বাংলাদেশে স্কুল টেক্সট বুক বোর্ডের সুবাদে ধর্মশিক্ষা বলতে আমরা নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানাকেই বুঝি। অর্থাৎ মুসলমানের সন্তান ইসলাম ধর্ম শিক্ষা। হিন্দুর সন্তান সনাতন ধর্মশিক্ষা ক্লাসে অংশ নেবে। [আমার ছোটবেলার বন্ধু রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের সাথে আমি অবশ্য সনাতন ধর্মের ক্লাসে যেতাম। ওর বাবা মানে আমাদের পন্ডিত স্যার এজন্য আমাকে কোনোদিন প্রশ্ন করেননি। তিনি নিশ্চয়ই একজন কিশোরের জানবার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে জানতেন।]
শুধু নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানাটাতো ধর্ম শিক্ষা হতে পারে না। ধর্মের যে বিষয় থাকবে তাতে পৃথিবীতে ধর্মের উৎপত্তি, বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কেকথাবার্তা থাকতে হবে। অন্য ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে কিছুমাত্র না জেনে আমরা কীভাবে আধুনিক মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবো। কীভাবে বুঝতে পারবো আমাদের পড়শি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষটিকে।
চট্টগ্রাম সরকারী স্কুলের বৈষম্যমূলক সাম্প্রতিক ঘটনাকে যদি ব্যতিক্রম মনেও করি তবু সাধারণ ভাবেই তো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধর্মের শিশুরা অন্য ধর্মের সম্পর্কে কোনো ধারণাই পাচ্ছে না। ধর্মকে স্কুলে পাঠ্য করতে হবে সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ হিসেবে। সারা পৃথিবীতেই তাই আছে।
এর মধ্যে স্কুলে যেটুকু ধর্ম শিক্ষা দেয়া হয় তাও অত্যন্ত আংশিক। ইসলাম ধর্মের কথা ধরা যাক। ইসলামের যে বিভিন্ন রূপ আছে পৃথিবীতে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয়া হয় না। নতুন যে বিকাশ, শিশুরা তাদের চারপাশে দেখতে পায় সে সম্পর্কেও কিছু বলা হয় না। হোক তা মওদুদীর মতবাদ বা তাবলীগে জামায়াতের মত সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো। [জানি না জামায়াতী ইসলামী ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার পর ইসলাম ধর্ম শিক্ষাকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছে কি না। আর তাতে মওদুদী বা তাবলীগের কথা আছে কিনা।]
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। শিশুদেরকে অন্য ধর্মের সাধারণ ইতিহাস, বিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেয়া জরুরি। শুধু নিজ ধর্মের গুণ বর্ণনা করে দেয়া ধর্ম শিক্ষা তাদেরকে মৌলবাদী করে তুলতে বাধ্য। [পাঠ্যপুস্তকে শুধু রবীন্দ্র-নজরুলের কবিতা পড়ে আসা লোকজন যেমন আশি-নব্বই দশকের বা সাম্প্রতিক কবিদের কবিতাকে অপাঠ্য ভাবেন, তেমনি।]
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন