চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাঃ প্রচার ক্ষুধার মহামারী

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৩/২০১২ - ১১:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[বিরক্তি চেপে সহ্য করে থাকা ভদ্রলোকের একটা গুন। আমি ভদ্রলোক নই বলেই এই গুনটা আমার নেই। তাই প্রচন্ড বিরক্তির সাথেই নাগরিক বিরক্তিমূলক লেখাটা লিখছি।]

আমাদের হাইস্কুলে এক শিক্ষক বলতেন মহাবিশ্বে একজন মাত্র ঈশ্বর সেই কারণে বিশ্বের সবকিছু শৃংখলাবদ্ধ। চাঁদ সুরুজ পৃথিবী কারো মধ্যে বিরোধ নেই। যে যার গতিতেই চলছে শত শত বছর ধরে। একের বেশী ঈশ্বর থাকলে সূর্য একদিন পুবে আরেকদিন পশ্চিমে দেখা যেতো। আজ সেই শিক্ষক থাকলে বলতাম, স্যার বাংলাদেশের কিন্তু দুজন ঈশ্বর বলেই বাংলাদেশ ভারসাম্য নিয়ে দাড়িয়ে আছে। স্যার যদি বলতেন, প্রমাণ কি। আমি বলতাম-
"আগামী ২৮ তারিখ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। কিছুদিন আগে এই জায়গায় হয়েছিল বিএনপির সমাবেশ। ভাষন দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এই দুটো জনসভা ভারসাম্য তত্ত্বের ছোট্ট একটা প্রমাণ।"

এই সময়ে বাইরের কোন শহর থেকে কেউ চট্টগ্রাম ঢুকলে দিশেহারা বোধ করতে পারেন। সমস্ত রাস্তঘাট দালান কোটা বিলবোর্ড ফুটপাত গাছ বাঁশ জুড়ে কেবলি মাথা আর মাথা প্রদর্শনী। এখানে রাস্তায় রাস্তায় হাজারো নেতা উপনেতা আতিপাতিছাতি নেতা সহ হরেক কিসিমের মানুষের মুন্ডুর প্রদর্শনী দেখবেন। প্রচার ক্ষুধায় আক্রান্ত এই সকল ব্যক্তি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে প্রধানমন্ত্রীকে সমস্ত তেলের খনি উপুড় করে দিতে। এমনি এক পাতিনেতার মুন্ডুর ছবি দেখলাম আগ্রাবাদ থেকে নাসিরাবাদ পর্যন্ত প্রতিটা বৈদ্যুতিক পিলার বিলবোর্ড ছেয়ে ফেলেছে। ওই মুন্ডুটা এত বেশীবার প্রদর্শিত হয়েছে রাস্তার নানান বিলবোর্ডে আমার চোখে রীতিমত ম্যাট্রিক্স দেখছিলাম। প্রধানমন্ত্রী ভেবে বসতে পারেন ইনি হয়তো চট্টগ্রামের নতুন মেয়র অথবা হবু মেয়র।

কিন্তু জানা গেছে তিনি যুবলীগের এক পাতি নেতা। তার বিজ্ঞাপনের ব্যবসা আছে। তাই তার ব্যানার ছাপাবার ক্ষমতা বেশী। শুধু তাই না। সেই নেতার পক্ষে আরো অনেক ছাতিনেতা ব্যানার ছাপিয়ে রাস্তা ছেয়ে ফেলেছে। পাতিদের ভীড়ে হারিয়ে গেছে জাতীয় নেতাদের ব্যানারগুলো। যে কারো ইচ্ছে হয়েছে অমনি একটা ব্যানার ছাপিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে। কিছু ব্যানারে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও যে ব্যানার ছাপিয়েছে তার ছবির সাইজ বড়। প্রচার ক্ষুধার কী মহামারী। এরকম হাজার লক্ষ বিলবোর্ড ব্যানারে ঢাকা পড়েছে নগরীর সমস্ত বিজ্ঞাপন বিলবোর্ড, দোকানের সাইনবোর্ড। কোথাও কোন নিয়ন্ত্রন নেই। অনুমতির বালাই নেই। রাজনীতির নামে মানুষ খুনই মাফ, এতো সামান্য ব্যানার।

রাস্তায় রাস্তায় এত ব্যানার অপচয় অথচ ব্যানারে এক লাইন প্রয়োজনীয় কথা নেই। আর কিছু না হোক সবাই একটা করে সরকারের সাফল্য গাইলেও সরকারের কয়েক হাজার সাফল্য প্রদর্শিত হতে পারতো। কিন্তু কেউ তা করেনি। সবাই কেবল শুভেচ্ছা আর স্বাগতম জানিয়েছে যান্ত্রিক কপিপেষ্ট কায়দায়। এছাড়াও অনেক দাগী আসামীর নামে ব্যানার প্রকাশিত হয়েছে যা ঝুলছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। জানতে ইচ্ছে করে কার সম্মান বাড়াচ্ছে এই সব হাস্যকর ব্যানার? অপ্রয়োজনীয় শুভেচ্ছা স্বাগতম পূর্ন এই ব্যানারগুলো ভোট কিংবা জনমত বৃদ্ধিতে কোন সাহায্য করবে? প্রচারক্ষুধায় আক্রান্ত এইসব নেতা কর্মী বাংলাদেশের কোন কাজে আসে?

নাগরিক হিসেবে আমার তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করলাম পলোগ্রাউন্ড জনসভা নিয়ে এই সমস্ত ডিজিটাল অপচয়ে। প্রচার কাজে প্রযুক্তির এত বড় অপব্যবহার রাজনীতিবিদদের পক্ষেই সম্ভব।

ছবি: 
07/29/2008 - 2:17অপরাহ্ন

মন্তব্য

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

গত ২৪ তারিখ সিলেটে ছিল প্রধানমন্ত্রীর মহা-সমাবেশ। উফ্। অতীষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম।

এই যে সমাবেশ, মহা-সমাবেশ, ইত্যাদি ইত্যাদি করতে এতো এতো টাকা খরচ করা হয়, শেষ পর্যন্ত কি লাভ হয় দেশের? এই টাকাগুলো দেশের কাজে ব্যায় করলে কি আরো ভালো হতো না?

শুনেছি এবার প্রধানমন্ত্রী সিলেট সফরকালে সার্কিট হাউসের যে রুমে তিনি ছিলেন সে রুমের পর্দা কেনা হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে, দেওয়াল রং করানো হেয়েছে চার লক্ষ টাকা খরচ করে, এবং রুমের ফার্নিচার কেনা হয়েছে ছয় লক্ষ টাকা খরচ করে। প্রধানমন্ত্রী সে রুমে অবস্থান করেছিলেন মনে হয় মাত্র কয়েকঘন্টা। কয়েকঘন্টার জন্য খরচ হলো সাড়ে এগার লক্ষ টাকা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন, এই সাড়ে এগার লক্ষ টাকা দিয়ে কতজন লোকের কত বেলার খাবার জুটানো যেত?

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

এই ছাগলগুলো যদি এই বিষয়টা বুঝত............

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ঠিক বলেছেন।
এত ব্যানার মনে হয় এর আগে শহরে দেখিনি।
হাম্বালীগের পাতি-ছাতি-উপ-বড়-ছোট সব নেতা-কর্মীর নামে ব্যানার ছাপা হয়েছে। এমনকি কর্মাশিয়াল বিজ্ঞাপনগুলোর উপরেও এইসব ব্যানার লাগানো হয়েছে।
অবস্থা এমন হয়েছে, মানুষ চট্টগ্রামকে না আবার ব্যানারের শহর বলে ট্যাগিং করা শুরু করে।
প্রচারে প্রসার কিন্তু অতি প্রচারে ফালতু।

নাগরিক হিসেবে আমিও তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করলাম পলোগ্রাউন্ড জনসভা নিয়ে এই সমস্ত ডিজিটাল অপচয়ে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি টাকা অপচয়ের এবং নির্লজ্জ চামচাগিরির এই নোংড়া প্রতিযোগিতা আইন করে বন্ধ করা উচিত।

সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি
ও আমার মায়া ভাই -------------

(এরপর আর কিছু নাই)

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

সহমত

তারেক অণু এর ছবি
ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

সহমৎ। ঢাকার অবস্থা তো আরো খারাপ। রাস্তার মাঝখানে বাশঁ দিয়ে বড় বড় ব্যানার দেয়া আছে; দূর থেকে মনে হয় ফুটওভার ব্রীজ। ঈদ, ঈদের পর নববর্ষ, পুরস্কার প্রাপ্তি, শহর ভাগ, কী নেই। মিরপুর ১০ এ, মতিঝিলে সবজায়গায় রাস্তার মাঝখানে বাশঁ দিয়ে এই ব্যানার।

সুলতান এর ছবি

এখন পিভিসি ব্যানার বানানো সহজ বলে ব্যানারের উপদ্রপ এত বেশি। আর আমাদের বড় বড় মাথা মোটা নেত্রীরা বেকুব বলে আমার মনে হয় । তাই না হলে এত তেল দেয় তারপরও তাদের কোন বিকার নাই বরং তারাই মনে হয় খুশিই হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ঢাকা ভরে গেছে মেয়র পদপ্রত্যাশী আর তাদের তেলবাজদের ব্যানার দিয়ে। বিশাল বিশাল সব ব্যানার পোস্টার ফেস্টুন।
এখন নেতা হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় ব্যানার। আপনাকে কিছুই করতে হবে না, কোনো একটা দিবস উপলক্ষে কোনো এক বড় নেতাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কয়েক হাজার পোস্টার আর কিছু ব্যানার টানিয়ে দেন শহরে। এর জন্য অনুগত বাহিনী লাগতো আগে, এখন তাও লাগে না, লোক ভাড়া পাওয়া যায়, তারাই করবে। কারো অনুমতিও নিতে হয় না। খুব বেশি টাকাও খরচ হয় না।
একবার নাম আর চেহারাটা স্টাবলিশ করতে পারলেই কেল্লা ফতে

ছোটবেলায় একটা গান শুনছিলাম- এ মন হায়, একবার দুইবার নেতা হইতাম চায়। শুনছি নাকি নেতারা সব এয়ারকন্ডিশন খায়

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানিম এহসান এর ছবি

পুরো লেখাটির সাথে প্রচণ্ডভাবে সহমত। অল্প কথায় চমৎকারভাবে যে কথাগুলো বলা হলো তার সাথে বাংলাদেশের সব শহরের সব সহজ মানুষ একমত হবেন।

অনেকদিন পর সচলে এসে এই লেখাটি পড়েই খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন ভাই, অনেক শুভেচ্ছা।

সৌরভ কবীর  এর ছবি

গুল্লি

তিথীডোর এর ছবি

কাল সন্ধ্যায় বিআইএম এ ক্লাস ছিল আমার, সাসপেন্ড হয়ে গেছে।
আর নেতা/ চামচাদের ব্যানার- ফেস্টুনে রাস্তাঘাটের যে বেহাল দশা হয়েছে, ঐসব আর্বজনা কবে সাফসুতরো হবে, কে জানে! চিন্তিত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

gholam mohammed  এর ছবি

সহমত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।