১.
আমি নিরপেক্ষ মানুষ না। আওয়ামী লীগ দুর্নীতি বাটপারি করেছে বলে বিএনপিকে ভোট দিয়ে জামাতকে ক্ষমতায় আনবো না। বরং ভোটদানে বিরত থাকবো। কিন্তু জব্বার সাহেব দোদুল্যমান (তাঁর ভাষায় নিরপেক্ষ মানুষ)। গতবার নৌকায় ভোট দিলেও তিনি এবার বিএনপিকে ভোট দেবার নিয়ত করেছেন। টেক্সিতে যাচ্ছিলেন দোকানে। দোকানের কাছের মোড়ে এসে অবরোধের কবলে পড়ে হঠাৎ ছুঁড়ে দেয়া বোমায় টেক্সিসহ আপাদমস্তক ঝলসে যান তিনি। ঝলসানো শরীরে জব্বার সাহেব বুঝতে পারলেন যারা গণতন্ত্রের নামে আন্দোলন করছে, যারা তাঁর কাছে ভোট ভিক্ষা করবে কয়েকদিন পর, তারা আসলে তাঁর কথা ভাবছে না। তাদের চোখে অন্য স্বপ্ন, অন্য জিঘাংসা। তিনি বাধ্য হলেন তার ভোট দেবার নিয়ত বদলে ফেলতে।
২.
বাসভর্তি কাজের মানুষ। চাকরী বাঁচাতে ছুটছে। হঠাৎ একঝাঁক ককটেল আর পেট্রোলবোমার আক্রমণে বাসচালক দ্রুত থামাতে গিয়ে প্রায় উল্টে দেয় গাড়ি। ততক্ষণে ভেতরে আগুন ধরে গেছে। ভাগ্যবান বিশ পঁচিশজন হাত পা ছড়ে বের হয়ে আসতে পারলো, আরো পনের বিশজন বেরুতে বেরুতে ঝলসে আধা কাবাব এবং একজন সম্পূর্ন কাবাব হয়ে মারা গেলেন। ওই বাসের যাত্রীদের বিরাট অংশ ধানের শীষের ভোটার হতে পারে জেনেও যারা বোমা ছুড়ে, তারা কি ভোটের জন্য আন্দোলন করছে?
৩.
ট্রেন লাইন উপড়ে হাজার হাজার মানুষকে নানা জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে, উল্টে গেছে বগি, হতাহত হয়েছে মানুষ। তীব্র ভোগান্তিতে লাখ লাখ মানুষ, পরীক্ষার্থী। দেশে কি যুদ্ধ চলছে? কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে? ট্রেনে করে কি শত্রু দেশের সেনাবাহিনী চলাচল করে? ট্রেনে বাসে গাড়িতে টেক্সিতে করে যারা যাতায়াত করে তারা তোমাদের শত্রু? তোমাদের হরতাল অবরোধে কেউ কাজে যেতে পারবে না, স্কুলে যেতে পারবে না, অসুস্থ হতে পারবে না, হাসপাতালে যেতে পারবে না, বড়জোর মরতে পারবে। যারা কোথাও যেতে চায় তারাই তোমাদের শত্রু? তাদের বিরুদ্ধেই তোমাদের আন্দোলন? অবরোধ মানে দেখামাত্র আগুনে ঝলসে দেয়া? হরতালের সংজ্ঞা কি? অবরোধের সংজ্ঞা কি? পার্থক্য কি?
৪.
১৮ দলের মিছিলে যাদের কন্ঠ সবচেয়ে সোচ্চার, সবচেয়ে তীব্র, সেই জামাত শিবিরের কন্ঠে সবচেয়ে সোচ্চার হয়ে বাজে - বিপ্লব বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব। দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ছদ্মবেশে ইসলামী বিপ্লবের প্রস্তুতি চলছে? যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা ইসলামী বিপ্লবের স্লোগান সহ্য করে কি করে? যদি বিএনপিও ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে থাকে, তাহলে আর নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদির জন্য মায়াকান্না দেখিয়ে কি কাজ। আন্দোলনের ভণ্ডামি না করে সরাসরি বিপ্লবের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামুক।
বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, এখন যারা আন্দোলনের নামে দেশব্যাপি নৈরাজ্য চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র নয়, এমনকি তাদের প্রতিপক্ষ সরকার মনে হলেও তাদের আসল প্রতিপক্ষ মানুষ, তাদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।
মানুষকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কেউ কখনো জিততে পেরেছে ইতিহাসে?
মন্তব্য
পারেনি, পারবেও না
১। আপনি কিছু টেলিভিশনের খবরে দেখে থাকবেন বলছে যে দুর্বৃত্তদের ছুঁড়ে দেওয়া পেট্রোল বোমায় দুইজন আহত কিংবা দুর্বুত্তদের দেওয়া আগুনে গাড়িতে ২দুজনের মৃত্যু। কিন্তু প্রশ্ন হলো দুর্বৃত্ত কারা? তাদের কি পরিচয় নেই? পরিচয় আছে, বিএপিরর ডাকা হরতালে যে আওয়ামিলীগ গাড়িতে বোমা মারবে না, আগুন দিবেনা এটা সকলেই বুঝবে। তাহলে সরাসরি বলতে সমস্যা কি যে বিএনপি জামাতের ছুঁড়ে দেওয়া বোমায় মানুষ আহত/নিহত? এমন নিশংসতা করার পরও তাদের নাম নিতে কেন ওদের মুখে বাঁধে? এটা দেখে ছোটবেলার পাঠ্যবইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। ছোটবেলায় পড়েছি পাঠ্যবইয়ে ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধারা
সাথে যুদ্ধ করেছে। ছোট একটা শিশু/কিশোর সেই বয়সে বুঝতে পারে না হানাদার বাহিনী বলে পাপিস্তানিদের কে আঁড়াল করে রাখা হলো! ঠিক একি রকম ষড়যন্ত্র এখনো বিদ্যমান, জামাতের নাম না বলে অজনা দুর্বৃত্তের উপর চাপিয়ে দাও সব।
২। রেললাইনে যে অরজাকতা চলছে তা আমি আমার জীবনে দেখিনি কোনদিন। প্রতিদিন উপড়ে ফেলা হচ্ছে রেললাইন, গাড়িগুলো হেলেদুলে পড়ছে পাশের ধানক্ষেত কিংবা রাস্তার ধারে। যেন রেলগাড়িতে মানুষ চলাফেরা করে না, পোকামাকড় চলাফেরা করে তাই সরকারের টনক নড়ছে না এতে, এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত শত শত মানুষ মরেনি। শত শত মানুষ যেদিন মরবে সেইদিন সরকারের টনক নড়বে। কেন সরকার এই ভয়ংকর নিশংসতাকে শক্ত হাতে দমন করছে না?
মাসুদ সজীব
এখনকার হরতাল অবরোধকে আর রাজনৈতিক আন্দোলন বলা যাচ্ছে না। এটা সরাসরি নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই নৈরাজ্যের পেছনে বিএনপির চেয়ে জামাত শিবিরের ভূমিকাই অগ্রবর্তী। নৈরাজ্যের ধরণ দেখে এই সিদ্ধান্তে আসা যায়। এই অপশক্তিটা বাংলাদেশকে শত্রুদেশ মনে করে। এদেশের কিছু ধ্বংস করাকে তারা ঈমানী দায়িত্ব মনে করে। গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোকে তারা শত্রু দেশের মানুষ মনে করে। সাঈদীর রায়ের পর দেশ জুড়ে যে নৈরাজ্য শুরু করেছিল, তার ক্ষতিপূরণ এখনো হয়নি। আবারো সেই নৈরাজ্যেরই সুত্রপাত। বিএনপির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো তারা জামাত শিবিরকে সফলভাবে গুণ্ডামির কাজে ব্যবহার করতে পারলেও জনগনকে মাঠে নামাতে পারেনি। বরং জনগনের বিপক্ষে তাদের কর্মসূচী। এই পর্যন্ত মাস খানেকের নৈরাজ্যে সরকারের তেমন ক্ষতি হয়েছে বলে দেখিনি, কিন্তু প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ, লাশের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। এই মৃত্যু সেই পরিবারের জন্য ভয়াবহ ঘটনা। প্রত্যেকটা পরিবার ধুঁকছে এইসব মৃত্যুতে। এই লাশের উপর দিয়ে বিএনপি কোন সফলতার মুখ দেখবে বলে মনে হয় না। এমনকি যাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই নৈরাজ্য কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে, তাদের সুনজরও কি পাবে? রাজনৈতিক কর্মসূচীতে শুভবুদ্ধির পরিচয় ঘটুক নতুবা জেনে রাখুক অশুভ শক্তির ধ্বংসক্ষমতা অসীম হলেও শেষমেষ তাদের পরাজয় অনিবার্য।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জিততে না পারলেও ইতিহাসের গতিকে ৫-১০ বছর বা তারো বেশি মেয়াদে পেছনের দিকে নিয়ে যাবার কাজটি বাংলাদেশে তো বটেই- এমনকি বিশ্ব ইতিহাসেও নিতান্ত বিরল নয়।
আমার এক কলিগ একদম নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভাষায় এবং ফখার আবেগ নিয়ে বলল, "এই পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী"- তার মানে বোঝা গেল, আন্দোলনের নামে খুন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা -সবই জায়েজ এ দেশে! গত পরশু যে ব্যাঙ্কারটি ককটেলের আঘাতে মারা গেলেন - তার প্রাণের কোন দাম কি আদৌ আছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দালালদের কাছে?
লেখা অনন্য।
তবুও যত যাই বলুন, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা প্রয়োজন- যেমন রাখছেন আসিফ নজরুল, পিয়াস করিম, শাহদিন মালিক ও তুহিন মালিক ভাতৃদ্বয়, ইত্যাদি ইত্যাদি ছাগসুশীল।
খাইসে... শাহদীন মালিক আর তুহিন মালিক সত্যি সত্যি ভাই নাকি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভাবাদর্শগত ভাই, সত্যি!
এই দুজন যে সহোদর এ ব্যাপারে আপনি কি নিশ্চিত?
এরা দুইজন আপন ভাই না হইলেও দুই রিজভী'র মত *দির ভাই
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
আমি বুঝতে পারি না, কোন সুস্থ মাথার মানুষ কিভাবে অন্য একজন মানুষ শরীরে ব্যথা পায়, বা জীবন বিপন্ন হতে পারে, এমন কাজ করতে পারে।
আমার এক বন্ধু বলছিল, আওয়ামি লীগের আমলে নাকি দেশের শ্রমজীবি, কৃষিজীবি মানুষেরা ভাল ছিলেন, কিন্তু তারা এবার ধানের শীষে ভোট দেবেন কারন তারা মনে করেন ধানের শীষ ক্ষমতায় থাকলে তারা আরো ভাল থাকতে পারতেন। এটা কি বিএনপি নেতৃত্ব বুঝেনা? তারপরেও তারা কেন যে এমন করছে। দুঃখের বিষয় যারা বিএনপি সাপোর্ট করে তারা অন্ধভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করে যার ফলে লাভবান হচ্ছে জামাত। আওয়ামীলীগ কেবল আমাদেরকে ডিজএপয়েন্টই করে চলে। এটা খুবই ফ্রাস্ট্রেইটিং সামনে ইলেকশান আসছে কিন্তু আমাদের হাতে কোন অপশন নেই।
ওয়াইফাই ক্যানসার
রাজনীতি সাধারণ মানুষের হিসেবে চলে কতটুকু? আর, সাধারণ মানুষের রাজনীতির হিসেবে না চলার উপায় কতটুকু? তবু চেষ্টা জারী রাখতেই লাগে। মানুষকে প্রতিপক্ষ করে ফেললে রাজনীতির-ও আত্মঘাত ঘটে যায়। সেই দুর্দিনে সচেতন মানুষ, যে নিজেকে প্রয়োগ করেছে, সেই নির্ধারক শক্তি হয়ে ওঠে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমার দেশ, আমি স্কুলে যামু, আমি অফিসে যামু, আমি হাসপাতালে যামু, বাজারে যামু, ডেট করতে যামু; তোরা আমারে বাধা দেবার কে? আমি জ্যাকেট কিনতে ঢাকা যামু, আমি বাবার সঙ্গে ঢাকা শহর দেখতে যামু, আমি আমার মা রে নিয়া হাসপাতালে যামু, আমি পেটের দায়ে সিএনজি চালামু; তোরা আমার গাড়িতে আগুন দিয়া আমারে পুড়াইয়া মারবি ক্যান?
তোরা মানুষ না?
কোন পশুর ঔরসে তোগো জন্ম?
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
শেখ হাসিনা যদি মনে করেন তারা ভোটে পরাজিত হবেন এবং বি এন পি সরকার গঠন করবে তাহলে সংবিধান সংশোধন করে ২০২১ পরযনত বাকশাল কায়েম করলেই ঠেলা চুকে যায় ।
আর যাইহোক যতদিন বিএনপির সাথে জামাত আছে ততদিন যারা বিএনপিকে ভোট দিয়ে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে চান, তাদের সঠিক ইতিহাস জানার ব্যর্থতার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার অনেক ঘাটতি আছে।
মাসুদ সজীব
হুমম.. লাইনে আসুন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বর্তমানে দেশে যে অরাজগতা চলছে তা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নয়, এসব ভয়াবহ মানুষ নিপীড়ন চলছে যুদ্ধাপরাধী মানুষরূপী পশুদের(মারূপ) রক্ষা করতে। কাজেই সকরকার যতই ছাড় দিক, যতই প্রধানমন্ত্রী বা বান কী মুন ফোন করুক, এ অরাজগতা বন্ধ হবে না। যদি না সরকার ঘোষণা দেয় যে তারা বিচার বন্ধ করবে এবং সকল মারূপদের মুক্তি দিবে। কাজেই আমাদের স্থির করতে হবে আমরা কি চাই? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মূলা ঝুলানকারী সরকারের ফাঁদে আবার পা দেব, নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাওয়া শক্তিকে সমর্থন দিয়ে দেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হবার পথে এগিয়ে দেব।
প্রতি পাঁচ বছর পরপর এরকম নৃশংসতা দেখতে দেখতে হতাশ। অক্ষম আক্রোশে আস্ফালন করে গুমরে মরি নিজেই - কিন্তু কিছু করি না, করতে পারিও না! এভাবে হাত কামড়ে আর কতদিন?
____________________________
নির্মম সত্য কথা। এটা যদি সবাইই বুঝতো।
নতুন মন্তব্য করুন