শিক্ষার প্রথম স্তরেই যদি একটি শিশুর মনে বিভেদের বীজ বুনে দেয়া হয়। তাকে আলাদা করে ফেলা হয় সমাজ থেকে। যদি তাকে কৃত্রিম একটি পরিবেশে বড় করে তোলা হয়। তবে কি সে সমগ্রসমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা, কর্তব্যের বিষয়টি বুঝতে পারবে? বিচিত্র মানুষ আর বিভিন্ন মতের প্রতি সহনীয়তা দেখাতে পারবে? গ্রহণ করতে পারবে বাইরের মুক্ত পরিবেশকে যা থেকে দূরে বন্দী ছিল সে সত্যিকার অর্থে এক কারাগারে।
এমন কারাগারের অভাব নেই আমাদের দেশে। অন্ধকারকে আমরা যারা সংস্কৃতি বলে ভাবি তারা এমন অনেক অন্ধকার কারাগার তৈরি করেছি শিশুদের জন্য। না আমি শিশুদের অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রের কথা বলছি না। আমার তালিকা অনেক দীর্ঘ। আমি বলছি ক্যাডেট কলেজগুলোর কথা। যেখানে শৈশবে পরিবারের দৈনন্দিন আদর-শাসনের বাইরে এক লৈঙ্গিক পরিবেশে বড় হয় শিশুরা। গালর্সস্কুল বা বয়েজ স্কুলগুলোর কথা। উঠতি বয়সের বেশিরভাগ তারা কাটিয়ে দেয় একটি এক লৈঙ্গিক পরিবেশে। যা বাস্তবতা নয়। মাদ্রাসা, মক্তবের কথা বলছি আমি। যারা একটি ছোট দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে পুরো পৃথিবীকে। অন্যান্য বিষয়-আশয়ের যাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আছে বিচ্ছিন্ন দ্্বীপের মত।
মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারগুলো এমনিতেই এক কারাগার। তা হূমায়ুন আহমেদ তাতে যতই শঙ্খনীল বিশেষণ আরোপ করেন না কেন। মুক্ত, উদার, স্বাভাবিক পরিবেশে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে বড় হওয়ার সুযোগ আমাদের দেশের শিশুরা পায় না। এ আর নতুন কি। ধীরে হলেও আমরা চেষ্টা করছি আলোর অভিযাত্রী হতে।
কিন্তুযখন পত্রিকার সংবাদে জানা যায়, কিছু লোক এখনো ভূতের মত উলটা দিকে হাঁটেন। স্কুলের শিশুদেরকে ধর্মভিত্তিতে আলাদা করে দিয়ে ক্লাশ, পরীক্ষা নেন। তখন হতবাক না হয়ে পারি না। সংবাদটি বেরিয়েছে প্রথম আলোয়। ঘটনাটি চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলের। স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষাদান বিষয়ক যথেষ্ট উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান না জানি। শিক্ষা মনোবিজ্ঞান একটি অত্যন্তসংবেদনশীল বিষয়। শিশুদের জ্ঞান দেয়া অত্যন্ত কঠিন ও সুক্ষম একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু তাদের সেই প্রশিক্ষণ যদি না থাকে তবে তারা প্রচলিত সরকারী পদ্ধতির বদলে ফেলার সাহস পান কি করে। অল্পবিদ্যা যে ভয়ংকরী- তা তো আর এমনি এমনি বলা হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার মত বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে দেশে। সেখানে যোগ্য লোকজন আছেন। শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকলেই শিক্ষা ব্যবস্থা বুঝা যায় না। যে প্রধান শিক্ষিকা এই বিভেদের শিক্ষা চালু করলেন তিনি জানেন এর ফল কতো সুদূরপ্রসারী। কতো মারাত্মক ক্ষতিকর।
সমাজের বৈচিত্রআছে। থাকবে। এই বৈচিত্রকে যাকে শিশুরা উদার মনে গ্রহণ করতে পারে সেভাবেই তাদেরকে বড় করে তুলতে হবে। তাছাড়া তাদের নিজেদেরও এই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজন আছে। বাস্তবতার সাথে মিল নেই এমন কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে কী শিক্ষা দিতে চান তারা শিশুদের।
যারা যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয় সে বিষয়ে সবজান্তার ভাব নিয়ে সিদ্ধান্তনেন কি করে তারা। বিনয়ী হওয়ার জন্য ও নিজে কি জানেন না তা জানার জন্য আরো অনেক শিক্ষার প্রয়োজন তাদের।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন