প্রিয় ড.ইউনুস,
এ চিঠি আপনি কখনো পড়বেন না হয়তো। তবু যদি কখনো চোখে পড়ে এরকম ক্ষীণতম আশা নিয়ে আম জনতার একজন হয়ে হঠাৎ আপনাকে কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে আজ।
সত্যি কথা বলতে কি আপনাকে নিয়ে আমরা একটা বিভ্রান্তিতে আছি। একসময় আপনাকে আমাদের ভীষণ ভালো লাগতো, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আপনি, কাছাকাছি এলাকার মানুষ। ভালো লোক। গরীবের ব্যাংকার। বিশ্বব্যাপী খ্যাতি। ক্লিনটন পরিবারের বন্ধু। সব মিলিয়ে আপনার মধ্যে মুগ্ধ করানোর প্রচুর উপাদান ছিল। গর্ব করার অনেক ব্যাপার ছিল।
গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋনের উচ্চ সুদ কিংবা জবরদস্ত আদায় পদ্ধতি নিয়ে যে সব অভিযোগ শোনা যায় সেগুলোও আমাদের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। প্রবল রাজনীতি প্রবন দেশেও আমাদের ধারনা ছিল আপনি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি। শেখ মুজিবের পর বাংলাদেশকে এত উঁচুতে আর কেউ নেয়নি। বাংলাদেশের যে কোন রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে আপনার আন্তর্জাতিক খ্যাতি অনেক বেশী। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার বক্তৃতা শোনার জন্য বসে থাকে জ্ঞানীগুনী মানুষজন। আপনার লেখা নিয়ে গবেষণা হয় জাপান আমেরিকার বড় বড় অর্থনৈতিক ফোরামে। দীর্ঘ দেড়যুগ আপনি বাংলাদেশে অবিসংবাদী ব্যক্তিত্ব হয়ে ছিলেন।
কিন্তু ২০০৬ সালে এমন কি ঘটলো? নিজের দেশে আপনাকে হঠাৎ করে বয়কট করা শুরু হলো কেন? বিশেষ করে নোবেল পাওয়ার পর থেকে বেড়ে গেল কেন ওটা? আপনাকে লোকজন হিংসা করা শুরু করেছে নোবেল পাওয়াতে? আপনি কি কখনো আসল কারনটা অনুসন্ধান করে দেখেছেন? ২০০৬ সাল থেকে আপনার অবিসংবাদী অবিতর্কিত অবস্থানটা নড়ে গেল কেন হঠাৎ? এমন কি ঘটলো আপনার? ভেবেছেন কখনো?
প্রিয় ড.ইউনুস, আমাদের মতো অর্ধমূর্খ জনতার কেউ কেউ আপনাকে নোবেলের চেয়েও বড় মনে করতাম। আপনি নোবেল পাওয়াতে আমরা যতটা অবাক হয়েছি তারচে বেশী অবাক হয়েছি নোবেল আপনাকে আত্মহারা করেছে বলে। নোবেল পেয়ে কঠিন রকম আনন্দ হতেই পারে, দোষের কিছু নয়। কিন্তু নোবেল পাওয়ার পর আপনার মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরী হয়েছিল কখনো কি তা টের পেয়েছিলেন? সেই সময় আপনার সাক্ষাতকার, আপনার বানী, উপদেশ, দেশের চলমান পরিস্থিতি, ওই সব কিছুর মধ্যে আপনার ভুমিকার কেমন অসংলগ্নতা লক্ষ্য করেছি আমরা সবাই, কিন্তু আপনি কি একবারো টের পাননি?
প্রিয় ড.ইউনুস, আমি বলবো - নোবেল নয়, রাজনীতিবিদগনকে মোটাদাগে দুর্নীতিবাজ বলা নয়, ক্ষুদ্রঋনের উচ্চসুদ নয়, আপনার জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামিয়েছে অন্য কিছু, অন্য কোন বিষয়।
২০০৬ সালের অক্টোবরে আপনি নোবেল প্রাপ্তির আনন্দে হয়তো খেয়াল করেননি দেশের মানুষ সেই সময়কালে একদল শকুনের থাবার নীচে কিরকম অনিশ্চিত জীবন যাপন করছিল। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশটাকে পাকিস্তান বানাবার সব আয়োজন সেরে ফেলেছিল। সাজানো নির্বাচনে বিজয়ী হবার সব কুটকৌশল তৈরী করা হয়েছিল।
আপনি গরীবের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টি করেছেন। দারিদ্র বিমোচনের স্বপ্নে বিভোর আপনি। দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠাবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু কি করে আপনার চোখ এড়িয়ে গেল ইয়াজুদ্দিন আইজুদ্দিনরা দেশটাকে তখন কোন পথে নিয়ে যাচ্ছিল? কিভাবে প্রস্তুত হয়েছিল নিজামী- মুজাহিদদের হাতে দেশটার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে আপনি একটুও খেয়াল করেননি? বিশ্বাস হয় না।
প্রিয় ড.ইউনুস, আপনি হয়তো জানেন না সেদিন আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল লক্ষ কোটি মূর্খ জনতা। আপনি নোবেল পাওয়ার পর ভেবেছিল আপনি অন্ততঃ মৃদু তিরস্কার করবেন সেই অশুভ ক্ষমতাসীন চক্রকে। দেশকে ঠিক পথে চালাতে আপনি কিছু কথা বলবেন জনসমক্ষে। আপনাকে চোখ রাঙাবার সাহস ওদের নেই বলে আমাদের ধারনা।
কিন্তু সেদিন যখন মুর্খ জনতার আশাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আপনি ইয়াজুদ্দিনদের পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়ে নোবেল আনতে চলে গেলেন নোবেল দেশে, আমরা প্রবল হতাশায় বালিশে মুখগুজে ভুল থাকতে চাইলাম আপনি আমাদের খেয়াল না করে নিজের কৃতিত্বের দিকেই চেয়ে ছিলেন আর একপেশে সংবর্ধনা সভায় ফুলের তোড়া গ্রহন করে আপ্লুত হলেন।
হায় দেবতা। আপনি মূর্খ জনতার চোখে দেবতাই তো ছিলেন। আপনার ভুমিকা দেখে সেদিন আমাদের মতো মূর্খ জনতারও মোহভঙ্গ হলো । রাজনীতিবিদদের মতো আমরাও আপনাকে বর্জন করা শিখে গেলাম রাতারাতি।
সুপ্রিয় ড.ইউনুস আপনি ১/১১ এর সুফল ঘরে তুলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু একবারো ভাবেননি আমাদের হতাশার কথা।
জেনে রাখুন- মানুষেরহৃদয় থেকে আপনার চ্যুতির কারন ক্ষুদ্রঋন নয়, রাজনীতি করার আকাংখা নয়, রাজনীতিবিষোদাগার নয়। ন্যায়ের প্রতিআপনার সেদিনকারঅস্পষ্ট ভুমিকার কারনেইআপনি পদচ্যুত হয়েছিলেনমানুষের হৃদয় থেকে। যেখানে আপনি ফিরে যাবার চেষ্টাও করেননি আর।
আপনার জন্মদিনে এমন একটা লেখা লিখতে হলো বলে আমি অত্যন্ত দুঃখিত ড.ইউনুস। তবে বিশ্বাস করুন, মানুষ চাইলেই ভুল শোধরাতে পারে। নিজেকে স্পষ্ট করতে পারে। আপনি বিশ্বের দরবারে যেরকম স্পষ্ট নিজের দেশেও স্পষ্ট থাকুন। মানুষ আপনাকে বুক দিয়ে আগলে রাখবে। ভাল থাকুন সফল থাকুন আজ, সারা বছর, সারাজীবন।
বিনীত,
একজন অর্ধমূর্খ নাগরিক
মন্তব্য
আপনার অনুযোগটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম না। কী হতো নোবেল পাওয়ার পর অশুভ শক্তিকে মৃদু তিরস্কার করলে? নোবেল পাওয়ার সাথে সাথেই তাঁকে জাতীয় সমস্যার সমাধানকারী না ভেবে সাধারণ মানুষ ভাবাটাই কি যুক্তিসঙ্গত না? তিনি যা করেছেন তা অনেকের চেয়ে অনেক বেশি প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু তাঁর পক্ষেই কি যেকোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব?
নোবেল প্রাইজ বলে কথা!!!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
বাঙালির হৃদয় বড় শক্ত জায়গা রে ভাই ! নিজেই নিজের হৃদয়ে বেশিদিন থাকতে পারে না।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ঐরকম লোকের আমি কোন সময়ই প্রয়োজন মনে করিনি এবং কোন সময় করবোও না।
গ্রামীণ ব্যাংক কি জিনিস আমি নিজের চোখে দেখেছি! অনেক গ্রামীন ব্যাংকের শাখা অফিসের সাথে নীলকুঠিতে যেমন কয়েদ ঘর থাকত তেমন জিনিস ছিল। টাকা সময়মত ফেরত দিতে না পারলে বন্দি করে রাখত, ক্ষেত্র বিশেষে ঘরের টিন বা গরু কেড়ে নিয়ে আসত। এই সব খবর পত্রিকায় আসেই না, কারণটা কি বুঝি না!!!
পথিক রহমান
কতটা সঠিক জানি না, তবে মিডিয়ার ব্যাপারে যেটা শুনেছি তা হল প্রিন্ট মিডিয়াই বলেন আর টেলিমিডিয়াই বলেন, গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, তাই গ্রামীণের বিপক্ষে নিরব থাকে। আবারও বলি, এটা একটা শোনা যুক্তি, সত্যাসত্যের দাবি করতে পারব না।
লোকটা হাস্যকর এবং পরিহাস্যকর। জর্জ বুশের সাথে মিল পাই।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
অর্থনীতির অবদানের সাথে পলিটিক্সকে না মেশানোই ভাল। আমেরিকাতে ১০০+ নোবেল লরেট জীবিত আছেন (আমি বাড়িয়ে বলছি না, প্রতি বছর ৫ জন করে ধরে ২০/২৫ বছর হিসাবে), তাদেরকে কেউ দেশোদ্ধারের কাজে দেখতে চায়না, তারা যেটাতে এক্সপার্ট, সেটার মাধ্যমেই তাদের অবদান রাখা উচিত। ইউনুসের কাজ গ্রামীন ব্যান্ক, সোসাল বিজনেস নিয়ে কোনো কিছু বললে ভাল হত। বাংলাদেশে আসলেই গুণীর কদর অতটা নাই।
*** গ্রামীণ ব্যাং কি দাতব্য প্রতিষ্ঠান নাকি বাণিজ্যিক ব্যাংক?
*** বাংলাদেশে খেলাপী ঋণ আদায়ের সঠিক (লিগ্যাল) পন্থা কি?
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷
লোকটার মূল অপরাধ উনি নোবেল পুরস্কার কেন পেলেন।
আমাদের মনের খর্বতা সকল উচ্চতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ভালো একটা বিষয়। ভাই আর একটা জিনিস নিয়ে লিখে ফেলতে পারেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ আদায়ের কৌশ্ল। এনিয়ে অনেক কাহিনী দেখেছি এবং শুনেছি।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
ইনুচ সাব একজন ব্যবসায়ী; সুতরাং উনার ব্যবসায় উনি আইনের মধ্যে থেকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে পরিচালনা করুন।
ব্যবসায়ী মাত্রই রাজনীতিবিদ না, আর নোবেল জয়ী মাত্রেই ভালো লোক না, দেশপ্রেমিকও না; তার মধ্যে শান্তির নোবেলটা একটু বেশি রাজনৈতিক। আমজনতার সমস্যা হলো তারা নোবেল জয়ীকে দেবতার আসনে বসিয়েছিলো, ভেবেছিলো তিনি তাদেরকে উদ্ধার করতে অবতার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। স্বভাবতই ডঃ ইনুচ অবতার নন, ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি যেপথে লাভ দেখবেন, সেপথেই যাবেন। মানুষ যখন হাসিনা-খালেদার প্রতি বিতৃষ্ঞ, তখন তিনি হয়তো ভেবেছিলেন পলিটিক্সে আসার এটাই মোক্ষম সময়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি এই শর্টকাটে সফল হতে পারেন নি, পিচ খারাপ দেখে পিছিয়ে এসেছেন। আমজনতার মোহমুক্তি ঘটতেও বেশি দেরি হয় নি; কিন্তু তাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে স্ফীত আশা ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। । এখানে প্রধান দোষ আমজনতারই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ধন্যবাদ আপনাকে
_____________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
হুমায়ুন আযাদ বলেছিলেন, 'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে', এখন বুঝছি নোবেল পুরস্কারও-----
অভাবীদের অভাবের সুযোগ নিয়ে যারা ব্যবসা তাদের পরিণতি এই হয়
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদে দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বর্ধিত হয় না, পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে যা কিছু তোমরা যাকাত রূপে দিয়ে থাক মূলত সেই যাকাতদানকারীরাহ তাদের সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি করে থাক।’ (সূরা আর-রূম: আয়াত ৩৯)
হে ঈমানদারগণ! চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। আর সেই আগুন থেকে বেঁচে থাক যা কাফেরদের জন্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৩০-১৩১)
যদি জাহান্নাম থেকে বাচ৺তে চান সুদকে ঘৃনা করুন
নতুন মন্তব্য করুন