মহিউদ্দিন স্যার বাংলা পড়াতেন ক্লাস সেভেনে। খানিকটা পাগল কিসিমের মানুষ। মুখ ভেংচিয়ে ধমক দিতেন বলে কেউ কেউ আড়ালে ডাকতো 'মুখবেকু'। পুর্নিমার চাঁদের মতো গোল স্কুলের পিতলের ঘন্টাটা ঝুলানো থাকতো দোতলায় ক্লাস সেভেনের জানালার সামনে। আর ক্লাসরুমের জানালায় ঘন্টা পেটানোর হাতুড়িটা রাখা থাকতো। বেতের বদলে ওই কাঠের হাতুড়িটা মাঝে মধ্যে আছড়ে পড়তো ক্লাস সেভেনের দুষ্ট বালকদের পিঠে।
ক্লাস সেভেনে আমি সেই মুষ্টিমেয় ভাগ্যবানদের একজন যাদের ঘাড়ে তখনো হাতুড়িটা আছড়ে পড়ে নাই। ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে আবজাব গল্পে মহিউদ্দিন স্যারের আগ্রহ বেশী দেখা যেত। আমরাও তাতে উৎসাহী। কান ধরে দাড়িয়ে থাকা বা পেটানোর চেয়ে এইটা ঢের ভালো।
মাঝে মধ্যে স্যারের পড়ানোর মুড না থাকলে বলতো, 'ওই ঘুম যা সবাই'। এই 'ঘুম যা' মানে বেঞ্চে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ মটকা মেরে থাকা যতক্ষন পর্যন্ত স্যার উঠতে না বলেন। এইটা একটা মজার খেলার মতো ছিল। খুব উপভোগ্য। স্যার হেঁটে হেঁটে টহল দিতেন ঘন্টার হাতুড়ি হাতে।
একদিন 'ঘুম যা' ক্লাস চলছিল। আমাদের সবার মাথা বেঞ্চে নতমুখী। আমি ভ্যাবলা কিসিমের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কি ভুত চাপলো আমি স্যারের পায়ের শব্দ না পেয়ে ভাবলাম স্যার কোনদিকে গেছে একটু উঁকি দিয়ে দেখি। কিন্তু মাথাটা আলগা করতে না করতেই জীবনে প্রথমবারের মতো 'ধুম' করে হাতুড়িটা নেমে আসলো আমার পিঠে। কারন উনি তখন ঠিক আমার পেছনেই দাড়িয়ে। পরবর্তী সংলাপগুলো ছিল এরকম-
-কী রঙ্গ দেখতে উঠছস?
-কিছু না স্যার...
-স্কুলে আসার আগে কি খাইছস?
-ভাত খাইছি স্যার.... (আসলে কি খাইছি ভয়ে ভুলে গেছি)
-কি দিয়া খাইছস?
-কাতাল মাছ দিয়া খাইছি... (আসলে আমি তখন কাতাল ছাড়া আর কোন মাছ চিনতাম না)
-তোর বাপ কোথায়?
-কাতারে থাকে (বাবা তখন কাতারে একটা কোম্পানীতে চাকরী করতেন)
-তোর বাপে থাকে কাতার, তুই ভাত খাস কাতাল মাছ দিয়া, তোর মা কি কাতান শাড়ী পড়ে?
স্যারের কথা শুনে পুরা ক্লাস ঘুম ভেঙ্গে হো হো করে হেসে উঠে। আমি মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে থাকি। অপরাধটা গুরুতর বুঝতে পারছি। সব যে এভাবে মিলে যাবে বুঝি নাই। ভাবছিলাম হাতুড়ির বাড়ি আরো আসছে। কিন্তু পুরো ক্লাস এমন ভাবে হাসছে, স্যার বুঝলেন নিয়ন্ত্রন চলে গেছে হাতুড়ির বাইরে। পোলাপান আর ঘুমাবে না। তাই দেখে ক্লাস শেষ করে চলে যাবার যোগাড় করলেন। খাতাপত্র নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে শেষবারের মতো হুংকার দিলেন:
-ওই চুপ যা সব, যত্তসব ফাজিল। এই তু্ই বস্ (শেষ বাক্যটা আমাকে উদ্দেশ্যে বললেন)।
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বেঞ্চে বসতে বসতে মনে মনে বললাম- থ্যাংক্যু কাতাল মাছ। 'ঘুম যা' ক্লাসের মার থেকে তোমার জন্য বাঁচলাম।
মন্তব্য
থ্যাংক্যু কাতাল মাছ
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
হিঃহিঃহিঃ
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এরকম 'ঘুম যা' ক্লাস স্কুলে প্রায়ই দিতাম.. বাচ্চাকালের কথা মনে পড়ে গেল।
স্পার্টাকাস
আমাদের ও ছিল, কিন্তু এমন মিলিটারি পাহাড়া ছিলনা
আমাদের স্কুলের একজন হুজুর স্যার ছিলেন। কোন স্যার না আসলে তিনি সেই পিরিয়ডে আসতেন আমাদের ক্লাশ নিতে। ক্লাশ নাইনের বাংলা ক্লাশে এসে বলতেন ক থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত লেখ। আর আমাদের প ফ ব ভ এর পরে উলটো পালটা শুরু হয়ে যেতো। মজা লাগতো।
কাতলা, কাতান আর কাতার এর সাথে মিল আছে এমন কি কি জিনিস আছে আর ?
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন