১৯৭৫ আগষ্ট টু নভেম্বর নিয়ে আরেক দফা ত্যানা প্যাচানি

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: শনি, ০৩/১১/২০১২ - ২:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় ক্ষ্যাপা,

উত্তর লিখতে অনেক দেরী হয়ে গেল। ভেবে রেখেছিলাম জেলহত্যার বিশেষ দিনটায় তোমার জবাব দেবো। শুরুতেই বলছি, ধারণার মতো ভয়ংকর কিছু নেই যদি তা একমাত্র ধারণা হয়। এটা আমার কথা না, বিখ্যাত কেউ বলেছিলেন। আশা করছি এই চিঠি আমার সম্পর্কে তোমার সেই ভ্রান্ত ধারনার পায়ে কুড়োল মারবে।

তুমি শুরু থেকেই ধরে নিয়েছো আমি জিয়ার প্রতি দুর্বল। হ্যাঁ স্বীকার করি, তার পরিবারের প্রতি আমি সহানুভুতিশীল ছিলাম। মাত্র ৪৫ বছর বয়সের এক তরুণ রাষ্ট্রপতি দুটি কিশোর ছেলেকে রেখে সহায় সম্বলহীন স্ত্রীকে বিধবা করে আকস্মিকভাবে চলে গেল,নাগরিক হিসেবে আমার খারাপ লেগেছিল সেই কৈশোরেই। এই সহানুভুতি তার প্রাপ্য। ইতিহাস যার প্রাপ্য তাকে বুঝিয়ে দেবার কথা বলে। তাই বলে আমি তাঁর সব কাজকে বৈধতা দিচ্ছি না। তবে যেটুকু কৃতিত্ব তাকে দিতেই হবে,তা অবশ্যই দেবো। তাছাড়া তার বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণতাকে কেন অস্বীকার করবো? জেনে রাখো পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত যে কজন মূখ্য খেলোয়াড় ছিলো জিয়াকে তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় দেখা গেলেও সেই হলো সফলতম পারসোন্যাল। গোটা বসুন্ধরাই বীরভোগ্যা, আমি কোন ছার!

তবে এটাও ঠিক যে জিয়া দৈহিক ভাবে যতটা নিষ্ক্রিয় ছিল মস্তিষ্কে ছিল তার কয়েকগুন সক্রিয়তা। পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ঘটনাবলীর মূখ্য খেলোয়াড় ফারুক-রশীদ, খালেদ- শাফায়াত, তাহের এবং জিয়া এই কজনের মধ্যে জিয়াই একমাত্র খেলোয়াড় যাকে কখনো মাঠে নামতে হয়নি কিন্তু ট্রফিটা তাঁর হাতে এসে ধরা দেয়।

বহুল চর্চিত, বহুল পঠিত ঘটনা। তবু বলছি। ভালো করে খেয়াল করো নতুন কিছু পেলেও পেতে পারো। পঁচাত্তরের মতলববাজদের মধ্যে প্রথম গোলটা করে ফারুক-রশীদ। ১৫ আগষ্টে ছোট্ট একটা সেনাদল নিয়ে সারপ্রাইজ অ্যাটাকে শেখ মুজিবকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। তাদের পেছনে জিয়া যুক্ত না থাকলেও নীরব সম্মতি ছিল সেটা আজ সবাই জানে। আসলে জিয়া চাইছিল ফারুক-রশীদ বা সেরকম কেউ গোলটা করুক। অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফারুক-রশীদ গং খন্দকার মোশতাককে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে বঙ্গভবনে গিয়ে উঠলো। শফিউল্লাহকে সরিয়ে জিয়াকে সেনাপ্রধান বানালো। জিয়া সেনাপ্রধান হলেও যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বঙ্গভবনে ফারুক-রশীদ- ওসমানী-খলিল-মুশতাকের হাতে (জেনারেল ওসমানী আর জেনারেল খলিল ছিল তখন সেনাপ্রধানের উর্ধে মোশতাকের সামরিক উপদেষ্টা)।

দিন গড়াতে থাকে। আগষ্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে অক্টোবরও যায়। জিয়া কি করছে? সেনাপ্রধানের পদে বসে আঙুল চোষার কাজ করে সন্তুষ্ট হতে পারে না আর্মি ইন্টেলিজেন্সে কাজ করা চৌকস অফিসার। ধৈর্য ধরার ফাঁকে ফাঁকে তাঁর মাথা খেলে, মাথা খোলে। সেনাপ্রধান হবার পর জিয়ার যে প্রাথমিক সন্তুষ্টি জন্মেছিল ধীরে ধীরে তা উবে গিয়ে বিরক্তি আসতে শুরু করে যখন সে বঙ্গভবনে মুশতাকের সামরিক উপদেষ্টা হয়ে মাথার উপরে বসে থাকা জেনারেল ওসমানী আর জেনারেল খলিলের কথা ভাবে। এমনকি মোশতাককেও অসহ্য মনে হয়। রশীদের এক সাক্ষাতকারে জানা যায় জিয়া তখন মনে মনে খুব অস্থির হয়ে উঠেছিল প্রেসিডেন্ট হবার জন্য।

ওদিকে খালেদ শাফায়াতের অসন্তুষ্টিও চরমে উঠতে থাকে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমাণ্ড নিয়ে। ফলে ধীরে ধীরে বঙ্গভবন আর ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে এক রকম অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। দুই জায়গার মধ্যে শীতল যুদ্ধের পরিবেশ চলে আসে।

তবে বঙ্গভবনের ব্যাপারে জিয়া এবং খালেদ-শাফায়াতের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল ভিন্ন রকমের।

বঙ্গভবনে ফারুক-রশীদের ব্যাপারে জিয়ার তেমন কোন মাথাব্যথা নেই,তার আপত্তি ওসমানী-মুশতাককে নিয়ে। ওরাই জিয়ার ক্ষমতার পথে প্রধান বাধা। ওদের সরাতে পারলে জিয়া খুশী।

আবার ওদিকে ওসমানী-মুশতাকের ব্যাপারে খালেদ-শাফায়াতের আপত্তি না থাকলেও ফারুক রশীদসহ বঙ্গভবনে অবস্থানরত মেজরদের সহ্য হচ্ছিল না। কারণটা সঙ্গত ১৫ আগষ্টের আগে রশীদের কমাণ্ডিং অফিসার ছিল শাফায়াত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রশীদ বঙ্গভবনে আস্তানা গেড়ে যেন শাফায়াতের বস হয়ে গেছে। এটা মেনে নেয়া কঠিন ছিল শাফায়াতের। বঙ্গভবন থেকে ওদের উৎখাত করে চেইন অব কমাণ্ড প্রতিষ্ঠা করা খালেদ-শাফায়াতের মূল উদ্দেশ্য।

মোটামুটি এই ভাবেই ক্যান্টনমেন্টের এই দুটি দলের দুই রকমের টার্গেট হয় বঙ্গভবন। একদলে খালেদ-শাফায়াত। অন্য দলে জিয়া-তাহের।

১৫ আগষ্টের পর থেকে জিয়া বঙ্গভবনে ঢোকার রাস্তা প্রশস্ত করতে তাহেরের সাথে গোপনে যোগাযোগ রেখে আসছিল। কিন্তু কিভাবে কাজে লাগাতে হবে সেটা নিশ্চিত ছিল না। এখন বোধহয় সময় এসে গেছে। তাহেরকে কাজে লাগাতে হবে। জিয়ার গোপন পরামর্শ/সমর্থনে তাহের সাধারণ সৈন্যদের সংগঠিত করতে থাকে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার মাধ্যমে।

অন্যদিকে ফারুক রশীদের উপর অসন্তুষ্ট অফিসারগণ জড়ো হয় খালেদ শাফায়াতের পেছনে। তারা অবশ্য প্রথমে জিয়ার কাছে গিয়েছিল বঙ্গভবনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। কিন্তু জিয়া রাজী হয়নি বোধগম্য কারণেই। জিয়ার পরিকল্পনা ভিন্ন। জিয়া তাহেরের সাথে তার কোন পরিকল্পনা ঘুনাক্ষরেও কাউকে জানতে দেয়নি। আবার বিদ্রোহ করতে যাচ্ছে জেনেও খালেদ-শাফায়াতের বাহিনীর বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করলো ২ নভেম্বর মাঝরাতে খালেদ-সাফায়েতের নীরব ‘অভ্যুত্থানের পর তার গৃহবন্দীত্ব। বন্দী হবার পর এক ফাঁকে বেডরুম টেলিফোনে তাহেরের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে গোপন নির্দেশ দিতে ভুল করেনি। জিয়াকে সেদিন গৃহবন্দী করে শাফায়াতের দল তার কি বিশাল উপকার করেছিল তা আমরা পরবর্তী ইতিহাস দেখে বুঝতে পারি। ওই সিদ্ধান্তটা জিয়াকে রাতারাতি নায়ক বানিয়ে দিয়েছিল। (অবশ্য সেনাবাহিনীতে জিয়াকে হিরো বানাবার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তাহের। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার মাধ্যমে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে জিয়ার এমন গ্রহনযোগ্যতা তৈরী করেছিল তাহের যা ৭ নভেম্বর খুব কাজ দিয়েছিল।)

ওদিকে খালেদ শাফায়াতের এই অভ্যুত্থানের পর বঙ্গভবন থেকে ফারুক-রশীদ গং রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে দেশ ছাড়লো ৩ তারিখ সন্ধ্যায়। তবে তার আগের রাতে খালেদ শাফায়াতের নীরব অভ্যুত্থান চলাকালীন গোলমালের সময় ফারুক রশীদের দল জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে খুন করে আসে মুশতাকের অনুমোদনে। পনেরই আগষ্টের পর ইতিহাসের আরেকটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। অভ্যুত্থানের প্রধান শাফায়াত-খালেদ যখন এই হত্যার ঘটনা জানলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে, অবাক লাগে খুনের পেছনে মোশতাকের হাত থাকার সম্ভাবনা জেনেও তাকে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রেখেছিল। এই রহস্যটা কখনোই উদঘাটন হবে না বুঝি? তাজউদ্দিন আহমদের ডায়েরীটাও উদ্ধার করা যাবে না আর কোনকালে। তোমার মতো আমার বিবেকও দুমড়ে যায় আজকের দিনটা এলে। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান এই চারজনের কাছেই আজীবন অপরাধী থেকে যাবে এই জাতি।

সেই সময় নিজের ঘরে বন্দী জিয়া খানিক টেনশানে থাকলেও সে জানে সময় আসবে। সঠিক সময়ের অপেক্ষা ছিল তার। অবশেষে ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে সেই মোক্ষম সময়টা এলো। মাত্র তিন দিনের মাথায় কর্নেল তাহেরের পরিকল্পনায় এক পাল্টা সৈনিক বিদ্রোহে খালেদ মোশাররফ নিহত হয়,শাফায়াত কপালগুনে বেঁচে যায়।

জিয়াকে গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্ত করার দু ঘন্টা পরই টু-ফিল্ড রেজিমেন্টে জিয়ার সাথে তাহেরের দেখা হয়, কোলাকুলি হয়। তবে তার কিছুক্ষণ পরই তাহেরের সাথে রেডিওতে ভাষণ দেয়া নিয়ে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে বিরক্ত জেনারেল জিয়া বারান্দায় গিয়ে সুবেদার মেজর আনিসকে কানে কানে বললো, "আনিস সাহেব ওকে কোনভাবে সরিয়ে দিন এখান থেকে। সাবধান বহু পলিটিক্স আছে।"

এটাই জিয়ার প্রথম কিন্তু চুড়ান্ত টেক্কা। এই টেক্কাতেই ১৫ আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া সব খেলার অবসান ঘটলো। ঘুরে গেল তাহেরের জীবনের মোড়, ঘুরে গেল বাংলাদেশের রাজনীতির মোড়। ৭ নভেম্বর মধ্যরাতের পর বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে নতুন নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটলো। এটাই ইতিহাসের অনিবার্যতা। তোমাকে স্বীকার করতেই হবে ওই সময়ে জিয়ার চেয়ে যোগ্য(!) আর কোন লোক ছিল না। বিশ্বাস করো, যদি থাকতো তবে আমি জিয়ার বদলে তাকেই সমর্থন করতাম। দুঃখ হয় তুমি সেই যোগ্যতাকে বলো কুটচাল গুদাম। রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে এতটা গভীর জলের মাছ হবার যোগ্যতা হোমো এরশাদ বাদে আর কারো ছিল না।

