জার্মানরা দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসছে কবে থেকে জানিনা, কিন্তু তাদের দক্ষতার নজিরগুলি খুবই স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে চোখে। এখানে একটা লোক যতটুকু কাজ করে, আমাদের দেশে তা করতে কয়েকজন লোক লাগবে। বিভিন্ন জায়গায় মেরামতের কাজে দেখেছি দৈত্যাকার কোন লোক একাই দরজার স্টীলের ফ্রেম তুলে নিয়ে আসছে সিঁড়ি বেয়ে, যেটা হয়তো বাংলাদেশে করতে গেলে দু'জন মানুষ লাগবে। তবে শারীরিক শক্তির ব্যাপারটাকে হিসাব থেকে বের করে আনলেও কথাটা খাটে। অন্যান্য কাজ এখানে এমনভাবে সাজানো যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপারটা করে ফেলা সম্ভব। কাগজপত্রের কাজগুলি এরা খুব দ্রুত করে ফেলতে পারে (সবসময় করে তা বলছি না)। বীমা, ফোন, পাস ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম ব্যাটাদের কান্ডবান্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন পড়ে অহরহ, হয়তো কেউ একটা টেবিল বিক্রি করে দিতে চায়, তার নিখুঁত মাপ, ওজন, সব একেবারে সেন্টিমিটার গ্রাম ধরে দেয়া থাকে, যাদের পোষায় তারা একটা রঙিন ছবির প্রিন্টআউট দিয়ে রাখে বিজ্ঞাপনের সাথে। কাঠের বেঞ্চিগুলি ন্যূনতম কাঠ দিয়ে বানানো, কিন্তু প্রচন্ড মজবুত। প্রত্যেকটা জায়গায় এরা স্বল্পতম খরচে সবচেয়ে টেকসই জিনিসটা বানানোর চেষ্টা করে। বাড়িঘরের মেরামতের মাধ্যমে শক্তির অপচয় রোধ নিয়ে একটা কোর্স করছি এবার, সেটা নিয়ে বিস্তারিত একটা পোস্ট দিবো পরে, জার্মানদের আইন ও রাজনীতির সাথে প্রযুক্তির আশ্চর্য যথোচিত সুসম্পর্ক নিয়ে।
জার্মান কীবোর্ড কিনতে হয়েছে কিছুদিন আগে। এই কীবোর্ডে চারটা বাড়তি জার্মান হরফ যোগ হয়েছে, তার সাথে যোগ হয়েছে ডিগ্রী ( ° ), রেফারেন্স ( § ), মাইক্রো ( µ ) আর ইউরো (€)। রোজকার লেখালেখিতে এই চিহ্নগুলির ব্যবহার দেখলেও জার্মানদের মানানুগতার ব্যাপারটা আঁচ করা যায়। এরা ক্লাস নোট তোলে গ্রাফ প্যাডে, যাতে সহজে বিভিন্ন ফিগার আঁকা যায়।
তবে অঙ্কের ব্যাপারে দেখলাম আমার সহপাঠীদের অনেকেই একটু হিমসিম খায়। আমাদের দেশে গণিত যথেষ্ঠ তীব্রভাবে চর্চা করানো হয় উচ্চ মাধ্যমিকেই। যে হিসাবগুলি আমরা ক্যালকুলাস দিয়ে দুই লাইনে করে ফেলে অভ্যস্ত, সেগুলি এখানে ধীরে ধীরে রয়েসয়ে করানো হয় দেখলাম। প্রফেসর একটু নরমসরম হলে ছাত্ররা থিওরির পর গাণিতিক সমস্যার (উয়বুং) ক্লাস করার জন্য গোঁ ধরে। জলবিদ্যুতের ক্লাসে প্রফেসর থিওবাল্ড চার পাঁচটা ফর্মুলা দেখানোর পরই একটা পিনপিন আওয়াজ শুরু হলো, থিওবাল্ড চোখ পাকিয়ে বললেন, ঠিকাছে আমরা নাহয় উয়বুং করবো কিছু, হলো তো?
মন্তব্য
চলুক।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমরা হলাম রাজাবাদশার জাত । কপালদোষে এখন না হয় ফকির হইছি ।
আমি খুব ছোট ছোট বিষয়ে মজার তুলনা খুঁজে পাই । এখানে দুরযাত্রার বাসেও একজনই ড্রাইভার,সেই হেল্পার,সেই টিকিট চেকার । প্যাসেঞ্জারদের লাগেজ ঢুকাচ্ছে,টিকিট চেক করছে ।
আর আমাদের দেশে ড্রাইভাররা হলেন পুরা ওস্তাদ মানুষ । বাস আগে ভর্তি হবে কানায় কানায় । সময় পেরিয়ে যাবে । ওস্তাদের আসার নাম নাই । প্যাসেঞ্জাররা হেল্পারকে গাগালি শুরু করবে । হেল্পার দৌড়ে যাবে ওস্তাদের খোঁজে,ওস্তাদ হয়তো পাশের টি-স্টলে চা খাচ্ছেন । চা খাওয়া শেষ হলে বেশী করে জর্দা দিয়ে একটা পান মুখে ঢুকালেন,তারপর আয়েশে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিতান্ত বিরক্তি সহযোগে বাংলার শেষ ভোদাই নবাবের মতো দুলকী চাল এসে স্টিয়ারিং এ হাত রাখলেন
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এখানে বাস ড্রাইভারগুলি সেইরকম। টিকিট চেক করে, প্রতিবন্ধীদের জন্য ড়্যাম্প নামায়, কেউ জোরে গান বাজালে মাইক অন করে ঝাড়ি মারে, আর বাসে কেউ মদ খেয়ে উৎপাত করলে তাকে ধরে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এরা গনিতের পেছনের থিওরীটিক্যাল ভিত্তিকে অনেক গুরুত্ব দেয়, যা আমাদের দেশে ততটা করা হয়না। আমরা যখন ক্লাশ এইট নাইনে এলজেবরা করতাম, তখন "x" কোন নামবারসিসটেমের মাঝে পড়ে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। এখানে তা ছোটবেলা থেকেই শুরু করা হয়। পরে তার গুরুত্বও টের পাওয়া যায়।
এখানে দুরপাল্লার ট্রেনের চেকারও প্রথম শ্রেনীর যাত্রীদের ট্রেনের রেষ্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে সার্ভাস করেন। সার্ভিসের জন্যে আলাদা ণোক নেবার দরকার পড়ে না। এখানে কাজের মুল্য অনেক বেশী।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
পড়িতেছি - - -
৮-১৩ পর্ব পড়া হল আজ... বই চাই, হিমু ভাই! এক দফা এক দাবী!!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
জার্মানরা দক্ষ কারন তারা খুবই মেথডিকাল। একটি দরজা সারাতে হয়ত হাফ বেলা লাগিয়ে দিল। কিন্তু যা করবে ইন্চি মেপে পার্ফেক্ট। এজন্যেই এদের শ্রমের মুল্য বেশী। স্যাটেলাইট ডিশের দাম রিসিভার সহ ৭০ ইউরো, লাগাতে ২০০ ইউরো।
আর তাদের শক্তির ব্যাপারে আমার কিছু অবজারভেশন আছে। ওরা সলিড ফুড খায় এবং এক্সারসাইজ করে। ফলে বপু দেখলে মনে হয় না কিন্তু শক্তি রাখে প্রচন্ড।
এই সেদিন গেলাম ফ্রান্কফুর্ট (মাইন নয় ওডারেরটা এটি পোল্যান্ড বর্ডারে আরেকটি শহর)। ভিয়াড্রিনা ইউনিভার্সিটি চক্কর দিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসে বসেছি দুপুরের খাবার খেতে পাশের টেবিলে দুজন (ছাত্র মনে হল) বসল ১০টি বার্গার নিয়ে যার মধ্যে চারটি বিগ ম্যাক ও বড় কাপে কোক। ভাবলাম সঙ্গীরা হয়ত আছে কাছে ধারেই। একটু পরে বিষ্ময়ের সাথে দেখলাম না শুধু ওরাই - আস্তে আস্তে বার্গারগুলো খাচ্ছে। আজ শুনলাম ৯ বছরের ছেলে জন্মদিনের পার্টিতে ২৮টি চিকেন উইন্গস খেয়ে ফেলায় উপস্থিত অনেকেই আইটেমটি পায়নি।
বাংলাদেশের লোকেদের মত এত ভেজাল খেলে তাদের এই কর্মক্ষমতা থাকত কিনা এনিয়ে একটি সামাজিক গবেষনা করা যেতে পারে।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
-------------------------------------------------
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
জার্মানদের প্রায় প্রতিটি কাজের জন্য এক দফা লিখিত নির্দেশনা থাকে, কাজের ওয়ার্কফ্লো আর কি। সেই সাথে থাকে দফায় দফায় প্রশিক্ষণ। যে কাজ তারা করে, সেটাতে দক্ষতা না বাড়াতে পারলে কপালে খারাবি আছে।
আমার সহপাঠীদের দেখি প্রায় প্রতিটা ক্লাসের পর এক দফা করে খাওয়াদাওয়া করতে। এরা খাওয়ার পেছনেও তেমন একটা সময় নষ্ট করে না, বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে খায়, পথে চলতে চলতে খায়, ট্রামে বাসে বসে হাপুসহুপুস করে খেয়ে ফেলে, যেটা আমি এখনো রপ্ত করতে পারিনি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
নতুন মন্তব্য করুন