আমরা এখনো কবজি ডুবিয়ে মাছ মাংস খাই। খিচুড়ি, বিরিয়ানী, তেহারি- নেহারি, চটপটি- ফুচকা, তেলেভাজা চপ, তন্দুরি সালাদ সব খাই। সেমাই দধি আইসক্রিম মিষ্টান্ন কিছুই বাকী নাই। বেড়াতে যাবার সময় আমরা এখনো সুগন্ধী মাখি, জুতো পালিশ করি, জামা ইস্তিরি করি। গায়ে সাবান, মুখে ফেসওয়াশ, চুলে তেল শ্যাম্পু কণ্ডিশনার দেই। অফিস করি, বেতন তুলি, মানিব্যাগের টাকা ফুরোলে বন্ধুর কাছ থেকে ধার করি। সবই আগের মতো আছে শুধু একটি বাড়তি জিনিস ছাড়া। আমরা এখন ভয় করি। অনেক সাবধানে থাকি। লিখি টিখি না। যা খুশী তাই লিখতাম একসময়। এখন লিখলেই বিপদ। লিখলেই খাড়া। কারো বাড়া ভাতে ছাই দেইনি তবু আমরা এখন বড় মুশকিলে আছি। যারা লিখি টিখি, তারা এখন বলি একসময় 'লিখতাম'। এখন লিখি না।
পড়াশোনা আত্মার ফিল্টারের কাজ করে। আত্মশুদ্ধির জন্য কিছু কিছু মর্মস্পর্শী বই খুব কার্যকরী। প্রতিদিন যেসব শাব্দিক আবর্জনা আমাদের সত্ত্বাকে দুষিত করে, একটা ভালো বই কিংবা মর্মস্পর্শী গল্প তাকে কিছুটা হলেও দুষনমুক্ত করতে পারে। শুধু কি বই? একটি ভালো সিনেমা অথবা গানও কি সেই ভূমিকা রাখে না? নিশ্চয়ই রাখে। কিন্তু সব বই, সব গান নয়, সব সিনেমা পরিশোধনের ক্ষমতা রাখে না। যেসব সৃষ্টিকর্ম এই পরিশোধনের কাজটি করতে সক্ষম কেবল তাকেই বলা যায় শিল্পোত্তীর্ণ সৃষ্টি। আমরা একটা দুঃসময় পার করছি অথবা একটা দুঃসময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এই সময়ে আত্মার পরিশুদ্ধতার নামে পালিয়ে বাঁচার একটা রাস্তা হিসেবে শিল্পোত্তীর্ণ বইপত্র গান সিনেমায় ডুবে থাকা নিশ্চয়ই দোষের বলতে পারি না।
কলম চলছে না বলে জীবন থেমে আছে?
-না।
দেবেশ রায় অনেকদিন আগে তাঁর 'উচ্ছিন্ন উচ্চারণ' বইতে লিখেছিলেন -
মানুষের ভালোবাসার শক্তি মৃত্যুকে পরাজিত করার শক্তি হারিয়েছে। কারণ, মানুষ নিজের জ্ঞানকে হত্যা, আরো হত্যা ও আরো হত্যার কাজে ব্যবহার করেছে। মানুষ যখন জ্ঞানের শক্তি নিজেই আয়ত্ত করেছিল, তখনই সে তার নিজের উপর এক নিষেধও জারি করেছিল। এই আহরিত ও আবিষ্কৃত জ্ঞান যেন কখনোই হত্যার ভিত্তি হয়ে না উঠে। তারপর, মানুষ নিজেই নিজের সেই নিষেধাজ্ঞা অস্বীকার করেছে। যে মানুষ নিজেই মৃত্যুর এক প্রধান কারণ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে, সে মানুষ মৃত্যুকে পরাজিত করার শান্তি, শক্তি ও নিশ্চয়তা সংগ্রহ করবে কোথা থেকে?
ব্যাস!
মন্তব্য
মৃত্যুকে পরাজিত করবার মানুষ নেই, সত্য। মৃত্যুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবার লোক মনে হয় থাকবেই সব সময়। জীবন থেমে থাকেনা, লেখাও না। উচ্ছিন্ন লেখালেখিই হয়তো আবার তীক্ষ্ণতা নিয়ে ঝলসে উঠবে। আশা হারাইনা। কয়েকটি কলম এখনও চলছে বলেই আশা হারাইনি। লেখার আগুন জ্বালিয়ে রাখুন।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
"যারা লিখি টিখি, তারা এখন বলি একসময় 'লিখতাম'। এখন লিখি না।"
-বিষণ্ণ একটা সময় পার করছি কেবল
নতুন মন্তব্য করুন