আমার শহর নোংরা রাখার অধিকার আমারই! তবু মাননীয় চট্টল মেয়র....

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: রবি, ২২/০৬/২০১৪ - ৪:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৮৬৩ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির জন্মলগ্নে নগরবাসীর পয়ঃপ্রণালীতে নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য নগরীর চার কোনায় দশটি করে চল্লিশটি বাঁশের তৈরী পাবলিক টয়লেট বানানো হয়েছিল এবং ঘোষণা করা হয়েছিল নগরবাসী এসব নির্দিষ্ট স্থান বাদ দিয়ে যত্রতত্র প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারবে না। তার প্রতিবাদ আন্দোলনে একদল নগরবাসী পাবলিক টয়লেটগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিক্রিয়া হিসেবে বৃটিশদের পাল্টা অ্যাকশানে শহর থেকে অর্ধেক লোক গ্রামের দিকে চলে গিয়েছিল। কারণ শহরে থাকতে হলে মিউনিসিপ্যালিটি ট্যাক্স গুনতে হবে এবং নিয়মকানুন মানতে হবে। মানুষ এসব নিয়ম মানতে রাজি না। আমার দেশে আমি যেখানে খুশী হাগবো তুমি বলার কে?

এরপর আমরা দুবার স্বাধীন হলাম। এবং গণতন্ত্রের মালিকানাও পেয়ে গেলাম। এখন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জোরে আমরা নালা নর্দমা রাস্তা ঘাট যেখানে যা খুশী ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরিয়ে রাখতে পারি। দুদিনের বৃষ্টিতেই নগরীর অর্ধেক একতলা বাড়ি পানির নীচে তলিয়ে যায়। তাতে কী? আমরা তো স্বাধীন দেশের মানুষ? গণতান্ত্রিক অধিকার তো আমার বিশাল অর্জন। এই শহরের রাস্তায় জাল ফেলে মাছ ধরার সুযোগ পেলে তোমার বলার কী আছে?

পৃথিবীর সব দেশে নগরে বাস করতে হলে কিছু নাগরিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। কিন্তু এই দেশের নগরগুলো কখনো সে দায়িত্বকে গুরুত্ব দেবার কথা ভাবেনি। আমরা এমনকি জানি না কোন জিনিস নর্দমায় যাবে কোন জিনিস ডাস্টবিনে। রাষ্ট্রকেও এই ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করতে দেখি না।

চট্টগ্রাম নিউমার্কেটের পাশে রাস্তার মধ্যখানের আইল্যাণ্ডে ময়লা ফেলে আশপাশের লোকজন। কারণ ফুটপাতে যেখানে ডাস্টবিন আছে সেখানে ফেললে ফুটপাত দখল করে দোকান করতে পারবে না হকারসমাজ। ময়লা ফেলার চেয়ে হকার সমাজের অধিকার আগে।

নগরীর প্রথম বৃহত্তম ভাগাড় অপর্নাচরণ স্কুলের দেয়ালে। দেয়াল উপচে ময়লা আবর্জনা স্বচ্ছন্দে উঁকি মারতে পারে ক্লাস রুমে। দুর্গন্ধের কথা বলাই বাহুল্য। দুর্গন্ধের সাথে শিক্ষাগ্রহন করলে তা হজম হবে না বলে কোথাও লেখা নেই।

