কাসেলে হেঁটে বেড়ানোর জায়গা আছে অনেকখানি। শহরের পাশে জঙ্গল আর পাহাড়। ফুলদা নদীর পারে অনেকখানি পথ জুড়ে বাইসাইকেলামোদী আর হন্টনপ্রেমিকদের ভিড়। বুগা বলে একটা হ্রদের মতো অংশ আছে, তার পাশে উঁচুনিচু ঢেউ খেলানো টিলা, সেখানে গ্রীষ্মে লোকে ছুটির দিনে পিকনিক করে। ফুলদার পাশে অনেকখানি জায়গা নিয়ে উঁচু জায়গায় হেসেন প্রদেশের এককালের রাজাগজাদের শাসনকাজ চালানোর কেন্দ্র, অরাঁজেহ্রি। সেখানে ঘোড়া চালানোর রাস্তা, মানুষ চরার পথ, খোলা মাঠ, সবই আছে। সাধারণত আবহাওয়া ভালো থাকলে লোকজন ওদিকেই হাঁটতে বেরোয়।
কাসেলে কুকুর পোষে এমন লোক প্রচুর। প্রায়ই দেখা যায় বাঘের মতো বড় কুকুর নিয়ে বাসে উঠছে রোগা চেহারার কোন ভদ্রলোক, অথবা প্রকান্ড কোন মহিলার কোলে বাঁদরছানার মতো নিরীহ জুলজুলে চোখের কোন ছোট্ট কুকুর। একজনের কুকুরের সাথে আরেকজনের কুকুরের মারপিট লেগে যাবার মতো পরিস্থিতিও হয় মাঝে মাঝে, কুকুরের মালিকেরা বেল্ট ধরে টানতে টানতে নিজেদের মধ্যে সারমেয়শাস্ত্রের নানা জটিল অধ্যায় আলোচনা করতে থাকেন। আমাদের দেশে কুকুরের মোটামুটি একই চেহারা, সেই পরিচিত নেড়ি, কালেভদ্রে বড়লোকেরছাড়াপাওয়াফিরিঙ্গিকুকুরেরআদলবাহী নেড়িসন্তান, অথবা দুয়েকটা খাঁটি শ্বেতাঙ্গ কুত্তা। এখানে কুকুরের চেহারায় দারুণ বৈচিত্র্য, বিভিন্ন জাতের কুকুরের মুখোমুখি হতে হয় পথে বেরোলেই। দোকানপাটে কুকুরের প্রবেশ নিষেধ, তার ছবি ঝুলতে থাকে সব সুপারমার্কেটের দোরগোড়ায়। তবে বড় বড় শাখায় কুকুর আর বেড়ালের জন্য আলাদা অংশ আছে, সেখানে কুকুরবেড়ালের আরামআয়েশআদরশাসনের হরেক জিনিসপত্র শোভা পায়, খুঁটিয়ে দেখে সৈয়দ সাহেবের পাদটীকা গল্পটার কথা মনে পড়ে গেলো। লাট সাহেবের কুত্তার একটা ঠ্যাঙের সমান মূল্য নিয়ে গভীর শোকাচ্ছন্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ হাউজটিয়ার অংশটি ছেড়ে চকোলেটের শেলফের দিকে যাই।
বাসে প্র্যাম বা কিন্ডারভাগেন আর হুইলচেয়ারের যাত্রীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। কোন হুইলচেয়ার আরোহীকে দেখলে ড্রাইভার একটা বাঁকা স্টিলের রড বার করে ছুটে যায়। তারপর বাসের ড়্যাম্প খুলে তাকে ওঠার সুযোগ করে দেয়। নামার সময়ও একই ব্যাপার। এখানে বাসগুলি কোন স্টপেজে কিন্ডারভাগেন দেখলে একটু কাত হয়ে ফ্লোর লেভেল ফুটপাতের কাছাকাছি নিয়ে আসে। দেখি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। একদিন দেখিস, আমরাও ...। ঢাকার রাস্তায় একজন প্রতিবন্ধী চলাচল করার সাহসই পাবেন না হয়তো।
কাসেলে অজার্মানের সংখ্যা কম নয়। তুর্কি ধাঁচের চেহারার প্রচুর লোক দেখা যায় পথেঘাটে, পথ চলার সময় আশেপাশে বিচিত্র ভাষার কাকলি শোনা যায়। দক্ষিণেশীয়দের পরিচিত চেহারার ধাঁচ চোখে পড়ে কদাচিৎ। বাস বা ট্রামযাত্রীরা বেশিরভাগই এক কানে এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি গুঁজে দিয়ে সঙ্গীতে মগ্ন হয়ে যান। আমাদের দেশে যেমন বাসের মধ্যেই কোন প্রসঙ্গে সমবেত আলাপ জমে ওঠে, এখানে তার সম্ভাবনা নেই বলতে গেলেই চলে। স্কুলের সময় যে পিচকিগুলো বাস ভর্তি করে হইচই করতে করতে যায়, তাদের কয়েকটার কানেও দেখি এমপিথ্রির অব্যর্থ শরচিহ্ন। মিউনিখে যে সামান্য সময় ছিলাম ২০০৩ এর শেষে, তখন দেখেছি, ট্রামের ভিড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকজন বই পড়ছে, কে জানে, এখন হয়তো তারাও এককান রুদ্ধ করে নিজের জগতে ডুবে যাচ্ছে যাত্রার সময়টুকু। ঢাকায় চলাচলের সময় সুযোগ পেলে ব্যাগ খুলে বই বার করে পড়তাম, এখানে সুযোগ থাকলেও হাতের কাছে ভালো বই নেই।
মন্তব্য
হুম খাশা ।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
অসাধারণ একটা সিরিজ হচ্ছে। চলুক বর্ণনা....
কি মাঝি? ডরাইলা?
যথারীতি ভালো অবজার্ভেশন।
তবে বুগা লেকের আসল আকর্ষণ বাদ গেছে। একবার ব্রেমেনও ঘুরে আসতে পারো সামারে। ওখানে আকর্ষণীয় জিনিস আরো বেশি পাওয়া যাবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এদিকে সামার প্রায় শেষ ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এই না হলে হিমু!
চমৎকার সাবলীল
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
পড়ে মজা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে শীতের সকালে মুখ ভর্তি মুড়ি সাথে চা'য়ে চুমুক।
প্রতিটি প্রবাস পর্ব মন দিয়ে পড়ছি। এ রকম অসাধারণ লেখা আরো চাই।...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
এসে পড়বো নে!
নতুন মন্তব্য করুন