যাই হোক, আজকে আর ত্যানা প্যাচাবো না। তুমি তোমার মতো ভালো থেকো। মাথাটা ঠান্ডা রাখো নিয়মিত কদুর তেল মেখে।

ইতি-

তোমারই দেবযানী

সহায়ক গ্রন্থ:
'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা'- লেঃ কর্নেল (অবঃ) এম এ হামিদ পিএসসি


মন্তব্য

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

জিয়া গভীর জলের রাঘব বোয়াল, ঠিক আছে। কিন্তু তাহেরের হিসাব আমি কিছুতেই মিলাতে পারি না। মৃত্যুর দুয়ারে বসে স্ত্রী লুৎফাকে লেখা তাহেরের সেই বিখ্যাত চিঠির ভাষা ও বক্তব্যের সাথে বিপ্ববী সৈনিক সংস্থার বিলিকৃত লিফলেটের ভাষা ও বক্তব্যও কিছুতেই মিলাতে পারি না। চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী দেশমাতৃকার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য অনুযায়ী তিনি সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সকল কিছু করেছেন, কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কোন প্রশ্নই আসে না, বরং যা করেছেন তার জন্য তিনি গর্বিত।
আর বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার হ্যান্ডবিল, যা সাধারন সৈনিকদের উন্মাতাল করে তুলেছিল, তাতে একদিকে ছিল দেশের উপর আসন্ন ভারতীয় আগ্রাসনের সতর্কবার্তা, অন্যদিকে ছিল সাধারন সৈনিকদের কর্ম ও জীবনমানে আমুল উন্নয়নের লোভনীয় রুপকল্প। আগ্রসনের বিষয়ে সবাই জানতো এটা একটা ভূয়া গুজব, সুতরাং সে বিষয়ে করনীয় কিছু নেই, কিন্তু অফিসারদের খবরদারীর অবসানের মাধ্যমে জোয়ানরাজ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ধরাছোঁয়ার মধ্যেই ছিল। এতদিন যে চেইন অব কমান্ডের সংকট ছিল অফিসারদের মধ্যে, এই বায়বীয় প্রস্তাবনা সেই একই সংকট অনেক তীব্রভাবে সৃষ্টি করেছিল সাধারন সৈনিকদের মধ্যে। ফলে সৈনিকদের উপর অফিসারদের আর কোন নিয়ন্ত্রন ছিল না, ফলস্রুতিতে পরিস্থিতির উপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে কল্পিত আগ্রাসনের সহযোগী ও দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছিলেন শাফায়ত জামিল ও খালেদ মোশাররফ। তাহের যখন জেলে বসে লুৎফার উদ্দেশ্যে চিঠি লিখছেন, তখন কি তার একবারও মনে হয়নি যে তাদেরই জঘন্য মিথ্যাচারের বলি হয়ে নির্মমভাবে প্রান হারিয়েছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে উজ্জল তারকা খালেদ মোশারফ ও তার সুযোগ্য সহযোগী হায়দার। কি অসাধারন মিথ্যাচার!

