কোন সন্দেহ নেই আলমের বাবা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আলম নিজেও কঠিন প্রগতিশীল। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যাপারে আলম সোচ্চার, আলমের বাবাও। কিন্তু সমস্যা হলো শমশের হোসেন। আলমের ভগ্নিপতি।
শমশেরের সাথে তার বোনের বিয়ে হয় স্বাধীনতার কয়েক বছর পর। বিয়ের আগে শমশেরের রাজনৈতিক পরিচয় জানতো না পরিবারের কেউ, কেবল জানতো তার ব্যবসার পরিচয়। বিয়ের কয়েক বছর পর আলম শমশেরকে দেখতে পেল জেনারেল জিয়ার সাফারিতে এবং ১৯৯৩ সালের পর থেকে রাজাকার মুজাহিদের সাথে রহস্যময় সখ্যতায়।
২০০৫ সালে এসে আলম এক ঘটনায় হাতে নাতে প্রমান পেয়ে জেনে যায় শমশের নিজামপুরের আলবদর কমান্ডার ছিল। প্রচুর অপকর্মের প্রমাণ আছে তার বিরুদ্ধে। শুনে আলমের পরিবার রীতিমত স্তব্ধ। কিন্তু তখন কিচ্ছু করার থাকে না ওদের, অনেক বছর পেরিয়ে গেছে।
২০১০ সালে আলম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রচন্ড সোচ্চার হলো। কিন্তু শমশেরের বিরূদ্ধে প্রাপ্ত প্রমাণকে সে যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুনালে উপস্থাপন করার কথা ভাবতে পারে না।
কারণ স্পষ্ট। বিচার হলে শমশেরের নির্ঘাত যাবজ্জীবন কিংবা ফাঁসি হবে। যার অর্থ হলো আলমের বোন বিধবা হবে, ছেলেমেয়ে নিয়ে পথে বসবে। বোনকে বাঁচাতে আলমকে চেপে যেতে হয় আলবদর শমশেরের কুকীর্তি। আর নাতি-নাতনী কন্যার মুখের দিকে তাকিয়ে আলমের মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে হয়ে যেতে হয় নীরব দর্শক।
আলমের পরিবারের দীর্ঘশ্বাসের কথা আমি জানি না। রাজাকার পরিচয় পাবার পরও তাদের ঘেন্না লেগেছে কিনা জানি না। কিন্তু আপাততঃ মনে হচ্ছে শমশের বেঁচে গেল বিচারের হাত থেকে।
--------------------------------------------------------------------------------
গল্প শেষ। ভাবছি শমশেরের কি বেঁচে যাওয়া উচিত? বাংলাদেশে কত হাজার শমশের এরকম ফাঁকতালে বেঁচে যাবে আলমদের সাথে আত্মীয়তার আফিম চাষ করে?
মন্তব্য
এজাতীয় ঘটনা আসলেই অনেক আছে। আমার জানামতে অন্তত: একটি আছে, তবে একটু ভিন্ন ধরণের। আপনার গল্পটি পড়ার পর মনে হচ্ছে - গল্পটি বড় আর ব্যাপারটি ছোট হয়ে গেছে। অল্প কথায় চমৎকারভাবে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আপনাকে অভিনন্দন ..
এটা গল্প নাকি সত্যিসত্যি?
_____________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ইংরেজীতে একটা শব্দ আছে... রিকনসিলিয়েশন... ব্যাপারটা নিয়ে মাঝে মাঝে ভাবি... কিন্তু সিদ্ধান্তে আসতে পারি না...
লেখা ভাল লেগেছে...
এখানে বোনটির একটা ভূমিকা আছে। সে কি এই খুনী নরপশুর ঘর করে সুখী? যদি না হয় তবে তার মুখোশ খুলে দিতে বাধা কোথায়? আর যদি সব জানার পরেও সে এই খুনীকে সমর্থন করে, তবে তারও শিক্ষা হওয়া উচিত। সবাই হয়ত বাচ্চাগুলার কথা ভাবছে যে তাদের রাজাকারের বাচ্চা গালি শুনতে হবে। বাঙালীর বড় সমস্যা "পাছে লোকে কিছু বলে" আর বাঙালীর করার চে' বলার মুখটাই বেশি চলে।
আজ যদি কোন দুর্ঘটনায় মেয়েটির স্বামী মারা যেত, তবে কি বোনের/ মেয়ের দেখাশোনার ভার তার বাবা-ভাই নিতো না?
