শেখ মুজিব রোড ধরে গত ত্রিশ বছর আসা যাওয়া করছি কিন্তু এই দোকানটা কখনো চোখে পড়েনি।
যমুনা ভবনের পাশে একটা খালি জায়গা, তার পাশেই দোকানঘরটা। হ্যাঁ, দোকানঘরই। ঘর এবং দোকান দুটো মিলে টু-ইন-ওয়ান। শহরে এরকম দোকান দেখা যায় না। দোকানের পেছনে আবাসিক ব্যবস্থা। দোকানীর কাঁধের উপর দিয়ে উঁকি দিয়েও দেখা যায় পেছনের ঘরটিতে রয়েছে একটা চৌকি, তাতে বিছানা পাতা, চৌকির নীচে খানকতক ডেকচি, একটা স্টোভ, নানান সাইজের কিছু বৈয়াম ইত্যাদি সাংসারিক উপাদান। বোঝাই যাচ্ছে রাতের বেলা এখানে কেউ থাকে।
আমাদের সবাইকে তাজ্জব করে প্রফুল্ল আমার কানের উপর বিশাল একটা থাবড়া মেরে বসলো। আমি কখনো ভাবিনি এই জায়গায় আমাকে কখনো থাবড়া খেতে হবে। কুংফু কারাতের সকল প্রতিরক্ষা ব্যর্থ হয়ে আমি গড়িয়ে পড়লাম ৯ নম্বর মাঠের কোনায়।
হারামীটাকে আমি একটু আগেই আইসক্রিম কিনে খাওয়ালাম। আইসক্রিমের ঝোল এখনো তার ঠোঁটের কোনায় লেগে আছে। তবু সে এভাবে মারতে পারলো?
মানুষ কেন লেখে? এই ভাবনার যে উত্তরটা আমি নিজের কাছ থেকে পাই তা হলো - মানুষের চুলকায় বলে লেখে। কথা কি অশ্লীল হলো? চুলকানি কি অশ্লীল হতে পারে? যেমন চুদুরবুদুর? চুদুরবুদুর অশ্লীল নয় বলে ঘোষণা এসেছে। আমার পড়াশোনা কম, ডিকশেনারি উল্টাই না বহুদিন। তাছাড়া দিনরাত যেসব শব্দ নিয়ে কারবার তা কেউ ডিকশেনারীতে খোঁজে না। তবে বুঝি চুলকানি শব্দটা কখনো কখনো সেমি অশ্লীল। ধরেন কারো কথা শুনে আমার ইচ্ছে হলো তার পাছায় একটা গদাম লাথি দিতে, অথচ ভদ্রতার খাতিরে দিতে পারছি না, সেক্ষেত্রে বলি- "কি রে ভাই, চুলকায় নাকি?"
টিভির পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম কদিন। দৃশ্যগুলো সহ্য হবার নয়। কংক্রিটের পিলারের মাঝে কোমর পর্যন্ত আটকে থাকা এক আলতাফের আকুতিভরা বাক্য 'ভাই আমারে বাঁচান' আমাকে ঘুমোতে দেয়নি দুদিন। এত শত মানুষ মরেছে নির্মমভাবে, কিন্তু আলতাফের আটকে থাকার দৃশ্যটাই আমার চোখে আটকে গেছে। কারণ পরদিন সকালে উঠে জেনেছি আলতাফ চলে গেছে।
সুশীল হবার অন্যতম একটা সমস্যা হলো মনের ভাবটা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারা। ভদ্র সমাজে অকপটে সব কথা বলা যায় না। ধরেন কাউকে দেখে আপনার বলতে ইচ্ছে হলো, "ওই শুয়োরের বাচ্চা, খা-পো, মা-চো, পাকিচাটা দালাল ছিল"। কিন্তু সেটা চেপে আপনাকে মসৃন স্বরে বলতে হচ্ছে, "লোকটা আদতে খুব বাজে ছিল, পত্রিকায় কুৎসা রটনা করতো, পাকিস্তানের সমর্থক ছিল...." ইত্যাদি। এত মোলায়েম কথায় পোষায় বলেন?
রাবেয়া আখতারঃ
গার্মেন্টসের চাকরীটা চলে গেছে গতমাসে। জমানো টাকা প্রায় শেষ। নতুন এক জায়গায় চেষ্টা করছিল কদিন ধরে। আজকে যোগ দেবার কথা। ৩ বছরের ছোট ছেলেটাকে পাশের ঘরে রেখে বেরিয়েছিল। মাঝপথে বাসটা হঠাৎ চাকায় তীব্র আর্তনাদ করে থেমে গেল। বাসের উপর একের পর এক ইট এসে পড়তে লাগলো। যাত্রীরা আতংকিত। প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। চালক জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়েছে। বাসের সবগুলো জানালা ভেঙ্গে ফেলেছে। ইটের আঘাতে বেশ কজন আহত। পেছনের জানালা ভেদ করে এটা ইটের টুকরো তার মাথায়ও এসে পড়লো। মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। বাসের মধ্যে আগুন দেখা গেল। কোনমতে লাফ দিয়ে পড়লো বাস থেকে। ফাটা মাথা নিয়ে আধখানা জীবন নিয়ে দৌড়ে পাশের ফুটপাতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। আর কিছু মনে নেই। রাবেয়ার ফাটা কপাল জোড়া লাগতে মাস খানেক লেগেছে। আসলে জোড়া লাগেনি। স্বামী পরিবার সহায়সম্বলহীন রাবেয়ার চাকরীটা পাওয়া হয়নি। মাথার চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমানো টাকা শেষ। ছেলেটার জন্য দুধ কেনা হয়নি এই এক মাস, আর কখনো কেনা হবে কিনা জানে না সে। জমানো টাকা শেষ হয়ে কর্জের শুরু। এরপর ভিক্ষা করতে হবে, নইলে শরীর বেচতে হবে। কোনটা সহজ রাবেয়া এখনো জানে না।
পশুসমাজে শিয়ালের স্থান খুব একটা সম্মানজনক না হলেও রাত বিরাতে তাদের হুক্কাহুয়ার চিৎকার শুনলে মনে হবে এই বনে একটাই মাত্র প্রাণী -তার নাম শিয়াল। অথচ এই বনে শিয়াল ছাড়াও অগুনতি পশু আছে। হাতি, ঘোড়া, বাঘ ভাল্লুক সিংহ বানর গরু ছাগল সব রকমের পশু বাস করে শান্তিপূর্নভাবে।
জুমার খোতবায় ইমাম সাহেবকে বলতে শুনলাম, "যারা নবীকে অপমান করে ব্লগ লিখেছে তাদের কঠিন গুনাহ হবে। যারা এসব পড়বে তারা গুনাহগার হবে, যারা প্রচার করবে তারাও গুনাহগার হবে। যারা ইতিমধ্যে পড়েছেন তারা তওবা করুন, যারা পড়েননি, তারা ভুলেও পড়বেন না"।( বাস্তবতা হলো যে নাস্তিক ব্লগ হয়তো ১০০ জনও পড়েনি আগে, জামাত শিবির আমারদেশ ইনকিলাবের সৌজন্যে সেই ব্লগ পড়া হয়ে গেল কয়েক লক্ষ মানুষের। এতগুলো মুসলমানের গুনাহের দায়িত্
রাজীবকে আমি চিনতাম না, তার লেখার সাথেও আমার পরিচয় ছিল না। যতদূর জানি রাজীব এমন কোন সুপরিচিত জনপ্রিয় ব্লগারও ছিল না জীবদ্দশায়। কিন্তু রাজীবের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কারণ রাজীব শাহবাগ আন্দোলনের একজন কর্মী এবং শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম বলি। আমরা জানি না তাকে টার্গেট করার উদ্দেশ্য কি। রাজীবের চেয়ে বহুগুন বেশী জনপ্রিয় ব্লগার ছিল টার্গেট করার মতো। তাদের কাউকে না করে রাজীবকে টার্গেট করে প্রায়
দৃশ্যপট আছদগঞ্জ চট্টগ্রামঃ ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
কানে মোবাইল গুঁজে চোখ সজাগ রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এক দাড়িয়াল। এখনো কেউ আসেনি। আগে এসে বোকামী করলো কিনা আক্ষেপ করছে। আজকে আন্দরকিল্লার দিকে যাবার সাহস হচ্ছে না। পিঠের চামড়া রাখবে না মিছিল দেখলে। তাই জেলখানার পাশের রাস্তাটাকে নিরাপদ ভেবে বেছে নেয়া। ঐ তো আসছে দুজন। খানিক পার পাশের গলি থেকে আর পাঁচজন। মোটামুটি বিশ পঁচিশজন হবার পর শ্লোগান শুরু -নারায়ে তকবীর। কিন্তু গলায় আজকে জোর নেই। গতরাতে প্রেসক্লাবের জাগরণ মঞ্চ থেকে দেয়া ঘোষণাটা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। মিনিট দশেক শ্লোগান দিয়ে লালদীঘির কাছে এসে ডানে বামে তাকিয়ে মিছিলের হঠাৎ সমাপ্তি ঘোষণা করলো নেতা। তিন মিনিটের মধ্যে দলটা রাস্তা থেকে নাই হয়ে গেল।