সরকারী গৃহায়ণ - ঢাকা, সিঙ্গাপুর

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/১২/২০০৭ - ১২:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে ইত্তেফাকে প্রকাশিত রাজউকের একলক্ষ ফ্লাট তৈরী সংক্রান্ত একটি খবর দেখে ভাল লাগল আর পাশাপাশি অন্য একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।

২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক পানি সংঘের একটি সিম্পোজিয়ামে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম। সেখানে মেরিনা মোহনায় বাঁধ দিয়ে মেরিনা এবং কালাঙ্গ নদীর অংশ বিশেষকে (মেরিনা বে এবং কালাঙ্গ বে) সুপেয় পানির জলাধার হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর উপরে চমৎকার একটি প্রামান্য চিত্রের ডিভিডি দিয়েছিল যেখানে কালাঙ্গ নদীকে দূষণমুক্ত করার কাহিনী ছিল।

--------------
আজ থেকে কয়েক দশক আগে সিঙ্গাপুরের কালাঙ্গ নদীটির পানির দুইধারে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ছোট ছোট শিল্প-কারখানার বর্জ্যে দুষিত হয়ে অন্য কোন কাজে ব্যবহারোপযোগীতা হারাচ্ছিল। পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরকে আকর্ষনীয় স্থানে পরিনত করার জন্য নদীকে পরিষ্কার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। সুতরাং সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজছিল যেন শিল্প-কারখানা তথা অর্থনীতির ক্ষতি না করেই নদী পরিষ্কার রাখা যায়। সিঙ্গাপুর সরকার ১৯৭৭ সালে এ লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে যাতে ১১টি সরকারী সংস্থা ও মন্ত্রণালয় সরাসরি অংশগ্রহণ করে।

এজন্য প্রথমে সিঙ্গাপুরের সরকারী আবাসন সংস্থা দ্বীপটির পশ্চিম দিকে (জুরং) বিরাট এলাকাজুড়ে বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে। আর সেই আবাসিক এলাকার অদুরেই গড়ে তোলে পরিকল্পিত শিল্প-এলাকা। এই শিল্প এলাকায় নদীর ধারে অবস্থিত সমস্ত কারখানার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা ছাড়াও সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য শোধনাগারের জায়গা রাখা হয়েছিল। বলাই বাহুল্য যে ঐ এলাকাদ্বয়কে পরষ্পরের সাথে এবং শহরের অন্য অংশগুলোর সাথে যুক্ত করার জন্য যথেষ্ট পরিমান রাস্তাঘাট ও রেলপথ গড়ে তোলা হয়েছিল। এছাড়াও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও (শিক্ষা, বিনোদনকেন্দ্র, বিপনিকেন্দ্র ইত্যাদি) গড়ে তোলা হয়েছিল।

এরপর সরকারী কর্মকর্তাগণ নদীর ধারের স্থাপনাগুলোতে সরকারী উচ্ছেদ নোটিশসহ উচ্ছেদের শিকার যারা হচ্ছেন তাঁদের জন্য বরাদ্দকৃত নতুন আবাসন এবং শিল্পপ্লটের কাগজপত্রও দিয়ে দেন। অর্থাৎ ঘটনাটি উচ্ছেদ না হয়ে স্থানান্তরে পরিণত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ওখানকার অধিবাসিগণ এলাকা ছেড়ে সুশৃঙ্খল আবাসিক ও শিল্পএলাকায় সরে আসেন। এ সময়ে নদী তীরবর্তী এলাকার ২৬০০০ পরিবারের অধিকাংশই পুনর্বাসিত হন। তাছাড়া ২৮০০র বেশি কুটির শিল্প/ছোট ছোট বানিজ্যিক কর্মকান্ড স্থানান্তরিত হয়। প্রায় ৫০০০ ভাসমান হকারকে পুনর্বাসিত করা হয় এবং ১৯৮৬ সাল নাগাদ ভাসমান হকার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরিত্যক্ত জায়গা থেকে ২৬০ টন আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। এভাবেই পরিকল্পিত উপায়ে সিঙ্গাপুরের সরকার নদী তথা পরিবেশ সংস্কার তথা সু-নগরায়নের কাজ করে।
--------------

ঢাকা শহরের যানজট ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানকল্পে মাঝে মাঝেই অধিগ্রহণের শিকার হন কোন কোন জমির মালিক। তাঁদের ক্ষতিপূরণ বাবদ যদি অর্থ ছাড়াও সিঙ্গাপুরের মত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় তবে কি ক্ষতিগ্রস্থগণ আনন্দের সাথেই যানজট/ঘিঞ্জি পরিবেশ ছেড়ে সুপরিকল্পিত উপশহরের রেডিমেড ফ্ল্যাটে চলে যাবেন না!


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অনেক দিন পর পরিবেশ প্রকৌশলীর প্যাচাল। হাসি

শামীম এর ছবি

কার্যকর কর্মঘন্টা কমেছে ... ...

ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময়টাতে ব্লগানো গেলে প্যাচাল বাড়তো ....
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হায় হায় বলেন কী? দেশে না এখন মোবাইল ইন্টারনেটের যুগ চলছে!

শামীম এর ছবি

হুঁ ... ... ফোনে কি আর লেখা যায়।
সেরকম গাড়ীওয়ালা হলে হয়তো ড্রাইভার গাড়ী চালাতো আর নিজে গাড়ীতে বসে ল্যাপটপ গুতাগুতি করতাম মন খারাপ
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সৌরভ এর ছবি

হুমম, ভালো আছেন দেখে ভালো লাগছে।
চলুক এইসব।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনেক দিন পর! আশা করি ভাল আছেন। আপনি ভাল থাকলেই হল। জানি লেখা আসতে থাকবে তাহলে। আর আমিও কিন্তু নতুন কম্পিউটারের জন্য খাওয়ার কথা বলিনি! চোখ টিপি

শামীম এর ছবি

দেশে আসলে আওয়াজ দিয়েন... খাওয়া রেডি থাকবে দেঁতো হাসি
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুভ জন্মদিন।
অনেকদিন আগে প্রোফাইলে দেখেছিলাম - আমাদের জন্মদিন ১৯ জানুয়ারী। আজ বিমালুম ভুলে বসে আছি। আমার সচল ইনবক্সে শুভেচ্ছা ম্যাসেজ দেখে মনে পড়লো এইমাত্র। এখনো দিন পার হয়নি শামীম ভাই। জন্মদিনে অনেক অনেক শুভকামনা, ভালো থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।