নুরুল ইসলাম, ৪০, তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগম, ৩৫, পাঁচটি সন্তান সায়মা ১২, রেহানা ১০, তানিশা ৮, আবু ৪, আন্নি ২। রাশিদার বড় বোন আয়েশা ৪৫, আয়েশার স্বামী বশির ৫০, বশিরের বোন ফরিদা ৬০, ফরিদার ছেলে নাজিম ২০।
পড়তে বিরক্ত লাগছে এতগুলো নাম আর বয়স? লাগলেও আপনাকে দোষ দেবো না।
আপনি নিশ্চিন্তে অন্য জরুরী বা আকর্ষণীয় বিষয়ের দিকে চলে যেতে পারেন।
এই সবগুলো নাম এবং সংখ্যার মধ্যে ১১টা জীবন। বোকা কিংবা অতি চালাক কিছু মানুষ।
পাহাড়ের কোলে বাস করতে গিয়েছিল ওরা। অবাক কিছু নয়। আরো হাজারো মানুষ এমন জায়গায় বসত করে।
জন্ম থেকে এই পাহাড়ে কোনদিন ফাটল ধরেনি, ধ্বস নামেনি। সব ধ্বস ফাটল ধ্বংস ওই দূরের অন্য লোকালয়ের পাহাড়ে।
ওইদিকের লোকেরাই বারবার পত্রিকার সংবাদ হয়। আমাদের এদিকে কখনো হয়নি। এদিকের পাহাড় এতটা নির্মম নয়।
সাত মাস আগে নতুন স্বপ্ন দিয়ে সাজানো ঘরটিতে নিশ্চিন্তে বাস করতে শুরু করেছিল নুরুল ইসলাম স্ত্রীপুত্রকন্যাসমেত।
ফেরারী নিয়তি। যে দুর্যোগ কোনদিন চোখ পাকায়নি এদিকে, সেই ভয়াল দুর্যোগ সেদিন সন্ধ্যায় গজবের সুরমা দিয়ে নজর ফেরালো তাদের দিকে।
মঙ্গলবার শেষ বিকেলেও এরা জানতো না দুঘন্টা পরে পাকা বাঁশে বোনা এই কাঁচাঘরেই ১১ জনের জীবন্ত কবর হবে।
আর আমাদের অনুভূতিগুলোও নেহাত পত্রিকার পাতাতেই লেপ্টে শুকিয়ে গেছে।
সর্বশেষ আপডেটঃ ২০০৭ এর জুন মাসের ১২৩টি লাশের সাথে দেখা হয়ে গেল ২০১২ সালের ১১৪ টি লাশের। চট্টগ্রামে, বান্দরবানে, কক্সবাজারে।
মন্তব্য
২০০৭ এর সেই ভূমিধ্বসের পরে গিয়েছিলাম চট্টগ্রামে। লেবুবাগান, লালখানবাজার এরকম কয়েক জায়গায়। এই লোকগুলো কিন্তু এই পাহাড়ের ঢালে বিনে পয়সায় থাকেনা, রীতিমত বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকে। সেই ভাড়া আদায় করে স্থানীয় পাতিনেতারা। জানতে চেয়েছিলাম ধ্বসের পরে এই নেতারা কোন সাহায্য করেছেন কিনা, কিন্তু তাদের টিকিটিও দেখা যায়নি। বাড়ি ভাড়া আদায়ের সময় হয়নি যে।
ঢাকা থেকে গেছি জেনে ছুটে এসেছিলেন আক্রান্তরা। সবাই নিজের ক্ষতির কথা বলতে চায়, একটু সাহায্যের আশায়। এক ভদ্রলোকের সাথে কথা হয়েছিলো, বেলায়েত নাম। ফজরের নামায পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন, এসে দেখেন তার ঘর মাটির নীচে। ৭ মেয়ে ছিলো তার, এখন একজনাও নেই। এই মানুষটাকে কি বলে সান্তনা দেব? কিন্তু দারিদ্র্য এতই নিষ্ঠুর যে, শোক করারও সময় নেই এই মানুষগুলোর। একটাই চিন্তা কখন কাজে বের হয়ে আবার রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে পারবে।
নির্বাক! স্তব্ধ!
পাহাড় কাটা কাটি তো বন্ধই হচ্ছেনা... বিগত দশ বছর ধরে চট্টগ্রামে ভুমিদস্যদের মূল টার্গেট হল এই পাহাড় আর তথাকথিত এনিমি প্রপার্টি।
জায়গা স্বল্পতা আর এপার্টমেন্ট কালচারে চট্টগ্রামে খালি জায়গা এখন স্বর্নের খনি
ফয়স'লেক আর আশেপাশের সব পাহাড়ি যায়গা গুলো (স্হানীয়ভাবে টিলা নামে পরিচিত) এখন এপার্টমেন্টের বস্তি
কিচ্ছু বলার নেই, কিচ্ছু বলতে ইচ্ছা করে না
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এদেশে কাউকে কিছু বলার নেই। ক্ষমতা থাকলে আপনি যে কোন কিছু করতে পারেন এখন। পাহাড় কেটে সেখানে এপার্টমেন্ট বানিয়ে মহা আনন্দে আমাদের প্রভাবশালীরা তাদের প্রতাপ দেখিয়ে চলেছেন। পরিবেশের ভারসাম্য দিয়ে কি দরকার আর এ কারনে পাহাড় ধ্বসে যারা মারা যায় তারা তো সব গরীবের বাচ্চা। তাতে ওই মনোরম পাহাড়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে যে সুখনিদ্রা দেয় তার কি বা এসে জায় । অন্তত তিনি তো সুখে আছেন , ভাল আছেন । দেশের কি হল আর মানুষের কি হল তা নিয়ে থোড়াই কেয়ার সরকারের ।
যারা মারা গেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ।
বহুকাল ধরে এমনই অনেক কিছু দেখতে দেখতে অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে। আপনি কেন আবার খোঁচা দিয়ে বিবেক জাগিয়ে দিচ্ছেন?
............................
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কালকে নিজের খোমা খাতায় লেখা স্ট্যাটাসটা তুলে দেই এখানে-
কালকে রাতের খবরে সংবাদটা দেখার পর বাকরুদ্ধ ছিলাম কিছুক্ষণ, এতগুলো মানুষ পাহাড় ধ্বসে মারা গেলো! প্রতিবছর এই ঘটনা ঘটছে| একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে| কিন্তু কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা এই মৃত্যুর মিছিল| নেই কোনো সরকারী উদ্যোগ| অবৈধভাবে পাহাড় দখল চলছে কিংবা মাটি কাটা চলছে| বৃষ্টির পানির চাপে মাটি ধ্বসে একসাথে এতগুলো মানুষের মৃত্যু!! সাধারণ জনগনের মাঝেও নেই কোনো সচেতনতা!!
তার থেকেও অবাক হয়েছি আমাদের দেশের মৌসুমী মানবতাবাদীদের আচরণে| রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে ফেসবুকে/অনলাইনে যেরকম যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো মানুষ এইবার কোনো শব্দ নেই!! অনলাইন যেভাবে ছয়লাব হয়ে গিয়েছিলো সত্য/মিথ্যা ছবি আর প্রপাগান্ডায়, এইবার একটা সংবাদও শেয়ার করলোনা নেউ!! আর অবাক হলাম, আমাদের সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবিদের কলম এতো শান্ত দেখে| হয়তো রোহিঙ্গাদের নিয়ে লিখতে লিখতে তাদের কলমের কালি ফুরিয়ে গেছে!
নিজের দেশের মানুষ মরে কাতারে কাতারে, কারো কোনো চিন্তা নেই| কিন্তু ধর্মের নামে পৃথিবীতে কোনো দেশে মানুষ মরলেই ব্যাস যুদ্ধ শুরু| আর মৌসুমী মানবতাবাদীদের মায়া কান্নায় তখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দায়! রোহিঙ্গাদের জন্য জিহাদ করতেও যাদের বাধে না তারা কেন আজ এই মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাড়ায় না! যারা আরাকান যেয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের হুমকি দেয় তারা কেন এতো চুপ আজকে? আর এই যে আমাদের বুদ্ধিজীবিরা তারাই বা এতো ব্যস্ত কেন, কেউ শোকবার্তা লেখারও ফুসরত পাচ্ছেনা?
অনেকদিন আগে একটা লেখায় লিখেছিলাম, "যখন পচন শুরু হয় শেকড় থেকে তখন পুরো অস্তিত্ব নিয়ে টান লাগে|" দেশের অবস্থা দেখলে এর থেকে আর ভালো উদাহরণ কি আছে মনে হয়?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
মানুষের অপরিণামদর্শী অনেক ধরণের হতে পারে- হেলা ফেলায় ট্রাফিক আইন না মেনে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু- বিপদ সংকেত উপেক্ষা করে সমুদ্রে গিয়ে ডুবে মরে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনাগুলো হিউম্যান ট্রাজেডী। অবিবেচকের মতো মরে যাওয়া এইসব মানুষদের জন্যও নিয়মিত শোক প্রকাশ করতে হবে।
যত ধরণের ছোটোখাটো অমানবিকতার সাথে বসবাস আমাদের তার অনেকগুলো হয়তো এড়ানো যেতো, কিন্তু গত ২ সপ্তাহে হঠাৎ করেই নতুন ধরনের রসিকতা শুরু হয়েছে- এখন মানবতাবাদীদের ভেতরে রোহিঙ্গা গ্রুপ তৈরি হয়েছে-
প্রণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার দাবী জানানো মানুষগুলোর উপরে বিশাল ভার অর্পিত হয়েছে, তাদের যেকোনো মানুষের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে হবে- রাস্তায় বাস উলটে ১৫ জন মারা গেলেও তাদের স্ট্যাটাস দিয়ে শোক প্রকাশ করতে হবে- এই ফাতরামিটা সচেতন মানুষজন যখন রাজনৈতিক বিভ্রান্তিতে পালন করে কিংবা গ্রুপ প্রেশারে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়, তখন তাদের বিবেচনাবোধ বিষয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়
আমিও মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সপক্ষে ছিলাম- প্রতিদিন সকালে অনাকাঙ্খিত সকল মৃত্যুর জন্য একটা শোকার্ত ব্যানার ঝুলিয়ে আমি কাজে কর্মে যাবো-
আজকেও আমি শোকার্ত......................
