ক্যামেরাবাজি শিখছি খুব ধীর গতিতে। শম্ভুকের চেয়েও ধীর। ইচ্ছের গতির সাথে সুযোগের গতি তাল মেলাতে পারছে না। তবু চেষ্টা করছি। গতকাল শুক্রবার প্রচন্ড গরম পড়ছিল। বাইরে যাবার কথা থাকলেও গেলাম না। বাসায় বসে বসে কয়েকটা ক্যামেরাবাজির কাজ করলাম। আই এস ও সম্পর্কে এখানে গুরুদের কাছ থেকে যা শিখেছি তার বাস্তব প্রয়োগের একটা চেষ্টা করলাম।
বিষয় নির্বাচন দুরূহ ব্যাপার ছিল। শেষমেষ ডাইনিং টেবিল থেকে একটা আপেল তুলে জানালা দিয়ে আসা আলোর নীচে রেখে ক্যামেরাটা একটা টুলের উপর স্থাপন করলাম ট্রাইপডের বিকল্প হিসেবে। এঙ্গেল ঠিক করতে ক্যামেরার তলায় একখন্ড মোটা কাগজও গুঁজে দিতে হলো। ক্যামেরাকে ম্যানুয়াল মোডে নিয়ে ফোকাস ঠিক করলাম। দরকারমতো জুম করে কাছে টানলাম। অ্যাপারচার ভ্যালু ৪ দিয়ে সন্তুষ্ট হলাম। এক্সপোজার ০ তে রাখলাম।
এরপর চুড়ান্ত কাজটি করতে হবে। আইএসও-র মান ঠিক করে কেবল ক্লিক মারা। ক্লিক মারতে হাতের কাঁপুনির সম্ভাবনা আছে নড়বড়ে টুলের কারনে। তাই রিমোটের সুবিধা গ্রহন করলাম। Sony H50 তে রিমোটের উপকারিতা এই প্রথম বুঝলাম। সব ঠিকঠাক করে পাঁচটা আইএসও-তে পাঁচবার টিপি দিলাম রিমোটের বাটনে। যথাক্রমে ৮০, ১০০, ২০০, ১০০০, ৩২০০।
পাঁচটি ছবির পার্থক্য ছবিতেই দেখুন। মনে হচ্ছে স্বাভাবিক আলোয় ভালো ছবির জন্য আই এস ও ১০০ বা ২০০ রাখা বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে ফটোগুরুদের মন্তব্য কামনা করছি।
(ছবিগুলো ৩ মেগাপিক্সেলে তোলা হলেও ৮০০x৬০০ তে সাইজ করে দেয়া হলো পোষ্টের সুবিধার্থে)
মন্তব্য
ছবির এপারচার ভ্যালু স্থির রেখে তুলেছেন বলেই আইএসওর কারণে এক্সপোজার পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। অটো মোডে তুললে আইএসও এক ধাপ বাড়ানোর সাথে এপারচার একধাপ (স্ট্যান্ডার্ড ধাপ) কমে যাওয়ার কথা ছিল। আর তা হলে সবগুলো ছবি কমবেশী একই রকম দেখাতো।
কত আইএসও তে তুলবেন সেটার কোন নির্ধারিত নিয়ম বোধ হয় নাই। আপনার যত দরকার তততে তুলবেন। তবে মনে রাখতে হবে ছবি যদি বড় করার দরকার হয় তাহলে যত কম আইএসও তে তোলা যাবে ততই ভাল। যত বড় আইএসও--> তত বড় ফটোরিসেপ্টরের দানা --- > তত লো কোয়ালিটি।
আইএসও বেশি মানে রিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা বেশী, ফলে কম আলোতেও ছবি তুলতে পারে। কিন্তু ছবির কোয়ালিটি ব্যস্তানুপাতে কমে যাবে। আধুনিক ডিএসএলআর-এ ১২০০ থেকে ১৬০০ আইএসওতেও ভালো ছবি আসে। ৩২০০ বা তার উপরে গেলে ছবিতে অনেক বেশী গ্রেইন দেখা যায়।
নিচের দুটো ছবিতে পার্থক্য লক্ষ্য করুন:
এই ছবিতে আইএসও ছিলো ৩২০০। কারণ আমি চেয়েছিলাম সাটারস্পীড বাড়িতে হামিংবার্ডের ডানাঝাপটানি ক্যাপচার করতে। যদিও সেটা সম্ভব হয়নি আলোর স্বল্পতার কারণে। ছবির নয়েজ অনেক বেশি, কম শার্প, দানাদানা দেখাচ্ছে।
এক্সপোজার: ৬.৩/৪০০
আইএসও: ৩২০০
ফোকাস: ১৩০মিমি
কিন্তু নিচের ছবিটা দেখুন, অনেক বেশি শার্প, নয়েজ কম।
এক্সপোজার: ৮/১৬০
আইএসও: ৪০০
ফোকাস: ১৩৫মিমি
বিদ্র. ছবি দুটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তোলা। ফলে অল্টারনেটিভ এক্সপোজার হিসেব করে একটা থেকে আরেকটাতে যাওয়া নাও যেতে পারে।
পিপিদা আপনের এক্সপোজার: ৬.৩/৪০০ হয় কেমনে? আমার Canon 1000D তে সব এক্সপোজারতো ১/xxxx ভাবে আসে . আপনি কি মানুয়ালি এই এক্সপোজার সময় ঠিক করছেন?
----------
উদ্ভ্রান্ত পথিক
ওহ, বুঝেছি।
আমি আসলে এপারচার আর স্পীড একসাথে লিখেছি। প্রথমটা এপারচার, দ্বিতীয়টা স্পীড। আলাদা করে দুইবার লিখতে হয়। যেমন, এপারচার ৬.৩, সাটারস্পীড ১/৪০০। আমি একটু পুরানো ধাঁচের তো, তাই পুরানা স্টাইলে লিখলাম।
চমৎকার ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ পিপিদা।
দ্বিতীয় ছবিটা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। দুটো প্রশ্ন ছিল।
১. আপনি দুটো বস্তুকে একসাথে ফোকাস করেছেন কি করে? ফোকাল দৈর্ঘ্য এক ছিল বলে?
২. ফোকাস ১৩৫ কিন্তু আমার ক্যামেরায় ফোকাস অটো সেট হয় বুঝবো কি করে কততে সেট হলো? বা সেটা বোঝার দরকার আছে কি?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এটা একটা চমৎকার প্রশ্ন। দুটো বস্তুকে একসাথে ফোকাস করা আসলে সহজ নয়। তার মধ্যে একটি বস্তু যদি চলমান হয় (পাখি) তাহলে তো কথাই নেই। আমি অধিকাংশ সময় অটোফোকাস করি। ক্যামেরা ভেদে অটোফোকাস পয়েন্ট পার্থক্য হয়। আমারটাতে ৯ পয়েন্ট অটোফোকাস। আমি সেন্টারে সেট করে রাখি।
ডেপ্থ অফ ফিল্ড চিন্তা করলে আর চলমান বস্তু স্থির বস্তুর খুব দূরে না থাকলে স্থির বস্তুতে ফোকাস করতে পারেন। সেক্ষেত্রে হয়তো দুই-একটা ছবি মিস হতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়, এখন লিখতে ইচ্ছে করছেনা।
আর যদি ম্যানুয়ালি ফোকাস করেন, তাহল আন্দাজ মত করতে হবে। স্থির বস্তুর উপর ফোকাস করে, ক্যামেরা ট্রাইপডের উপর রেখে কম্পোজিশনের জন্য একটু ডানে বা বামে সরিয়ে নিলেই হবে।
আরেকটু যোগ করি:
'অটোফোকাস' আর 'ফোকাস দুরত্ব' কিন্তু এক জিনিস নয়। ফোকাস দূরত্ব আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। ক্যামেরার লেন্স জুম করার মাধ্যেমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। অটোফোকাস হলো বস্তুকে অটোমেটিক্যালি ফোকাস করা (ম্যানুয়াল ফোকাসের বিপরীত)। আপনি যদি জানেন পাখিটা একটা নির্ধারিত স্থানেই বসবে, তাহলে ম্যানুয়াল ফোকাস করতে পারেন। এতে অনেক সুবিধা আছে। বিশেষতঃ এক্সপোজারের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই আপনার হাতে থাকবে।
ছবির প্রোপার্টিজ থেকে এটা দেখা যাবে। আমি ফ্লিকারে আপলোড করি- সেখানেই দেখা যায়। দরকার হয়তো নেই, কিন্তু আমি এটা দিয়ে দেই যাতে কী লেন্স দিয়ে ছবি তুলেছি সেটার একটা ধারনা পাওয়া যায়। অনেকেই ছবির প্রোপার্টিজ লুকিয়ে রাখে, আমি সেটা করিনা।
...............................
নিসর্গ
ধন্যবাদ আপনার বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য। আপনার দ্বিতীয় ছবিটা এত সুন্দর এখনো তাকিয়ে আছি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার আইএসও ১০০ এর ছবিটা সুন্দর হয়েছে
---------
উদ্ভ্রান্ত পথিক
ধন্যবাদ উদভ্রান্ত পথিক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এক মনোযোগী শিক্ষার্থীকে আরেক ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থীর তরফ থেকে কিছু ছোট্ট চোথাঃ
কম আলো থাকলে বেশি ISO তে ছবি তুলবেন, ছবিতে আলো আসবে, কিন্তু দানা দানা ভাব আসবে একটা।
বেশি কিংবা পর্যাপ্ত আলো থাকলে কম ISO-ই উত্তম। এমনকি পর্যাপ্ত আলোতে ISO ভ্যালু ৮০-তে রেখেই চমৎকার ছবি উঠে।
আপনার এই ছবিতে অ্যাপারচার সম্ভবত সব ক্ষেত্রে একই ছিলো, ফলশ্রুতিতে যেটা হয়েছে, ১০০/২০০ ISO-তে যেই ছবি চমৎকার উঠেছে, ৩২০০ তে তাই ঝলসে গিয়েছে।
আমি যতদূর জানি মহাজনেরা ISO-তে আগেই হাত দিতে না করেন, অ্যাপারচার কিংবা শাটার স্পিড দিয়ে বাগ না মানানো গেলেই, তবে ISO তে হাত দিতে বলেন (জানায় ভুল থাকলে আমার দোষ নাই)।
আরেকটা কথা কম ISO-তে ছবি তুলতে হলে, কম আলোতে, হাত খুব স্টেডি রাখতে হয় ( সম্ভব হলে ট্রাইপড) না হলে ছবি ঝাপসা হয়ে যায়। পক্ষান্তরে কম আলোতে বেশি ISO-তে ছবি তুলে দেখবেন, অল্প সময়েই ছবি তোলা হয়ে যায়, ফলে হাতের স্থিরতা খুব লম্বা সময়ের জন্য দরকার হয় না, ট্রাইপড ছাড়াই হয়ে যায়, ছবি ঝাপসা হয় না। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা একটাই, ছবিতে দানা দানা ভাব চলে আসে।
হাতুড়ে জ্ঞানদানের জন্য অসীম লজ্জিত এবং ভুল হলে আগে ভাগে ক্ষমা চেয়ে রাখছি।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার চোথাটা অনেক উপকারে লেগেছে, এরকম চোথা সবসময় মাথা পেতে নেবো। অনেক ধন্যবাদ।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দুর্দান্ত আলোচনা আর প্রকৃতিপ্রেমিকের দারুণ একটা ছবি।
বাহ্ কি সাংঘাতিক।
জয় হোক সচলায়তনের।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নতুন মন্তব্য করুন