বাসায় একটা টিভি কেনার জন্য বাবার সাথে কতবার অভিমানে গাল ফুলিয়েছি ঠিক নেই। ১৯৭৯ সালে মাসখানেকের জন্য একটা বারো ইঞ্চির সাদাকালো ন্যাশনাল টিভি বাসায় এসেছিল। কিন্তু মাত্র ১টা চ্যানেলের ৫ ঘন্টার প্রোগ্রামের কারণে পড়াশোনা 'উচ্ছন্নে' যাচ্ছে বলে ওটা বিক্রি করে দেয়া হয় শীঘ্রি।
আরো অনেক পরে কলেজে ওঠার পর ১৯৮৫ সালে আরো একটা ছোট্ট সনি টিভি কেনা হয় বাসায়। এবার রঙিন টিভি! প্রথমদিন টিভি আসার পর সেই দুপুরবেলা থেকে আমরা সব ভাইবোন জড়ো হয়ে টিভির রঙিন ঝিকিমিকি উপভোগ করেছিলাম অনেকক্ষণ। সেদিন দুপুরে খেতে বসে 'তাড়াতাড়ি খা' বলে মাকে তাড়া দিতে হয়নি কাউকে। সবাই নির্বিবাদে খেয়েদেয়ে দুপুরে খানিক ঘুমিয়ে পাঁচটা বাজার আগেই টিভির সামনে হাজির।
বিটিভির প্রোগ্রাম শুরু হতো বিকেল পাঁচটায়। প্রোগ্রাম শুরুর আগে কুউউউউউ শব্দ নিয়ে একটা বেনীআসহকলা বর্ণের পর্দা চলে আসতো। সেটা দেখেই কী খুশী আমরা!! আর বেশী দেরী নেই। কিছুক্ষণ পর পর্দাটা বদলে গিয়ে গোলাকার ডিজাইনের একটা বিচিত্র ডিজিটাল জ্যামিতিক প্যাটার্নের পর্দা আসে। সেখানে লেখা আছে ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’। উফফ আর মাত্র কয়েক মিনিট, তারপর সেই কাংখিত মুহূর্ত। হালকা একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজতো এই পর্বে। অল্পক্ষণ পরেই ঘোষকের মুখ দেখা যায়। হাস্যোজ্জ্বল উপস্থাপিকা বলে উঠলো, ‘আসলামুআলাইকুম, বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে আমি কুমকুম হাসান....” ইত্যাদি সূচনা বানী। এরপর কোরান পাঠ হয়। তারপর ত্রিপিটক কিংবা গীতা।
ওরা কি পাঠ করছে সেদিকে মন নেই আমাদের। আমরা কেবল রঙিন ছবিগুলির দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে আছি। মানুষগুলো কী স্পষ্ট! যে যেই রঙের পোষাক পরেছে ঠিক সেরকমই দেখা যায়। আজব দুনিয়া। এত সুন্দর ঝকঝকে ছবি আমাদের ইহজনমে আর দেখিনি। তখন আমাদের চেহারার বিরামহীন হাসি দিয়ে নির্ঘাত কোটি টাকার বিজ্ঞাপন হয়ে যেতো সনি কর্পোরেশনের।
প্রথমদিন বলে সবার পড়াশোনা মাফ ছিল ওইদিন। বাবা মা খুব উদার মনে আমাদের পাশে বসে টিভি দেখলো, বকুনি-বিহীন একটা রাত। টিভি পর্দায় আঠার মতো সেঁটে আছে আটজোড়া চোখ। সীট ছেড়ে কেউ উঠছে না। কেবল রাতে খাওয়ার সময় উঠলাম খানিকক্ষণের জন্য। তবু একটা দল পাহারায় থেকে গেল, যদি কিছু মিস হয়। সেটা ওরা দেখে জানাবে আমাদের। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত পৌনে বারোটায় জাতীয় পতাকা দোলানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত টিভির সামনে বসে রইলাম আমরা। কী চরম উত্তেজনা! রাতে বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ ঘুম এলো না। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল নিজেদের। তখন আত্মীয় স্বজনের কারো কারো বাসায় টিভি থাকলেও, রঙিন টিভিতে আমরাই ফার্স্ট হয়েছি, এটা নিয়ে আরেকদফা গর্ব হলো।
২৮ বছর পেরিয়ে গেছে তারপর। এখন বস্তির দরিদ্রতম ঘরেও ৫০-৬০ চ্যানেলের টিভি থাকে। সেদিন গুনে দেখলাম চট্টগ্রামে আমার এলাকায় ৮০টা চ্যানেল দেখায়। সারাদেশেও গড়পড়তা সেরকমই হবে। কিন্তু ৮০টা চ্যানেল থাকার পরও টেলিভিশনের প্রতি লোকজনের আগ্রহের মাত্রা আমাদের ওই সুদূর দিনের ১% ও হবে না। অনেক সুলভ হয়ে গেছে প্রযুক্তি, বিনোদন। অথচ আগ্রহ কমে গেছে সেই বিপরীত অনুপাতে।
তবে সবগুলো চ্যানেলের সারাংশ করতে গিয়ে চমকপ্রদ কিছু তথ্য পেয়েছি, সেটা বলতেই এই লেখার সূচনা-
১. ৮০টা চ্যানেলের মধ্যে 'দেশ' ভেদে চ্যানেল সংখ্যা
বাংলাদেশী ২৩,
ভারতীয় ৩৭,
অন্যান্য ২০
২. ৮০টা চ্যানেলের মধ্যে 'ভাষা' ভেদে চ্যানেল সংখ্যা
বাংলা ২৩,
হিন্দি ২৬,
ইংরেজি ১৮
অন্যন্য ১৩
৩. ৮০টা চ্যানেলের মধ্যে কোন দেশের 'বিজ্ঞাপন'এর প্রাধান্য
বাংলাদেশী ২৩,
ভারতীয় ৪৫,
বিজ্ঞাপনবিহীন অন্যন্য ১২
এখানে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হলো ৩ নম্বরের হিসেবটা। ঘোষিত ভারতের চ্যানেল ৩৭টা হলেও বিজ্ঞাপনে ভারতের নিয়ন্ত্রণ ৪৫টি চ্যানেলে। ডিসকভারি বা জিওগ্রাফিক চ্যানেলের মতো অভারতীয় চ্যানেলও ভারতীয় বিজ্ঞাপনে চলছে কারণ ওদের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ অফিস সম্ভবত: ভারত। জ্ঞানের স্বার্থে বিনোদনের স্বার্থে আমরা বিজ্ঞাপন অত্যাচার সয়েও ডিসকভারি স্পোর্টস ট্রাভেল ইত্যাদি চ্যানেলগুলো দেখবো। কিন্তু বিরাট সংখ্যক ভারতীয় চ্যানেল নিরেট অখাদ্য। সেরকম প্রায় ২৫টি অখাদ্য ভারতীয় চ্যানেল আমরা গিলে যাচ্ছি কার স্বার্থে?
ওই অখাদ্য বাদ দিয়ে আমরা কি করতে পারতাম? আমরা আরো চারটি মহাদেশের কমপক্ষে ৫০টি দেশের চ্যানেল দেখতে পারতাম একদম বিনে পয়সায়। এশিয়ার অনেক দেশের চ্যানেল, আফ্রিকার, রাশিয়ার, পূর্ব ইউরোপের, দক্ষিণ আমেরিকার অনেক চ্যানেল আমরা ফ্রীতে দেখতে পারি যদি কেবল সরকার আর অপারেটর দেখাতে চায়। টেলিভিশন একটা বৈশ্বিক জানালা। সারা বিশ্বকে দেখতে পারি আমরা ছোট্ট এই শক্তিশালী মিডিয়ায়।
কিন্তু বিশ্বের এত দেশ থাকতে বাংলাদেশের কেবল নেটওয়ার্ক কেবল ভারতকে ঘিরে মরছে কেন? আমাদের জানালায় অর্ধেকের বেশী সংখ্যক ভারত কেন বসে থাকে? আমরা ওই ৪৫টি চ্যানেলে ভারতীয় বিজ্ঞাপন গিলছি শুধু তাই না, ওইসব চ্যানেলের অখাদ্য সিরিয়ালগুলোতে মেয়েরা যে শাড়ি চুড়ি গহনা পরে, বাংলাদেশের মেয়েরা তাই কেনার জন্য মার্কেটে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও এগিয়ে আছে তবু আমাদের ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি ডলারের ভারতীয় শাড়ি জামা কাপড় আমদানি করে এইসব হতভাগা দর্শকদের জন্য। ঈদের সময় বিশাল অংকের টাকা ব্যয় করে মানুষ ভারতীয় জবড়জং পোষাক ক্রয় করতে। উচ্চবিত্তের প্রভাবে মধ্যবিত্তরাও পাল্লা দিয়ে ওসব কিনে নিজেরা ফতুর হয় ঈদের বাজেটে।
আমরা কি ভেবে দেখেছি ওদের টিভি অনুষ্ঠান যতটা গিলছি আমরা, আমাদের বোকা জনগণ তার চেয়ে বহুগুণ বেশী গিলছে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের পণ্য।
মন্তব্য
প্রবল বমি পাচ্ছে।
আপনার ইন্ডিয়া সংক্রান্ত লেখাগুলো পড়লেই রাগে পিত্তি জ্বলে যায়। আবার নিরুপায় হয়েই পাঁচতারা দাগিয়ে যাই।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
অই অখাদ্য ২৫ টা চ্যানেল এই দেশের অনেকেরই অবসরের বিনোদন যোগায়। অনেকেই আছেন হয়তোবা এই ২৫ টার কোন একটা চ্যানেল দেখার জন্যই বাসায় আকাশ-সংস্কৃতিকে টেনে এনেছেন। আর অধিকাংশ (সবাই-ই কি না?) ব্যবসায়িরাই ব্যবসা করেন নিজেদের জন্য,দেশ গোল্লায় যাক এতে তাদের মাথাব্যথা নাই। যেই পোশাক তাদের নিয়মিত ক্রেতারা কিনবে না, সেটা তারা দোকানে সাজিয়ে রাখবেনই বা কেন!
ভাইরে, এই দেশের মানুষ কামের চে' কথা কয় বেশি! এগুলান পরিবর্তন হইতে আরও বহুত দেরি!
_________________
[খোমাখাতা]
ভালো লেখা।
মনে আছে, ছোটবেলাম একবার রেবা খালাম্মার বাসায় মোহাম্মদ আলীর বক্সিং দেখতে গিয়ে শুনি খেলা দেখাবে না। অনুপ খালুর নিজের হাতে বানানো টেলিভিশন ছিলো ওটা। উনি ছিলেন প্রয়াত চিত্রপরিচালক দীলিপ বিশ্বাসের বড়ো ভাই।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
সব আক্রোশ দেশের সাধারন জনগণের উপর কেন? বাংলাদেশ গার্মেন্ট্স শিল্পে অনেক এগিয়ে এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু দেশের কয়্জন মানুষ এই ভাল কাপড় কিনতে পারে কিংবা বলা ভাল যে স্বচক্ষে দেখতে পারে? আমাদের দেশে যারা বড় বড় ব্যবসায়ীরা আছেন তারা তো সবচেয়ে ভাল মানের পোশাক গুলো উন্নত বিশ্বে রপ্তানি করে দেন। আর তাই ভাল পোশাক পেতে বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতীয় পোশাকের দিকে ঝুকে থাকে। আর তাছাড়া আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকেদের জন্মগত ধারণা যে দেশীয় জিনিসের মান সবচেয়ে খারাপ। তাই যাই কিনো বিদেশী কেনো। এতে আমাদের দোষ কোথায় বলেনতো?
আপনার যুক্তিটি বাংলাদেশের চিংড়িমাছ রপ্তানীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য পোশাকের ক্ষেত্রে নয়। বাংলাদেশের মার্কেটে পোশাকের ডিজাইন মান কোনটাই রপ্তানিকৃত পোশাকের চেয়ে কম নয়। আমি পাঁচ বছর ধরে বিদেশ থাকি, আমার প্রায় প্রতিটি শার্ট অথবা টিশার্ট দেশ থেকে নিয়ে আসা। দেশকে ভালবেসে নয় বরং অসম্ভব উন্নত কোয়ালিটির জন্যই। নিত্যউপহারের একেকটি টিশার্টের ডিজাইন দেখে সাদারা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতের পোষাকের দিকে ঝুঁকে থাকলে কাহানি সাস সাস কি টাইপ সিরিয়াল দেখেছে বলেই।
আপনি আমিই সাধারন জনগণ। আমি ভালো বাকিরা খারাপ এই কথা বলা মূল লিখকের উদ্দেশ্য নয়।
..................................................................
#Banshibir.
সবাই সবসময় এমন বলে কেন যে বাংলাদেশের মেয়েরা ইন্ডিয়ান পোশাক বেশি পছন্দ করে? আমার তো মনে হয় ইন্ডিয়ানদের রুচির সাথে আমাদের অনেক তফাত, ওরা তো জমকালো পরতে ভালবাসে আর আমরা এমন ডিজাইন তো কালেভদ্রে পরি। আমার আশপাশের সবাই তো দেখি দৈনন্দিন কাজে দেশী কাপড়ে তৈরী পোশাক ব্যাবহার করি আর ওকেসনে দেশী বুটিক হাওস গুলো থেকে কিনি। "দেশীদশ" এর সব দোকানেই ভাল ডিজাইনের পোশাক দেখি, ব্লক-বাটিক, হাতের কাজ সবই অনেক পপুলার এখন, ভার্সিটি-অফিস সবখানে এই চলে। তবে চাঁদনীচক, বিভিন্ন সুপার মার্কেটগুল ইন্ডিয়ান গজ কাপড়ে ভর্তি।
ভাসাভি-জারা এগুলা হল প্রতিবন্ধীদের(টাকা আছে কিন্তু নিজস্ব রুচি নাই) জায়গা।
আমার লেখার উদ্দেশ্য কোন ভাবেই লেখকের বিরোধিতা করার জন্য ছিলনা। আমি শুধু আমাদের ভিতরের কিছু দূর্বলতা তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। আপনারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকের ধারণা দেশি জিনিসের চাইতে বিদেশি জিনিস ভাল। সেটা ভারতীয় হোক বা অন্য যে কোন দেশের। দোকানে গেলেও দোকানদার রা বিদেশি জিনিসের কথা বেশি বলে। আর আপনারা অনেকেই আছেন প্রবাসী যাদের কাছ থেকে বিদেশি গিফ্ট পাওয়ার আশায় আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি।
আমার গিফটের অপেক্ষায় আমার ফ্যামিলির কেউ বসে থাকেনা। কেউ এরকম করলে আমি তাদের মানসিক দীনতার কথাই বলব।
..................................................................
#Banshibir.
বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে আপনার। দেশের ভালো ভালো কাপড়গুলো বিদেশে রপ্তানী করে দিচ্ছে এই তথ্যটা আপনাকে কে দিল?
বাংলাদেশ বিদেশ থেকে যে অর্ডার নেয় সেগুলো রপ্তানী করে। দেশেরগুলো দেশের বাজারেই সয়লাব। একটু চোখ মেলে তাকালেই দেখবেন।
সারা দুনিয়ার মানুষ সুতী আরামদায়ক জামাকাপড়ের জন্য পাগল। আর বাংলাদেশের নারীসমাজ ভারত পাকিস্তানের ফ্যাশানের উপর সওয়ার হয়ে প্লাস্টিকের জামা কাপড় কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। হাল ফ্যাশান বলে যে পোষাকগুলো মার্কেটে মার্কেটে নায়িকাদের নাম দিয়ে বিক্রি করে সেগুলো নেহায়েত যাত্রাপালায় পরিধানযোগ্য। রুচির প্রশ্নে আমাদের বুটিকশপগুলোর ধারে কাছেও আসে না ওই সব লেহেঙ্গা করেঙ্গা মারেঙ্গা। তবু একশ্রেনীর নারীসমাজ, (বিশেষকরে নারী সমাজের কথা বলছি সঙ্গত কারণেই) ভারতীয় সিরিয়ালের কপিপেষ্ট করতে গিয়ে মার্কেটে গিয়ে সেই পোষাকগুলো খুঁজে বের করে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমাদের বাসায় যখন প্রথম টিভি এল, আমরাও ৫টা বাজার আগেই অস্থির হয়ে যেতাম; নজরুলের গানের সুর আমাদের ভিতর আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দিত, কারণ তা ছিল বিটিভির প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগমনী বার্তা। আসলে সেই সময় বিটিভির একটা নাটকের জন্য আমাদের ভিতর যে প্যাশন কাজ করত, তার ছিটেফোঁটাও কি আজ আছে? মনে আছে, অয়োময়, সংশপ্তকের জন্য কি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম আমরা একটা সপ্তাহ!
