ইস্কুল খুইলাছে।
প্যান্ডোরার বাক্সও পাশাপাশি খুলে গেছে মনে হলো। বেশ কলিজা কাঁপানো কোর্স, হপ্তায় বিশ ঘন্টা ক্লাস, কিন্তু তার পরও প্যান্ট নষ্ট হয়ে যাবার একটা উজ্জ্বল হলদে সম্ভাবনা দেখছি চোখেমুখে। টানা দুই ঘন্টার ক্লাস, প্রফেসরেরা হাসি হাসি মুখে বকে চলে, এদিকে আমার অবস্থা কাহিল। প্রথম দু'দিন গেলো শক্তির অর্থনৈতিক হালচাল নিয়ে ব্লকফেরআনষ্টালটুং, সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মুষলধারে লেকচার, মাঝে কেবল তিনটা দশ মিনিটের ব্রেক আর একটা রোগাভোগা লাঞ্চব্রেক। মেনজা (বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন)তে না খেয়ে হামলা করলাম সুমন চৌধুরীর রান্নাঘরের ওপর, যিনি কি না লেকচার হলের পাশের ভবনেই থাকেন।
কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস বলা যেতে পারে হল্যান্ডিশার প্লাৎসকে। বেশ গোছানো সুন্দর ক্যাম্পাস, পুরোটা লাল ইঁটের, এককালে এটা ছিলো হিটলারের অস্ত্রকারখানা, একটা বিশাল চিমনি আজও রয়ে গেছে। লেকচার হল বেশ চমৎকার। আমার সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই মধ্যবয়স্ক, আবার একেবারে চ্যাংড়াও আছে কিছু। ব্লক ফেরআনষ্টালটুঙে পুরো একটা কোর্সের বক্তব্য দু'দিনে বোঝানো হয়, কাজেই প্রফেসর ফিশেডিক বেশ দ্রুত এগিয়ে গেলেন। প্রথম দফায় একটু সমস্যা হচ্ছিলো তাঁর কিছু কথা বুঝতে, প্রেজেন্টেশন না থাকলে হয়তো মাথার ওপর দিয়ে চলে যেতো। পরিবেশ প্রসঙ্গে দেখলাম সরাসরি বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হতে যাচ্ছে। কফিবিরতির সময় কয়েকজন এসে পাকড়াও করলো আমাকে, আমি বিমর্ষ মুখে জানালাম, দেশে গিয়ে ভালো দেখে একটা নৌকা কিনবো। মনে মনে ভাবলাম, বিএমডব্লিউকে ভালো দেখে কিছু মোটরবোট বানানোর পরামর্শ দেয়া যেতে পারে আমাদের গুলশানপট্টির হিজলতমালদের জন্য।
পর পর দুইদিন নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশ আর অর্থনীতির চাপে পিষ্ট হয়ে আজ সকালে বায়ুশক্তির ওপর ক্লাস করতে গেলাম ইঙ্গশুলেতে। প্রফেসর হায়ার বেশ স্পষ্ট লেকচার দেন, বেশ রসিক মানুষ, শুরুতেই নিজের লেখা বইগুলি গছিয়ে দিলেন। পোলাপানও পোংটা কম না, একজন জানতে চাইলো, লেখকের কাছ থেকে কিছুটা সস্তায় বই পাওয়া যাবে কি না। হায়ার প্রশান্ত হাসি হেসে জানালেন, নিজের বই তিনি নিজে বিক্রি করতে পারেননা, আইনত পেজগি আছে। তবে দশবারোজন কিনতে চাইলে তিনি অর্ডার দিয়ে আনিয়ে দিতে পারেন। তাঁর লেখা জার্মান বই তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও ইংরেজি সংস্করণের দাম একশো ঊনত্রিশ ইউরো। এরপর তিনি কিছুক্ষণ মুলামুলি করে পরীক্ষার তারিখ ঠিক করলেন। একঘন্টার পরীক্ষা হবে, ক্রেডিটপিছু দশমিনিট করে। তারপর অনবদ্য লেকচার দিলেন জার্মানিতে বায়ুশক্তি নিয়ে। ভদ্রলোক এই ক্ষেত্রে খুবই অভিজ্ঞ, প্রাথমিক প্রায় সব বড় প্রজেক্টে ছিলেন, নিজের তোলা ছবি দিয়ে প্রেজেন্টেশন সাজিয়েছেন।
আরো কিছু ক্লাস আজ না হওয়ায় বাড়ি ফিরে এসেছি। এই ক'দিন সচলে ঠিকমতো বসতে পারিনি, ভবিষ্যতে সমন্বিত বাঘ কিংবা অপরিণত ঘুড়ার খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে মনে হচ্ছে। বুড়া বয়সে ক্যান যে আবার লেখাপড়া করতে গ্যালাম!
