দেশে শিক্ষিত মানুষের বাম্পার ফলন হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী জিপিএ ৫ ইত্যাদি পেয়ে জাতির মুখ উজ্জ্বল করছে। আমাদের কালের মতো একটা ফার্স্ট ডিভিশন আর দুইখান লেটারের সন্তুষ্টি এখন আর নাই। সেই আমলের স্ট্যাণ্ড, স্টার, লেটার সবকিছুর মর্যাদা এখন ঢাকা পড়েছে জিপিএ গোল্ডেন জিপিএ-র নকশী কাঁথায়। সেই জাতির একজন হিসেবে আমার বুক তিনহাত ফুলে যাবার কথা। কিন্তু আমার নেহাত আধমূর্খ মেধার স্কেলে এই উন্নতির বহরটা ঠিক হিসেব করতে পারছি না বলে গর্বটা অনুভবের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
আসলে দেশের বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে আমার জ্ঞান প্রাইমারী লেভেলের চেয়েও কম। আমার দুই সন্তান স্কুলের একদম নিন্মপর্যায়ে পড়াশোনা করছে। ছোটটি পড়ছে খেলাপড়া শ্রেণীতে। খেলাপড়া বা প্লে শ্রেণীতে পড়াশোনার বালাই নাই, ঘন্টা দুয়েক খেলাধুলা করে, ছড়া গান গেয়ে, ফুলপাখির ছবি দেখে চলে আসে। সুতরাং চতুর্থ বর্ষীয় পুত্রকে নিয়ে এখনো তেমন ভাবনা নেই পরিবারে।
ভাবনা হলো কন্যাটিকে নিয়ে। কন্যাটি একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। ওর ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষভাবে শংকিত ওর মা। আশংকায় ব্লাড প্রেশার পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় কোন কোন দিন। বিদ্যালয়ের অন্যসব শিশু ওর চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, বিষয়ে বিষয়ে ক+ পাচ্ছে পরীক্ষার খাতায়, অথচ আমার কন্যা পাচ্ছে শুধু ক কিংবা খ, পড়াশোনার চেয়ে গান ছবি আঁকা ইত্যাদির দিকেই বেশী ঝোঁক তার, কিন্তু শিল্পী হলে তো ভাত জুটবে না। সুতরাং ওর ভবিষ্যত কি হবে, কেমনে মানুষ হবে ইত্যাদি নিয়ে খুব চিন্তিত সে। আমি এই মহৎ দুচিন্তার বাইরে সুখী জীবনযাপন করি। এই ডিপার্টমেন্টের কোন দায়িত্বে নেই বলে আমি নীরব শ্রোতার ভূমিকাতেই থাকি বেশীরভাগ সময়। শুধু গতকালই একটু ব্যতিক্রম হলো।
স্কুলের হোমওয়ার্কে একটা প্যারাগ্রাফ লিখতে দেয়া হয়েছে আমার কন্যাকে। ইংরেজী ভাষায় চাঁদকে নিয়ে এক পাতা, সূর্যকে নিয়ে আরেক পাতা সৃজনশীল রচনা লিখতে হবে। এইটুকু বাচ্চা চাঁদসুরুজ নিয়ে বাংলায় কয়টা বাক্য হয়তো লিখতে পারবে, কিন্তু ইংরেজীতে কিভাবে লিখবে সেটা আমার মাথায় এলো না। এদেশে একটা গড়পড়তা এসএসসি পাশ ছেলেও শুদ্ধ ইংরেজিতে একটা সৃষ্টিশীল পাতা লিখতে হিমশিম খাবে।
কিন্তু এটা স্কুলের হোমওয়ার্ক। লিখতেই হবে, কোন উপায় নেই। তাছাড়া স্কুলে ওটার উপর পরীক্ষা নেবে। মায়ের চাপ আর বকুনি খেয়ে কন্যা একসময় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলছে, "মা আমি তিনলাইন লিখেছি, পরের লাইনগুলো কিছুতে মনে করতে পারছি না।"
কন্যার আকুতি আমার কান হয়ে বুকের মধ্যে বিদ্ধ করলো। আমি বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলাম। বই বন্ধ করে উঠে বসলাম। যদিও এটা আমার দায়িত্বে পড়ে না, তবু অযাচিত নাকটা গলিয়ে বললাম, "একটা ক্লাস টু'র বাচ্চাকে সৃজনশীল ইংরেজী রচনা লিখতে দেয়, এটা কেমন কথা? তাও একটা আদি অকৃত্রিম বাংলা স্কুলে।"