হিল্লোলদার সাথে সহমত।
হিল্লোলদা কে?
মানুষের মৃত্যু আজকাল মানবতাবাদী লোকেদের কাছে "বিবেচক আর অবিবেচক" দুই ভাগে বিভক্ত!! অসাধারণ তো| এইনা হলে সত্যিকারের মানুষ|
নিজের দেশের মানুষ মরলে তখন শোক প্রকাশটা আপনার কাছে ফাতরামি!! আর যেইসব মৌসুমী বেবুন, মানবতাবাদী সেজে রোহিঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল, তারা কি?
দেশের মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মরলে সেখানে যদি সরকারের আইন ও নিয়ন্ত্রনের প্রশ্ন জড়িত থাকে তবে অবশ্যই শোক প্রকাশের সাথে সাথে, প্রতিবাদ হবে| আবার যখন বছরের পর বছর পাহাড় ধ্বসে মানুষ মারা যাচ্ছে তখনো শোক প্রকাশ এবং প্রতিবাদ হবে| আজকে যখন ১০০র বেশি মানুষ মারা গেছে তখন শোকার্ত হবো না? তখন ওই মৌসুমী বেবুনদের প্রশ্ন করাটা আপনার অন্তর জ্বালিয়ে দেয়?
কদিন আগে ইউরোপের একটি দেশে একটি স্কুল বাস দুর্ঘটনায় মারা যায় কয়েকটি শিশু| ওই দেশে পরেরদিন জাতীয় শোক দিবস ছিলো| আর শুধু তাই নয়, সরকার বিশাল এক বিশেষজ্ঞ কমিটি করে তদন্তে নামে সাথে সাথে, যাতে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়| খবরে এসেছিলো ঘটনাটি, দেশটির নাম সঠিক মনে নেই| যদি সেই দেশের মানুষগুলো শোক প্রকাশ করতে পারে এরকম ভাবে, তাদের সরকার কাজ করতে পারে এরকম ভাবে| তাহলে আমাদের দেশের মানুষ কেন পারবেনা?
নাকি ওই মৌসুমী মানবতাবাদীদের দলে আপনি ছিলেন দেখে প্রশ্নগুলো আপনার পুটুতেও জ্বালা ধরাচ্ছে?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
- এই বাক্যাংশ পড়ে মুখের মধ্যে এক দলা থুতু জমল শুধু। কিছু বলার নাই।
১০০ জন মরা মানুষের উদাহরণ হাতের কাছে থাকতেও রাস্তায় কিংবা সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষের উদাহরণ টানতে হলো? এই ১০০ জন মানুষের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে আপনার কষ্ট হচ্ছে? আপনার মত অমানুষ দিয়ে দেশ বোঝাই হয়ে যাচ্ছে বলেই মানুষের মৃত্যু আজকাল এত সস্তা।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ছোটোদের পত্রিকা হই-চই কবে নাগাদ বের হবে?
এটা কার বক্তব্য???
বেনামী এইসব নিকের উৎসটা আসলে কি? জানতে মঞ্চায়? এগুলি কোন ধরণের ফাত্রামি??
অরফিয়াসের প্রশ্নটা আমারও --
ডাকঘর | ছবিঘর
আশা করি আপনি একদিন আপনার এই কথাটার জন্যে লজ্জিত হবেন।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
থুথু
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
অভাগাদের মাথা গোঁজার
না ছিল কোন ঠাই,
তোদের বুকের খাঁজে খাঁজে
আশ্রয় খোঁজে তাই।
পাহাড় তোদের দোহাই লেগে
ধসিস না’ত আর,
পারছে না আর বইতে ওরা
লাশের বড্ড ভার।
প্রতিবছরই ঘটে এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। acharjee
এসব খবরে খুবই মন খারাপ হয়। স্হানীয় সরকারের কি কিছুই করার নেই? এভাবে কি পাহাড় ধ্বসে মানুষ জীবন্ত চাপা পড়বে আর সবাই চেয়ে চেয়ে দেখবে/দেখব?
পত্রিকার পাতায় চোখ রাখতে পারছিলাম্না কদিন, এত লাশ, এত নাম ,এতগুলা মানুষ কালকেই যারা মানুষ ছিল আজকেই তারা লাশ, ভাবতে পারছিলাম্না।
মনচায় ওইসব পাহাড় কাটা শুয়োরগুলোকে আর যারা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে কেচ্ছা বানায় সেই শুয়োরগুলোকে পাহাড়ের পাদদেশে নিয়ে জিন্দা কবর দিয়ে দেই।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন