রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নীরবতার আগ্রাসন। বাড়াবাড়ি শীত আজ। ভাঁজ করা হাঁটু দুটো কাঁপছে লুঙ্গির আচ্ছাদনে। শীত-ভয়ের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় বগলের নীচটা ঘামছে। কোথাও একটা কুকুর কেঁদে উঠলো। রাত বারোটার ঘন্টা শোনা গেছে অনেকক্ষণ হলো। এদিকে এখন কেউ আসবে না। গলা থেকে নীল মাফলারটা খুলে কোমরে বেঁধে নিল।
ডিসেম্বরের কয় তারিখ আজ? পৌষমাস এসে গেছে প্রায়। শীতটা তাই গত কদিনের তুলনায় বিশ্রী।
বাড়ীটাতে বাতি জ্বলছে এখনো। কি করে ব্যাটা? এত রাতেও ঘুমায় না কেন? কোন খবর পেয়েছে? জানালা দিয়ে দুবার উঁকি দিল বাইরে। কিছু সন্দেহ করেছে? এটা জানার তো কথা নয়। গুটি কয়েক শীর্ষপদ বাদে খোদ করাচীর সবাই এই পরিকল্পনা কথা জানে না।
এই কাজের কোন জোরালো প্রতিক্রিয়া আসবে না। না ভারতের, না রাশিয়ার, না আমেরিকার না চীনের। নিরাপদ একটা মিশন।
ডানহাতে ঠাশ করে একটা চড় দিল পায়ে। একসাথে তিনটা মশার কামড়। শব্দটা বহুদূর গেল।
ঝিমানি আসছে। লেবু তেজপাতা দিয়ে এক কাপ চা পেলে মন্দ হতো না। কাল থেকে নাকি ডিউটি নাই। আজ রাতেই শেষ। ভারতের সাথে আপোষ হয়ে গেছে। এটাই শেষ পূণ্য কাজ।
এই লোকটা শিক্ষক। ছাত্র চড়ায় ঢাকা ভার্সিটিতে। কিন্তু গাদ্দার। সব বেঈমানের তালিকা করা হয়েছে। আজ রাতে পাহারা দিচ্ছে যাতে একটাও পালাতে না পারে। পালাতে গেলে গুল্লি। আর না পালালে তো কালকে ট্রাকে চড়ে রায়ের বাজারে বেড়াতে যাবে। টাইম নাই। স্টেনগানটা ডান কাঁধে ঝুলিয়ে হাত দুটো ফ্রী করলো সে। প্রজাপতি ম্যাচটা বের করে ফস করে একটা বগা সিগারেট ধরালো।
সিগারেটে কয়েকটা সুখটান দেবার পর দেখলো দোতলা জানালার বাতিটা নিভে গেছে। ঘুমাতে গেছে পাখি। এখন আর উড়াল দেবে না।
নিশ্চিন্তে সিঁড়িটার উপর মাথা রেখে চোখ বুজলো আলবদর।
মন্তব্য
বাহ্
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আসাধারণ একটা গল্প। আপনি অনুগল্পগুলো এতো সুন্দর করে কি ভাবে লিখেন? খুব হিংসে হয়। একটা টিপ্স যদি দিতেন?
চমৎকার
বড় ফুপাকে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর পরিচিত জনেরা... তাঁর তিনটা ছেলেমেয়ে তখন অনেক ছোট।
নানাকে নিতে এসেছিল যারা, আম্মাদের দাদা, মানে বড়নানা উর্দুতে ছেলে শহরে নাই জানিয়ে বিদায় করেছিলেন, নানাকে তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন উঠানের সিঁড়ির নিচের গোপন কুঠুরিতে।
বড় ফুপা ফেরত আসেন নাই, ছোটবেলায় শুনেছি তাঁকে পদ্মার চরে কোথাও কবর দিয়েছিল ওরা...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভালো লিখেছেন, খুব ভালো।
অসাধারণ!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ভাল লেগেছে।
এইসব আলবদর,রাজাকারেরা আজও আছে। ৪০ বছরে এদের মধ্যে যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা স্বাভাবিক মৃত্যুর স্বাদটাই পেয়েছে। এতটা বছর চলে গেলেও একজনকেও তার কৃতকর্মের শাস্তি দিতে পারিনি আমরা। বড় লজ্জা পাই এটা নিয়ে। খুব বিব্রত হই তাই এমন ঘটনার মুখোমুখি হলে। আপনার গল্পটা আবারও ব্যথার জায়গাতে খুঁচিয়ে দিলো ভাইয়া!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গল্পটা মিস করে গিয়েছিলাম। হঠাৎ মনে হওয়ায় পড়লাম, না পড়লে বিরাট মিস হয়ে যেত।
অসাধারণ লাগল।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
নতুন মন্তব্য করুন