স্ত্রী অসন্তুষ্ট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "তুমি কি জানো 'ক'দের স্কুলে ক্লাস ওয়ানে এই রচনা লিখিয়েছে, আর 'খ'দের স্কুলে কেজি থেকেই এই রচনা শেখায়? এখানে তো বরং অনেক দেরী করে ফেলেছে এসব শেখাতে, এতদিন পর ক্লাস টুতে এসে এসব শেখাচ্ছে।"
( ক আর খ আমার দুই ভাগ্নী)
উদাহরণ দুটো পেয়ে আমার বিরক্তিটা প্রায় ক্রোধে রূপান্তরিত হল এবং যথাসম্ভব গলা নীচু করে হিসহিস করে বললাম, "যেসব স্কুলে এই শিশুদের মগজে এত কম বয়সেই সৃজনশীল ইংরেজি বিদ্যা ঠেসে ঢুকানোর চেষ্টা চলে, সেই স্কুলগুলোকে তুলে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলা উচিত!"
আমার স্ত্রী অসহায়ভাবে বললো, "তুমি চুপ থাকো প্লীজ , তোমার কথা শুনতে পেলে, ও আরো লাই পাবে, একদমই লিখবে না।"
আমি চুপ হয়ে গেলাম। কিন্তু ভেতরটা খুব জ্বলতে থাকলো। এটা কেমন কথা? কিরকম শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে? কোথায় এদের নিয়ন্ত্রণ? একটা বাচ্চা কতটা নিতে পারবে, কতটা পারবে না, সেটা হিসেব না করে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লেগে থাকবে স্কুলগুলো? যে বাচ্চার একটা জিনিস ১২ বছর বয়সে শিখলেও চলে, সেটা তাকে ৭ বছর বয়সেই ঠেসে গিলিয়ে দিতে হবে? এতে শিশুদের মানসিক অবস্থা কী দাঁড়াচ্ছে তার হিসবে কেউ রাখে?
শিশুদের কোন ক্লাসে কি পড়ানো হবে সেটা নির্ধারণের জন্য পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নামে একটা কতৃপক্ষ আছে, শিক্ষামন্ত্রনালয় আছে। তাদের নির্দেশিত বইও আছে, বইগুলো বিনামূল্যে বইগুলো স্কুলে স্কুলে সরবরাহ করা হয়। বোর্ড নির্ধারিত দ্বিতীয় শ্রেণীর তালিকায় দেখলাম তিনটা মাত্র বই।
১. আমার বাংলা বই
২. প্রাথমিক গণিত
৩. English for Today
শিক্ষাবোর্ড ২য় শ্রেণীর বাচ্চাদের জন্য এই ৩টি বই দিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও স্কুলগুলো সন্তুষ্ট নয়। প্রাইভেট স্কুলগুলো তাদের নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থায় চলে। এই তিনটা বইয়ের বাইরে আরো দশ বারোটা বই তাদের যোগ করতে হয়। তারপর সবগুলো বই মিলিয়ে শিশুর মগজের মধ্যে একটা ঘুটা তৈরী করে সেই জ্ঞানের ঘুটা দিয়ে প্রতিটি শিশুকে বিদ্যাসাগর বানাবার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। একটা সাত বছরের শিশুর মাথার ভেতরে এত ইংরেজী বিদ্যা, এত ভূগোলবিদ্যা, এত ইতিহাস, এত বিজ্ঞান, এত সমাজতত্ত্ব, এত মানবতত্ত্ব কতক্ষণ পর্যন্ত টিকে থাকে? একঘন্টা, একদিন, একমাস? নাকি এক বছর? এতসব জিনিস পড়তে গিয়ে, লিখতে গিয়ে, শিখতে গিয়ে শিশুটির খেলাধুলার সময় পর্যন্ত থাকে না। শিশুদের শৈশব ধ্বংসকারী এই বিদ্যাসাগর কর্মসূচীকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের কোন সংস্থার কোন দায়িত্ব নেই?
যদি বোর্ডের বইগুলো জ্ঞানার্জনের জন্য যথেষ্ট না হয়, তাহলে শিক্ষাবোর্ড ওই বইগুলোর বাইরে আর কোন বই দেয় না কেন? নাকি ওই তিনটা বই শুধু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরিদ্র ছাত্রদের জন্যই, যাদের বিদ্যাসাগর হবার দরকার নেই?
কথাটা ভারসাম্যহীন মনে হতে পারে, তবু বলছি। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি আমার সন্তানদের প্রচলিত এসব স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের হাতে আদিযুগের টোল মক্তবের মতো জ্ঞানদান করতাম । আমি যে ক'পাতা পড়াশোনা করেছি তাতে অন্ততঃ এটুকু বুঝি আমার সন্তান কোন বয়সে কতটুকু শিখতে পারবে, জীবনের কোন ক্ষেত্রে কতটুকু প্রয়োজন। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষার সবটুকু জ্ঞান প্রদানের ক্ষমতা আমার আছে। শুধু সার্টিফিকেট দেবার ক্ষমতা নেই যা নিয়ে সে পরবর্তী সার্টিফিকেটের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে। শিক্ষাজীবন শেষে তার জীবিকার উপায় করবে সার্টিফিকেট নামের সেই টুকরো কাগজটা। আমরা শুধু এক টুকরো ছাপানো কাগজের শক্তির জন্য আমার সন্তানকে বিদ্যালয় নামের অসুস্থ সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি? বিক্রি করে দিচ্ছি তাদের শৈশব, তাদের আনন্দ, তাদের সকল সৃষ্টিসুখের উল্লাস?
এই লেখাটি আমার সন্তানকে শৈশবে বিদ্যাসাগর বানাবার কর্মসূচীর প্রতি আমার তীব্র 'না'!!!
মন্তব্য
ভয় পাচ্ছি, আমার বাচ্চার জন্য। আমি ছোট বেলা হতেই পড়তাম না। এখন ও যে খুব ভালো আছি তা নয়। তবে আমার সময় টা কি ভাবে উপভোগ করতে পারব তা বুঝতে পারছি। আপনি আফসোস করছেন না পারার কস্টে- আর আমি চেস্টা করবো-এই আফসোস টা না করার।
আপনার সাফল্য কামনা করছি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমাদের দেশের স্কুল গুল শিক্ষা প্রদানের নামে ব্যবসা করে যাচ্ছে, আর তাদের এই ব্যাবসাকে হালাল করার জন্য ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে অমানবিক চাপ। আমাদের মায়েরা নেমেছে সেই প্রতিযোগীতায়। অথচ এতে যে শিশুদের শৈশব হয়ে যাচ্ছে নষ্ট তা কেউ বুঝতেও চান না। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উচিৎ এই বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা।
-এ এস এম আশিকুর রহমান অমিত
আমি বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাদানকারী সকল স্কুলসমূহকে একই পাঠক্রমের আওতায় আনার জন্য জোর দাবী জানাই সরকারের কাছে। একই দেশের মধ্যে একই বোর্ডের আওতায় থেকে ভিন্ন ভিন্ন বই দিয়ে স্কুল চালাবার তথাকথিত গণতান্ত্রিক অধিকার বা স্বেচ্ছাচারকে আইন করে খর্ব করা হোক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সেই দুরন্ত শৈশব বলে এখন আর কিছু নেই, বইয়ের ব্যাগে ভারী ক্লান্ত দেহে আতংকিত কিছু শিশুদের দেখি এখন। যাদের চোখে মুখে এখন পড়ালেখা নামক এক ভয়ংকর আতংক সবসময় বাস করছে। তাদের খেলার মাঠ নেই, মাঠ থাকলে সময় নেই। তাদের দল বেঁধে উল্লাস করার সুযোগ নেই। এই শিক্ষক এর কাছ থেকে ওই শিক্ষক করেই কেটে যাচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু। আমি মাঝে মাঝে বিষন্ন হৃদয়ে তাদের পানে চেয়ে থাকি আর দীর্ঘশ্বাসে পুড়ি।
মাসুদ সজীব
দুরন্ত শৈশব বড়জোর কার্টুন শৈশবে এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দীর্ঘশ্বাসে আর পোড়া নয় সময় এসেছে বদলানোর। আমরা বদলালেই নিয়ম অনিয়ম সব বদলে যাবে।
এই লেখাটি আমার সন্তানকে শৈশবে বিদ্যাসাগর বানাবার কর্মসূচীর প্রতি আমার তীব্র 'না'!!!
আজ ভেঙে যাক সব নিষ্ঠুর কারাপ্রাচীর,
ছিঁড়ে যাক পাষাণ শেকল,
ছিঁড়ে যাক পায়ের বেড়ি,
ভেঙে চুরমার হোক যত কারাগারের তালা।
এসেছে দিন বদলের পালা।
ফাহিমা দিলশাদ
এখানে 'আমরা' বলতে নিশ্চয়ই অভিভাবক সমাজের কথা বুঝাতে চেয়েছেন। আমিও একমত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নচিকেতার গানের মত - ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে গ্রন্থকীটের দল বানায় নির্বোধ!
____________________________
আসলে কি গ্রন্থকীট থাকে শেষমেষ? যদি শেষ পর্যন্ত থাকতো তাতেও আপত্তি ছিল না। এখানে সবটুকু তো শুধুই সার্টিফিকেট ম্যারাথন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধরুন, কোন স্কুলে যদি এরকম চাপ না দিয়ে বয়সোপযোগী শিক্ষা দেয়া হয়, তখন হয়ত অভিভাবকরাই বলবেন, এই স্কুল ভাল না, অমুক স্কুলে এত এত কিছু শেখায়।
আমার কাছে জিনিসটা গরুকে ট্যাবলেট/ইউরিয়া সার খাইয়ে মোটাতাজা করার মত মনে হয়; কঠিন কঠিন জিনিস জোর করে গিলিয়ে দেয়া হচ্ছে কোমলমতি এসব শিশুদের। বাচ্চাদের উপর একরকম মানসিক নির্যাতন হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই অতিরিক্ত পড়ার চাপ, সাথে সাথে অভিভাবকরাও এই প্রক্রিয়ায় শামিল হচ্ছেন সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়। যদিও, তাঁরা সন্তানের ভালোর জন্যই ভয় দেখিয়ে/মারধোর করে এসব বিদ্যা গেলাচ্ছেন; অথচ এটা থেকেই সন্তানের ভেতরে ভেতরে লেখাপড়ার উপর একটা তীব্র বিবমিষা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, সেটা তাঁরা টেরই পাচ্ছেন না।
অভিভাবকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবও একটা সমস্যা। ক্লাসে গুটিকয় সেরা স্থান বাগানোর জন্য বাচ্চাটার উপর যে চাপ অনেক অভিভাবক দেন, সেটা অনেকক্ষেত্রেই মানসিক নিপীড়ন(Psychological Torture) এর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
শুভেচ্ছা লেখককে
আপনার মন্তব্যটা অভিভাবকদের পড়ানো দরকার। এই অতিউৎসাহী বিদ্যা গেলানো চক্রের মধ্যে অভিভাবক সমাজের বিরাট একটা অংশের ভূমিকাও কম দায়ী নয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমরা যখন আমেরিকায় এসেছিলাম আমাদের সন্তান তখনো বিদ্যালয়ের পাঠ শুরু করে নি। ফলে তার মাধ্যমে এখানকার শিক্ষাব্যবস্থাটা খানিকটা দেখার সুযোগ হয়েছে। এখানে এরা কিন্তু বাচ্চাগুলোর শৈশব অনেকটাই চাপমুক্ত রাখে। অবশ্য তার ফলে এরা পরবর্ত্তীকালে অতিরিক্ত চাপের মুখোমুখী হয় কি না সেটা জানি না। বড় হয়ে এরা ত নিজেদের সমস্যা অনেকটাই নিজেরাই সামলাতে থাকে। এখানেও শিশুরা দ্বিতীয় ভাষা শেখে কিন্তু সেটা আরো বড় হয়ে। আসলে এদের ত আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ঐ দ্বিতীয় ভাষার উপর নির্ভর করে জীবনের লড়াই জিততে লাগে না। উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের জন্য পরিস্থিতি বড়ই জটীল।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বাচ্চাকাল থেকে ইংরেজী ভাষা শেখাবার জন্য যে বাড়াবাড়িটা করা হয় সেটা একাধারে হাস্যকর এবং অপ্রয়োজনীয়। ইংরেজি পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ একটা ভাষা। এটার জন্য বাংলা ভুলে যাবার মতো আত্মহত্যাপ্রবণ কাজও তৃপ্তির সাথে করে থাকে অনেক স্কুল এবং অভিভাবক। বাচ্চারা চাইলে নিজ থেকেই ভালো ইংরেজি শিখতে পারে এসএসসির পর থেকে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার কলেজের ইংরেজি শিক্ষক একবার বলেছিলেন ভাল ইংরেজি বলা/লেখার চেয়ে ভাল বাংলা বলা/লেখা কঠিন। ১৫০০-২০০০ শব্দ জানলে মানসম্মত ইংরেজি লেখা যায়; কিন্তু মানসম্মত বাংলা লিখতে চাইলে অন্ততঃ ৪০০০ শব্দ জানতে হয়।
Emran
মৎস মারিব খাইবো ঝোল,
লেখাপড়ায় গণ্ডোগোল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে অসাধারণ একটি পোস্ট।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার দুই ছেলের বড়জন পড়ে ৭ম শ্রেণীতে আর ছোটজন ৫ম শ্রেণীতে। দুজনেই ঢাকার স্বনামধন্য একটি স্কুলে পড়ে।
বুঝতেই পারছেন যে, আমার বাসায় ছোটখাট একটা বিদ্যাসাগর কারখানা আছে। আমি কখনো আমার ছেলেদের পরীক্ষার ফল নিয়ে মাথা ঘামাই না।
তাদেরকে পড়ার জন্য চাপ দেইনা। আমি শুধু তাদের এটাই বলি যে, যতটুকু তারা পড়ে, যেন বুঝে পড়ে। যখন কোন পরীক্ষায় ভালো ফল দেখায়, আমি অনেক আদর করি, উপহার দেই। কিন্তু পড়তে চাপ দেইনা, কখনো না।
এখনকার বিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রদানের বাস্তবতায় এর বেশী আমার আর কিছু করার নেই।
ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী। আপনার হতাশার সাথে, 'না' এর সাথে আমি একমত।
ভালো থাকবেন।
--------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
আজকাল ঘরে ঘরে বিদ্যাসাগর কারখানা। যেন সময় বেশী নেই। হাইস্কুলের বিদ্যা প্রাইমারীতে শিখে ফেলতে হবে, কলেজ ভার্সিটির বিদ্যা হাইস্কুলে। তাড়াহুড়া তাড়াহুড়া সবখানে। কিন্তু এত তাড়াহুড়ার কারণটা ধরতে পারিনি আজ পর্যন্ত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ইশ্কুলগুলো তো ভালোই ছিল,
দিলেন ঠেলা গার্ডিয়ান,
পন্ডিত সব! ফ্যাশন করে,
আনন্দটাই বলি দান।
বৈদেশেতে শিখায় কতই,
ইশ্কুলটা আনন্দ,
আজিব পাগল গোঁয়ার হেথায়,
শিক্ষা যে তাই পাষণ্ড!
বুদ্ধি বিকাশ ধ্বংস করে,
গোলামগিরির আবর্তে।
বলতে গেলে উঠবে তেড়ে,
বুঝেন বেশি আমাত্তে?