অচল  এর ছবি

মন্তব্যে তুমুল আলোচনা আর ফাইট হবে আশা করি, জানার লাইগা পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম বসলাম ।

কাজি মামুন এর ছবি

জিয়াই একমাত্র খেলোয়ার যাকে কখনো মাঠে নামতে হয়নি, কিন্তু ট্রফিটা তার হাতে এসে ধরা দেয়

সত্য। স্বাধীনতার ঘোষনাপাঠের কথাই ধরুন। বেতারে স্বাধীনতার ঘোষনাপাঠের জন্য রফিকুল ইসলামকেই খুঁজছিলেন বেলাল আহমেদরা। কিন্তু পরে উনি অন্য জায়গায় যুদ্ধরত থাকাতে জিয়াকেই সামনে পেয়ে যায়। আর সুযোগসন্ধানি জিয়া প্রথমে নিজের নামেই ঘোষনা দিয়ে বসেন। পরে অবশ্য বেতার সংগঠকদের চাপাচাপিতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষনা পাঠ করেন।
জিয়ার ভক্তরা বলেন, জিয়া নাকি মুজিবের এক দলীয় শাসন থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেন। অথচ জিয়া পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পর সেনাবাহিনীর প্রধান হয়ে ৩০ আগস্ট সামরিক ক্ষমতা বলে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। গণতন্ত্রের মানসপুত্র জিয়া কেন এ কাজ করলেন, তার উত্তর আসা করছি জিয়া ভক্তদের কাছে।
কিছুদিন পরেই বিএনপি পালন করবে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। জিয়াভক্তদের কাছে ঈদের দিনের মত। কিন্তু জিয়ার পরবর্তী কার্যক্রমে সংহতির মুখোশ খুলে বেরিয়ে পড়ে এক নগ্ন সামরিক শাসকের চেহারা!

সাইদ এর ছবি

আর সুযোগসন্ধানি জিয়া প্রথমে নিজের নামেই ঘোষনা দিয়ে বসেন

এর তথ্যসূত্র দিন

হিমু এর ছবি

লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, পৃষ্ঠা ১৩০-১৩১।

সাইদ এর ছবি

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ হিমু।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তথ্যচিত্রটিতে রয়েছে বলে মনে পড়ছে। একবার দেখে নেয়া যেতে পারে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

৭১'এর দশমাস- রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী (পৃষ্ঠা সংখ্যা মনে নেই- ২৭ মার্চের ভুক্তি)

কাজি মামুন এর ছবি

নীচে হিমু ভাইয়ের উল্লেখিত বইটিতে রয়েছে। তবে সুহান ভাইয়ের বইটির কথা আমি জানি না। আমি একটা টিভি ডকুমেন্টারিতে কবি বেলাল আহমেদকে এ ঘটনাটি বর্ণনা করতে দেখাছিলাম। উচ্চাভিলাষি ও সুযোগসন্ধানি জিয়া নিজেকেই রাষ্ট্রপতি বানিয়ে ফেলাছিলেন প্রায় (এ থেকে তার সুযোগসন্ধানি ও বিশ্বাস ঘাতক চরিত্রের পরিচয় মেলে)। কবি বেলাল মোহাম্মদের 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' বইটিতেও রয়েছে এ কাহিনি।
মুজিব হত্যায় জিয়ার সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও মদদ ছিল (যেমন, কথিত আছে, হত্যাকারিরা যখন তার সাপোর্ট নিতে আসে, তখন তিনি বলেছিলেন, তোমরা করতে পারলে কর)।
জিয়াভক্তরা গদগদ হয় তার মুক্তিযুদ্ধকালিন অসামান্য অবদান তুলে ধরতে গিয়ে। কিন্তু তার ভ্রান্ত নীতির কারণে মুক্তিযুদ্ধে একদিনে ৬৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে জীবন দিতে হয়েছিল।এরকম ভুল আর কোন সেক্টরে হয়নি কোন একক অভিযান নিয়ে হয়নি।
তবে শাস্তিপ্রাপ্ত দালাল শাহ আজিজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী বানান, তার যদি মুক্তিযুদ্ধে কোন অবদান থেকেও থাকে, তার সবটুকুই ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। একজন চিহ্নিত ও শাস্তিপ্রাপ্ত রাজাকারকে রাষ্টের প্রধান এক্সিকিউটিভ পোস্টে বসানার পর জিয়া নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবী করার বৈধতাটুকু হারিয়েছেন আমার মতে।

ওডিন এর ছবি

কবি বেলাল মোহাম্মদের 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' বইটা কোন প্রকাশনীর থেকে বের হয়েছে এইটা জানতে পারলে একটু সুবিধা হতো

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমি তখন চট্টগ্রামেই ছিলাম এবং দুটি ঘোষণাই নিজ কানে শুনেছি।

মেঘা এর ছবি

আলোচনা সমালোচনা হবে আশা করছি। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

ফারাসাত মাহমুদ এর ছবি

দুর্দান্ত। মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্যের দিকে একটা চোখ রেখে দিতে হবে বোঝা যাচ্ছে। লেখা -গুড়- হয়েছে

অরফিয়াস এর ছবি

দুর্দান্ত আলোকপাত, তুমুল আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু অজানা তথ্য জানলাম
ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী

আলেক সাই

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

পড়লাম। কিছু নতুন তথ্য পেলাম।


_____________________
Give Her Freedom!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

জানলাম অনেক কিছু। ইতিহাস নিয়ে আমার অজ্ঞতা আছে বেশ ভাল পর্যায়ের। সময় করে কিছু বই পড়ার পরিকল্পনা অনেক দিনের। যাক এই লেখাটা একটু ঠেলা দিল সেই ইচ্ছাকে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

গোরা এর ছবি

জিয়ার বুদ্ধিমত্তার চেয়েও ভাগ্য এবং অন‌্যদের কিছু মারাত্মক ভুল বড় ফ‌্যাক্টর ছিলো। অবশ‌্যই ঘটনা গুলির গতি প্রকৃতি জিয়া নিয়ন্ত্রণ করে নি আর অনেক ভাবেই ঘটনা গুলি এগুতে পারতো যাতে জিয়া ও তার বিখ্যাত 'নিরবতা ও সুযোগ বুঝে কাজ করা নীতি' মুতে ভেসে যেতো।

আইলসা এর ছবি

জিয়া হ্ইলো Lucky dude অন্যদিকে তাহের র সকল বাঙ্গালি বামপন্হীর মতই বোকা, কষ্ট মস্ট করে, থিওরি দেয়, জনগনরে বুঝায়, শেষম্যাস আম ছালাই ভইরা অন্য কারো হাতে দিয়া আসে

বামপন্হীদের বিষয়ে, মতি কন্ঠের লাইনটাই অসাধারন,

তারা নাকি দুনিয়ার মজদুররে এক করবে। দেশের হাতে গোনা কয়জন কমিউনিস্টরেই তারা এক করতে পারে না, আবার দুনিয়ার মজদুর!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

সুমন চৌধুরী এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

মতি মিয়া একসময় বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির মূখপাত্র "সাপ্তাহিক একতা" এর সম্পাদক ছিলেন। চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, সেনাবাহিনি দুই ভাগে ছিল- একভাগ যারা সামহাউ যুদ্ধে জড়িত আর আরেকভাগ যারা পাকিস্তানে স্ট্রান্ডেড ছিল। যুদ্ধের পরে যারা জড়িত তাদের সবার প্রমোশান হয় আর পাকিস্তানফেরতা সেনারা ব্যাচম্যাটদের জুনিয়ার হয়ে যায়। আর সিভিল বনাম অফিসার্সদের মধ্যে ক্রেডিট প্লাস বিজয়ের মধু নেবার প্রতিযোগিতা ---এই দুইটা ফ্যাকটর কাজ করছে বলেই আমাদের সেক্টর কমানডারদের মধ্যে খালেদ, হায়দার, জিয়া,মনজুর, তাহের--এদের মৃত্যু কোন না কোন ক্যু তে । এদের নিয়ে কথা বলার আগে সবারই প্রচুর পড়ালেখা করে নেয়া উচিত এবং একাধিক বই পড়তে হবে। জেলহত্যা দিবসের তৃতীয় মাত্রায় দেখলাম, তোফায়েল শুধু নিজের আর বঙ্গবন্ধুর কথাই বলে গেল!! আমরা নিজেদের আস্ক করি, জাতীয় চার নেতা সম্বন্ধে কে কতটুকু করে জানি? কেন সে সব সূর্য-সন্তানদের মৃত্যু দিবসে কেবল তর্ক আর বিতর্কই সার হয়? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

ওডিন এর ছবি

ত্যানা প্যাচানো জারি থাকুক। চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।