"মানুষটা তখনো বেঁচে ছিল। বুক আর মাথা বাদে বাকী অংশ ফ্লাইওভারের ভেঙ্গে পড়া ১০০ টনের গার্ডারের নীচে থেতলে গেছে। মানুষটার উর্ধাঙ্গ তীব্র চিৎকার করছে বাঁচার আকুতিতে। শত শত মানুষ অসহায় তাকিয়ে আছে চোখে জল নিয়ে। টান দিয়ে বের করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। কিন্তু এত বড় গার্ডার সরাবার মতো শক্তিমান যন্ত্র এখানে নেই। কেটে বের করার মতো দুঃসাহস কারো নেই। অনেক চোখের সামনেই নিথর হয়ে গিয়েছিল হয়তো দেহটা। আরো অনেক মানুষের থেতলানো রক্তাক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে আছে এখানে সেখানে। কতোজন মারা গেছে এখনো আমরা জানি না। কতোজন মানুষ আংশিক দেহ নিয়ে বাকী জীবন পার করবে আমরা জানি না। দুর্বল হৃদয়ের মানুষ আমি, যত দ্রুত সম্ভব পালিয়ে এলাম বহদ্দারহাট থেকে। আমার অনেকগুলো রাত কাটবে অস্থির নির্ঘুম অথবা জীবন্ত দুঃস্বপ্নে।" (১)
মাননীয় সরকার,
আমরা আর মানতে পারছি না। যে ফ্লাইওভার নির্মানের জন্য চট্টগ্রামের একটা অংশ গত তিন বছর ধরে ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে সেই ফ্লাইওভার তৈরী হবার আগেই আমাদের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ছে। সেই ফ্লাইওভার কোনদিন তৈরী হলে আমি তার উপর কিম্বা নীচ দিয়ে চলাচল করতে রাজী হবো না। আমরা কেউ জানি না কোন কোন পিলারের নীচে আমাদের মৃত্যু নকশা পুঁতে রেখেছে ঠিকাদার।
আপনার কাদের কিভাবে নির্মানকাজ বন্টন করেন জানি না। কিন্তু যাদের কাজ দিয়েছেন তারা এই কাজের জন্য আদৌ যোগ্যতা রাখে কিনা, আপনারা তা যাচাই করেন না। বহদ্দারহাটে যে মানুষগুলো বেঘোরে মারা পড়লো, সেটা দুর্ঘটনা নয়, পরিষ্কার খুন। এই খুনের জন্য যতটা দায়ী নির্মান প্রতিষ্ঠান, ততটাই দায়ী সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ)। তারা অযোগ্য লোককে কাজ দেবার বিনিময়ে ঘুষ নিয়ে বাড়িতে ঘুমিয়েছে।
যে ফ্লাইওভার নির্মান করার জন্য, নির্মান প্রতিষ্ঠানের ভুল পরিকল্পনার কারণে ওই এলাকায় বসবাসকারী আর আর ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী লাখ লাখ লাখ মানুষ গত তিন বছর ধরে জঘন্য জীবন যাপন করছিল, সেই ফ্লাইওভার এতটাই ঠুনকো যে চালু হবার আগেই ভেঙ্গে পড়ছে আপনা আপনি। চালু হবার আগেই যে ফ্লাইওভার এতগুলো প্রাণ নিল, চালু হবার পর নেবে আরো কতো শত জীবন?
শুনুন মহাশয়, ভিক্ষা চাই না, কুত্তা সামলান। আমাদের আর ফ্লাইওভার চাই না!!! আমাদের ফ্লাইওভারের স্বাদ মিটে গেছে। আপনি সিডিএকে বলুন সমস্ত নির্মানকাজ বাতিল করে আমার আগের রাস্তা ফিরিয়ে দিতে। গার্ডারের নীচে চ্যাপটা হওয়ার বদলে আমরা বরং দু ঘন্টা যানজটে কাটাবো। আমরা আমাদের আগের রাস্তা ফেরত চাই!!
সবশেষে মাননীয় সরকার, যত দ্রুত সম্ভব সিডিএকে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করে তার সংস্কার করুন। সিডিএ নিজেই একটি জরাজীর্ন দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান। সিডিএ কি কি দুর্নীতিতে লিপ্ত, সেটা জানার আগ্রহ থাকলে একটা মেইল ঠিকানা দিয়ে জনগনের কাছ থেকে অভিযোগ আহবান করুন। (৩)
(১) প্রত্যক্ষদর্শী
(২) ছবিসুত্র: দৈনিক আজাদী
(৩) অরণ্যে রোদন
মন্তব্য
অলরেডি ব্লেম গেম শুরু হয়ে গেছে দেখলাম বিভিন্ন দল,উপদল আর গ্রুপের মধ্যে। এভাবে আর কতদিন?
মনটা খুব খারাপ
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সকালে ঘুম ভেঙ্গেই চারিদিকে শুনছি মৃত্যু সংবাদ!
মনটা খুব খারাপ। আমাদের দেশে মনে হয় সবচেয়ে কম মূল্যবান জিনিষ হল - সাধারন মানুষের জীবন!!!
আর কতদিন ???????????????????????
চট্টগ্রাম আমার খুব প্রিয় শহর।এরকম দূর্ঘটনা মন খারাপ করে দেয়।ভবিষ্যতে আরও অনেক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।ব্রীজটি পরিক্ষা না করে চালু করা উচিত না।
বুনো পথিক
ফ্লাইওভার ভেঙ্গে পড়ার খবর দিয়ে দিন শুরু হলো। আশুলিয়ার অগ্নিকান্ডের খবর দিয়ে দিন শেষ হচ্ছে। মনটা খুব খারাপ। খুব বেশি খারাপ।
সবশেষে মাননীয় সরকার, যত দ্রুত সম্ভব সিডিএকে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করে তার সংস্কার করুন। সিডিএ নিজেই একটি জরাজীর্ন দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান।
facebook
ভালো লাগে না আর কিচ্ছু, এইসব দেখতে দেখতে মনে হয় বেঁচে থাকাটাই এইদেশে বিষ্ময়----
প্রতিদিন এতো এতো মৃত্যুসংবাদ শুনতে শুনতে যখন মনে হয়, এগুলো তো অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে গেছে, কোনো কোনো ঘটনা আবারো প্রচন্ড নাড়া দিয়ে বলে, হয়নি। খবরটা পড়ার পর থেকেই খুব খুব মন খারাপ লাগছে।
দায়ী লোকগুলোর শাস্তির ব্যবস্থা কি কোনো কালেই হবে না?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আর কত?
এ কোন দেশে আছি আমরা?
দূর্ঘটনাই এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে যাচ্ছে।
নিজের চোখে এই বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখার পর কিভাবে ঘুমিয়েছি বলতে পারবোনা। কনক্রিটের স্ল্যাবের নিচে কোমর পর্যন্ত চাপা পড়া একজন মানুষকে ভয়াবহ যন্ত্রণায় সাহায্যের আশায় কাতরাতে কাতরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে দেখা কতটা মর্মান্তিক কাউকে বোঝাতে পারবোনা। হাতের মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে এই হত্যাযজ্ঞের ছবি তোলা কোনমতেই হয়ে উঠেনি। এরিমধ্যে কিছু মানুষ যেমন চেষ্টা করেছে আহতদের উদ্ধার করার জন্য আবার কিছু মানুষ (?) সেসব অসহায় আহত ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের মোবাইল, ঘড়ি এবং মানিব্যাগ লুন্ঠনেও ব্যাস্ত ছিল। ক্রোধের আগুন উস্কে দিয়ে আশেপাশের দোকান লুটও করেছে অনেক মানুষ নামধারী প্রাণী। এইসব দেখেশুনে নিজের গলার কাছে একদলা থুথু এসে জমা হয় কিন্তু ছিটানো হয়না। মনে হয় আমার এই অনর্থক থুথুও অনেক মূল্যবান এইসব বিবেকহীন, অর্থলিপ্সু ঠিকাদার, ঘুমিয়ে থাকা সরকার আর সুযোগসন্ধানী মানুষের চাইতে।
ফারাসাত
চারিদিকে এত এত মৃত্যু, টনক নড়াতে পেরেছে কি ?
মীর আখতার জাসদের লোক, অনেক পুরাতন ঠিকাদার। আর পারিসা হইল তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বগুড়ার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ের নামে নাম রাখা কম্পানী। এরা বিএনপি-জামাতের আমলে ঠিকাদারী ব্যাবসা নিয়ন্ত্রন করতো।
এই ফ্লাইওভারের টেন্ডার এবং কাজ শুরু হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। আর আজকের (২৭/১১/২০১২ দৈনিক প্রথম আলো ) পত্রিকায় এসেছে যে আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। কাজেই এই ক্ষেত্রে দোষ বিএনপি জামাতের ঘাড়ে দেয়া যাবে না। আপনি বলছেন, এরা বিএনপি জামাত এর আমলে ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করতো, এখন কি নিয়ন্ত্রন অন্য কারো হাতে গেছে নাকি এদের হাতেই আছে ? নিয়ন্ত্রন না থাকলে বর্তমান সরকারের আমলে কাজ পেল কি করে ? আপনাদের বোঝা উচিত, এরা ব্যবসায়ী, আর এদের কে ব্যবসা করতে হবে দুই আমলেই। কাজেই ও আওয়ামী লীগের আর ও বিএনপির লোক, তা কিন্তু না। এরা সব সময় ই সুবিধা নিতে পারঙ্গম।
বহদ্দারহাটের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তো কোন অন্তর্ঘাতের আশংকা নাই; পরিকল্পিত বলা যাবে না; এটার দোষ কাকে দিবে? প্রশাসনই কি খুনি নয়!!
_____________________
Give Her Freedom!
এই ফ্লাইওভারের টেন্ডার এবং কাজ শুরু হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে, কাজেই এখানে বিএনপি জামাতের দোষ দেয়া যাবে না। আজকের পত্রিকায় (দৈনিক প্রথম আলো - ২৭/১১/২০১২) এসেছে আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি। একটা কথা সবাই কে বুঝতে হবে, এই ব্যবাসায়ী দের কোনো দল থাকে না, তাদের দুই আমলেই ব্যবসা করতে হয়, কাজেই ও আওয়ামী লীগের আর ও বিএনপির এই কথাটা ঠিক না। আজকে আব্দুর রাজ্জাক রা আওয়ামী লীগের নেতা আর বিএনপির আমলে তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ!
নতুন মন্তব্য করুন