এই সবই আমার নাগরিক অধিকার। আমার শহর নোংরা রাখার অধিকার আমারই।

সুতরাং মাননীয় মেয়র, মনে হতে পারে আপনার জন্য দুই প্যারা সাফাই গাইলাম।

কিন্তু কথা হলো, আমরা না হয় গণতন্ত্রের অধিকার প্রয়োগ করলাম, কিন্তু আপনার নর্দমা পরিস্কারক লোকজন কি আদৌ আছে এই শহরে? নাকি তারা বিরক্ত হয়ে গ্রামে চলে গেছে? ডাস্টবিন থেকে ময়লা সরে না, নর্দমা পরিস্কার হয় না, যেখানে নর্দমা দরকার সেখানে নর্দমা নেই। গত বিশ বছরে রাস্তাঘাটের কাজ যাই হোক, কোন নতুন নর্দমা কি তৈরী হয়েছে চট্টগ্রামে? ১০ লাখ মানুষের যুগে যে নর্দমা ছিল ৭০ লাখ মানুষের যুগেও একই নর্দমায় চলবে? বর্ষাকে দোষ দেই কোন মুখে, বর্ষা তো নতুন কিছু না। বর্ষা এলে বৃষ্টি পড়ে সে তো কালিদাস যুগের আগ থেকেই। আপনারা কেন বর্ষার জলের পথে পথে বাধা তৈরী করে নগরজুড়ে বিশৃংখলা তৈরী করেছেন?

বছর বছর ধরে এসব কথা আমরা বলতেই থাকি। পরস্পর বিরোধী দোষারোপও চলতেই থাকে। তারপর বর্ষা একটু স্থির হলে সব ভুলে আগের অবস্থায় ফিরে যাই। আগামীতেও কি এভাবেই চলবে?

চালাতে চাইলে চলুক। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ। আর যদি কিছু করতে না পারেন, চট্টগ্রামকে অন্ততঃ 'শহর' নামক প্রহসনের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে 'গ্রাম' হিসেবেই বিবেচনা করুন। আমরাও নিস্তার পাই মিউনিসিপ্যালিটি ট্যাক্স নামক অকার্যকর টোল থেকে।


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

আমরা সবাই রাজা আমাদেরই আপন রাজত্বে
আমরা যা খুশি তাই করি, খেয়াল খুশিতেই চরি।
মোদের খাটো ক’রে রাখে নি কেউ কোনো সত্যে
আমরা চলব আপন মতে, হেগে দিব তাঁরি পথে,
মোরা মরব না কেউ সভ্যতার বিষম আবর্তে!
আমরা সবাই রাজা আমাদেরই আপন রাজত্বেএএএএএএএএএএএএএএ....♪♫♪

****************************************

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কস্কি মমিন! হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সেইরকম গান, কি লিখলেন এটা! মাথার ভেতরে সুরে সুরে একদল শিশু সমবেত কন্ঠে এই গান গাচ্ছে (বিশাল মুসিবত)

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এককালে নাখালপাড়ায় বাস করতাম। বেবিট্যাক্সি/সিএনজি ওয়ালাকে বলতে হত:
"- ঐযে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আছে না, ঐটা পার হয়ে যেতে হবে।
-তারপর যে ডাস্টবিন আছে ওটার ডান দিকে না বাম দিকে
- ইয়ে, মানে... কোন দিকেই না, সোজা ... "

সত্যিই এক বিশাল রাস্তাগ্রাসী ডাস্টবিন ছিল ঐ কার্যালয়ের ঠিক পাশেই (লুকাস মোড় নামে খ্যাত), আপনি চাইলেও যেটার ভেতরে ময়লা ফেলতে পারতেন না, কারণ ডাস্টবিনের কাছে পৌঁছানোর উপায়ই নেই চারপাশে ময়লা। আপনার যদি চাকতি নিক্ষেপ টাইপের খেলায় কোন পদক থেকে থাকে, তবে দূর থেকে ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করা যেত। (এখন অবশ্য অবস্থা বদলেছে বলেই দেখলাম)

চট্টগ্রাম শহরটা তো পরিষ্কার বলেই শুনতাম, এখন এসব পড়ে তো অবাকই হয়েছি বলতে হয় অ্যাঁ

শুভেচ্ছা হাসি

হিমু এর ছবি

এই সমস্যার একটা সমাধান করা যেতে পারে, কিন্তু সেটা আবার জনবলসাপেক্ষ।

যেহেতু ময়লার বড় বিনগুলো আমজনতার জায়গায় থাকে, তাই সেটার প্রতি কারো কোনো দায়বদ্ধতা নাই। যে যেভাবে পারে ময়লা করে দায়টা অন্যের ওপর চাপিয়ে কেটে পড়ে। কিন্তু যদি ময়লাগুলো নিজের বাড়ির সামনে কোনো ছোটো বিনে ফেলতে হতো, তখন লোকে ঠিকই গুছিয়ে যত্ন করে ময়লা ফেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতো। কারণ নিজের বাড়ি কেউ ময়লা করতে চায় না।

কাজেই চট্টগ্রাম শহরের নগরপালকে ময়লা সংগ্রহ করার আরো লোক লাগিয়ে বিকেন্দ্রীকৃত করতে হবে। লোকজনের বাড়ির সামনে দুই ধরনের প্লাস্টিক বিন রাখতে হবে, একটায় জৈব বর্জ্য, আরেকটায় অজৈব বর্জ্য। দুটো যেহেতু দুই ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে যায়, একেবারে উৎস থেকে বেছে পৃথক করা হলে ঝামেলা কমবে। এই বিন থেকে ময়লা নিয়ে যাবে নগর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা, সপ্তাহে দু'বার বা তিনবার।

আমরা শুধু নামেই শহরে থাকি, আমাদের পৌর কাণ্ডজ্ঞান খুব সীমিত। চকচকে স্যুটবুট পরা লোক অকাতরে ফুটপাথে আইসক্রিম খেয়ে খোসা ফেলে, সৈকতে বেড়াতে গিয়ে চিপসের প্যাকেট ফেলে আসে। আর নগরপাল বা সরকারকে গালি দেওয়ার সময় গলাটা সবচেয়ে ওপরে তোলে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের পৌর কাণ্ডজ্ঞান খুব সীমিত।

আসল কথা এটাই, যদিও প্রস্তাবগুলি চমৎকার। যে বিনের কথা বললেন, সেই বিন কি সিটি কর্পোরেশন বিনামূল্যে সাপ্লাই দেবে, নাকি মানুষের পকেটের পয়সা দিয়ে কিনতে হবে? যদি দ্বিতীয়টা হয়, তাহলে দেখা যাবে লোকে হয় একটা বিন কিনবে, নয়তো কোন বিনই কিনবে না; তারা সেই পাব্লিক ডাস্টবিনই ব্যবহার করবে। এমনকি বিন থাকলেও দেখা যাবে অধিকাংশ লোক ময়লা ফেলছে বিনের বাইরে।

দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশের কয়টা লোক জৈব বনাম অজৈব বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য বোঝে? এই পার্থক্য বুঝলে আমাদের দেশে দূষণের মাত্রা হয়ত কম হত। বাস্তবায়ন করতে গেলে দেখা যাবে মানুষ সমস্ত ময়লা ফেলছে একটা বিনে।

সরকার/প্রাতিষ্ঠানিক আইনের ব্যাপারে আমাদের দেশের লোকদের মধ্যে একধরণের সিনিক্যাল মনোভাব কাজ করে; আমরা মনে করি আইনের মাহাত্য হল তা' অমান্য করার মধ্যে (অন্ততঃ আমাদের দেশে; এই লোকগুলিই যখন প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে যায়, তখন তারা ঠিকই আইন মেনে চলে)।

Emran

হিমু এর ছবি

বিনগুলো নগর কর্তৃপক্ষকেই সরবরাহ করতে হবে। ছোটোখাটো বিন নয়, বড়সড় বিন, যাতে পুরো একটা ছয়তলা অ্যাপার্টমেন্টের সকলের বর্জ্য দু'দিন বা তিনদিনের জন্যে ধারণ করতে পারে। বিন যদি বাড়ির ভেতরে থাকে, তাহলে এক বাড়ির ময়লা আর অন্য বাড়িতে গিয়ে ঢুকবে না। প্রয়োজনে তালা-চাবির ব্যবস্থাও করা যেতে পারে, কঠিন কিছু নয়। বিনের গায়ে বাড়ির ঠিকানা আর নগর কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ করা ক্রমিক নং হট-প্রেস করে দেওয়া যেতে পারে।

