ফোক্সভাগেন যে একটা ভালো গাড়ি আজ রগে রগে টের পেয়েছি আমরা পাঁচজন। যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি বেশ দুর্ধর্ষ ড্রাইভার আর দুর্দান্ত ঠান্ডা মাথার লোক, তাই এখনো বেঁচে আছি সবাই। জার্মানির আউটোবানগুলি সেইরকম, ঘন্টায় দেড়শো থেকে দু'শো কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলে, আমরাও চলছিলাম একশো আশিতে, ঘটনাটা যখন ঘটলো তখন গাড়ির গতিবেগ দেড়শো। সামনের একটা গাড়ি কথানেইবার্তানেই ফট করে বাঁয়ে চেপে গেলো।
দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো মারাত্মক, ঘটেনি। ড্রাইভারের পাকা হাত, ফোক্সভাগেনের গড়ন, যে গাড়ি ধাক্কা মারলো তার হালকাপাতলা সাইজ, ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। তবে ততক্ষণে যা ঘটে গেছে সেটা হলো প্রায়দুর্ঘটনা।
সেই ঘাতক গাড়ি আর আমরা, দু'জনেই ডানে চেপে গাড়ি সাইড করলাম। পিচ্চি এক মহিলা গাড়ি থেকে নেমে এসে আলাপ জুড়ে দিলেন আমাদের সাথে। গাড়ি থেকে একটা লাল হলুদ "আখটুং!" চিহ্ন বার করে শ'খানেক গজ দূরে রেখে আসা হলো। গাড়ি রেন্ট-আ-কারের, তাদের সাথে যোগাযোগ করার পর তারা পরামর্শ দিলো পুলিশকে জানাতে। আমাদের গাড়িতে একটা স্ক্র্যাচ পড়েছে শুধু, সেই মহিলার গাড়ির ডান দিকের রিয়ারভিউ মিরর ভেঙে গেছে।
পুলিশ এলো কিছুক্ষণ পর। টেকো এক মহিলা পুলিশ, আর তার সাথে বিষণ্ন চেহারার এক পুরুষ পুলিশ। মহিলা সব দেখলেন, তারপর কাগজ কলম বার করে জার্মানপুলিশোচিত ঠান্ডা গলায় শুরু করলেন জিজ্ঞাসাবাদ। আমরা জানালাম কী ঘটেছে। সেই পিচ্চি মহিলা আমাদের বক্তব্যকে সমর্থন করে শুধু সাফাই দিলেন, তার সামনে আরো একটা গাড়ি ছিলো, যা হঠাৎ ব্রেক করার কারণেই এই বিপত্তি।
মহিলা পুলিশ যাবতীয় তথ্য নোট করে দিয়ে রায় দিলেন। দোষ ঐ মহিলার। জরিমানা একশো ইউরো। একশো ইউরো তার সাথে নেই, আপাতত তিরিশ ইউরো দিয়ে মহিলা পার পেলেন, বাকিটা পরে শোধ করতে হবে। আমাদের গাড়ির যে ক্ষতিপূরণ ক্লেইম করবে রেন্ট-আ-কার, সেটাও মহিলাকে পরিশোধ করতে হবে। অবশ্য তারও তেমন সমস্যা নেই, হাফটফ্লিখটফেরজিখারুং (দায় বীমা, কারো কোন ক্ষতি করে ফেললে বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করে) আছে তার।
আমরা সৌজন্য বিনিময় করে চলে গেলাম। মহিলার রিয়ারভিউমিরর ভাঙা, আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, আরো সামনে যাওয়া উচিত হবে কি না। ইতিমধ্যে বন্ধুকে ফোন করেছেন তিনি সবকিছু জানিয়ে। আমরা তাকে পরামর্শ দিলাম ভাঙা রুয়কষ্পিগেল নিয়ে গাড়ি না চালিয়ে অপেক্ষা করতে।
ডর্টমুন্ড ঘুরে ফিরে এসেছি আবার কাসেলে, তবে বেশ একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে। আমার চাকরি জীবনের একটা অংশ হিসেবেই খুব তীব্রভাবে ভ্রমণ করতে হয়েছে আমাকে দেশে, বহুবার বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছি, কপাল ভালো খুব বড়সড় কিছু হয়নি কখনো। তবে যখন গন্ডগোল হয়েছে তখন পুলিশকে জড়ানোর কথা কখনো ভাবিনি, অন্যভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ যদি জার্মান পুলিশের মতো আস্থাভাজন হতে পারতো, আমাদের দেশের শতকরা আশিভাগ সমস্যা বোধহয় মিটে যেতো।
মন্তব্য
বিদেশে সবকিছুতে পুলিশের ভূমিকা এত বেশী যে দেশী ভাষায় বললে বলা যায় "পুলিশী রাষ্ট্র"। এই নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে ফেলা যাবে হয়তো।
লেখাটার সবই পাঠ-বান্ধব, কেবল ঐ জার্মান শব্দগুলি ছাড়া।
দুঃখিত, কিছু শব্দ বোধহয় আগে কোন লেখায় ব্যাখ্যা করেছিলাম।
আউটোবান হচ্ছে মহাসড়ক। "আখটুং!" বলা যেতে পারে "সাবধান!"
হাঁটুপানির জলদস্যু
ওখানে মহাসড়কে গতিসীমা কত? দেড়শ তো অনেক বেশি মনে হয়। ওখানে কি বৃটিশদের মত ডান হাতে চালায়?
কিছু অংশে গতিসীমা নির্দিষ্ট, কিন্তু আউটোবানের বেশির ভাগ অংশের জন্যই গতিসীমা আমার জানামতে অনির্দিষ্ট। কন্টিনেন্টে সব গাড়িই বামদিকে চালিত।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হাফটফ্লিখটফেরজিখারুং - সুপার একটা শব্দ! মনে হয় অশ্রাব্য গালি দিলা কাউরে
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
হ বাইরের দেশে মামুই ভরসা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বলেন কি? শুনেই ভয় লাগছে। গতিসীমা না থাকলে তো সাংঘাতিক ব্যাপার হবে সেখানে।
গতিসীমা দিয়া রাইতে একখান লেখা নামামু ভাবতেছি ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে মিলাদ দাও। তবারুক খাওয়ার দাওয়াত দিলে চইলা আসুম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
নতুন মন্তব্য করুন