মন্তব্য
লেখা থেকে উদ্ধৃতি:
পরিবেশ প্রসঙ্গে দেখলাম সরাসরি বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হতে যাচ্ছে।
এইসব কথা বেশি বিশ্বাস কইরেন না। এসব একটু উঁচু মানের চাপাবাজি। এর পেছনে রাজনীতি জড়িত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের রাজনীতি কিভাবে সাইন্স ল্যাবে তৈরি হয় সে বিষয়ে যদি কোনো পেপার লিখতে হয় তবে আমারে আওয়াজ দিয়েন। ভালো কালেকশান আছে।
লেখা যথারীতি দুর্দান্ত। চলুক।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
এই বিষয়ক বিতর্কগুলি নিয়া আসলেই বিড়ম্বনায় আছি...পশ্চিমে আল গোর বিরোধী গ্রুপ দেখলাম বেশ সরব এখন...আবার তেল কোম্পানীগুরির বিরুদ্ধেও কি কি নিয়া অভিযোগ উত্থাপিত হইতেছে...বিষয়গুলি নিয়া একটা পোস্ট দিলে উপকৃত হইতাম...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
আসলেই কি বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপারটা বানানো?অনেকেই তো এই উষ্ণায়নের পুরো ব্যাপারটাকেই উড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন। ভাস্কর ঠিকই বলেছেন এখন পশ্চিমে একটা অংশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং আল গোরের বিরুদ্ধে খুবই সোচ্চার... কিন্তু এদের বেশীরভাগই কন্সারভটিভ এবং রিপাবলিকানদের অংশ। বিজ্ঞানীরা কিন্তু এব্যাপারে যথেষ্ট পরিমানে গ্রহনযোগ্য সব তথ্য হাজির করেছেন। পৃথিবীর কয়েক শ' হাজার বছরের ইতিহাস দেখলে উষ্ণায়নের একটা প্যাটার্ন দেখা যায়, তবে বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের চোখের সামনে যেটা এখন ঘটছে সেটা আগেরগুলোর তুলনায় বেশ অন্যরকম। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন অংশ এটাকে ব্যবহার করছে সেটা যেমন অস্বীকার করার উপায় নাই, তেমনি সব বৈজ্ঞানীক তথ্যকে উপেক্ষা করে একে উড়িয়ে দেওয়াও কি ঠিক হবে?
আমার মনে হয় আপনিই সেই দুষ্টদের গোদা! আপনার কুবুদ্ধিতেই এইসব জিনিস জার্মানির লেকচার হলে চলে এসেছে! আসেন খালি একবার কাসেলে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
পইড়া মজা পাইলাম।
ক্যামনে ল্যাখেন এতো রস দিয়া?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সন্ন্যাসী, এইটা হিমু মিয়ার ইস্পিশাল রস - এই রস দিলে রেসিপি ভালো না হইয়া পারেনা!
হিমু, তুমি কাসেল-এ থাকো তা তো জানতাম না। তোমাদের কাছেই রটেনবুর্গ - সেই রটেনবুর্গের মানুষখেকো Armin Meiwes-এর ঘটনা পড়তেছিলাম আজকে, কাজে ফাঁকি দিয়া। খবিসের উপরেও বড় খবিস লোক ছিল।
P.S. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন - অনুবাদ দিয়াই তো কাইত কইরা দিলা!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আহহারে!
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
এর একটা সুন্দর নাম আছে ।ভীমরতি ।
বুড়া বয়সে করবেন বিয়া,তা না কইরা বাংলাদেশে কবে পানিতে ডুববো,সেইটা জানতে বাংলাদেশ ফালাইয়া জার্মানি গেছেন ।জীবনের কী অপার অপচয় ।
এই কমেন্টে জাঝা। আমার মনের কথাটা কইয়া দিসে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হিমু ভাই:
আপনার ক্লাসে ছেলে-মেয়ের অনুপাত কতো?
এ ব্যাপারটা জানার জন্য আকুল হয়ে আছি।
প্রবাসে দৈবের বশে'র অনুরাগী পাঠক আমি।
আপনার রসবোধ আর শব্দচয়ন ফাটাফাটি রকমের ইয়ে....
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
কেউ আমার প্রশংসা করলে আমার চোখে পানি চলে আসে। মাঝে মাঝে দুঃখে, মাঝে মাঝে আনন্দে। কিন্তু আপনার এই কমপ্লিমেন্টের পর আমার দাঁত আটাশটিই এখন প্রথম প্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণে বেরিয়ে গেছে। দাঁড়ান আপনাকে ভালো দেখে একটা ধন্যবাদ বেছে দিচ্ছি ...
হাঁটুপানির জলদস্যু
যত্ন করে কামড়ানোর মত কোন বালিকা নেই?
কি মাঝি? ডরাইলা?
হিমু পড়েছে আসল চিপায়। কীমজা। তার মানে এরকম মজার মজার আরো লেখা শীঘ্রই আসিতেছে।
বহুদ্দিন বাদে পেট ভরে গোসল করলাম। তারপর মুরগি রান্না করলাম, ভাত রান্না করলাম, বেশ তেলেঝোলে করে খেলাম, বেশ সুর খেলিয়ে ঢেঁকুর তুলে এসে বসতে বসতে দেখি অনেক অনেক মন্তব্য জমা হয়ে গেছে। খুবই ভাল্লাগ্লো দেখে। আমার এই দুঃসময় যে রীতিমতো আনন্দদায়ক এবং আহ্লাদজনক হতে পারে জেনে আমি রীতিমতো পুলকিত বোধ করছি। কতিপয় আদমের আনন্দলাভের জন্য আমি সারাটি জীবন এমন চিপায় অতিপাত করবো ভাবছি।
সবাইকে ধন্যবাদ। আমার সহপাঠিনীরা সবাই জাম্বোসাইজ, এক এক ক্লাসে তেনারা একেক অনুপাতে এসে হাজির হন। এঁদের কামড়াতে গেলে আমার দাঁতের চল্টা উঠে গিয়ে পরবর্তিনীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এদের কামড়াতে হলে বাঁধানো দাঁত আসল দাঁতের ওপর পরে নিতে হতে পারে। আর চারপাশে এত ছয়ফুট লম্বা মেয়ে দেখে আমি ঈশ্বরের ওপর রীতিমতো বীতশ্রদ্ধ। এই দুঃখ পরবর্তী কোন পর্বের জন্য রেখে দিলাম।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হে হে হে হে
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
আহা বেচারা।
কি মাঝি? ডরাইলা?
প্রোফাইলের ছবিটা দেখে একটু চিন্তার উদয় হলো ।কাকে জড়িয়ে ধরে আছেন,জানার খুব শখ ।
শাবনুরকে মনে হয়!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
হিমু,আপনার দুঃখের কাহিনীতে দন্ত বিকশিতকারী আদম গণের সহিত একজন হাওয়া ও আছে।হে হে হে!
লম্বা মেয়ে কি খারাপ নাকি?এই হাওয়া বিবি ও তো ৫ ফুট সাত ইন্চি!আপনি নিজে লিলিপুট সেইটা বলেন!আজকে থেকে ছোলা গুড় খেয়ে রিং এ ঝুলবেন আর ডাম্বেল ভাজবেন।
-বিবাগিনী
বেশি করে চীনাদের সাথে ওঠবোস করতে হবে, তাতে যদি একটু ভরসা পাওয়া যায়। রিঙে ঝুলে এদের সাথে পাল্লা দেয়া যাবে না, চার ইঞ্চি হিলের জুতা খুঁজতে হবে।
আপনি নিশ্চয়ই শৈশবে প্রচুর ছোলা, গুড় ও ডাম্বেল খেয়েছেন। এ বিষয়ে একটা পোস্ট হলে কেমন হয়?
হাঁটুপানির জলদস্যু
হিমু,ছোলাগুড় আর ডাম্বেল তো আপনার মত ক্ষুদ্রমানবদের জন্য!এই মানবী জেনেটিকালী দানবী!
-বিবাগিনী
আসসালামু আলাইকুম খালাম্মা, ভালো আছেন?
কি মাঝি? ডরাইলা?
- শাশুড়ি আম্মা বলেন বা-আদাব দ্রোহী ভাই।
হিমুরে, ঐ হিমু- তোর দুঃখে বিশ্বাস কর আমার কইলজা শুকাইয়া কাঠ হইয়া গ্যাছে রে। এখন খালি কোনরমে একটা হাতুরির টোক্কা দিলেই সব পগারপাড় হইয়া যাইবো। তুই দুঃখ করিস না বাপ। আঁই আইমু নে তোরে দেখতে, আনারস আর কলা লইয়া।
(তোর নাম্বারটা জানিয়ে রাখিস)
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পড়িয়া সেইরকম আমোদীত হইয়াছি!
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন