প্রবাসে দৈবের বশে ০০৮

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ১২/১০/২০০৭ - ৭:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ভাষাপ্রীতির ইতিহাস নিয়ে অযথা প্যাঁচাবো না ভেবেছিলাম, কিন্তু একটু বলতে হচ্ছেই। মাতৃভাষা বাদে অন্য ভাষার প্রতি আমার একটা সহজাত টান সবসময় কাজ করে। ইংরেজি ভাষাটা লেখাপড়ার মধ্যে এত বিশ্রীভাবে গুঁজে দেয়া যে টিনটিন না থাকলে হয়তো আমি ভাষাটার প্রতি একটা বিতৃষ্ণা আরো দীর্ঘদিন অনুভব করতাম। বিটিভির চমৎকার সব সিরিয়াল আর বৃহস্পতিবারের মুভি অব দ্য উইকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়। জন "হ্যানিবল" স্মিথের মতো চুরুট কামড়ে ধরে একদিন আমিও গড়গড় করে ইংরেজি বলতে পারবো, এ আত্মবিশ্বাস আমি প্রতি সপ্তাহেই নতুন করে ফিরে পেতাম।

আমার অগ্রজ দীর্ঘদিন রুশ ভাষা শিখেছিলেন। ইংরেজি বাদে তৃতীয় একটা ভাষা আমার আগ্রহ প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিলো, বিশেষ করে সিরিলিক হরফ। রুসকি ইয়াজ্ক দ্লিয়াভজিয়েখ (সবার জন্যে রুশ ভাষা) লেখা সেই রহস্যময় বইগুলি মাঝে মাঝে উল্টেপাল্টে দেখতাম, কিন্তু সিরিলিক হরফ পর্যন্তই আমার দৌড়, আর পরবর্তীতে খুচখাচ ইয়ো তে লিউবলিউ ... সেই বইতে ছবি এঁকে দেখানো ছিলো কিভাবে গলার গভীর গহীন থেকে এক একটা শব্দ উগরে দিতে হয়, খুবই আগ্রহমারা পদ্ধতি সেটা, বিশেষ করে সদ্যকিশোরদের জন্য।

রুশ ভাষা আমার আর শেখা হয়নি, ক্লাস সেভেনে উঠে জানতে পারলাম আরবী শিখতে হবে দু'বছর। আমার আরবীর পারিবারিক শিক্ষার দৌড় হরফ পর্যন্তই, আমার বাবার কাছ থেকে শেখা। সেই আক্ষরিক জ্ঞান সম্বল করে আমি স্কুলের আরবী শিক্ষকের কাছে পিঠ আর চিত্ত সমর্পণ করলাম। তখন মনে হতো তিনি আমার প্রতি অকারণ বিদ্বিষ্ট ছিলেন, তা না হলে গরুর মতো পেটাবেন কেন? তাঁর বেতের ভয়ে নয়, প্রচন্ড ক্রোধ আর বিদ্বেষ নিয়ে আমি আরবী চর্চা শুরু করি। বাসায় রাতের বেলা বসে বসে ইংরেজি ট্রান্সলেশন ফেলে আমি আরবী লেখা চর্চা করতাম, খুব গর্বের সাথে বলতে পারি, আমার আরবী লেখা মুক্তাক্ষরের মতো ছিলো। রাজুলুন আলিমুন থেকে বাড়তে বাড়তে মোটামুটি নাজমুল আদাব আর খায়রুল আদাবের চিপাগলিও আমি চর্চা করে ফেলি। ক্লাস সেভেন আর ক্লাস এইট, দু'বছরই আমি আরবীতে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছিলাম স্কুলে। ক্লাস নাইনে উঠে আমি দুইবছরের বিদ্বেষ ঝাড়ি আরবী বইগুলিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। আমার আরবী জ্ঞানও অতি দ্রুত আবার রাজুলুন আলিমুনে নেমে আসে। স্কুলের টেস্টে আমার আশাতীত রকমের ভালো নাম্বার ছিলো ধর্মশিক্ষায়, কিন্তু এস এস সিতে লেটারও পাইনি।

নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার সময় কিছুটা খারাপ যাচ্ছিলো। পিতৃবিয়োগের শোকের পাশাপাশি নতুন বন্ধুবৃত্ত গঠনের বিচিত্র প্রক্রিয়া, আর নটরডেম কলেজের পদার্থবিদ্যা ব্যবহারিক ক্লাসে একের পর এক "রিপীট" খেয়ে আমি একেবারে জেরবার হয়ে যাই, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলেজে একরকম বন্দী। টেবিল টেনিস আর কতক্ষণ খেলা যায়, আমি লাইব্রেরির বিভিন্ন গলিঘুঁপচি ঘেঁটে অচিরেই ইতালিয়ান, ল্যাটিন আর স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষার বিশাল এক লিখিত রিসোর্স আবিষ্কার করি। ইতালিয়ান ভাষার ওপর তেমন বেশি বই ছিলো না, ল্যাটিনের ওপরও কম ছিলো, কিন্তু স্প্যানিশের ওপর কম করে হলেও গোটা দশেক ব্যকরণচর্চার ফাঁপা বই ছিলো। আমি সেগুলিকে বসে বসে সমাধানের চেষ্টা করতাম। শুধু বই পড়ে শেখা সেই তুচ্ছ স্প্যানিশ দিয়ে আমি ইয়াহুতে প্রথম বন্ধুত্ব করি এক মেক্সিকান বালিকা, আদ্রিয়ানা ওচোয়ার সাথে। আদ্রি পরবর্তীতে আমাকে ডিকশনারী, বই, চিঠি, কার্ড এবং অনেক মিষ্টি মেইল করে দীর্ঘদিন স্প্যানিশের প্রতি আমার ভালোবাসাকে জিইয়ে রেখেছিলো।

কিন্তু বই পড়ে ভাষা শেখা যায় না। ভাষা লিখে, পড়ে, বলে, শুনে, ভেবে শিখতে হয়। যে কোন বিদেশী ভাষা শেখার উপায় হচ্ছে সেই ভাষাভাষিণী কোন তরুণীর সাথে প্রেম করা, কিন্তু ঢাকায় হিস্পানিক ভাষা শিক্ষাসুযোগ বা হিস্পানিক ভাষাভাষিণী প্রেমাস্পদা, দুই-ই অপ্রতুল। এ ভাষাটা আমার আজও শেখা হয়নি, পণ করে রেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশিক্ষাকেন্দ্রে আগামী সেমেস্টারে সুযোগ ও অর্থাগম ঘটলে স্প্যানিশ শিখেই ছাড়বোই ছাড়বো।

এর পর আমার ভাষা শিক্ষা মোড় নেয় ফরাসীর দিকে। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে উদ্ভিন্নযৌবনা সব বালিকাদের সাথে দুই টার্ম ফরাসী শিখে আমি কিছুটা বিরতি নিই। আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মিজানুদ্দিন খান (তখন শিক্ষক দেখে কোর্স বাছাই করা যেতো), জানিনা তিনি এখনও শেখান কি না, মাঝখানে শুনলাম কঙ্গো চলে গিয়েছিলেন।

ফরাসীতে হঠাৎ বিরতি পড়ে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে। বেশ মানসিক চাপের মধ্যে থেকে দুই হাজার দুই থেকে জার্মান শেখা শুরু করি গোয়েটে ইনস্টিটুটে। উদ্দেশ্য, নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

এরপর আবারও এপ্রিল থেকে জার্মান আর ফরাসী একসাথে শেখা শুরু করি। সে এক আপদ। ফরাসী ক্লাসে গিয়ে ইয়া বলে ফেলতাম, জার্মান ক্লাসে উয়ি। ফরাসী শিক্ষক স্বপন বর্মণও জার্মান শিখতেন, তিনি চোখ রাঙাতেন কেবল, মুখে কিছু বলতেন না। তো, সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিজাবির পর হয় ফরাসী, নয় জার্মান, নয় ফরাসী-জার্মান দুই-ই, নয়তো টিউশনি, আমি খুব আঁটো একটা রুটিনে ঢুকে পড়ি।

আমার কান ফরাসী ভাষাকে মুখের ওপর না বলে দেয়। কোঁ কোঁ করে ফরাসী লোকজন কী বলে আমি কিছুই ধরতে পারি না, কিন্তু জার্মানটা আস্তে আস্তে সড়গড় হয়ে আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ফরাসী শেখায় ইস্তফা দিয়ে দিই দ্যো সঁ দ্যো শেষ করে। আমার বন্ধুদের অনেকেই খুব চোস্ত ফরাসী জানে, আমি ফরাসীমূর্খ হয়ে জার্মান শিখতে থাকি মালকোঁচা মেরে।

আমার জার্মান শিক্ষায় বিশেষভাবে গতি এনে দেয় একটি বৃত্তি, গোয়েটে ইন্সটিটুটের প্রেমিয়েনষ্টিপেন্ডিয়ুম, বাহান্ন দিনের জন্য মিউনিখের গোয়েটে ইন্সটিটুটে আমি মিটেলষ্টুফে (মাধ্যমিক) পর্যায়ে জার্মান ভাষা শিখতে যাই। আমার কান আর মুখ দুটোই খুব ভালো তৈরি হয়ে গিয়েছিলো ঐ কোর্সের পর, তবে মুখটাকে আমি ২০০৫ এর শুরুর দিকে এসে হারিয়ে ফেলি, এখনও কিছুটা হাতড়ে জার্মান বলতে হচ্ছে।

জার্মান ভাষার ওপর এ যাবৎ আমি চারটি পরীক্ষা দিয়েছি, তার প্রায় প্রতিটিই প্রায় হাগিয়ে দেয়ার মতো ছিলো। ২০০৩ এর জানুয়ারিতে যখন ৎসেট-ডে দিই, তার কয়েকদিন আগে বান্দরবন থেকে ফিরেছি সূর্যোৎসবের ট্রেকিং শেষ করে, হাতে পায়ে প্রচুর ব্যথা। ডিসেম্বরে যখন ৎসেটএমপে দিই, তখন পরীক্ষা রীতিমতো কঠিন হয়েছিলো, বিশেষ করে বায়ার্ন এর আঞ্চলিক টানে বলা জার্মান ছিলো হোয়রফেরষ্টেয়েনে (শুনে-বোঝা)। ২০০৬ এ দিই টেস্টডাফ, আর ২০০৭ এ এসে দিলাম ডেএসহা (বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান ভাষায় পরিচালিত কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য ভাষার পরীক্ষা)। টেস্টডাফ টোয়েফল বা আইইএলটিএসের মতো, সেটাতে আমি দুটি ইউনিটে নব্বই শতাংশের বেশি, একটিতে আশি শতাংশের বেশি পেলেও লিখিত পরীক্ষায় আশি শতাংশের কম নাম্বার পেয়েছিলাম বলে কাসেল বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ডেএসহা দিতে একরকম বাধ্য করে। সেখানে আমাকে পেতে হবে সাতষট্টি শতাংশ। অনেক দুশ্চিন্তা আর বিরক্তি সম্বল করে পরীক্ষা দিয়ে ঊনআশি শতাংশ নাম্বার পেয়ে শেষমেশ ভর্তি হতে হয়েছে প্রোগ্রামে। টেস্টডাফ দিয়ে আমি রীতিমতো কাহিল হয়ে পড়েছিলাম, এতো প্রচন্ড ক্লান্তি আর কোন পরীক্ষা দিয়ে লাগেনি (জার্মান ভাষার পরীক্ষাগুলি সবই পাঁচ ঘন্টার ওপরে)। ডেএসহা তুলনামূলকভাবে সহজ, পাশ করে বুঝলাম, আশির কম পেলে চলবে না, সাতষট্টির ওপরে পেতে হবে।

এই দীর্ঘ পরীক্ষার অভিজ্ঞতায় যা বুঝলাম, তা হচ্ছে, আমি জার্মান রুশের মতো না শিখে, আরবীর মতো ভুলে গিয়ে, স্প্যানিশের মতো অধরা রেখে, ফরাসীর মতো মাঝপথে থামিয়ে পার পাবো না। আমাকে জার্মান কুপিয়েই খেতে হবে। কাজেই আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া এ পরীক্ষার ঝাল একমাত্র টিউটোনিক বালিকাদের ওপরই ঝাড়তে হবে। কাজেই কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুষ্টু মেয়েরা, ফোরজিখট!


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

ৎসেট-ডে
ৎসেটএমপে
টেস্টডাফ

এইগুলান কী?
জার্মান বালিকাদের জন্যে সমবেদনা। বিদঘুটে বিদেশি কামড়ানো এই লোকটার হাতে যেন না পড়ে.. হাসি


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

যা-ই বলুন, ল্যাটিন শেখা সহজ নয়।
এ লেখার শেষ শব্দটার অর্থ কি?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ফোরজিখট (স্ট্যান্ডার্ড জার্মান, সব রাশান রা এমনিতেই কথা বলে। তার মানে এই না যে তারা পারফেক্ট জার্মান বলে। আসল কারণ হলো, এদের নিজেদের ভাষাতে 'খা', 'খো' এর পরিমান বেশি) / ফোরজিশট (ম্যাংগো পিপোলের জার্মান) মানে হলো - "সাবধান"

আমি বুঝি না হুজুরে আ'লা এই বদখত জার্মান ভাষার পিছে পড়ছে ক্যালা। কোন জার্মান কাউলা মাইয়ার প্রেমে হৈচ্চেনি হালায়?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুকরিয়া।
হুজুরে আলা হইল কবে? হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

(বেড়াল)

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যেভাবে শুরু করেছিলেন, সবগুলো ভাষা শিখে ফেলতে পারলে তো আমরা আরেকজন ড. শহীদুল্লাহ পেয়ে যাচ্ছিলাম! হাসি

--------------------------------------

ক্লাস নাইনে উঠে আমি দুইবছরের বিদ্বেষ ঝাড়ি আরবী বইগুলিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে।

ব্লগে লিখে বেঁচে গেলেন, নাহলে মৃত খতিবের কবরে গিয়ে আপনাকে মাফ চাইতে হতো। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বুঝলাম



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ভাষাপ্রীতির ব্যাপারটি আমারও আছে বলেই মনে হয়। তিনটে বিদেশী ভাষা মোটামুটি রপ্ত করেছি। স্প্যানিশ-ইটালিয়ানের প্রতিও টান ছিলো, কিন্তু সেই টান আমার আলস্যের কাছে বরাবরই নিরঙ্কুশ পরাজয় বরণ করেছে।

তবে আরবীর ব্যাপারটি আলাদা। বিতৃষ্ণা ছাড়া আর কিছুই অনুভব করিনি ওই ভাষাটির প্রতি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

জানিনা,আরবী ভাষার প্রতি কেন সবার এত আক্রোশ?? এই ভাষা কি এমনই এক মশা যে সবার গন্ডারের চামড়াকেও ভেদ করে ছোবল মেরে দেয়??আমি বিস্মিত আরবী ভাষার এই ভয়ংকর রুপ দেখে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভাষা হিসেবে আরবি ভয়ঙ্কর নিশ্চয়ই নয়। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে আমাদের ওপর জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেওয়া হয় বলে।

এই লেখাটি এবং তার মন্তব্যগুলোতে পরিষ্কার যে বিদেশী অন্য ভাষাগুলো সবাই শিখতে যায় নিজের আগ্রহে। আরবির বেলায় তা ঘটে বাধ্যতামূলকভাবে এবং এমন বয়সে করা হয় যে মস্তিষ্ক ও মেধা সেই ভার গ্রহণে প্রস্তুত থাকে না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই মাল এরশাদের আবিষ্কার।সম্ভবত :শুধু এই কারনেই আমি এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকতাম। হাসি

