জার্মানির দু'টি জিনিস আমার খুবই পছন্দ হয়েছিলো প্রথম যখন আসি, ২০০৩ সালে। পারলে বাড়ি নিয়ে যেতাম। একটা হচ্ছে ট্রাম, আরেকটা তাদের নিয়মিত গরম পানির সরবরাহ। আমার মনে হয়েছিলো এই দুটা জিনিস পেলে একটা শহরের চেহারা পাল্টে যেতে বাধ্য। কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়ে স্টপেজে এসে দাঁড়াচ্ছে ট্রাম, পিলপিল করে উঠে পড়ছে মানুষ, জানালা দিয়ে তাকালে সবসময় চারপাঁচজনকে দেখা যাবে জান বাজি রেখে ছুটতে ছুটতে আসছে।
কাসেলে আমি যেখানটায় থাকি, সেখানে বাসে চড়ে চলাফেরা করতে হয়। কাসেলের বাস অতটা সময়ানুবর্তী নয়, প্রায়ই দু'তিন মিনিট দেরি হয়। তবে ট্রামের সময় বাসের সময়ের সাথে এমনভাবে সেট করা যাতে করে কেউ বাস দেরি করার কারণে ট্রাম মিস না করে। তারপরও শহরের ব্যস্ত জায়গাগুলিতে শেষ সেকেন্ডের দৌড়বাজদের অভাব হয় না। তারা তরুণী হলে দৃশ্যটা বেশ "ভালো লাগে"।
ছাত্রাবাসগুলি গোটা শহরে ছড়ানো, আমারটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। প্রথম যেদিন আমার রুম বুঝে নিতে গেলাম, সেদিন যাকে বলে ফর দ্য আম্পটিন্থ টাইম টের পেলাম জার্মান সময়ানুবর্তিতা কাকে বলে। আমি সব সময়ই লেট লতিফ, দেশে থাকতে বিএসটিতে বাস করলেও চলাফেরা করতাম এইচএসটিতে [হিমু স্ট্যান্ডার্ড টাইম, অ্যাপয়ন্টমেন্টের সাথে এক ঘন্টা বা এক দিন যোগ করে নিতে পারেন], সেই অভ্যাস তো আর ফট করে একদিনে পাল্টানো যায় না, তাই নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগেই টিপটিপ বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় আধ ঘন্টা হেঁটে পৌঁছে গেছি শ্টুডেন্টিশেস ভোওনেন এর সামনে। কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়ে শ্টুডেন্টেনভেয়ার্কের লোগো আঁকা একটা বদখদ গাড়ি এসে ভিড়লো রাস্তার উল্টোদিকে। আমি মনে মনে বললাম, "খাইছে!" কপালে দুঃখই আছে আমার।
লম্বায় সাড়ে ছয়ফুটের মতো হলেও আমার হাতে চাবি হস্তান্তর করতে আসা সেই ভদ্রলোক, যার নাম আমি শুনেও ভুলে গেছি, বেশ অমায়িক, তবে প্রথমেই আমার টাকা জমা দেয়ার রসিদ দেখতে চাইলেন। আমি তখনো টাকা জমা দিইনি শুনে তিনি আমাকে গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে গিলেন শ্টুডেন্টেনভেয়ার্কের অফিসে। কাসেলেবাসীদের জার্মান উচ্চারণ কিছুটা অন্যরকম, আমার কান হোখডয়েচ শুনে অভ্যস্ত, তাই তাদের কথাবার্তার উত্তরও খানিকটা দেরিতে দিতে হয়। আমি কোন দেশ থেকে আসছি, কাসেল শহর কেমন লাগছে, খুব ঠান্ডা মনে হচ্ছে কি না, বৃষ্টি নিয়ে আমার কী অভিমত ... এইসব আলাপ চললো যেতে যেতে। জার্মানরা আর কিছু বলার না পেলে আধঘন্টাখানেক আবহাওয়া নিয়ে কথা বলে যেতে পারে।
