পরে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন খুঁটিয়ে দেখলাম। কয়েকজন মিলে একসাথে বাস করার ব্যাপারটা এখানে ভেগে (ভোওনগেমাইনশাফট) নামে পরিচিত। কোন অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিলে আগে থেকে জানিয়ে দিতে হয় যে ভেগে হিসেবে নেয়া হচ্ছে, তখন বাড়িঅলা ভেগে-র সদস্যদের আলাদা ভাড়াটে হিসেবে গণ্য করবে এবং সেই অনুযায়ী চুক্তি হবে। বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপনগুলিতে অ্যাপার্টমেন্টের মোট ক্ষেত্রফল, ঘরের সংখ্যা আর ভাড়ার রকমসকম জানানো হয়। ঘর গরম করার খরচ বাদে যে ভাড়া তাকে কাল্টমিটে বলে লোকে, সেই ঠান্ডা ভাড়া, আনুষঙ্গিক খরচ (নেবেনকস্টেন) আর নিরাপত্তা খরচ (কাউৎসিওন) সব মিলিয়ে যা আসে। তবে সরজমিন খোঁজ নিলে দেখা যায় আরো হ্যাপা। হয়তো অ্যাপার্টমেন্টে রান্নাঘর নেই, চুলা আর ফ্রিজ কিনে রান্নাঘর বানিয়ে নিতে হবে! হয়তো টয়লেটে পানির নিরাপদ সংস্থান নেই। নানা ল্যাঠার সম্ভাবনা প্রবল।
একসাথে বিভিন্ন দেশের লোক থাকতে গেলেও মুশকিল। একেকজনের একেক রকম অভ্যেস। আমার পড়শী জামুয়েল যেমন চুলো প্রায় ব্যবহার করেই না, মাঝেমধ্যে চা খাওয়ার জন্য পানি গরম করে শুধু। সে কিভাবে দিনের পর দিন পাঁউরুটিতে জ্যাম, বা মাখন বা জেলি বা পনির মাখিয়ে খেয়ে যাচ্ছে দেখে আমি শুরুতে বিস্মিত হয়েছিলাম। একইভাবে জামুয়েলও আমার পর্বতপ্রমাণ মশলাসহ তরকারি রান্নার তোড়জোড় দেখে আতঙ্কিত। মিউনিখে যে ভোওনহাইমে ছিলাম, সেখানে এক ফ্লোরে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মহাদেশ থেকে কেউ না কেউ ছিলো, তখন দেখেছি চীনা বা ফরাসীরা টয়লেটের মায়া না করেই মুষলধারে হেগে রেখে চলে যায়, চীনা আর কোরিয়ানদের রান্নার পর রান্নাঘরের চেহারা আর গন্ধে গ্রাউন্ড জিরো ছাড়া আর কিছু মনে হয় না, আর একটা মাত্র কিচেন নিয়ে আট-দশজনের মধ্যে হালকা খিটিমিটি লেগে যায়। সুমন চৌধুরীর এক পড়শিনী নানা ছুতো তুলে ঝগড়া করে যেমন হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছে। আমাদের রান্নার বদনাম কেউ করতে চাইলে একটাই করতে পারে, একটু ঝাঁঝালো ব্যাপারস্যাপার হয়। তবে সুমন চৌধুরীর নতুন কানাডিয়ান পড়শী ইতিমধ্যে ভেড়া আর গরুর মাংসের ভুনার ভক্ত হয়ে গেছে, সে রীতিমতো চেয়ে চেয়ে খায়!
ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঘরে টেবিল, চেয়ার, বইয়ের শেলফ, আলমারি আর একটা দিনে-সোফা-রাতে-খাট দেয়া হয়। জার্মানদের আসবাব অত্যন্ত মজবুত, প্রায়ই ভারি আর আর্গোনোমিক হয়। এছাড়া রান্নাঘরে ফ্রিজ, দুইপদের চুলা, ক্যাবিনেট আর খাবার টেবিলচেয়ার দেয়া হয়।
নিজের ঘরে ওঠার পর ইকেয়াতে গিয়েছিলাম হাঁড়িকুড়ি সহ আর যা যা বালছাল লাগে সেগুলি কিনতে। অনেক খুঁজে, অনেক ঢুঁড়ে, অনেক দামী জিনিসের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে শ' শ' শেলফের গহীনতম কন্দর থেকে ভালোর মধ্যে সবচে' সস্তা জিনিস খুঁজে বার করে কিনেছি। তার মধ্যে আছে হাঁড়ি, সসপ্যান, ছুরি, কাটাকুটির বোর্ড, থালাবাসন, ভাজাভুজির জিনিস, চামচ-কাঁটা-ছুরি, টেবিল ল্যাম্প, খোসাসুদ্ধু কম্বল, প্রভৃতি। ইকেয়া নিয়ে পরে আরো কিছু বকার বদিচ্ছা রইলো, এখন কিছু খাই, পেটটা চোঁ চোঁ করছে।
মন্তব্য
কিছু পিকচার টিকচারও লাগাও - জার্মানির যা দেখছি, সবই 'রান লোলা রান' দেখার সময়
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমার ডিজিটাল ক্যামেরা নাই। তাই ছবির জন্য অপেক্ষা করতে হবে কিছুদিন। ছবি হাতে পেয়ে গেলে নিশ্চয়ই যোগ করবো। আর গ্রীষ্মকালে তো আজেবাজে ছবি দিয়ে ভরিয়ে ফেলবো ভাবছি। আরে মুহাহাহাহাহাহাহাহা!
হাঁটুপানির জলদস্যু
আসুক গ্রীষ্ম, পাল্লা দিয়ে আমিও ছবি দেবো। সচলে নাহয় সুন্দরীবর্ষন হয়ে যাবে এক পশলা!
বদনার কথা কিছুই দেখি লেখা নাই। আমি অবশ্য বাগানে পানি দেয়ার ঝাঁঝরি দিয়েই কাজ চালাই।
কি মাঝি? ডরাইলা?
মাত্র তো হাঁড়িকুড়ি কিনলাম। তারপর রান্না। তারপর খাওয়া। তারপর ঘুম। তারপর হাগা। তাআআআরপর আসবে বদনা।
হাঁটুপানির জলদস্যু
দেশ থেকে আসার আগে কেউ যদি জানতে চায় কী আনবে সাথে, আমি বলি শুধু বালিশ আর বদনা আনতে। প্রবাসীমাত্রই কারণ জানেন।
আমি এই দফায় মাকে দিয়ে দেশ থেকে বদনা আনিয়েছি। লুইসিয়ানা থাকতে অ্যাটলান্টা পর্যন্ত ড্রাইভ করে গিয়ে বদনা নিয়ে এসেছিলাম সুভেনির হিসেবে। অধমের আবার গুঁচিবাই বেশি একটু!
পড়ছি নিয়মিত।
জার্মান নারীসমাজ নিয়ে কিছু লিখবেন না?
হাগা, বদনা?
ছিছি, কীসব আজেবাজে কথাবার্তা এখানে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হুম
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বদনার অভাবে মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিয়ে খুব সুন্দর কাজ চালানো যায়।আমি একবার নেপালে এই পদ্ধতিতে কাজ করে নিজের প্রতিভায় এতোই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে ঢাকাতেও এই পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
বাসাওয়ালারা রাজি হয় নি।
হুমমম! এই ব্যাপারে পাঠকদের সাড়া আমাকে একটি বদনা ও তৎসম্পর্কিত তৎপরতা নিয়ে পোস্ট লিখতে উৎসাহিত করছে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বদনা ও তত্সম্পর্কিত তত্পরতা নিয়ে ভালো ব্লগানোর ক্ষেত্রে একটা বড় জটিলতা হলো বদনার নল আসলে ব্যবহারিক খন্ড ত। ব্লগে আবার খন্ড ত ঠিকঠাক আসে না।
বদনা আসবে তো?
বদনা
যাক ধরাছোঁয়ার বাইরে রহস্যময়ী বদনার একটা পিকচার দিলাম। জার্মানির পথে-ঘাটে ঘুরতে ঘুরতে এই ছবির কথা মনে রাখতে হবে। তবেই কাতরাবে ভালো বদনার জন্য বিরহ বেদনা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
স্টুডেন্ট অবস্থায় তবু ভালো, প্রাইভেট বাসা নিলে বছর শেষে একটি আকাশচুম্বী বিল ধরিয়ে ইলেকট্রিসিটি আর ঘর গরম রাখার খেসারত হিসেবে ভালোমত একটা ডলা দিয়ে দেয়। বাংলাদেশীদের আবার রেগুলার রান্না করতে হয়, ইলেকট্রিসিটির ব্যবহারের জন্য ব্যাপারটা মারাত্মক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সেরকম মজার সিরিজ এইটা
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
নতুন মন্তব্য করুন