জৈব বর্জ্য আর অজৈব বর্জ্যের পার্থক্য যদি লোকে না বোঝে, তাহলে নগর কর্তৃপক্ষকে সেটা বোঝানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নগর কর্তৃপক্ষ যদি একটা সুলিখিত দুই পাতা বা চার পাতার লেকচার তৈরি করে দেন, স্কুলের ক্লাসে শিক্ষকরা তা ছাত্রছাত্রীদের বোঝাতে পারবেন, এবং এই ব্যাপারটা তাদের আশেপাশের লোককে বোঝানোর জন্যে একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারবেন। ছাত্রছাত্রীরাই তাদের পরিবারের লোক, প্রতিবেশী আর আত্মীয় স্বজন, এই তিন ক্যাটেগোরির মানুষকে গিয়ে এটা বুঝিয়ে বলে তাদের হোমওয়ার্ক জমা দেবে স্কুলে।

এই কাজে খরচ যা হবে, তা এই লোক দেখানো খোঁড়াখুঁড়ির খরচের চেয়ে অনেক কম হবে বলে আমার ধারণা। আর এসব করলে দীর্ঘমেয়াদী উপকার হবে।

দীনহিন এর ছবি

জৈব বর্জ্য আর অজৈব বর্জ্য অপসারণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে যে প্রকল্প চালু হয়েছে, সমগ্র দেশ তা অনুসরণ করছে না কেন হিমু ভাই?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

হিমু এর ছবি

সমগ্র দেশকে এই প্রশ্ন করে দেখতে পারেন।

দীনহিন এর ছবি

আপনি ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে বলার কথা বলেছেন; অথচ আমাদের এলাকায় সবচেয়ে বড় ডাস্টবিন-দুটির একটি স্কুলের সামনে, আরেকটি কলেজের সামনে, ডাস্টবিন-দুটির সামনে দিয়ে দিব্যি চলাচল করেন স্কুল-কলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, একটুও নাক না বন্ধ করে!! আর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আস্কারায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে ডাস্টবিনদুটি! দিন দিন খালি বাড়ছেই- দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চকচকে স্যুটবুট পরা লোক অকাতরে ফুটপাথে আইসক্রিম খেয়ে খোসা ফেলে, সৈকতে বেড়াতে গিয়ে চিপসের প্যাকেট ফেলে আসে।

১০০ ভাগ সত্য! আমি আরো কয়েকটা পয়েন্ট যোগ করি।

এই একই ভদ্রলোকেরা আবার বিদেশে গিয়ে নিয়মকানুন ঠিকঠাক মেনে চলে। এর মানে হলো মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করা হলে এরা মানে। বাংলাদেশে আইন না মানলে কোন সাজা পেতে হয় না। সাজার ব্যবস্থা অতি জরুরী।

মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করতে হলে অবকাঠামোগুলোও ঠিক রাখতে হবে। যথাযথ সাইজের ডাস্টবিন বসাতে হবে। আবর্জনা ডাস্টবিনের ভেতরে ফেলতে হবে। অধিকাংশ ডাস্টবিন এলাকায় দেখা যায় বাইরেই ময়লায় সয়লাব, ভেতরে খালি।

জৈব অজৈব আবর্জনার ব্যাপারটা শেখানো দরকার। কিন্তু তার আগে শিখতে হবে কোন ময়লা কোথায় যাবে। ডাস্টবিনের ময়লা এবং নর্দমার ময়লা। দুটোর দুই কাজ। একটা যেন অন্যটাকে বাধা না দেয়। নর্দমায় ময়লা ফেলা একদম নিষিদ্ধ করতে হবে। নর্দমা শুধু তরল বর্জ্য নিষ্কাষণের জন্য। এই শিক্ষাটা মাইক লাগিয়ে, টিভিতে বিজ্ঞাপন করে জনগনকে শেখাতে হবে। শুধু আইন করলে হবে না।

যেসব মিউনিসিপ্যাল আইন থাকবে তা প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করতে হবে। প্রত্যেক ওয়ার্ড কমিশনারকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। দরকার হলে আবর্জনার জন্য মাসে আরো পাঁচ টাকা বেশী কর দেবো, তবু জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হতে চাই না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

