সমস্যা:
গোছল বা অন্যান্য ধোয়াধুয়ির কাজে শীতকালে আমরা কখনো কখনো গরম পানি ব্যবহার করি। সাধারণত আগুনের তাপে পানি প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি গরম করে সেটার সাথে আবার কিছু ঠান্ডা পানি মিশিয়ে তারপর ব্যবহার করা হয়। এতে সহনীয় তাপমাত্রায় ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমান বেড়ে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে এমনও ঘটে যে, যেই মুহুর্তে গরম পানি আনা হয়েছে, সেই মুহুর্তে অন্য ব্যস্ততার কারণে (লম্বা টেলিফোন কল ইত্যাদি) ব্যবহার না করেই গরম পানি রেখে দেয়া হয়। তারপর কাজ করার সময় দেখা যায় পানি আর বেশি গরম নাই। তাই ঠান্ডা পানি মিশিয়ে প্রয়োজন অনুপাতে সহনীয় তাপমাত্রার যথেষ্ট পরিমান পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
সমাধান:
১. পানি এমনভাবে দ্রুত ঠান্ডা হওয়া ঠেকাতে চাইলে প্রথমেই পানির সাথে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে এটাকে ব্যবহারযোগ্য তাপমাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি তাপমাত্রার মিশ্রন বানিয়ে রাখুন। অনেকক্ষণ পরেও দেখবেন পানি তেমন তাপমাত্রা হারায়নি।
২. সম্ভব হলে গরম পানির পাত্রটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
নির্দিষ্ট সময়ে যে কোন বস্তুর তাপ হারানোর পরিমান দুটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। একটি হল তাপ বিনিময়কারী দুটি মাধ্যমের মধ্যকার তাপমাত্রার পার্থক্য। আর অপরটি হল তাপ বিনিময়কারী পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল।
তাপমাত্রার পার্থক্য কম হলে তাপ বিনিময়হার কমে যায়। তাই অতি গরম পানি যেমন দ্রুত হারে চারপাশের পরিবেশের কাছে তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়, অপেক্ষাকৃত কম গরম পানি তার চেয়ে অনেক কম হারে তাপ হারায় (বিনিময় করে)। তাই গরম পানিকে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে তাপমাত্রা কমিয়ে রাখলে সেটা থেকে কম তাপ হারাবে। তাপ হারানো আটকানো যাবে না, কিন্তু পরিমান কমিয়ে দেয়া যাবে।
ঢেকে রাখলে পানির তাপ নিয়ে গরম হওয়া বাতাস দ্রুত পাত্র (বালতি) ছেড়ে যেতে পারবে না। বরং আটকে থাকবে। ফলে গরম পানি এবং বাতাসের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাবে। তাই খোলা পৃষ্টতল দিয়ে তাপ হারানোর পরিমানও কমে যাবে। গরম বাতাস থেকে পাত্রের ঢাকনা গরম হয়ে তাপ হারানোর পরিমান সরাসরি ঠান্ডা বাতাসে তাপ হারানোর চেয়ে কম।
===============
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান: টয়লেটের গন্ধ
(অনেক আগের লেখা ... তবুও যদি কারো কাজে লাগে ... এই ভেবে আবার দিলাম।)
বেশ কিছু মানুষ আছেন যারা টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর অনেকক্ষন কেউ আর ওখানে প্রচন্ড দূর্গন্ধর কারণে ঢুকতে পারে না। বেচারারা খুবই লজ্জিত হন; মুক্তির উপায় খোজেন। এই লেখাটি তাদের কারো কারো উপকারে লাগবে।
যারা প্যানওয়ালা টয়লেট ব্যবহার করেন তাদের সবচেয়ে বেশী কাজে লাগবে এই পদ্ধতিটি:
-- কাজ শুরুর আগে প্যানটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন।
-- ময়লাটা প্যানে পড়ার সাথে সাথে পানি দিয়ে চালান করে দিলেই সমস্যা গায়েব।
-- এই কাজে গরম পানি ব্যবহার করবেন না।
মনে হতে পারে ব্যাপারটি কিছুই না, সাধারন জ্ঞান। কথাটি সত্য, কিন্তু এর পিছনে আছে কিছু বিজ্ঞান, যা জেনে রাখলে ক্ষতি নেই। এবার বিজ্ঞানটা বলি:
দূর্গন্ধ গ্যাসের খনি কোথায়?
আমাদের মলের মধ্যে প্রচুর সরলিকৃত খাদ্যবস্তু থাকে। খাদ্যবস্তু থেকে আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় বস্তু সংগ্রহ করার পরেও ওগুলো কিছু ব্যাকটেরিয়ার জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এগুলোর সাথে থাকে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া। শরীর থেকে বাইরে আসা মাত্র ব্যাকটেরিয়াগুলো মহা-সমারোহে বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্যে ওদের খাদ্য রান্না করা শুরু করে; এতে করে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে তৈরী হয় দূর্গন্ধযুক্ত সেই গ্যাসগুলো, যা আমাদের নাকে অ্যাটাক করে।
ময়লা পানিতে গেলে কিভাবে সমস্যা সমাধান হচ্ছে?
