দুদিন আগেও পৃথিবীর সুখী মানুষদের একজন ছিলি তুই। প্রিয় দুই সন্তানকে স্কুলে নামিয়ে নটার অফিসে কখনো কখনো সাড়ে নটায় পৌঁছে গেছিস কোন কোনদিন। দেরীতে বিয়ে করেও দুশ্চিন্তায় ভুগিসনি সন্তান বড়ো হতে হতে তুই বুড়িয়ে যাবি। আড্ডায় তোর উচ্ছ্বাস আর উচ্চকন্ঠ দেখে বোঝা যেতো না বয়সটা ৪৫ নাকি ২০। টাকাকড়ির কিছু অংশ যে ভবিষ্যতে সঞ্চয়ের জন্যও রাখতে হয়, হোটেলে বিল দেবার সময় সেটা কখনো মনে রাখিস নি। চা সিগ্রেট নাস্তা লাঞ্চ ডিনার যাই হোক, তুই থাকলে আর কেউ পকেটে হাত দিতে পারতো না। সবার পকেটের টাকা পকেটেই থেকে যেতো।
আটঘন্টা অফিসের পর আরো আটঘন্টা কাটতো মানুষের পেছনে ঘুরে ঘুরে। তারা হয় অফিসের কলিগ, নয় কোন আত্মীয়, অথবা এলাকার কোন দুস্থ মানুষ। কারো না কারো সমস্যায় প্রতিদিন আছিস তুই। যখনই ফোন করতাম, শুনতে হতো ওকে হাসপাতালে দিয়ে আসলাম কিংবা ওকে ডাক্তার দেখিয়ে আনলাম অথবা কন্যাদায়গ্রস্থ অমুকের মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করলাম, তমুকের ঘরে রান্না হয় নাই, দুটো বিরানীর প্যাকেট দিয়ে এলাম। এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য অকাজে ব্যস্ত তোর সময়।
মাঝে মাঝে আমি/আমরা বিরক্ত হতাম। জীবনে কি কোনদিন এরকম কিছু শুনবো না, দোস্ত বাসায় শুয়ে শুয়ে মুভি দেখছি অথবা পতেঙ্গায় বেহুদা হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছি? আসলেই ওরকম সময়গুলো খুব দুর্লভ ছিল তোর। তাই বলে পরিবারকে অবহেলা করেছিস সেই কথা ঘুনাক্ষরেও বলতে পারবে না কেউ। ঘরে আরো পাঁচজন থাকতেও অসুস্থ বাবাকে রাত দুটোয় উঠে বাথরুম করিয়ে পরিষ্কার করার কাজ খুব বেশী মানুষ করে না। বন্ধুদের চোখে তোর দোষ খুঁজে পাওয়া ভার থাকলেও অতিরিক্ত পান দোষ কখনো কখনো পীড়া দিয়েছে। এত খাস নে, পেট বেড়ে গেছে, কোনদিন না জানি স্ট্রোক করবি। যদিও সেই দোষে নিজের বাদে আর কারো ক্ষতি হয়নি।
সেই তোকে আমার এখন ভালো লাগছে না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, এত অসহ্য বোকা কেন তুই? কেন এত সহজে বিশ্বাস করিস? কেন বুঝতে পারিসনি তোর জন্য এমন কঠিন ফাঁদ পাতা ছিল তোর সহজ টেবিলেই। যারা ফাঁদ পেতেছে তাদের কেউ কেউ একদিন তোর উপকারের স্বাদ গ্রহন করেছিল। অজানা প্রতিশোধ গ্রহনের আনন্দে আজ তারা হেসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাইরে। আর তুই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। জীবনের প্রথম ঈদটা কাটবে গারদের ওপাশে। তোর দুটো সন্তান এবার বাবাহীন ঈদ পালন করবে। আমি তোর বাসায় গিয়ে শান্ত্বনা দেবার সাহস পাইনি বলে এখানে দুকলম লিখে শান্ত্বনা দিচ্ছি নিজেকেই।
---------------------------------------------------------------------------------
লেখা শেষ করেই মনে পড়লো, থানা হাজতে যখন তোকে দেখতে যাই তখন ভেবেছি তোর ভয়ার্ত মুখটা দেখবো এবার। ভয় পেলে তোর চেহারা কেমন হয় আগে দেখিনি। তুই সবাইকে অভয় দিতি, এবার কেমন হবে তোর ভয়? কিন্তু না, ভয় নেই তোর চোখে। সেই পুরোনো হাসি তোর মুখে।
কথা শেষে ফিরে আসার সময় বললি, "দুটো বিস্কিটের প্যাকেট কিনে দিতে পারিস?"
বললাম, "খিদে পেয়েছে তোর? আরো কিছু আনি?"
তুই তখন বললি, "না না আমার খিদে নেই। ওই যে ওরা, দুপুর থেকে না খেয়ে আছে, খুনের আসামী, রিমাণ্ডের ডাকে এসেছে, একটু পরেই ওদের কঠিন মার খেতে হবে নাকি, তার আগে আমি ওদের কিছু খাওয়াতে চাই।"
এমন অদ্ভুত কেন তুই?
মন্তব্য
এমন অদ্ভুত কেন তুই? -- এই লাইনটা নিজেই একটা একরত্তি গল্প!
এরকম সামান্য কিছু মানুষ আছে বলেই এ জাতির নাম মানুষ জাতি, নইলে শুধু হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স হয়েই থাকতে হতো।
বন্ধু হওয়া সহজ নয় নীড়ুদা।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
"কেন বুঝতে পারিসনি তোর জন্য এমন কঠিন ফাঁদ পাতা ছিল তোর সহজ টেবিলেই।"
লেখালেখির কারণে গারদবাস হল কি?
"এমন অদ্ভুত কেন তুই?"
সেই ত!!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ভালো থাকুক আপনার বন্ধুটি।
শরীরের ভেতর দিয়ে হিমশীতল এক স্রোত বয়ে গেল । বন্ধু আমার মন ভালো নেই তোমার কি মন ভালো?
ভালো থাকিস বন্ধু।
ভালো থাকুন নীড় সন্ধানী।
অনেক শুভকামনা।
------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
আপনি কত গল্প লেখেন, এটাও গল্প হত- কী ক্ষতি ছিল তাতে!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
.
ফিরে আসুক শীঘ্রই ”মানুষের বন্ধুটি”।
মাসুদ সজীব
[এক লহমার প্রশ্নটা আমারও]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন