুড়িয়ে পেয়েছি। এখনও নতুন আছে।"

কাঙারু বললো, "পাখা দিয়ে আমি কী করবো?"

বাঁদর বললো, "পাখা লাগিয়ে উড়তে পারো। তাহলে আর লেজে ব্যথা পেতে হবে না।"

কাঙারু রাজি হয়ে গেলো, বললো, "এক জোড়া পাখার দাম তুমি দশ টাকা রাখছো কেন? আট টাকা রাখো।"

বাঁদর বললো, "আমার কাছে ভাংতি কেবল এক টাকা আছে।"

কাঙারু বললো, "আচ্ছা এক টাকাই দাও ফেরত।"

বাঁদর মানিব্যাগ থেকে একটা একটাকার নোট বার করে দিলো।

কাঙারু তখন আতশ কাঁচটা নিয়ে সেই একটাকার নোটটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। সব দেখেশুনে সে বললো, "এই নোটটা তো তুমি নিজে প্রিন্ট করেছো! একটাকার নোটে বেলগাছিয়া পোস্টাপিসের ছবি কেন? নোটের নম্বরের জায়গায় লেখা ২+২=৪, আর উল্টোপিঠে লেখা, "বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না"!"

বাঁদর ব্যস্ত হয়ে বললো, "আমার একটাকার নোট আমাকে ফিরিয়ে দাও বলছি!"

কাঙারু ডানা জোড়া পরতে পরতে বললো, "কেন?"

বাঁদর বললো, "ওটা আমার আতশ কাঁচের ভাড়া!"

কাঙারু রেগেমেগে এক টাকার নোট বাঁদরকে ফিরিয়ে দিয়ে উড়তে উড়তে বেরিয়ে গেলো।

কিন্তু কাঙারুর শান্তি নাই, কয়েকদিন পর সে দেখলো আরো অনেকে পাখা লাগিয়ে উড়তে শুরু করেছে, মাটিতে লাফানো, হাঁটা, গড়ানো কোনটাই নাকি আর নিরাপদ নয়। আকাশের গলিতে গলিতে ট্রাফিক জাম লেগে গেলো।

যারা কষ্ট করে পাখা ঝাপটায়, তাদের কি আর ট্রাফিক জাম পোষায়? কয়েকদিন পর লেগে গেলো মারামারি। উল্টোদিক থেকে উড়তে উড়তে আসা গোবদা চেহারার একটা গরিলা এসে কাঙারুর লেজ মুচড়ে মারলো এক চড়।

কাঙারু চড় খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, "তুমি আমার লেজে ব্যথা দিলে কেন? তোমার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই?"

গরিলা বললো, "ওসব মেছো বাঁদরদের থাকে, গরিলাদের মনুষ্যত্ব ছেলেবেলায় উপড়ে ফেলা হয়।"

কাঙারু মন খারাপ করে ডানা দু'টো খুলে আবার মাটিতে নেমে লাফাতে লাফাতে ফিরে গেলো গেছো বাঁদরের কাছে।

"তোমার পাখা তুমি ফিরিয়ে নাও, আমার দশটাকা আমাকে ফিরিয়ে দাও।" বললো কাঙারু।

বাঁদর বললো, "উঁহু, বিক্রি করা মাল ফেরত নেই না আমি। তাছাড়া কালকে আকাশে হরতাল, একটু তক্কে তক্কে থাকলে বিনা পয়সায় অনেক পাখা পাবো আমি। পয়সা খরচ করে তোমারটা কেন নেবো?"

কাঙারু বললো, "কে ডেকেছে হরতাল?"

বাঁদর বললো, "পাখিরা। ডানাঅলা পশুদের জ্বালায় উড়তে পারছে না বেচারা, ভয়ানক অসুবিধা হচ্ছে ওদের।"

কাঙারু মন খারাপ করে বাড়ি চলে গেলো।

তার পরদিন আকাশে হুলুস্থুলু হরতাল হলো। অনেক পাখির পালক ভাঙলো, অনেক পশুর ডানা কাটা পড়লো, বড় কয়েকটা কালো কালো মেঘে আগুন দেয়া হলো, তারা কাঁদতে কাঁদতে আসাম চলে গেলো।

কাঙারু গেছো বাঁদরের বাড়ি লাফাতে লাফাতে গিয়ে দেখে, বাঁদর কতগুলি রঙিন ঘুড়ি নিয়ে বসে আছে। কাঙারুকে দেখে সে বললো, "ঘুড়ি কিনবে ঘুড়ি? আশি টাকা এক কুড়ি!"

কাঙারু বললো, "ঘুড়ি দিয়ে আমি কী করবো?"

বাঁদর বললো, "ঘুড়ি দিয়ে মানুষ কী করে? ওড়াবে!"

কাঙারু বললো, "আকাশে তো হরতাল চলছে!"

বাঁদর বললো, "হরতালে আকাশে ঘুড়ি চলে, কোন সমস্যা নেই!"


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

তাপ্পর?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দ্রোহী এর ছবি

আয় হায়! তারপর কি হল?

জার্মান দ্যাশ কেমন লাগছে?


কি মাঝি? ডরাইলা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

গেছো বাঁদর বললো, "উঁহু, ওসব মেছো বাঁদরদের থাকে। গেছো বাঁদরদের মনুষ্যত্ব ছেলেবেলায় কামিয়ে ফেলা হয়।"

গরিলা বললো, "ওসব মেছো বাঁদরদের থাকে, গরিলাদের মনুষ্যত্ব ছেলেবেলায় উপড়ে ফেলা হয়।"

রাষ্ট্রের পবিত্র বাঁদর ও গরিলাদের প্রতি এহেন কটাক্ষের পিছনে অপশক্তির মদদ আছে । দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে এর নিন্দা জানানো পাঠক মাত্রই কর্তব্য ।

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

ছি ছি, কী কথার কী অর্থ করেন ...


হাঁটুপানির জলদস্যু

অমিত আহমেদ এর ছবি

পড়লাম... তেমন আমোদ পেলাম না অবশ্য।


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

অতিথি এর ছবি

হিমু নামটা আর ব্লগের লেখা দেখে মনে হচ্ছে, তোমার সাথে একবার একসাথে বুয়েটে কুইজ করেছিলাম। মনে আছে? আমাদেরকে যে আইবিএ-র গেছো বাঁদররা চুরি করে হারিয়ে রানার্স আপ হল? ভালো থেকো।

হিমু এর ছবি

চুরি করেনি ভাইয়া, আমরাই বেসামাল হয়ে গিয়েছিলাম।

আপনি কি মাহবুব ভাই?


হাঁটুপানির জলদস্যু

আরিফ জেবতিক এর ছবি

পড়ে আমোদ পাইলাম।
আর এক্সপোর্ট হয়ে গেছেন শুনে ব্যথিত হইলাম।
শালার এমন এক দেশ,এক্সপোর্ট কোয়ালিটির জিনিষপত্র দেশে রাখার জো নেই,সব রফতানি হয়ে যায়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হুম
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সৌরভ এর ছবি

হিমু ভাই, থ্যাংকু। আপনার শিশুতোষ দুইটা গল্প পড়ে ব্যাপক আমোদ হইলো।
তবে, গল্পের ক্যাঙারুটা এত গবেট কেনো?



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তারেক এর ছবি

মজার! হাসি

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।