দেখোনি?
কিভাবে দেখবে, ছোটনের আলোদাদু তো আর তোমাদের চিলেকোঠায় থাকেন না। তোমরা তো ছোটনদের বাড়ির ছাদে খেলতেও আসো না। সেখানে শুধু ছোটন আর ছোটনের বন্ধু মিনি খেলা করে।
এখন হালকা শীত পড়ে গেছে। ছোটনকে সন্ধ্যাবেলা হাফ সোয়েটার পরতে হয়। মিনিও একটা সোয়েটার পরে আসে। ছাদের ওপর চুন দিয়ে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট কাটা, সেখানে সবসময় নেট টাঙানো থাকে। সন্ধ্যের পর ছোটনের কাকু আর বড়দা মিনির বাবার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলে হুঁক হাঁক গাঁক গাঁক করে। ছোটন আর মিনি সন্ধ্যে হবার আগে আগে নিজেদের ড়্যাকেট দিয়ে কিছুক্ষণ খেলতে পারে শুধু।
কিন্তু নতুন কর্ক পায় না ছোটন বা মিনি। তারা শুধু আগের দিন যেসব কর্ক দিয়ে বড়রা খেলেছে সেগুলি দিয়ে খেলতে পারে। অবশ্য কখনো কখনো ছোটন চুপিচুপি তার কাকুর কর্কের ব্যারেল থেকে একটা নতুন কর্ক সরিয়ে রাখে, সেদিন সে আর মিনি খুব আনন্দ নিয়ে খেলতে পারে। পুরনো কর্কগুলির পালক খসে যায়, সেগুলি দিয়ে খেলে মোটেও ভালো লাগে না।
সন্ধ্যে যখন হবো হবো করে, তখনই ছোটনের আলোদাদুর ঘরের বাইরে একটা লাল আলো জ্বলে ওঠে! এর মানে হচ্ছে, সন্ধ্যে হয়ে গেছে, বাচ্চারা ঘরে ফিরে যাও। ছোটন আর মিনি তখন হুড়োহুড়ি করে ঘরে চলে যায়।
ছোটনের আলোদাদু খুব রাগী মানুষ। সবাই তাঁকে ভয় পায়। কিন্তু তিনি কাউকে ধমক দেন না, কাউকে চড়চাপড় দেন না। তাঁর চেহারাটাই খুব গম্ভীর আর রাগী, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো। তাঁর মস্ত একজোড়া বাঁকানো গোঁফ আছে, তিনি খুব রেগে গেলে শুধু গোঁফ ধরে টানেন।
বড়রা যখন ব্যাডমিন্টন খেলতে আসে, তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তারা বেশি হইচই করতে সাহস পায় না, পাছে আলোদাদু ছাদের বেগুনি আলো জ্বালিয়ে দ্যান! বেগুনি আলোর মানে হচ্ছে, বড়রা সবাই এবার ঘরে ফিরে যাও!
আলোদাদু কথা বলেন কম, তিনি শুধু আলো জ্বালান আর বন্ধ করেন। তাঁর ঘরে অনেকগুলি বাল্ব। ঘরের ভেতরে এমনিতে একটা সাদা টিউব লাইট জ্বলতে থাকে, মরিয়মের মা খাবার নিয়ে যেতে এক মিনিট দেরি করলেও আলোদাদু একটা প্রকান্ড গনগনে নীল দুশো ওয়াটের বাল্ব জ্বালিয়ে দেন ঘরে। মরিয়মের মা তখন এসে বলে, "আল্লাগো, বড় চাচা গোস্যা করছে!"
আবার মাঝে মাঝে আলোদাদু তাঁর ঘরে বসে বই পড়েন, তখন শোরগোল করা নিষেধ। তখন তাঁর দরজার ওপর একটা হলুদ গোল বাল্ব জ্বলে ওঠে, যার অর্থ হচ্ছে, এখন গন্ডগোল করলে খুব সমস্যা হবে!
এছাড়া দাদুর ঘরে আরো নানা রঙের বাল্ব আছে, সেগুলির সবক'টার অর্থ ছোটন বা মিনি বোঝে না। মাঝে মাঝে দাদু যেমন ছোটনকে পড়াতে বসেন, ছোটন কোন অঙ্ক বা ট্র্যান্সলেশনে ভুল করলে দাদু খুট করে একটা মিটমিটে কমলা রঙের বাতি জ্বালিয়ে দেন। ছোটন তখন সেটা আবার করতে চেষ্টা করে। ঠিকঠাকমতো করতে পারলে দাদু আবার সেটা নিবিয়ে দ্যান।
মিনি অবশ্য খুব দুষ্টু, আর অনেক সাহসী। মিনি আলোদাদুকে তেমন ভয় পায় না, মাঝে মাঝে গিয়ে সে আলোদাদুকে জ্বালাতন করে। সে বিভিন্ন রঙের আলোর অর্থ জানতে চায়। যেমন বলে, "দাদু, আপনার মাথার ওপরে এই করলার মতো আলোটার অর্থ কী?"
দাদু গম্ভীর হয়ে বলেন, "ওটা তুমি বুঝবে না!"
মিনি বলে, "কেন বুঝবো না?"
দাদু তখন আরো গম্ভীর হয়ে একটা আবছা সবুজ বাতি জ্বালিয়ে দ্যান। যার মানে হচ্ছে, এখন ঘর ছেড়ে বেরোও, আমাকে বিরক্ত করো না।
মিনি তবুও দাদুকে খোঁচায়, "ও দাদু, বলেন না!"
তখন ছোটন হয়তো এসে দাদুকে উদ্ধার করে, "অ্যাই মিনি, আমার দাদুকে জ্বালাতন করিস কেন? চল, দেখছিস না সবুজ বাতি জ্বলছে?"
মিনি অবশ্য দাদুকে তখন আর জ্বালায় না।
তবে মাঝে মাঝে আলোদাদু আলো নিয়ে খেলা করেন। এমনি এমনি অনেকগুলি আলো একসাথে জ্বালিয়ে দ্যান, আবার একসাথে নিভিয়ে দ্যান। কখনো কখনো একসাথে কমলা আর সবুজ বাতি জ্বলতে থাকে, কখনো নীলবাতি লালবাতি হলুদবাতি বেগুনিবাতি জ্বালিয়ে দেন পর পর। দাদুর মুখটা তখন অনেক নরম হয়ে আসে, কখনো কখনো তিনি হো হো হো করে হাসেন নিজের খেয়ালে। দাদু অবশ্য টের পান না যে ছোটন আর মিনি তখন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে তার কান্ডকারখানা দ্যাখে।
মিনি বলে, "দাদু মনে হয় আলো দিয়ে খেলা করেন।"
ছোটন বলে, "আলো দিয়ে কেউ খেলে?"
মিনি বলে, "হুঁ, যারা ব্যাডমিন্টন খেলতে পারে না তারা আলো দিয়ে খেলো।"
ছোটন কিছু বলে না, গম্ভীর মুখে মিলিকে টেনে সরিয়ে খেলতে নিয়ে যায়। আলোদাদু নিজের ঘরে আপনমনে আলো জ্বালান আর নেভান।
মন্তব্য
দারুণ।
মাঝে বেগুনী আলো দিয়ে বড়দের ফিরতে বলার জায়গায় এসে হেসে ফেলেছি, আর হাসিটা মিলিয়ে যাওয়ার আগেই পুরোটা পড়া হয়ে গেছে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হিমু ভাই, 'মিনি' গল্পের শেষ লাইনে 'মিলি' হয়ে গেছে যে!
ঠিক করে এই কমেন্টটা মুছে দিয়েন।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
লাল বাতি নীল বাতি, হাসি হাসি গন্ধ...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
হৈলো না।
...লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ।'
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মজা পেলাম দেখি.।।...... আমিও এখন থেকে বাত্তি জ্বালামু...কিন্তু কোন রঙের?
চমৎকার গল্প। পিচ্চিতোষ সিরিজ লেখা চলুক.....
কি মাঝি? ডরাইলা?
পিচ্চিতোষ! আমিও তাহলে পিচ্চি হয়ে গেছি
দেবদ্যুতি
নতুন মন্তব্য করুন