১.
লোকটা হাত ধরতেই এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলাম।
নাছোড়বান্দা লোকটা এ বাড়ির মালিক। পিছু নিয়েছে বাড়ী বদলের দিন থেকেই। এই এলাকায় আমি নতুন। পথঘাট চেনা হয়নি। সুযোগ পেয়েছে লোকটা।
কদিন আগে হলেও দু'গালে দুটো চড় বসিয়ে দেয়া যেতো। কিন্তু আইন বদলে গেছে কদিন আগে। আমার সময় আইনের প্রতিকূলে। মন বলছে ধৈর্য ধরতে। কটা দিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে।
দিনটা কেমন থম মেরে আছে। মে মাসের শেষ দিন আজ। আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে বঙ্গোপসাগরে উর্ধাকাশে অবস্থিত মেঘেদের মধ্যে ব্যাপক চিত্তচাঞ্চল্য ঘটাতে চট্টগ্রাম বন্দরে ৫ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছে। পাগলা হাওয়ায় সমুদ্র উত্তাল। জেলেদের তীরের কাছাকাছি থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অথচ শহরের বাতাস কুলুপ এঁটেছে মুখে।
কেউ কেউ চরম অপরিণামদর্শী। ভাগ্য নিয়ে কাবাডি খেলতে পারে কেউ কেউ। সদরুল বাশার ঠিক সেরকম না হলেও কাছাকাছি। কেরাণীহাট থেকে শহরমুখী কোষ্টার সার্ভিসে ওঠার সময় সদরুল বাশার তার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ভাসমান অমাবস্যাই দেখছিল। শহরে তার পরিচিত দুয়েকজন আছে ঠিকই, কিন্তু রাতে থাকার মতো কেউ ঘনিষ্ট কেউ নেই। দূর সম্পর্কের এক খালাতো ভাই আছে তার মেসে ওঠা যেতে পারে খুব দায়ে ঠেকলে। ঠেকায় সে ইতিমধ্যে পড়ে গেছে। বাবার সাথ
বোকা জনগন। জানে না তথ্য জানা মৌলিক অধিকার। সরকারকে তাই পয়সা খরচ করে SMS পাঠাতে হয় দুইদিন পরপর। অধিকার বজায় রাখতে গিয়ে আজকে গেলাম তথ্য মন্ত্রনালয়ে।
ওয়েবসাইট খুলেই প্রথমে দেখি দুই বছরের অর্জন জ্বলজ্বল করছে একটা লিংকে
চুম্বক বস্তুটা লোহার পাশাপাশি এক আদম সন্তানকেও আকর্ষণ করা শুরু করে তার শৈশবেই। আদম সন্তানটি যখন বালকাবস্থা অতিক্রম করছে, তখন তাদের বাসার চৌকির নীচে স্মতিময় রেডিওটা বিকল হয়ে পড়ে ছিল।
রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নীরবতার আগ্রাসন। বাড়াবাড়ি শীত আজ। ভাঁজ করা হাঁটু দুটো কাঁপছে লুঙ্গির আচ্ছাদনে। শীত-ভয়ের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় বগলের নীচটা ঘামছে। কোথাও একটা কুকুর কেঁদে উঠলো। রাত বারোটার ঘন্টা শোনা গেছে অনেকক্ষণ হলো। এদিকে এখন কেউ আসবে না। গলা থেকে নীল মাফলারটা খুলে কোমরে বেঁধে নিল।
ডিসেম্বরের কয় তারিখ আজ? পৌষমাস এসে গেছে প্রায়। শীতটা তাই গত কদিনের তুলনায় বিশ্রী।
যমদুতের সাথে সুসম্পর্কের কারণে শেষ মুহুর্তে বেঁচে গেল গোরখোদক ঠান্ডু মিয়া। বজ্রপাতটা ঠিক কান ঘেঁষে মাটিতে নেমে যাবার সময় কয়হাত দুরের বিশাল ইউক্যালিপটাস গাছটাকে দো-ফালা করে গেলেও টিকে গেছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাড় জিরজিরে বুড়োটা।
১.
হাইস্কুল জীবনটা ছিল মোটামুটি জঘন্য রকমের। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর ভুগোল, ইতিহাস, ধর্ম, বাংলা ব্যাকরন, ইংরেজী গ্রামার,পাটীগনিত, জ্যামিতি ইত্যাদির অত্যাচারে দম বন্ধ হয়ে আসতো সময় সময়। সিক্স থেকে এইট এই তিন বছরের যেসব স্মৃতি আছে সব জ্যৈষ্ঠের খরতপ্ত দুপুরের মতো ঝলসানো। বেত নামক লিকলিকে ভয়ংকর বস্তুটার সাথে প্রতিদিন দেখা সাক্ষাত হলে, আর বাড়ির কাজ যথাসময়ে শেষ না করলে যা হবার কথা আর কি।
নেয়ামত যখন মেট্রিক পাশ করে গ্রাম থেকে শহরে আসে তখন সে পাজামা-পাঞ্জাবীর সাথে কেডস পরে এসেছিল বলে কলোনিতে একটা হাসাহাসি হয়েছিল। নেয়ামত যে গ্রাম থেকে উঠে এসেছে সেখানে কেডসের সাথে জিন্স কিংবা পাজামার সাথে স্যান্ডেল পরতে হবে সেরকম কোন নিয়মকানুনের বালাই ছিল না।
জায়গাটা অচেনা। কিন্তু মানুষগুলো চেনা। অচেনা জায়গায় চেনা মানুষের মিশ্র সমাহার। কেন ওখানে সমবেত হয়েছে সবাই প্রশ্ন জাগেনি মনে। শহর থেকে অনেক দূরের একটা জায়গা। পাহাড়ী এলাকা। নদী কিংবা লেক আছে। আছে লঞ্চের মতো ছোট নৌযান।