প্রিয় দেবযানী,
তোমাকে আমি দেবীর মতো ভক্তি করলেও রাজনীতি নিয়ে তোমার সাথে তর্কগুলো ঝগড়াতে পরিণত হয় বলে সেপথে আমি যাই না। তবু তুমি সেদিন খামাকা তর্ক করছিলে বলে আজকে আমি উইকিপিডিয়া ঘুরে জেনে আসলাম মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৬ বছর বয়সে ইন্টার পাশ করেছিলেন। বিশ্বাস না হলে লিংক দেখো। উনি জন্মেছিলেন ১৯৩৬ সালে, কলেজ পাশ করেছেন ১৯৫২ সালে, কাকুলে জয়েন করেছে ৫৩তে। বিশ্বাস হয়?
তবে উইকি জীবনীটায় কিছু মজার তথ্য আছে। আছে কিছু মিথ্যা আর অসঙ্গতি। ইতিহাসের স্বার্থে কোন সদাশয় ব্যক্তি এগুলো শুদ্ধ করে দেবেন বলে আশা করছি। আমি সামান্য কয়েকটা তুলে ধরছি তোমার অবগতির জন্য।
জীবনীটা শুরু হয়েছে এভাবে -
Ziaur Rahman, Bir Uttam, Hilal-e-Jurat (Bengali: জিয়াউর রহমান Ji-yaur Rôhman) (19 January 1936 – 30 May 1981) was a Bangladeshi politician and an army officer, who announced the Declaration of Independence of Bangladesh twice, the first being on 26 March 1971 at Kalurghat, Chittagong.
এখানে খেয়াল করবা হিলাল-ই-জুরাত পদকটির কথা। জানা যায় তিনি পাক সেনা জীবনে দুটি সিতারা-ই-জুরাত এবং নয়টি তামঘা-ই-জুরাত মেডাল লাভ করেন। এই সব পদক পাকি পদক। কিন্তু পাকিরাও মানুষ, আমাদের উম্মাহর ভাই বেরাদর। সুতরাং পাকিদের সাথে যুদ্ধ করে পাওয়া বীর উত্তমের সাথে ওগুলো জুড়ে দেয়া দোষের বলে মনে করেনি মুসলিম উম্মায় বিশ্বাসী নিবন্ধ লেখক।
তবে প্রথম বাক্যটিতেই স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে সেই পুরোনো মিথ্যাটা আবারো দেখা গেল।
মিথ্যাটা কেন দিয়েছে নীচের বাক্যটা পড়লেই বুঝবা-
During the afternoon of 25 March 1971, when the West Pakistani Army started a genocide was still sporadic against the Bengalis of East Pakistan, Major Zia revolted and announced this in front of the soldiers of his regiment
মানে উনি ২৫ তারিখ দুপুর বেলা যখন ঢাকায়ও কিছু ঘটেনি তার আগেই পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেন। তাই ২৬ তারিখে তাকে দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা না করিয়ে ওই লেখকের উপায় ছিল না।
হেসো না, চুপ করে বাকীটা শোনো। তারপর বলেছেন-
During the early dawn hours of 26 March, Major Zia's unit (2/5 East Bengal Regiment) and members of the EPR arrived at the Kalurghat radio station in Chittagong.
দুপুরে ঘোষণা দিয়ে রাতটা কোনমতে পার করে ২৬ মার্চ একেবারে ভোরবেলা তিনি কালুরঘাট রেডিওতে চলে আসলেন স্বাধীনতা ঘোষনা করতে। দায়িত্ব বলে কথা!
এরপর যুদ্ধের সময় তাঁর হেন তেন বিরাট কাহিনী কৃতিত্ব আছে, অত কিছু বলতে পারবো না এখানে। শুধু তিনি কিভাবে ক্ষমতা শীর্ষে উঠলেন সেটা একটু শোনো-
দেশ তো স্বাধীন হলো। তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভুষিত হলেন। তারপর ডেপুটি চীফও হলেন। তারপর একদিন সমস্যা হয়ে গেল। তার কোন সমস্যা নয়, দেশের প্রেসিডেন্টের। ১৯৭৫ এর আগষ্ট এসে গেল।
While Zia had no relation to the massacre (he did not aide in or had no knowledge of the 15 August bloody massacre by a few young army officers) who had carried out the assassination of Sheikh Mujibur Rahman and his entire family on 15 August 1975, Among the young officers involved in Sheikhs killing were (Dismissed by Mujid)Major Dalim, Major Rashid, Major Faruq and Major Noor, etc. A vast conspiracy begun to unfold in Bangladesh of an internal and overt nature. After inept Major General Shafiullah was dismissed and relieved of duty on 16 August 1975, Major General Zia was appointed chief of army staff.......
মানে যদিও জিয়া এসবের কিছুর সাথে জড়িত ছিল না, কিছুই জানতো না, তবু শেখ মুজিব হত্যার পরদিনই আগের সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করে তাকেই সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেয়া হলো। কেন? মোশতাক সরকার বোধহয় আগের সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে মুজিব হত্যার সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করেছে। নিবন্ধ লেখকের মত কিন্তু তাই মনে হয়েছে। তুমিও পড়ে দেখো পুরোটা।
তবে তুমি এখানে আবার বেরসিকের মতো কর্নেল হামিদের বইয়ের (তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা) ৫৫ পাতাটা টেনে এনো না। সেখানে তিনি লিখেছিলেন-
".....২৪ তারিখ (আগষ্ট ১৯৭৫) অনুমান বেলা ১২টায় জেনারেল জিয়ার ফোন আসলো। তার উত্তেজিত কন্ঠ, হামিদ come here just now. আমি আমার অফিসে তখন কি একটা কনফারেন্স করছিলাম, বললাম: একটু পরে আসলে হবে না? বলল, শাট আপ, কাম জাস্ট নাউ। আমি মিটিং ভঙ্গ করে তার দিকে ছুটলাম। বলাবাহুল্য, জেনারেল জিয়া আমার কোর্স মেট। তার সাথে অফিসের বাইরে ছিল তুই তুকারি সম্পর্ক। ছিল মধুর সম্পর্ক।
[i]আমি তার অফিসে ঢুকতেই মিলিটারী কায়দায় ডাঁট মেরে গর্জে উঠল, Salute properly you Guffy, you are entering chief of staff's office. আমি থমকে গেলাম। সে মুচকি হাসতে লাগলো। তার হাতে একখানা টাইপ করা সাদা কাগজ। হেসে হেসে আমার চোখে সামনে সেটা নাড়তে লাগলো। বলল, sit down, read it. আমি তাড়াতাড়ি চোখ বুলিয়ে দেখলাম, মিনিষ্ট্রি অব ডিফেন্স থেকে ইস্যু করা অফিশিয়াল চিঠি। তাকে প্রধান সেনাপতি করে নিয়োগপত্র। আমি এগিয়ে তাকে আলিঙ্গন করে কনগ্রেচুলেশন জানালাম। চিঠিটা পেয়েই সে প্রথমেই আমাকে ডেকেছে। বলল, হামিদ বল এখন কি করে যায়। জিজ্ঞেস করলাম, শফিউল্লাহ চিঠি পেয়েছে? সে জানে?
'না এখনো কেউ জানে না'
বললাম তাহলে তার কাছেও কপি পৌছাতে হবে। তারপর অফিশিয়ালি সে হয়তো কয়দিন সময় নিয়ে তোমাকে হ্যাণ্ডওভার করবে। এখন একটু চুপ থাকো।
বললো, শাট আপ। আমি কাল থেকেই টেকওভার করবো। আমি তাকে বোঝালাম, দেখো এটা তো তুমি ক্যু করতে যাচ্ছো না। সরকারের অফিশিয়াল চিঠি রয়েছে। তোমাকে তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়াই হয়েছে।
সে বললো, তুই এসব বুঝবি না। হি ইজ ও ভেরি ক্লেভার পারসন। তুমি আগামীকাল পুরো ঢাকা স্টেশানের সব ইউনিটের অফিসার ও সৈনিকদের বড় মাঠে একত্র হওয়ার নির্দেশ পাঠাও।"[/i]
কর্নেল হামিদ হয়তো ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব লিখেছেন। কে জানে? তবে জিয়া শহীদ হবার তিরিশ বছর পরে এসব পড়ে শহীদের মান ইজ্জত কিছু বাকী থাকে?
তবে উইকি নিবন্ধটিতে জিয়ার ছবির দশা দেখে একটু মায়াও লাগছে। এত বড় একটা দলের প্রতিষ্ঠাতা, দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট। এখনো দেশের বিরাট সমর্থক যে দলে, ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী যে দলের প্রধান, তার একটা ভালো ছবিও কি নেই?
সবশেষে একটা দুঃখের হাসি। এই বাক্যটা পড়ে কেন যেন হাসি চেপে রাখতে পারিনি-
A highly decorated and accomplished military officer, he retired from the Bangladesh Army as a Lieutenant General
জিয়া খুবই সফল অফিসার কোন সন্দেহ নেই। যদ্দুর জানি আজ পর্যন্ত বিশ্বের কেউ ওই বয়সে লেফটেনেন্ট জেনারেল হতে পারেনি। তাও আবার ৪১ বছর বয়সে রিটায়ার্ড করে সাথে সাথে আবার প্রেসিডেন্ট হওয়া। কপাল! দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল আমার। আজ আমি যদি সেনাবাহিনীতে কাজ করতাম, এই বয়সে বড় জোর লে.কর্নেল হতাম। হ তুমি তো বলবা, তাও কম কি.......দুই বছর জাতিসংঘ বাহিনীতে কাজ করে মোটা অংকের ডলার নিয়ে ফিরতাম। এখন ব্লাডি সিভিলিয়ান হিসেবে দিন গুজার করি, সেই দুঃখেই হেসে দিছি।
যাকগে অনেক কথা হলো, চিঠি শেষ করছি আজকের মতো।
তুমি ভালো থেকো নিরন্তর। পত্র পাইবা মাত্র উত্তর নিক্ষেপ করিবা।
ইতি তোমারই একান্ত-
ক্ষ্যাপা
মন্তব্য
জিয়া চিনলাম কিন্তু দেবযানী কিডা?
মুক্তিযুদ্ধে ইনি কোন সেক্টরে ছিলেন? নাকি স্বাধীনের পরে রাজনীতি করে মুক্তিযোদ্ধা হইছেন?
ওনাকে চিনবেন না। উনিও আমার মতো দুই পয়সার পাতিহাস পাঠক!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমাদের ইতিহাসপ্রবক্তা বাঙ্গালীদের হাত থেকে উইকি'র ও নিস্তার নাই! বেচারা উইকি!
এইসব ইতিহাসলেখকেরা সাধারণত হাফ ছাগু হয়। সুশীলতার মোড়কে ইতিহাস লেদান ব্লগে ফেসবুকে উইকিতে। আমাদের চোখ কান হাত পা চালু রাখতে হবে, এই আর কি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সবাই খালি ব্লগ লিখে, কেউ উইকিতে লিখে না অবশ্য বইলা কি লাভ, আমি নিজে তো কিছুই লিখতে পারি না। ব্লগ ও লিখতে পারি না, উইকিও না। খালি এইসব দেইখা শুইনা মন খারাপ কইরা 'চুপচাপ' বইসা থাকি
জিয়াউর রহমানের এই জীবনীর পেছনে নিশ্চয়ই বিএনপির অনেক লোকজন নিয়োগ দেয়া আছে। আপনি, আমি শুদ্ধ করে দিলেও তারা আবার এসে তাদের পছন্দমতো জীবনী লিখে যাবে। উইকি থেকে জীবনী বা বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলাদা কোনো পদক্ষেপ না নিলে কারো পক্ষে এগুলোর পেছনে এত সময় ব্যয় করে বারবার ঠিক করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে উইকিকে সবসময় রেফারেন্স হিসেবে 'অগ্রহণযোগ্য' হিসেবেই থাকতে হবে, এখনো যেমন অন্যান্য এনসাইক্লোপিডিয়ার মতো একাডেমিক কাজে উইকিকে কখনো গ্রহণযোগ্য সোর্স হিসেবে উল্লেখ করা হয় না।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
রেফারেন্স হিসেবে দিনে দিনে উইকির গ্রহণযোগ্যতা আমার কাছে কমছে। অজস্র ভুল তথ্য পাওয়া যায় স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে। যেসব বিষয়ে খুব একটা তর্ক নেই সেগুলোতে তাও ঠিকঠাক পাওয়া সম্ভব। মনে হচ্ছে পরে সেটাও নষ্ট হবে। তবুও সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ডাকঘর | ছবিঘর
একটা সময় উইকিতে সময় দিতাম নিয়মিত। নেশার মত ছিল সে দিনগুলো। কিন্তু এখন সময়ও দেয়া হয় না, অন্যকে উৎসাহও দেয়া হয় না। তবে আপনার লেখাটা পড়ে মনে হলো অন্তত কিছু আর্টিকেলে সময় দেয়া প্রয়োজন।
কর্নেল হামিদের বইটার প্রকাশক কে ছিল এবং কবে প্রকাশিত হয়েছে? এই রেফারেন্সটা বেশ কার্যকর মনে হচ্ছে। শাফায়াত জামিলের লেখা বইটা আমার কাছেই আছে। ওটাতেও একই রকম কথা আছে। আমি রেফারেন্সগুলো যোগ করে দেব তথ্য সহ।
টুইটার
লেখাটা চমৎকার!
কিন্তু এই রকম লেখা পড়লে প্রতিবারই শপাং করে চাবুক এসে পড়ে নিজের পিঠে---
নিজের দায়িত্ব না পালনের অপরাধের দায় নিয়ে মাথা নীচু করতে হয়---
এই লেখাটা জরুরি ছিল তাই--
এই লেখার চাবুকটা আরো সকলের পিঠেও পড়ুক, একবার সকলে গা-ঝাড়া দিয়ে সজাগ হই---
জাগো বাহে, কুন্ঠে সবায়---
পত্রসাহিত্য জিনিসটাই হারায়া গেছে, আগে এইজন্য ধন্যবাদ নেন। আর বাদবাকি কাজের আলাপ বাকিরা অলরেডি করছে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
উইকিপিডিয়ায় সক্রিয় হবো হবো করেও এখনো হওয়া হলো না।
নতুন মন্তব্য করুন