প্রায় আদিম যুগের কথা। ঠেঙ্গামারা গ্রামের লোকজন তখন মাত্র মোটা ধুতির উপর পিরান পরতে শিখেছে। তার আগে পুরুষকুলের সবাই উদলা গায়ে থাকতো। শীতকালে সেটা কষ্টকর হলেও গরমে আরাম ছিল। শীতকালে বয়স্কদের শিয়রে একটা করে 'আইল্লা' দেয়া হতো। 'আইল্লা' হলো জ্বলন্ত কয়লাপূর্ন পোড়ামাটির ভান্ড, যাকে মোবাইল ফায়ারপ্লেসও বলা যায়। এর সুবিধা হলো যেখানে খুশী সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়। এমনকি সাবধানে কাঁথার ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়া যায় শীতক
শতবর্ষ পুরোনো অব্যবহৃত দীঘি। ঘন আঁশটে গন্ধী জলজ আগাছার ফাঁকে ফাঁকে শত শত শাপলা ফুটে থাকে এখনো। পরিত্যক্ত দীঘিতে কেউ আসে না জল নিতে বা গা ধুতে। দীঘির পাড় জুড়ে কবরস্থান। হাজার হাজার মৃত মানুষের হাড় ফসফরাস সরবরাহ করছে মাটিতে। শাপলা তুলতে প্রতিদিন দীঘিতে নামে দ্বাদশবর্ষীয় মুকুল।
রোজার শুরুতে গরমের ভয়ে অস্থির ছিলাম। কিন্তু আগস্ট মাসে শ্রাবণের যে অংশটুকু ছিল সেটা তুমুল বারিপাতে কানায় কানায় পুষিয়ে দিল জুলাইয়ের তালু-পোড়া গরমের যন্ত্রণা। চট্টগ্রামে স্বস্তির বাতাস। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে উপভোগ্য বৃষ্টির সাথে বাড়তে থাকে রাস্তার ফুটোর সাইজ। এক সপ্তাহ যাবার পর দেখা গেল দানবীয় কন্টেইনার ট্রেলারের বিশ চাকার ধাক্কায় বিশ্বকাপ উপলক্ষে শহরজুড়ে যেনতেন লেপটানো পিচ-মেকআপ উঠে গিয়ে নগ্ন গর
১.
একজন অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। চট্টগ্রামের মেডিক্যাল সেন্টার। রোগীর জ্বর বেশী, গলায় কফ জমে গেছে, গায়ে লাল র্যাশ উঠে গেছে। ক্লিনিকে নেবার পর তাকে সরাসরি HDU নামক অতি যত্নশীল একটা চেম্বারে ঢুকিয়ে দরোজা বন্ধ করে দিল। ওখানে কারো ঢোকা নিষেধ। একদিন পর রোগ আরো বেড়ে যায়। এরপর একের পর এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসে, বোর্ড বসে, নতুন ওষুধ দেয়, তিনদিন এই অবস্থা চলার পর রোগীর শেষ নিঃশ্বাসটা যখন বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে তখন রোগীকে একটা আইসিইউ এম্বুলেন্সে করে সোজা ঢাকার একটা বড় হাসপাতালে নেয়া হয় রাতের মধ্যে। প্রায় শেষ অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া রোগী জীবন ফিরে পায় আবার।
কোথাও ভাত নেই। সাদা কালো লাল হলুদ কোন রকমের চাল বাজারে নেই। মানুষ রাস্তায় রাস্তায় হন্যে হয়ে ঘুরছে একমুঠো ভাতের জন্য। কেউ পকেটে টাকা নিয়ে, কেউ হাতে ভিক্ষার থালা নিয়ে। ধনী-দরিদ্র-ফকির-মিসকিন সব এক হয়ে গেছে, কেউ ভাত খেতে পারছে না। চালের আড়ত থেকে উধাও হয়ে গেছে চালের বস্তাগুলো। চাল বণিক আড়ত বন্ধ করে বাড়ি চলে গেছে।
অনেকদিন পর রোদ উঠলো আগামী দুকিস্তির চারদিন হরতালের সমর্থনে।
রিকশাওয়ালারা আগামী চারদিন হরতালে ভালোই কামাই করবে। বায়ুশোধনের পাশাপাশি হরতালের আরেকটা উপকার।
তবে আবুল হোসেনের কেবল একটু সমস্যা আছে। তাকে সুদূর কর্মক্ষেত্রে যেতেই হয়। অফিসে যেতে ১০ টাকা বাসভাড়ার বদলে তাকে রিকশাভাড়া গুনতে হবে প্রতি যাত্রায় ১৫০ টাকা করে।
বিকেলটা ঘাপটি মেরে বসেছিল মেঘের আড়ালে। দুপুর গড়িয়ে দিনটা তাই সরাসরি সন্ধ্যার কবলে। আষাঢ় বিকেলে মেঘের অন্ধকারই সত্য। বৃষ্টির সাথে বুনো গন্ধ বাতাসে ভর করে ছুটোছুটি। এইসব দামাল চঞ্চলতা আজকাল কপালে বিরক্তির কুঞ্চিত রেখা বৃদ্ধি করে। লাঠি ঠুকে ছাতার ভারসাম্য রেখে বয়সী শরীর বর্ষা প্রণয়ে অক্ষম। শরীরটা নিরাপদ আশ্রয়ে স্বেচ্ছা-বন্দী।
কলম দিয়ে লিখিনা বহুদিন। না লিখতে লিখতে আঙুলের গিঁটে গিঁটে মরিচা ধরে গেছে। বাংলা ইংরেজী দুই প্রকার হাতের লেখাই জঘন্য হয়ে গেছে। কখনো একটা পৃষ্টা লিখতে হলেও ঘাম ধরে যায়, আমার লাইন হয়া যায় আঁকাবাকা আর লেখার চাপে ব্যাথাতুর থাকে কনিষ্ঠ আঙুল। স্বাক্ষর করা ছাড়া কলমের কোন কাজ নাই আজকাল। আঙুলগুলো কীবোর্ডের প্রতি এত বেশী নির্ভরশীল হয়ে গেছে যে, দুই আঙুল দিয়ে একটা কলম ধরে লেখার ধৈর্য একেবারে নেই।
রাতে ঘুমোবার আগে একবার ঘরের বাইরে যেতে হয়। ধূমপান প্রাণঘাতী জেনেও শ্বেত ফিল্টারের একটা তামাক শলাকা দুই ঠোঁটে চেপে রেখে একটা দিয়াশলাই কাঠির মাথা দিয়ে তার ঘরের পার্শ্বদেয়ালে আঘাত করতে হয়। সেই ছোট্ট বিষ্ফোরণের শিখা থেকেই বিশুষ্ক তামাক শলাকা যোগাড় করে নেয় প্রয়োজনীয় আগুন।