বাস থেকে ঠিক এখানে নেমে পূব দিকে যে পাকা রাস্তাটা চলে গেছে, সেদিকে মানুষের ঘরবাড়ি পেরিয়ে মাইল দুয়েক গেলেই বন্য হাতির এলাকা। কয়েকশো বর্গমাইল জুড়ে আদিম অরণ্য, চারপেয়ে বন্যপ্রানীদের স্বাধীন বিচরণ। পাহাড় থেকে এঁকেবেঁকে নেমে এসেছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। একদা হরিণের পদচারণা ছিল ঝরনার কিনারে। এখন তারা আরো গহীনে হারিয়ে গেছে। তার বদলে কেবল ক্ষুধার্ত হাতির দলই নেমে আসে মাঝে মাঝে। এই পথটা এটা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের, তোমার জন্য না।
তোমাকে নিয়ে বরং উল্টোদিকে যাই, পরিচিত চেনাপথে, যেদিকে দুপেয়ে সভ্য মানুষের বসতি। মহাসড়ক থেকে পশ্চিমদিকে যে ইট বিছানো পথটা গেছে সেদিকে। হাঁটতে হাঁটতে তিনশো গজের মতো গেলেই লোকালয়, মানুষের কাঁচাপাকা ঘরবসতি, নিকোনো উঠোন, খড়ের গাদা, ধানের গোলা, টলমলে জলের সবুজে ছাওয়া পুকুর, থেকে থেকে পুকুরে লাফ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে রুই কাতলা মৃগেলের বাচ্চাগুলো।
এই পাড়ায় আমাদের পূর্বপুরুষের বাস ছিল, এখনো বাস করে অনেক ঘর উত্তরপুরুষ আত্মীয়। গ্রামে ঢুকবো না এই অসময়ে, দুপুরের ভাতঘুমে নিথর পাড়াগাঁর লোক। আমরা বরং পা টিপে টিপে পাড়াকে বাঁয়ে রেখে খরনা খালের ধার নিয়ে হেঁটে পাড়াটার পেছন দিকটায় চলে যাই।
মানুষের ঘরবাড়ী থেকে একটু তফাতে এখানে সবুজ ঘন একটা বাঁশবন, তার মাঝ দিয়ে বালির পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে, পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ পাহাড়ী ছড়া, পুবদিকের অরণ্যঘেরা যে পাহাড় থেকে এই জলধারা নেমে আসছে সেই অপরূপ সবুজ পাহাড়গুলো দেখা যাবে বাঁশবনের ফাকে একটু উঁকি দিলেই। বাঁশবনের সেই ফিসফিস নির্জনতার মাঝে মাঝে মাঝেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশছোঁয়া শিরীষ গাছ, আম, জাম, গাব, তুলা সহ আরো নানান জাতের চেনা অচেনা প্রাচীন বৃক্ষ। নির্জন দুপুরে মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে বউ কথা কও কিংবা বিষন্ন কোন ঘুঘু। বিশাল সেই ছায়ার রাজ্যে গা এলিয়ে বসলেই আবেশে চোখদুটো মুদে আসবে পরম সুখে।
বেলা দুপুর। আকাশে মেঘের ছাতা। বাতাসে গতরাতের বৃষ্টির সোঁদা মিষ্টি গন্ধে তখনো ম ম চারপাশ। পুরো বাঁশবন জুড়ে বালিয়াড়ি। সাদা ঝুরঝুরে বালিতে পায়ের তালু ডুবে যাবে। দুপায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে শুকনো বালি। হাঁটতে হাঁটতে বনের শেষ প্রান্তে এসে থমকে দাঁড়াবো আমরা। আরো সামনে যেতে হলে হাটু জলের ছড়াটা পার হতে হবে। স্বচ্ছ জলধারায় ভালো করে খেয়াল করলে দেখবে অসংখ্য মলা পুটি চিংড়ির পোনা খেলতে খেলতে চলে যাচ্ছে ভাটির দিকে। পানি আরেকটু বাড়লে বিশাল বড় বোয়াল মাছও দেখা যাবে। বর্ষাজুড়ে মাছ ধরার উৎসব চলে এই খালের ধারে। এখান থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে একটা দীঘির নির্জন পাড়। দীঘির পাড়ে সারি সারি প্রাচীন বৃক্ষ সটান দাঁড়িয়ে।
ওই পাড়ে যাবো না আমরা। কারণ হঠাৎ করে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। মাথার উপর বড় বড় গাছ, তাই টের পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঝুমঝুমিয়ে কুকুর-বিড়াল নামতে শুরু করবে, তখন আশ্রয়ের খোঁজ করতে হবে। এরকম নির্জন বনে আশ্রয় কই? ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরতে হবে ভেবে মনটা দমে যাচ্ছে?
না! মোটেও হতাশ হবে না। আরেকটু এগিয়ে হাতের ডানে তাকালেই চোখে পড়বে সেই গাছটি। বিশাল একটা তুলাগাছ। অদ্ভুত চেহারার কান্ডটা। গোড়ার দিকে দুটো দেয়ালের মতো চ্যাপটা দেয়াল বেড়িয়ে একটা গুহার সৃষ্টি করেছে। ওখানে অনায়াসেই বড়সড় একজন মানুষ হারিয়ে যেতে পারে। পাতলা শরীরের দুজনও হারাতে পারবে। যতই বৃষ্টি হোক, ওখানে কেউ ভিজবে না। এক ছুটে নিরাপদ ওই আশ্রয়ে গিয়ে দাঁড়াবো আমরা। এখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখার সুখ অতুলনীয়। যত বৃষ্টিই হোক সরাসরি জল ঝরবে না মাথার উপর। শীতল বাতাসের ঝাপটায় গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাবে। আনন্দ শিহরন। চকচকে পাতার উপর টুপটুপ করে ঝরতে থাকা দুপুরিয়া বৃষ্টিটা দেখতে থাকো। বাঁশবনের ফাঁক দিয়ে ওদিকে দেখা যাবে কল কল করে বয়ে চলা ঝরনার জলও।
একটু পরেই বৃষ্টি থেমে যাবে। বৃষ্টি থামলেও বেরুতে ইচ্ছে করবে না সেই আশ্রয় ছেড়ে। বেরিও না। দাঁড়িয়ে থাকো। বুক ভরে টেনে নাও বিশুদ্ধ বাতাস, প্রতিটা নিঃশ্বাসে তুমি হয়ে যাবে আপাদমস্তক শুদ্ধ মানুষ। বিশ্বাস করো এখানে দাঁড়িয়ে তুমি অতীতের সকল গ্লানি দুঃসময়কে ক্ষমা করে দেবে অবলীলায়।
তোমাকে নিয়ে ছোট্ট এই ভ্রমণ পরিকল্পনার কথা তুমিও জানো না।
কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়ে বাজ পড়লো মাথায় যেন। গাছটি যেখানে দাঁড়িয়ে থাকতো সেখানকার আকাশটা খাঁ খাঁ রোদ্দুর ছড়াচ্ছে নির্লজ্জের মতো। গাছটির কোন অস্তিত্বই নেই কোথাও! এতগুলো বছর, এতগুলো মানুষকে আশ্রয় দিয়েও গাছটির শতবর্ষী জীবন হেরে গেছে জ্বালানী-আসবাবের দৈনন্দিন প্রয়োজনের কাছে। বোকাসোকা আর কোন কিশোর কখনোই সেই (গাছ+ছাতা) গাচ্ছাতার আশ্রয় পাবে না আর কোন বরষায়।
মন্তব্য
বাংলাদেশের সব গ্রাম কি একই রকম নাকি দেখতে ? যাই হোক , নস্টালজিক পোস্ট ।
বাংলাদেশের সব গ্রামই সবুজ। তবে নিজের গ্রামটি একটু বেশী সবুজই হয়
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আ আ আ... আমি যাব এই শান্তসবুজ জায়গায়!
চলে আসেন, পা ছড়িয়ে বসবেন বাঁশ বাগানের ছায়ায়
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শেষের একই ছবি দুবার আসে নি তো?
লেখাটা ছুঁয়ে গেল..
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ছবি দুবার দেইনি, কিন্তু দুবার দেখাচ্ছে সিস্টেম কারিগরিতে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আহা !!!
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আহা.........
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ঝরঝরে লেখাটা মন ছুয়ে গেল। ছবিগুলো যেন জীবন্ত।
অনেক ধন্যবাদ
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আহা!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আহা........
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যা.........
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
কিছুদিন আগেই সিলেটের লাউছড়া বন থেকে ঘুরে এলাম... মনে পড়ে গেলো
আমি ছবছর ধরে লাউয়াছড়া যাবার পরিকল্পনাই করে যাচ্ছি, আর আপনি ঘুরেই এলেন
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার লেখা আমার ভালো লাগে। এই লেখাটায় প্রকৃতী ঘিরে একটা প্রবল আশ্বাসের ছোয়া যেমন পাওয়া গেলো তেমনি পাওয়া গেলো দূরাগত কষ্টের হাতছানি। পাহাড়ী ঝিরিটার ছবি কঠিন পছন্দ হয়েছে!
যদি কিছু মনে না করেন, জায়গাটা কোথায়? একবার চকরিয়ার অনেক ভেতরে গিয়েছিলাম, মাতামুহুরী নদীর কাছে - কেন জানিনা, সে কথা মনে পড়ে গেলো!
ভালো থাকবেন!
জায়গাটা চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যেই, পটিয়ার একটা গ্রামে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার সাথে সাথে আমিও একটু ঘুরে এলাম ছাঁয়া সুনিবীড় শান্তির নীড় থেকে...
আপনাদের ঘুরিয়ে আনতে পেরে আমি ধন্য
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
প্রথম ছবিটা এত জীবন্ত যে মনে হচ্ছে হাতছানি দিয়ে ডাকছে বুঝি! যেমন ছায়ায় ঘেরা আপনার গ্রাম তেমনই মায়াভরা লেখাটা
হাতছানির ডাকে সাড়া দিয়ে একবার ঘুরে যেতে পারেন কিন্তু
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ মৌনকুহর
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
খুবই ভাল লাগলো। তিন নাম্বার ছবিটা খুব সুন্দর। সবুজের মাঝে নীল।
তিন নম্বর ছবিটা আমারো প্রিয়। ধন্যবাদ আপনাকে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সবুজ যে কোন ছবিই আমার ভালো লাগে। এই ছবিগুলো তো দুর্দান্ত। খাসা ছবি তুলেন আপনি। আশা করি নীড়ের সন্ধান এবার পেয়েছেন
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
খাসা ছবি??? আপনার যে সব ছবি দেখেছি তার যে কোনটার কাছাকাছিও যদি হতো একটা। তবু ছবিয়ালের প্রশংসা পাইলে কার না ভাল্লাগে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ভাল লাগল, স্নিগ্ধ সবুজ বর্ণনা--- অণু
নতুন মন্তব্য করুন