আমি আরবীতে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছিলাম ৩৯ ।সেটা ক্লাস সেভেনের হাফইয়ার্লিতে।কিভাবে পেয়েছিলাম ,জানি না।আমার লেখাপড়ার ইতিহাসে এভাবে বহুবারই অকারনেই উচ্চ নাম্বার পাওয়ার ইতিহাস আছে।

বন্যা এর ছবি

হিমুর লেখা পড়ে অনেকদিন পর সেই অত্যাচারের কথা মনে পরে গেল। সেই রাগে আমার এখনও আরবি শুনলেই আত্মাটা জ্বলে যায়। জন্মাতে না জন্মাতেই চোখ কান বন্ধ করে বাচ্চাগুলোকে আরবি পড়ানো শুরু করানো হয়। আর সেই পড়ানোর ধরণটাও কি অদ্ভুত!! একটা ভাষা না বুঝে না শুনে গবেটের মত শুধু পড়ে গেলে যে কোন লাভ হয় না সেটা কি আমরা বুঝতে পারিনা?

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

স্বপন বর্মণ আমাদেরও গুরু! সেই ৯৭-৯৮ সালে শিখছিলাম তার কাছে - ফাটাফাটি শিক্ষক। তোমাদের আবীর-ও তো ফ্রেঞ্চে ওস্তাদ আছিলো। আমিও অনেক ভাষা ধরলাম ছাড়লাম মাগার আয়ত্ব করা হইলো না। উদাহরণ --

১) জাপানী - ৩ মাস (১৯৯১) - জোস লাগছিলো
২) ফরাসী - ৩ বছর (ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা ১৯৯৭-২০০২)
৩) রুশ - ৩ সপ্তাহ (২০০৪) - এক্কেরে ভাল্লাগেনাই
৪) ইতালিয়ান - এখনকার চকচকা নতুন প্রজেক্ট - সেলফ স্টাডি!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অমিত এর ছবি

হায়, সবাই যদি জানত যে আবীর কেন ফরাসি শিখতে গেছিল !!
______ ____________________
suspended animation...

অমিত এর ছবি

হ। চেনেন নাকি ?
______ ____________________
suspended animation...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই বঙ্গে জন্মাইয়াছিল এক বঙ্গাল।

আরশাদ রহমান এর ছবি

আমি ইস্কুলে রুশ ভাষার ক্লাস নিসিলাম কিন্তু এখন কিছু মনে নাই। তখন রুশ ভাষার সবই প্রায় পড়তে পারতাম। অর্থও জানাতাম বেশ। চর্চা নাই বলে খিছু শব্দ ছাড়া এখন কিছুই মনে নাই। ক্লাসে দেরি করে গেলে শিক্ষিকা রুশ ভাষায় বলতে বলতো " লুসচে পোজনা চিয়েম নিকাগদা"।
ফরাসী আমার কাছে খুবই কঠিন লাগে। দুই একদিন চেষ্টা করছিলাম দাঁত ভাইঙ্গা যাওয়ার অবস্থা।

দ্রোহী এর ছবি

হায়!! চাঁদের এক পিঠে আলো, আর আরেক পিঠে কালো- এইটাই নিয়ম বোধ করি!

হিমু কত্তো কিছু জানে! আর আমি!

বাংলা ও পারি না।

ইংরেজীও পারি না। !!


কি মাঝি? ডরাইলা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

যে যাই বলুক,পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে চিটাগাঙ আর সিলেটের ভাষায় কথা বলা।

আমি ফরাসী একটা শব্দ শিখেছিলাম বহুত কষ্ট করে ।মেতসি।
মেতসি মানে ধন্যবাদ।

অমিত এর ছবি

জেবতিক ভাই, শব্দটা কিন্তু মেতসি না, অনেকটা মেহসি টাইপের বলা যায়। আর হ টা বলার সময় গলার মধ্যে মোটামুটি ১১৫ হর্সপাওয়ার এর একটা ইনজিন লাগায় পেটের মধ্যে থেকে একটা টান দিতে হয়।
______ ____________________
suspended animation...

সৌরভ এর ছবি

উচ্চারণটা বোধহয় "মেগ্ঘসি" হয়। Merci লেখে। কিন্তু হ, গ আর ঘ যুক্ত করে কেম্নে এই r উচ্চারণ করে, এইটা অতীব সুন্দরী কোন ফরাসী তরুণী বললেও আমার কাছে বিভ‍ৎস শোনায়।

ফ্রেশম্যান যুগে দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা হিসেবে এক বছর ফ্রেঞ্চ শিখছিলাম, পুরা আমপারা টাইপ পড়াশোনা। মাঝবয়েসী ফরাসী রমণী যা বলেন, তাই রিপিট করি। কিছুই আর শেখা হয় নি।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অমিত এর ছবি

হ +ঘ +ড় এর এক অদ্ভুত গার্গল উচ্চারণ।
______ ____________________
suspended animation...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমিতো মেতসি দিয়েই দিব্যি কাজ চালিয়ে এলাম।

হিমু এর ছবি

ইয়ে, পৃথিবীর দুইটা কঠিন কাজের মধ্যে একটা পারি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কুনটা ?চিটাগাঙিটা না ছিলটীটা?

ছিলটীটা পাল্লে তউ লন্ডন যাইতাগি আছলা,হিকানো আফনার লাগি বউত সুবিদা অইলোঅনে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হ, মেখসি বক্কু।
ভাষা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা হিমুর প্রায় কাছাকাছি।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হযবরল এর ছবি

পসিব্লে পারা উস্টেড।

ঈদ মোবারক।

অভিজিৎ এর ছবি

আমাকে জার্মান কুপিয়েই খেতে হবে। কাজেই আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া এ পরীক্ষার ঝাল একমাত্র টিউটোনিক বালিকাদের ওপরই ঝাড়তে হবে। কাজেই কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুষ্টু মেয়েরা, ফোরজিখট!

হুমম ...'কুপিয়ে খাওয়া' শেষ হলে খবর দিয়েন হাসি আপনার গবেষণালব্ধ ফলাফল সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছুক ।
লেখার জন্য যথারীতি পাঁচ তারা...

========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভুড়ি কমাইতে হইবো। তবে কথা ঠিক। জার্মান গার্লফ্রেন্ড থাকলে ল্যাংগুয়েজ শেখা তরতর করে এগোবে।

ভাষা শেখা মানে বিশাল শাস্তি। অলস হওয়ার কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। অলস হলে আর যা-ই হোক, ভাষা শেখা সম্ভব না। আমি শর্টকাটে বিশ্বাসী। কিন্তু ভাষার ক্ষেত্রে শর্টকাট তেমন একটা চলে না। ভোকাবুলারি জিনিসটাই মেজাজের ১২ট বাজিয়ে দেয়। জিআরই দিয়েছিলাম সাকুল্যে তিন শ' শব্দ মুখস্ত করে। ভারবাল-এ স্কোর যা ছিলো, সবই গেস করে করে টিক মারার ফল। যারা এমন কঠিন কাজ চরম ধৈর্য্যের সাথে করতে পারে, তারা নমস্য।

৬৭% এর ভেজাল উত্তোরণে কনগ্রাচুলেশনস। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মাশীদ এর ছবি