যথাস্থানে কড়িপ্রয়োগের পর এসে আবার আমার কে জানে ক'দিনের ঠিকানায় এসে হাজির হলাম। দুই রুমের অ্যাপার্টমেন্ট, দু'জন থাকার জন্য। সাধারণত ছাত্রাবাসে লৈঙ্গিকসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়, ভেবেছিলাম সেরকমই ঘটবে, কিন্তু দুঃখের বিষয়, সোয়া ছয়ফুট লম্বা আরেক জার্মান ছোকরা আমার মিটবেভোওনার, জানলাম। কোথায় পূর্ব ইয়োরোপের কোন নিঃসঙ্গ পক্কবিম্বাধরোষ্ঠীশিখরীদশনাস্তোকনম্রাস্তনাভ্যাংশ্রোণীভারাদলসগমনা বালিকাকে আমার হামকামরা হিসেবে পাবো, তা না, শালার পোড়া কপাল আর কাকে বলে! অবশ্য আমার প্রতিবেশী, আইরিশ বংশোদ্ভূত জার্মান, জামুয়েল তার নাম, অত্যন্ত ভদ্রলোক এবং সদালাপী। বাথরুম কাম টয়লেট এবং রান্নাঘর ব্যবহারের দিক থেকেও সে সদাচারী।
যাই হোক, চাবি এবং ঘর বুঝে পাবার পর আমি জানালা খুলে একবার বাইরে তাকালাম। উচ্চ অক্ষাংশের আকাশ দেখতেও কিছুটা অন্যরকম। আমার ফেলে আসা নিজের ঘরের কথা মনে হলো একবার, অনেক চর্চায় শিখে ফেলা দীর্ঘশ্বাস হ্রস্বীকরণ আবারও কাজে লেগে গেলো। বর্গমিটারে মাপা আমার ঘরটার দিকে ফিরে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, এটাকে শিগগীরই ময়লা করে একটা ঘরোয়া ভাব আনতে হবে, এত সাফসুতরো ঘরকে নিজের বলে মেনে নিতে আমার কষ্ট হবে।
মন্তব্য
ব্যাপার কী, খসড়া প্রকাশ করলে পেছনে যায় কেন?
হাঁটুপানির জলদস্যু
দারুন হচ্ছে। চলুক কাসেলের বর্ণনা।
কি মাঝি? ডরাইলা?
হিমু কি বদ্দার প্রতিবেশি হইয়া গেল নাকি ?
______ ____________________
suspended animation...
হ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
খসড়া থেকে প্রথম পেইজে প্রকাশ সিলেক্ট করতে হবে। তাহলে প্রথমে প্রকাশিত হবে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
- জানালা দিয়া যে পাঁচ-ছয়জন দেখা যায় দৌড়ান্ত- খুঁজে পাবি আমাকে তাহাদেরও ভিড়ে, কে জানি লেখছিল কবিতাটা?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মজা লাগছে পড়তে।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
ভালৈতেসে।
জামুয়েল না কি কৈলেন, ঐটারে ভাগানোর ব্যবস্থা কৈরা বদ্দার সাব্রিনারে রাখা যায় কিনা দ্যাখেন।
(তবে, দুষ্টজনেরা বলে, আপনাকে নাকি গত সপ্তায় আপনার আলমাম্যাটার এর সামনে বাদাম খেতে দেখা গেছে। আমি অবশ্য বিশ্বেস করিনা এসব। )
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
বাসায় না থাকুক পাশের বাসা তো আছে...উদ্যোগ নেওয়াটাই আসল কথা...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
একে একে সব গুলো পড়বো আজ! এই পর্ব থেকে স্টার্ট করলাম।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
আড়াই বছর লঙ জাম্প দিলো ক্যামনে?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
শুধু লং-এ এই জাম্পের মাহাত্ম্য প্রকাশ পাবে না। এইটার জন্য নতুন নাম দরকার....
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
খুব ভাল হইসে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ভাল থাকবেন।
নতুন মন্তব্য করুন