দৃশ্যপট আছদগঞ্জ চট্টগ্রামঃ ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
কানে মোবাইল গুঁজে চোখ সজাগ রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এক দাড়িয়াল। এখনো কেউ আসেনি। আগে এসে বোকামী করলো কিনা আক্ষেপ করছে। আজকে আন্দরকিল্লার দিকে যাবার সাহস হচ্ছে না। পিঠের চামড়া রাখবে না মিছিল দেখলে। তাই জেলখানার পাশের রাস্তাটাকে নিরাপদ ভেবে বেছে নেয়া। ঐ তো আসছে দুজন। খানিক পার পাশের গলি থেকে আর পাঁচজন। মোটামুটি বিশ পঁচিশজন হবার পর শ্লোগান শুরু -নারায়ে তকবীর। কিন্তু গলায় আজকে জোর নেই। গতরাতে প্রেসক্লাবের জাগরণ মঞ্চ থেকে দেয়া ঘোষণাটা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। মিনিট দশেক শ্লোগান দিয়ে লালদীঘির কাছে এসে ডানে বামে তাকিয়ে মিছিলের হঠাৎ সমাপ্তি ঘোষণা করলো নেতা। তিন মিনিটের মধ্যে দলটা রাস্তা থেকে নাই হয়ে গেল।
দৃশ্যপট এনায়েতবাজার, চট্টগ্রামঃ ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
হঠাৎ করে শূন্য থেকে পনের বিশজন জামাতি ঝটিকা বেগে রাস্তার পাশে এক জায়গায় জড়ো হলো। একটা ব্যানার ধরে দাঁড়িয়ে ছবি তুললো। একজন পাঁচ সাত মিনিটের বক্তৃতা দিল। তারপর পড়িমরি করে ব্যানার গুটিয়ে আবারো হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
দৃশ্যপট পান্থপথ, ঢাকাঃ ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
কারওয়ান বাজারের দিকে হঠাৎ করে ঝটিকা মিছিল শিবিরের। মুহুর্তের মধ্যে বোমা ককটেল গুলি গাড়ি ভাংচুর শুরু। রাস্তায় আতংক ছোটাছুটি। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশের পাল্টা আক্রমণ শুরু হলে সব কটা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেল, কিছু লাঠি ফেলে মিলিয়ে গেল জনতার মাঝে। পেট্রোবাংলা ভবনের উল্টোদিকের গলিতে ঢুকে পাবলিক হয়ে গেল কয়েকজন। পুলিশ খুঁজতে এসে মুশকিলে পড়লো, এত পাবলিকের মধ্যে কোনটা শিবির, কোনটা মানুষ। তখন পাশের বুড়ো লোকটা পুলিশকে উদ্ধার করলো ধাঁধা থেকে। বললো, ওই তো তিনটা শিবির। তিনটাকেই আটক করা হল।
এই দৃশ্যগুলো কয়েকদিন আগেও এমন ছিল না। মাত্র আট নয়দিন আগেও আমরা দেখেছি জামাত-শিবিরের একচ্ছত্র তাণ্ডব। আগুন জ্বালিয়ে মানুষ পুড়িয়ে পুলিশ পিটিয়ে কিভাবে নারকীয় পরিবেশ তৈরী করেছিল দেশব্যাপী। ঠেকাবার কেউ যেন ছিল না। মানুষ ঘৃনা আর আতংকের যোগফলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। শিবির ভেবেছিল তাদের প্রতিরোধ করার জন্য কেউ মাঠে নামবে না।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্লগাররা যুদ্ধাপরাধের বিচার, জামাত শিবিরের অপরাজনীতি এসব নিয়ে কীবোর্ডে ঝড় তুলেছিল ইন্টারনেটে। গুলি বোমা বন্দুকের বিপক্ষে কলম কীবোর্ড কি করতে পারে? কিভাবে বদলে গেল এই চিত্র?
স্বাধীনতা শক্তির বিরুদ্ধে ব্লগ ফেসবুকে কলম/কিবোর্ড নিঃসৃত শব্দগুলো ছড়িয়েছে মানুষ থেকে মানুষে। মানুষ তা হৃদয়ে ধারণ করেছে, বুকের ভেতর প্রতিবাদের বারুদ হয়ে জমেছে দিনের পর দিন। কাদের মোল্লার রায়টা সেই বারুদে একটা স্ফুলিঙ্গের ভুমিকা পালন করেছে মাত্র। শুধু একজন কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে এতগুলো মানুষ জমায়েত হয়নি। এই গণজাগরণ সবগুলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে। এই জাগরণ দেশব্যাপী জামাত শিবিরের সশস্ত্র তাণ্ডব আর অপ-রাজনীতির বিরুদ্ধে। জ্বালাও পোড়াও করে সৃষ্ট আতংকের বিরুদ্ধে। জামাতের প্রতি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক দুটো অনুভুতি ঘৃণা আর আতংক। শাহবাগ জাগরণে মানুষের মন থেকে আতংক দূর হয়ে কেবল ঘৃণাটা রয়ে গেছে।
এটা অন্যরকম একটা সময়। আমাদের দৈনিক রুটিন বদলে গেছে। প্রতিদিন কাজ সেরে সন্ধ্যায় জড়ো হই চট্টগ্রামের শাহবাগ প্রেসক্লাব চত্বরে। চেরাগী পাহাড় থেকে শুরু করে আধা কিলোমিটার ব্যাপী একটা রাস্তা প্রতিদিন বিকেলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সব বয়সী মানুষ -তরুণ যুবক শিশু কিশোর বৃদ্ধ সবাই যোগ দিচ্ছে প্রতিদিন। ভিড় যেন প্রতিদিন বাড়ছে নতুন করে। ওই এলাকাটা চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হলেও একটা আশংকা ছিল জামাত শিবিরের নিকটবর্তী আস্তানাগুলো নিয়ে। একদিকে চট্টগ্রাম কলেজ অন্যদিকে আন্দরকিল্লা। এই দুই জায়গা জামাত শিবিরের অন্যতম ঘাটি। কিন্তু দেশপ্রেমের চেতনা সকল ভয় ভীতির উর্ধে। হাজার হাজার মানুষ সব আশংকা হুমকি উপেক্ষা করে জড়ো হয় প্রেসক্লাব চত্বরে। মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে পড়ছে রাস্তায়। শ্লোগানে শ্লোগানে মাতিয়ে রাখছে মাঝরাত পর্যন্ত।
এই জাগরণ থেকে তিনটি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণঃ
১. এই জাগরণ আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐক্যমন্ত্র হলো মুক্তিযুদ্ধ। তাই রাজাকার আর একাত্তরের চেতনাহীন অবশ কিছু লোক ছাড়া সমগ্র দেশ শাহবাগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
২. শুধু কলম/কীবোর্ড চেপে কোনদিন মানুষকে জাগানো যায় না বলে যারা হতাশ ছিলেন তারা এখন বুঝতে পারছেন দায়িত্বশীল কলম/ কীবোর্ড টিপেও দেশের মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করা যায়।
৩। কলম/কীবোর্ড টেপা তরুণেরাও দেশের প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে আসতে পারে।
শাহবাগ জাগরণ বাংলাদেশে দীর্ঘকাল একটা বিস্ময় হয়ে থাকবে। আমাদের প্রজন্ম এরকম আরেকটি গনজাগরণের স্বাক্ষী হবে কিনা সন্দেহ। আমাদের অনেক হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে শাহবাগ জাগরণ। ব্লগ ফেসবুকে মেতে থাকা স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জ্বল তরুণেরা বাংলাদেশের গর্ব। বাংলাদেশের জন্য তারা বুক পেতে দিতে প্রস্তুত।
পাদটীকাঃ এই আন্দোলন এখনো চলছে। জামাত শিবির কদিন ঘাপটি মেরে এখন মাথা বের করে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আগামীতে আরো নৃশংসতা দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বাংলাদেশকে। যত চেষ্টাই করুক তাতে জামাতের বিপক্ষে জনমত বাড়তেই থাকবে। সাধারণ মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে এমনকি সামরিক বাহিনীও জিততে পারেনি। জামাত শিবির তো সেই তুলনায় ছারপোকা মাত্র। দেশের একটা অপশক্তি হয়ে থাকাই তাদের ভবিষ্যতের নিয়তি।
মন্তব্য
সহমত
ধন্যবাদ
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মেরে সব কটিকে সাফ করা চাই। জামাত মুকতো বাংলা চাই
জী জামাতমুক্ত বাংলা চাই
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এ প্রজন্মের এই জাগরণে আমি আবেগাপ্লুত, অভিভূত।
১২/১২/১২ ইং তারিখের একটা লেখায় আমি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম,
পরিশেষে বলি, আমরা গণমানুষের সর্বাত্মক মুক্তি যাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা হয়েছে, বাংলার মানুষকে দিতে পারিনি। আপনারা নয়তো আপনাদের পরের প্রজন্ম প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ করে গণমানুষের সেই কাঙ্খিত মুক্তি প্রতিষ্ঠিত করবেন।
ধন্যবাদ, আরও আপডেট দিন।
এই প্রজন্মের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ঠিকস
//amn
জী
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নতুন মন্তব্য করুন