আব্বা একবার হার্টের কেরাবেরা অবস্থায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ-এর সি.সি.ইউতে ভর্তি হলেন (এই যায় যায় অবস্থা)। তখন বিভিন্ন বড়, ছোট, পাতি ... ডাক্তার রাউন্ডে দেখতে আসতো আর বিভিন্ন মন্তব্য করতো। এই সব গুজুর গুজুর শুনে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে সুস্থতার জন্য আব্বাকে অবশ্যই হৃদপিন্ডে পেসমেকার লাগাতে হবে। খোঁজখবর নেয়াও শুরু করেছিলাম কোথায়, কিভাবে, কত খরচ, কতদিন টেকে ইত্যাদি বিষয়। খুবই সীমিত আয় ও সঞ্চয়ের লোক বিধায় আমাদের দুশ্চিন্তাও কম ছিল না। সেই সময়েই (২০০০ সালের দিকে সম্ভবত) পেসমেকারের দাম লাখ টাকায় (২ লক্ষ/ ৫ লক্ষ ...)হিসেব করতে হত যেটা যোগাড় করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব না হলেও খুবই কঠিন ছিল।
পরবর্তীতে যেই ডাক্তার সাহেবের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন, ওনার পরামর্শমত পরীক্ষা করালাম ঐখানেই (হল্টার মনিটরিং), তারপর সেই ফলাফল ওনার ক্লিনিকে দেখালাম। হাসপাতালেও ডাক্তার স্যারদের দেখা পাওয়া যায় কিন্তু ঐ সময় রোগীর দিকে কতটুকু মনযোগ দিতে পারেন সেই ব্যাপারে সন্দেহ রয়েই যায় মনে। কারণ অনেক রোগী, তার উপর ছাত্রদের গ্যাঞ্জাম সামলে ... রোগীর দিকে মনযোগ দিতে হয়। সরকারী হাসপাতালে রোগী স্থির, ডাক্তারগণ ছোটাছুটির মধ্যে থাকেন ... তাই দেখা পাওয়ার জন্য দৌড়ে খুবই দক্ষতার প্রয়োজন, যেটা রোগীদের পক্ষে সম্ভব নয়; অপরপক্ষে ক্লিনিকে ডাক্তার স্থির, রোগীরা সহজেই খুঁজে পান ওনাদের। তাই ওনার চেম্বারেই গেলাম (ল্যাব এইড)। উনি কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে ছেড়ে দিলেন ... বললেন ভাল হয়ে যাবেন। ঐটা শুনেই আব্বা অর্ধেক ভাল হয়ে গেলেন, কারণ পেসমেকারের খরচের চিন্তাটা ওনার বুকে একটা বিরাট দুশ্চিন্তার বোঝার মত হয়ে ছিল। বাকীটুকু সেরে গেল ঔষধ খেয়ে।
একই হাসপাতালের এক ডাক্তার বলল যে পেসমেকার ছাড়া এই রোগী শেষ আর আরেকজন ঐ নামই নিলেন না ... ব্যাপারটা একটু অবাক করার মত - তাই না! একটু অনুসন্ধান আর চিন্তা করে এর কারণ বুঝতে পেরেছিলাম অবশ্য: আব্বা ভর্তি হয়েছিলেন মেডিসিনের ডাক্তার প্রফেসর আব্দুজ্জাহের স্যারের অধীনে। তাই তিনি মেডিসিন দিয়ে রোগ নিরাময় করলেন। বাকী ফুসমন্তর দেয়া পাতি ডাক্তাররা বেশিরভাগই সার্জারীর ডাক্তার (ক্লিনিকের ব্যবসাও মাথায় থাকে) .. তাই সেই তরিকা বাৎলায়।
এই অধ্যায় থেকে একটা শিক্ষা পেয়েছিলাম .... : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন সমস্যা সমাধানের কয়েকটা বিকল্প ব্যবস্থা থাকে। যে শুধু একটাই জানে, সে সেটাকেই পরম সমাধান ধরে নেয়। আসলে পরম সমাধান বলে কিছু নাই। কাজেই চোখের সামনের সমাধান মনমত না হলে বিকল্পটা খুঁজে নিতে হবে। নিরাশ হলে নিজেরই ক্ষতি।
(দয়া করে কেউ আবার মাইন্ড খাইয়েন না)
মন্তব্য
জটিল দর্শন আবিষ্কার করে ফেললেন!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
(বেড়াল) এ্যাঁ ... তাই নাকি!!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
সম্ভবত এই কারণেই বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারে ভুল চিকিৎসার অন্তত একটি করে উদাহরণ পাওয়া সম্ভব। ঢাকায় একবার শুধুমাত্র রোগ নির্ণয়ের জন্যে স্ত্রীকে নিয়ে গুনে গুনে ১৪ জন ডাক্তারের কাছে যেতে হয় এবং কোনো পরীক্ষা ছাড়াই প্রথম ডাক্তার যা অনুমান করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাই সঠিক বলে নির্ণীত হয়। অল্পের জন্যে অপ্রয়োজনীয় একটি অস্ত্রোপচার এড়ানো গিয়েছিলো।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
হুমম... এ ধরণের ক্ষতিপূরণ হওয়ার নয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
নতুন মন্তব্য করুন