আহ্ আরবি! আমাদের স্কুলেও ক্লাস সিক্স-সেভেনের দিকে কেন যেন আৎকা আরবি ভাষা শিক্ষা শুরু হয়, ধর্ম শিক্ষার পাশেপাশেই, আবার আৎকাই বন্ধ হয়ে যায়। সেবার প্রথম হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষায় ক্যামনে জানি নোরীন আর আমি (যারা কিনা সাধারণত ইংলিশে হাইয়েস্ট নাম্বার পেতাম) আরবিতে হাইয়েস্ট নাম্বার (৮৮) পেয়ে গেলাম। এখন 'কাইফা হালুকা' (কেমন আছেন) আর 'উসফুরুন' (চড়ুই পাখি) ছাড়া প্রায় কিছুই আর মনে নেই। এস এস সি'তেও ধর্মে বেশ ভাল নাম্বার পেয়েছিলাম (৯৪), পরীক্ষায় ১২ টা আরবি আয়াত লিখে। সেগুলোর একটাও মনে নেই, অথচ ক্লাস এইটের ধুমপান আর মদের কুফল চ্যাপ্টারের একটা আরবি আয়াত এখনো মাথায় গেঁথে আছে কোন এক অজ্ঞাত কারণে - 'ইন্নালমুবাজ্জিরীনা কা'নূ ইখ্ওয়ানাশশায়াতীন' (নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই)। মনে হয় আমার বিশ্রী অপব্যয়ের স্বভাবকে কটাক্ষ করে। ইংলিশ ছাড়া আর কোন বিদেশী ভাষা পারিটারি না। মালে ভাষাটা শেখার তালে আছি। ইংলিশ হরফ বলে বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা না। আপাতত টুকটাক কিছু শব্দ আর ১-১০ পর্যন্ত পারি খাইছে । তবে এই ভাষাটা শুনলেই কেমন যেন বিশ্রী লাগে। যেমন দুধের malay হচ্ছে susu ইয়ে, মানে...


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ইন্নামাল আ'মালু বিন্নিয়াত।

- সংক্ষিপ্ততম হাদিস। শুধু এটুকুই মনে আছে। বাকিটা নিরন্তর বদমাইশির কাহিনী।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- susu রে তুই গোসল বানায়া ফেল। ভাষা কোন ব্যাপার না। মিশরের লোকদের দেখতিনা তারা ছবি আঁইকা আঁইকা কথা কইতো। ওহ, তুই কেমনে দেখবি, এইটা তো কোটি কোটি, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ যুগ আগের কথা। যাউকগা, যা কইতাছিলাম- ভাষা ইজ নট এ প্রবলেম ফর চপিং উড। হাতে একটা কুড়াল হইলেই কাম চইলা যাবে।

আর হাদিস নিয়া তুই চিন্তা করিস না। 'অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই'- বইন তো আর না। তাইলে তুই ডরাস ক্যান মহিলা? এই হাদিস ব্যাটা ছেলেগো লাইগা। আউরাতগো লাইগা না।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

সবাই কত্ত ভাষা পারে!আর আমি তো কিছুই পারিনা!ধুর!

রিসালাত বারী এর ছবি

ক্লাস সিক্স থেকে এইট পর্যন্ত আরবী বাধ্যতামূলক ছিল। প্রাথমিক ভরাডুবির পর আমরা আরবী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করলাম (শেখার উদ্দেশ্যে কারোই ছিল না)। শুধু পরীক্ষার আগের মাসটায় কিছুদিন যাতায়াত করতাম আর প্রতি মাসে মাইনে ঠিকঠাক দিয়ে যেতাম। পরীক্ষার আগের দিন সংক্ষিপ্ততম সাজেশন পাওয়া যেত (পরীক্ষায় ২০টা প্রশ্ন থাকলে সাজেশনে ২১ টা থাকত!!)। এরপর সেই সাজেশন সবার মাঝে বিতরণ করে সবাই আরবীতে ব্যাপক নাম্বার পেতাম। যারা প্রাইভেট পড়ত তারা সবাই হাইয়েস্ট পেলেও অপড়ুয়াদের কিঞ্চিত কম দেয়া হত। এই দূর্ণীতি নিয়ে আমার কোন অনুশোচনা নাই তবে আরবী শিক্ষকের প্রতিও কোন দিন শ্রদ্ধা অনুভব করিনি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মিজান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করার জন্য লাইবেরিয়া অথবা সিয়েরা লিওনে গিয়েছিলেন। তিনি দেশে ফিরে আসার পরে বেশ কয়েক বার দেখা হয়েছে। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। তখনও তিনি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে পড়াতেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।