বুদ্ধিটা কার্যকরি। আমি যেখানে থাকি সেখানে ময়লা ফেলার এটাই নিয়ম। লন্ডনে যখন ছিলাম তখন দেখেছি যে কাউন্সিল থেকে রিসাইকেল করার জন্য আলাদা ব্যাগ দেয়া হত প্রতিটা বাসায় নিয়মিত। আমি যতদূর শুনেছি আজিমপুর সরকারী কলোনীতে প্রতিটা বাসার জন্য এরকম দুটা করে বিন এর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। একটাতে ময়লা আর এক্টাতে রিসাইকেল করার মত জিনিস ফেলা হবে, এবং নিয়মিত ময়লার গাড়ি এসে সেগুলো নিয়ে যাবে। কিন্তু আমার মায়ের কাছে শুনলাম, কলোনীর লোকজন সেই বিনগুলো নিয়ে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে আর আগের মতই জানালা দিয়ে বাড়ির উঠোনে, বাড়ির পিছনে ময়লা ফেলে ভাগাড় বানিয়ে রাখে। এবং এরা সবাই প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা। আমাদের নিজেদের মনের ভিতরটা যদিন ভাগাড় হয়ে থাকবে ততদিন এইসব চলতেই থাকবে। এইসব বন্ধ করার জন্য প্রথমে দরকার কঠিন এবং অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থা করা। বড় অংকের জরিমানা এবং প্রকাশ্যে এমন শাস্তি যাতে ভাল মত অপমান হয়। একমাত্র তাহলেই এসব নোংরামী বন্ধ হওয়া সম্ভব। আমরা বাঙ্গালীরা সোজা আংগুলে ঘী ওঠার মানুষ না।

এক লহমা এর ছবি

চলুক
উন্নত দেশ গড়ার অনেকগুলো প্রাথমিক শর্তই দেশের মানুষ আর দেশের পরিচালকদের সাধারণ বুদ্ধি আর সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে। আশা করি আপনার এই প্রতিবেদন সাধারণ চট্টগ্রাম নাগরিকদের এবং মাননীয় মেয়র আর তাঁর পারিষদদের নজরে আসবে। আশা করি তখন তাঁরা সচেতন হবেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা (উপরে হিমুর মন্তব্য দ্রষ্টব্য) নেবেন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

তাদের অবশ্য এসব পড়ার সময় হবে মনে হয় না। তবু অরণ্যে রোদন গেয়ে যাওয়া আর কি ইয়ে, মানে...

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

যে কয়েক বছর চট্রগ্রাম ছিলাম দেখেছি একঘন্টার বৃষ্টিতে আগ্রাবাদ, চকবাজার, হালিশহরের রাস্তায় এক হাঁটু পানি। বছর ঘুরে আরেক বছর এসেছে কিন্তু এই ঘটনার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। মেয়র সাহেবদের মাথায় টুপি পরা সাচ্চা মুসলমান সেজে আর মুখভর্তি অমায়িক হাসি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। তাদেরকে ভন্ডামিগুলো ছেড়ে সঠিক পদক্ষেপগুলো নিতে হবে (নর্দমা গুলো পরিষ্কার রাখা, নতুন নর্দমা খনন করা প্রভৃতি)।

মাসুদ সজীব

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনি কয়েক বছর আগে যেখানে হাঁটু পানি দেখেছেন সেখানে এখন কোমর পানি। প্রবৃদ্ধির হার দেখে চমকে উঠতে হয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

পানির প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই চট্টগ্রাম হবে ভেনিস!!!

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

যাহ, ভেনিস বলে লজ্জা দিয়েন না। ভেনিস হতে হলে ঢাকা শহরই যথোপযুক্ত হবে। খাইছে

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের ভেনিস নগরী!!!!!!! হো হো হো -ত্রিশিল

নীড় সন্ধানী এর ছবি

শয়তানী হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

নগরে আমরা সবাই বাস করি, কিন্তু এখানে আমরা থাকতে ভালোবাসি না আসলে। তাই এর প্রতি আমরা কখনো দায়িত্ব বোধ করি না মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীড় সন্ধানী এর ছবি

নগরে বাস করিলেই নাগরিক হওয়া যায় না মন খারাপ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আয়নামতি এর ছবি

চট্টগ্রাম আবার শহর হলু কবে:p
জানেন না বুঝি, কাজে নয় নামেই পরিচয় দেঁতো হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কথা সত্য। তাই তো বলেছি - চাহিনা নগর, ফিরিয়ে দাও আমার গ্রাম চাল্লু

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

শহরবাসী জনগণকে আগে নাগরিক করে তুলতে হবে, কিন্তু কে করবে সে কাজ? আগে গাঁয়ের লোকেরা যত্রতত্র হাগা মুতা করতো, সেই নিরিখে এখন গাঁয়ের লোকেরা সভ্য হয়েছে, শহরের লোকেরা হয়েছে গ্রাম্য। তবে ময়লা ব্যবস্থাপনায় ঢাকা কিছুটা জাতে উঠেছে পনের বিশ বছর আগের তুলনায়, এখানে পয়সার বিনিময়ে লোকেরা ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়, গৃহবাসী নাগরিকেরা মোটামুটি এ ব্যবস্থাটা মেনে নিয়েছে। এই ব্যবস্থাটা চট্টগ্রামে প্রবর্তনে সমস্যা কোথায়? প্রয়োজন হলে পাড়া মহল্লার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইজারার মাধ্যমে প্রদান করা যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে ইজারা যেহেতু এলাকার মস্তানদের অধিকারে যাবে, যত্র তত্র ময়লা ফেলার নৈরাজ্য তারাই রুখে দেবে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

পয়সার বিনিময়ে লোকেরা ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়, গৃহবাসী নাগরিকেরা মোটামুটি এ ব্যবস্থাটা মেনে নিয়েছে। এই ব্যবস্থাটা চট্টগ্রামে প্রবর্তনে সমস্যা কোথায়?

এই নিয়ম চট্টগ্রামেও আছে অভিজাত পাড়াগুলোয়। কিন্তু ৯৫% এলাকায় ময়লা আবর্জনার উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নাই। বিশাল বিশাল দালান উঠছে কিন্তু নর্দমা ঠিক আছে কিনা তার খোঁজ নেই। কাগজে কলমে মানচিত্রে যা আছে বাস্তবে তার দেখা নাই। আম জনতার কথা বাদ দিলেও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। আগ্রাবাদে একটা পুলিশ লাইন আছে বিশাল জায়গা নিয়ে। তারা নিজেদের এলাকা এমনভাবে ঘেরাও করেছে নর্দমার পানি যাবার পথ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। পাশে একটা সংযোগ সড়ক ছিল, সেই সড়কের ৮০% পুলিশ বিভাগ দখল নিয়ে রাস্তাটাকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে। সরকারী বিভাগের যদি এই দশা হয় পাবলিককে আর নিয়ম মানতে বলবে কে? অনিয়মের গডফাদারদের রাজত্ব শহরে।

আমি চট্টগ্রাম নিয়ে লিখলেও প্রায় একই সমস্যা রাজধানীতেও আছে। যানজট জলজট সবকিছুতেই মানুষের গণতান্ত্রিক গোয়ার্তুমির অবদানই বেশী। নিয়মের বাইরে চলাকে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় অনেক ক্ষেত্রেই।

কিন্তু এরকম তো চিরকাল চলতে পারে না। আমাদের সভ্য হবার কথা ভাবতে হবে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। আমাদের জেনারেশান না পারুক, পরবর্তী জেনারেশান যেন সুস্থ নাগরিকবোধ নিয়ে জন্মায় সেই পথে যেতে হবে। উচুতলার মাননীয়দের কাছ থেকে আমরা সেই নির্দেশনা চাই।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম জাঝা!

-আরাফ করমি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।