পানি একটি সার্বজনিন দ্রাবক। এতে অনেক কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থ দ্রবীভুত হয়। কাজেই ময়লাটাকে পানিতে চালান করে দিলে ওটা থেকে উৎপন্ন গ্যাসগুলো বাতাসে না মিশে গিয়ে পানিতে দ্রবীভুত হয়ে যায়। ফলে গন্ধ ছড়ায় না। এখানে আরো একটি ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার, সেটি হলো- পানিতে গ্যাসের দ্রাব্যতা তাপমাত্রা বাড়লে কমে যায়। কাজেই পরিস্কারের কাজে গরম পানি ব্যবহার করলে তার আগে আরো কিছু পানি ফেলুন প্যানে। এই পানি ওয়াটার সীলের ইউ-ট্র্যাপ বা পি-ট্র্যাপে জমে থাকা ময়লা এবং গ্যাস মিশানো পানিকে ঠেলে নিষ্কাশন পাইপে (সয়েল পাইপ) পাঠায় দেবে; ফলে গরম পানি মিশার ফলে ওয়াটার সীলের পানি থেকে দ্রবীভুত গ্যাস বাতাসে ছেড়ে দিয়ে (যেহেতু গরম পানিতে গ্যাসের দ্রাব্যতা কম) গন্ধ ছড়ানোর সম্ভাবনাও তিরোহিত হবে।এই কথাটি কমোড ব্যবহারকারিদের জন্যও বেশ কাজের। পরিষ্কারের কাজে গরম পানি ব্যবহার করার আগে একবার ছোট ফ্লাস করে নিন, নাহলে সেই গরম পানি, জমে থাকা পানিতে মিশে ওটাতে দ্রবীভুত গ্যাস বাতাসে ছেড়ে দিবে - গন্ধ হবে।
প্রথমে প্যান বা কমোড ভিজিয়ে নিলে লাভ কী?
সহজ করে বললে এটা প্যান বা কমোডের পৃষ্ঠতলকে (সারফেস) পিছলা করে দেবে, ফলে, সহজে ওতে ময়লা আটকাবে না। কারণ প্রথমে ওটা ভিজা না থাকলে, যদি ময়লা আটকে যায়, পরবর্তীতে তা উঠাতে প্রচুর পানির ধারা দিতে হয়। পিছলা হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এক্ষেত্রে সম্ভবত পৃষ্ঠটান (সারফেস টেনশন) দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। ময়লা আর প্যান বা কমোডের মধ্যকার পৃষ্ঠটান বল ময়লা আর পানির মধ্যের পৃষ্ঠটান বলের চেয়ে অনেক বেশী। ফলে পানি দিলে কমোড বা প্যানের পৃষ্ঠটান বলটা পানির উপরে কার্যকর হয়, আর ময়লা পিছলিয়ে চলে যায়।
মন্তব্য
পরীক্ষালব্ধ ফলাফল
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
পরে খুব ভালো লাগলো। দৈনন্দিন জীবনে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ব্যবহার।
উত্তম
সারফেস টেনশন নিয়ে আমি অনেকদিন ভেবেছি এবং এখনো ভাবি টয়লেট থেকে বের হবার সময়। এই বিষয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ফর্মুলায়িত জ্ঞান আপনার সাথে মিলে গেছে, আমি কিন্তু ফিজিক্সের ছাত্র নই।
বিজ্ঞানের চরিত্রটাই এমন। নিউটন সাহেব প্রমান করার আগে থেকেই বল-এর সূত্রগুলো (laws of force) প্রকৃতিতে কাজ করেছে। নিউটন কেবল সেগুলো ফর্মূলাতে ফেলেছেন।
আমাদের অভিজ্ঞতাই বিজ্ঞান।
সুখপাঠ্য লেখার জন্য ধন্যবাদ শামীমকে।
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
পানি গরম রাখার ব্যাপারটা তো দারুণ! ধন্যবাদ শামীম ভাই, সুন্দর করে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য।
চলুক
লেখাবৈচিত্র্যে সচলায়তন ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায়গিক জ্ঞানদানের জন্য আপনাকে জাঝা
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সবাইকে সুচিন্তিত মন্তব্য দিয়ে উৎসাহিত করার জন্য ধন্যবাদ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
কী অদ্ভূত, তাই না? সেই একই গরম পানি, কখনো পরম মিত্র, কখনো চরম শত্রু ...।
হাঁটুপানির জলদস্যু
শুধু গরম নয় , সব পানি-ই জীবন, আবার কখনো মরণ। লবনের বিজ্ঞাপনেই তো আছে!
এত দুঃখ হয় যখন কক্সবাজারে , বন্যায়, সুনামীতে, নৌকা বা লঞ্চডুবিতে কেউ প্রাণ হারায়।
আমাদের গৃহসহায়িকা ১২ বছরের অশিক্ষিত মেয়েটাকে নিউটনের ল অব কুলিং বোঝাতে গিয়ে দেখলাম ও আগে থেকেই জানে পানি আগেই মিশিয়ে রাখতে হয়, বেশিক্ষণ গরম রাখতে হলে। প্রশ্ন করে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদার্থবিজ্ঞানের বা প্রকৌশলের অধিকাংশ ছাত্র জানে না কিভাবে স্তেফানের সূত্র থেকে নিউটনের শীতলীকরনের সূত্র এসেছে।
ব্যাপারটা অনেকটা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের ঘটনার মত। সকলেই জানে জিনিষ নিচে পড়ে, কিন্তু কেন পড়ে সেটার ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।
(আবার অনেকে মুখস্থবিদ্যার জোরে ব্যাখ্যা দিতে পারেন কিন্তু বাস্তবে সেই জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারেন না ... )
তাই, অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান খুবই কার্যকর একটা জিনিষ। (অর্থাৎ তাত্ত্বিক জ্ঞান + প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা .... দুইটাই দরকার)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ইন্টারেস্টিং!
নতুন মন্তব্য করুন