এখানে একটা ভুল হচ্ছে মনে হয় ভাইয়া। কেবল সরকার আর অপারেটর চাইলেই কি হবে? দর্শকদের চাইতে হবে না? আর সাধারণ দর্শকদেরই কি আপনি শতভাগ দোষ দিতে পারেন? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভাষার মিলের কারণেই হিন্দি ভাল বুঝতে পারে: আফ্রিকা, রাশিয়া, বা ব্রাজিলিয়ান চ্যানেল তো স্বাভাবিক কারণেই তাদের বোধগম্য হবে না!
একমত। কিন্তু এটা তো দেশী চ্যানেলের ক্ষেত্রেও সত্য। চ্যানেল আইয়ের একটা ঈদের নাটকে দর্শককে ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশ্য এই বিজ্ঞাপনের টাকা দেশেই থাকছে। তবু দেশী চ্যানেলগুলিই যেখানে অতি বানিজ্যকরনের প্রশ্নে কোন আপোষ করছে না, তখন বিদেশী চ্যানেলগুলির তো আর এই ব্যাপারে চিন্তা করার দরকারই নেই!
আমার মনে হয়, আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার চ্যানেল দিয়ে ভারতীয় চ্যানেলের আগ্রাসন রোখার পদ্ধতিটা ভালমতো কাজ নাও করতে পারে। একমাত্র দেশী চ্যানেলগুলোর মানের উৎকর্ষ ও কমিটমেন্ট ভারতীয় চ্যানেলের আগ্রাসন রুখতে পারে। বিটিভি যুগের প্যাশন ফিরিয়ে আনতে হবে দেশী চ্যানেলগুলোর জন্য। আপনার লেখা স্মৃতিকে নাড়া দিয়েছে!
"কেবল সরকার আর অপারেটর চাইলেই কি হবে? দর্শকদের চাইতে হবে না? আর সাধারণ দর্শকদেরই কি আপনি শতভাগ দোষ দিতে পারেন? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভাষার মিলের কারণেই হিন্দি ভাল বুঝতে পারে:"
দর্শকের চাহিদার কারণেই কি এত অখাদ্য ভারতীয় চ্যানেল দেখানো হয়? ৩৭টা চ্যানেলের মধ্যে কতোটা দর্শকপ্রিয়? বড়জোর ১০-১৫টা। বাকীগুলো কেন?
"তবু দেশী চ্যানেলগুলিই যেখানে অতি বানিজ্যকরনের প্রশ্নে কোন আপোষ করছে না, তখন বিদেশী চ্যানেলগুলির তো আর এই ব্যাপারে চিন্তা করার দরকারই নেই! "
ওরা চিন্তা করবে কেন? চিন্তা আমাদের করতে হবে। ওদের দোষ দেখছি না আমি, আমরা নিজেরাই ওদের ডেকে এনে বেডরুমে শুইয়ে দিয়েছি।
সারা বিশ্বের চ্যানেলগুলো দেখা দরকার জ্ঞানের স্বার্থে। টেলিভিশন জিনিসটা খবর আর বিনোদন না, এটা জ্ঞানের জানালাও। একেক দেশের একেক সংস্কৃতি, জীবনযাপন, আচার আচরন। আমরা কেবল ভারতের দিকে কেবলা বানিয়ে বসে আছি বলেই ক্ষোভ। আর এই কেবলা বানানোর কারিগর আমাদের কুপমন্ডুক সরকার আর কেবল অপারেটর।
আমি ভুটানে গিয়ে এটিএন বাংলা দেখেছি। কিন্তু যখনি বিজ্ঞাপন আসে ওটা ঢেকে যায় ভারতীয় বিজ্ঞাপনে। ওরা আমাদের বিজ্ঞাপন গিলতে রাজী না। কিন্তু আমরা ওদের অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপন সব গিলে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
"বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভাষার মিলের কারণেই হিন্দি ভাল বুঝতে পারে" এটা ঠিক না। আমরা অনেকদিন ধরে শুনতে শুনতে এটা বুঝতে পারি, বাসায় রোজ স্পানিশ চালান দেখবেন বাসার সবচেয়ে পিচ্চিটা সবার আগে ওটা বুঝতে শুরু করবে, আমাদের জেনারেশন সেই ছোট থেকে হিন্দি গিলতে গিলতে এখন এই হাল। আর মহিলারা ওখানকার ইমশন দেখার জন্য কিছু না বুঝেও এসব গিলে।
খুব ভাল লাগল, সহমত।
facebook
ভারতীয় সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন বিষয়ে লেখাগুলো ভাল লাগছে। আপনার বক্তব্য সরল, পরিষ্কার ও ঋজু।
কলম চালু থাকুক।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ভারতীয় বিনোদনের ক্র্যাপ দেখতে গিয়ে আমরা বেহুদা, আই রিপিট- বেহুদা বেশ বড় একটা অংকের (সংখ্যাটা ২০০ হাজার ডলার কি?) টাকা ভারতের পকেটে ঢোকাচ্ছি। কেবল গোদরেজ ফেলে ওয়ালটন নিয়ে মেতে থাকলে বালটাও ছেঁড়া যাবে না ভারতের। প্রতিটা সেক্টরে কড়ায় গণ্ডায় আমাদের প্রতিটা পাই হিসাব করতে হবে ভারতকে দেয়ার আগে।
'সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের কোনো সীমানা নাই' এইসব বালছাল বুলি দিয়ে যারা ভারতের বিনোদন তথা চ্যানেল, নাচা, গানা ইত্যাদি দেখাকে হালাল রাখতে চায় তারা পরিনামে ভারতের গোলাম-আযম বরাবর এই ২০০ হাজার ডলার ঢোকানোটাকেও কোনোভাবে চালু রাখতে চায়- সিম্পল হিসাব।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বড় বড় কথা বললেই তো হবে না। হিনদি চ্যানেলের ডিমান্ড আছে। ব্যবসায়ী দের কী করতে বলেন? লস খেয়ে ল্যাতিন আমেরিকান চ্যানেল দেখাবে?
আর একজন যে স্প্যানিশ নিয়ে বল্লেন, বিশ্বাস হোলো না। হিন্দি অনেক শব্দ শুনে বাংলার অনেক কাছাকাছি মনে হয়, উদাহরনঃ খাবো = খাউঙ্গা/খা জাউঙ্গা, চলে যাও = চালা যাও ইত্যাদি।
যে দশ পনেরটার ডিমান্ড নেই বললেন অই গুলাও বাংলা চ্যানেল এর চেয়ে বেশি চলে। অনুগ্রহ করে খোঁজ নিয়ে দেখুন কারা বেশি টিভি দেখে। আর জানেন বোধহয়, আনলিমিটেড চ্যানেল দেখানো যায় না, আশি টাই লিমিট।
খেলা ধুলা ইত্যাদি-ও যদি বাংলা দেশী কোনো চ্যানেল দেখায়, সেটা পাবলিক পছন্দ করে, কিন্তু দেখায় ত কদাচিৎ। পাবলিক ই বা কী করবে বলুন?
ব্যবসায়ী দের নিয়ে কোনো উপদেশ থাকলে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুন।
(বানান ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।)
নতুন মন্তব্য করুন