ফোঁড়া নিয়ে বসবাস করে সবার জীবনটাই নষ্ট। ফোঁড়া ফেলে দেয়াই ভাল। ক্ষতচিহ্ন থাকবে, কিন্তু বিষ থাকবে না।
-শিশিরকণা-
(amihimi@gmail.com)
খাসা কমেন্ট হইসে!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
খাসা কমেন্ট হইসে!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
আমি হয়তো অতি-সরলিকরণ করে ফেলছি, তবে আমার মনে হয় যেই বাবাকে নিয়ে সন্তান গর্ব করতে পারেনা, যেই স্বামীর শত অন্যায়ের কথা স্ত্রী জানে, তিনি কি আসলেও কারো বাবা বা স্বামী বলে নিস্তার পাওয়ার যোগ্য?
হাম্মাদ আলি
সত্য কথা বলতে কি এসব ব্যাপারে মানুষ আদর্শ নীতি নৈতিকতা বাদ দিয়ে নিজের আপনজনের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখবে কোন ভাই বা বাবাই তার মেয়ে বা বোনকে বিঁধবা অবস্থায় দেখতে চাইবে না অবশ্য ব্যক্তিক্রম থাকতেই পারে ত
এখানেই বোনটির এবং নারীশিক্ষার একটা বড় ভূমিকা আছে। 'বিধবা' ব্যাপারটি তখনি খারাপ যখন একজন নারীকে তার এবং সন্তান্দের জীবন ধারনের জন্য পুরোপুরি স্বামীর মুখাপেক্ষী হতে হয়, এবং স্বামীর প্রয়ানে তাকে খুব-ই অসহায় অবস্থায় পড়তে হয়।
প্রথমত, শিক্ষিত হলে নিজের কর্মসংস্থান এবং সন্তানদের জন্য সুন্দর জীবন ঐ নারীই ব্যবস্থা করতে পারেন, তাকে পুরুষটির দাসী হয়ে কাটাতে হয় না।
দ্বিতীয়ত, একজন শিক্ষিত নারীর হিসেব আলাদা হবে। বিধবা হওয়া ভালো না জেনে শুনে আজীবন একজন খুনী নরপশুর দাসত্ব ( এখানে পরনির্ভরশীলতা বুঝাতে চাইছি) করা ভাল?
নারীটি নিজের জন্য যেটি ভালো মনে করবেন, বাবা ভাইরা সেটাকেই সমর্থন দিবেন। এখানে ফ্যাক্টর কিন্তু বোনটিই।
-শিশিরকণা-
সহমত। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন কোন নারীকে জীবন-ধারনের জন্য একটা জানোয়ারের মুখাপেক্ষি না হতে হয়। এইটা শুধু রাজাকার না, সব ধরনের নীচ প্রবৃত্তির পুরুষমানুষের জন্যই প্রযোজ্য।
হাম্মাদ আলি
কয়জনের মনে হয় যে উলটো পরিস্থিতি হলে কোন রাজাকার আমাদের প্রতি মমতা দেখাতো? মানুষ অন্যের প্রতি যা করে, নিজেও তাই পাওয়া উচিত।
হাম্মাদ আলি
যদিও আমি দ্বিধান্বিত, তবুও বিচারের পক্ষেই মত দিব...!
- শায়ের আমান,
আমিও "ভাবছি শমশেরের কি বেঁচে যাওয়া উচিত? বাংলাদেশে কত হাজার শমশের এরকম ফাঁকতালে বেঁচে যাবে আলমদের সাথে আত্মীয়তার আফিম চাষ করে?"
সেই সাথে ভাবছি-
বেঁচে যাওয়া কি উচিত? তাহলে তো দুনিয়ার সকল অপরাধীই কারো না কারো ভাই, বোন, দুলাভাই, ভাবী- সবারইতো বেঁচে যাওয়ার কথা!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
নতুন মন্তব্য করুন