বাহ, কী চমৎকার লিখেছেন ছড়াবাজ মশাই!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এই বাড়াবাড়ির ফল হয় ভয়াবহ। এরা না শিখতে পারে বাংলা, না ইংরেজি।
আমি মেডিকেল কলেজে পড়াই। ছাত্রদের ইংরেজির মান ভয়ঙ্কর। নিজে থেকে ইংরেজিতে শুদ্ধ বাক্য রচনা অধিকাংশের পক্ষেই অসম্ভব। সবার শখ নিয়ে একটা স্টাডি করে দেখি, বাংলার অবস্থাও ভীষণ খারাপ। ভাষা ভালো জানে না বলেই এদের এত মুখস্থ করতে হয়। উল্লেখ্য, এদের প্রায় সবাই ইংরেজিতে জি,পি,এ ৫ বা ৮০ এর বেশি মার্ক পাওয়া। ঠিকমত খাতা দেখলে এদের বড় একটা অংশ হয়তো পাশই করতে পারত না। আমার এক স্যার কিছুদিন আগে বাসায় এসে বলেছিলেন, বোর্ডের খাতা দেখার আর কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই। নাম্বার কাটলেই ডেকে যা-তা অপমান করে!
ভাষা আর গণিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অথচ এগুলোর শিক্ষাই সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ। কবীর চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ইংরেজি মাধ্যম হিসেবে নয়, দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শেখানো উচিত। অবশ্যই বাংলা শিক্ষা সূচনার ২-৩ বছর পর থেকে। এত ছোট থেকে শেখানোর কিছু নেই। বহু লোক বুড়ো বয়সে রুশ ভাষা শিখে থিসিস পর্যন্ত লিখেছেন- উদাহরণ দিয়েছেন তিনি।
জি,পি,এ পদ্ধতিটা ভালোর জন্যই হয়েছিল অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমানোর জন্য। প্রথম বছর সারাদেশে মাত্র ৭৬ টা ৫ পেয়েছিল, তারপর আমাদের সময় ২২৮টা- অর্থাৎ প্রায় স্ট্যান্ড করার সমতুল্য ছিল। তারপর চতুর্থ বিষয় যোগ করে, প্রশ্ন ফাঁস এবং পরে খাতা দেখায় মুড়ি-মুড়কির মত খয়রাতে নাম্বার বিলিয়ে সিস্টেমটাকে ধ্বংস করা হয়। শুধুমাত্র প্রশ্ন ফাঁস রোধ করলে ও খাতা দেখার স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখলে এখনো সারা দেশে ৩০০ এর বেশি জি,পি,এ ৫ পাবে না। প্রতিটা ব্যাচে ভালো ছাত্রের সংখ্যা মোটামুটি গড় মানের কাছাকাছিই থাকে।
শিশুদের ওপর বাড়তি চাপ দেবার জন্য অনেক পিতা-মাতাও দায়ি। এই তো সেদিন এক কলিগকে বলতে শুনলাম, "ইস্টার সানডের আবার কিসের ছুটি? এমনিতেই হরতাল-অব্রোধে বন্ধ ছিল, এখন আবার কীসের ছুটি?"- কী অবিবেচক মন্তব্য। আমি এর আগে বলার চেষ্টা করেছি যে, দীর্ঘ ও কার্যকর ছুটি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনেই সবচেয়ে কম।
বাচ্চাদের জীবন থেকে খেলাধূলার আনন্দ কেড়ে নেয়ার ফল হবে একটা রোবটিক জাতি।
আমার তিন বছরের একটি ছটফটে শিশুকে নিয়ে আমিও তো এসবই ভাবি -- আমরা কি অন্তত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটু আলাদা রকম পাঠশালা গড়তে পারিনা?
লেখাটি খুব ভাল লাগল।
-আনন্দময়ী মজুমদার
কেউ কী বলতে পারেন, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য পিএসসি সনদ কি অবশ্যই প্রয়োজন? (বোধ করি প্রয়োজন)। যদি প্রয়োজন না থাকে তবে আমি আমার তুপুলকে ১২-১৩ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলেই দেবোনা। সরাসরি সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি করাবো। বিদ্যাসাগর যা হওয়ার বাসায়ই হবে। ও শুধু যাবে গান, নাচ, অঙ্কন, আবৃত্তি, বাদ্য, কুংফু’র ক্লাসে (অবশ্যই যেখানে তার ভালো লাগে)। বেশী য্যানী হওয়ার দরকার নাই।
ভাবনা ভাগাভাগির জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
---অর্বাচীন
নতুন মন্তব্য করুন