অনুবাদঃ কপিরাইট / মেধাস্বত্ব

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: বুধ, ২৫/০৭/২০০৭ - ৮:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কপিরাইট/মেধাস্বত্ব কী?

মেধাস্বত্ব কোন একটি বিশেষ ধারণার প্রকাশ বা তথ্য ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ কিছু অধিকারের সমষ্টি বা সেট। সবচেয়ে সাধারণ ভাবে, শাব্দিক অর্থে এটা কোন মৌলিক সৃষ্টির 'অনুলিপি তৈরীর অধিকার' বুঝায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অধিকারগুলো সীমিত সময়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কপিরাইটের চিহ্ন হল ©, এবং কিছু কিছু স্থানে বা আইনের এখতিয়ারে এটার বিকল্প হিসেবে (c) বা (C) লেখা হয়।

সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শিল্পের বিভিন্ন প্রকার কাজের একটা বিরাট পরিব্যাপ্তিতে মেধাস্বত্ব থাকতে পারে বা হওয়া সম্ভব। কবিতা, থিসিস, নাটক এবং অন্যান্য সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, কোরিওগ্রাফির কাজ (নাচ, ব্যালে ইত্যাদি), মিউজিকাল কম্পোজিশন, অডিও রেকর্ডিং, চিত্র বা পেইন্টিংস, আঁকা বা ড্রইং, স্কাল্পচার বা মূর্তি/প্রতিকৃতি বানানোর শিল্প, ফটোগ্রাফ, সফটওয়্যার, রেডিও ও টেলিভিশনের সরাসরি ও অন্যান্য সম্প্রচার, এবং কিছু কিছু এখতিয়ারে শিল্প-নকশা (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) এর অন্তর্গত।

নকশা বা শিল্প-নকশাগুলোর (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) জন্য কোন কোন এখতিয়ারে আলাদা বা যুগপৎ/অধিক্রমণকারী (ওভারল্যাপিং) আইন থাকতে পারে। মেধাস্বত্ব আইন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (ইন্টেলেকচুয়্যাল প্রোপার্টি) সংক্রান্ত একটি ব্যাপ্ত বিষয়ের অধীনে অনেকগুলি আইনের একটি।

মেধাস্বত্ব আইন শুধুমাত্র ঠিক কী উপায়ে বা কী রূপে ধারণাসমূহ (আইডিয়া) অথবা তথ্য পরিবেশিত হবে সেটা বিবেচনা করে। এটা মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত কাজের মূল ধারণা, মূলনীতি (কনসেপ্ট), সত্য (ফ্যাক্ট), ধরণ (স্টাইল) অথবা পদ্ধতিটিকে আওতাভুক্ত করে না বা করার চেষ্টা করে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিকিমাউস কার্টুন বিষয়ে যে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা আছে, এটা অননুমদিত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই কার্টুন বিতরনের অধিকার রহিত করে এবং অননুমদিত কেহ ডিজনীর সৃষ্ট মানুষসদৃশ মিকিমাউসের মত একই রকম কোন ছবির অনুলিপি বা নকল করতে পারবে না; কিন্তু এই আইন সাধারণভাবে মানুষের মত দেখতে অন্য কোন ইঁদুর আঁকতে বা সৃষ্টি করতে বাধা দেয় না - যতক্ষণ সেগুলো ডিজনীর মূল নকশা থেকে যথেষ্ট অন্যরকম থাকে এবং ওটার (মিকিমাউসের) নকল বা অনুলিপির মত না হয়। কিছু কিছু এখতিয়ারে, মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত কাজের বিদ্রুপাত্মক বা ব্যাখ্যামূলক কাজ প্রকাশেরও উপায় থাকে। ট্রেডমার্ক এবং প্যাটেন্ট-এর মত অন্যান্য আইনের ধারা পুনঃপ্রকাশ বা পুনঃউৎপাদন কিংবা ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, যেটা মেধাস্বত্ব আইন করে না ।

মেধাস্বত্ব আইনগুলোকে কোন কোন দেশে বার্ন কনভেশনের মত আন্তর্জাতিক সমঝোতার মাধ্যমে স্বীকৃত ও প্রমিতকরণ করা হয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলিতে এটা প্রয়োজন হয়।

(চলবে....)



ডিসক্লেইমার:
ইংরেজি উইকিপিডিয়া অনুসারে -- লেখাটি মূলত উইকিপিডিয়ার জন্য অনুবাদ করা হয়েছিল এবং প্রজন্ম ফোরামে ও আমার খিচুড়ী ব্লগে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু উইকিপিডিয়াতে দিতে কিছু পরিবর্ধন করতে হবে, লিংক ও ফরম্যাট ঠিক করতে হবে। আপাতত সময় নাই জন্য দেইনি। সামনে দেব। লেখাটির জন্য প্রজন্ম ফোরামের স্বপ্নচারী ভাই বিভিন্ন পরিভাষা ও বানান সংক্রান্ত সাহায্য করেছেন। ওনাকে কৃতজ্ঞতা সেজন্য।

- এস.এম৩ একবার বলেছিলো সচলায়তনেও লেখাগুলো দিতে। তাছাড়া আমার পূর্বের পোস্টে (বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা...) অনুবাদ বিষয়ে সকলেরই কৌতুহল হল কপিরাইট বিষয়ে -- আমি নিজেও ব্যাপারটা জানতাম না। তাই পড়া শুরু করলাম। আর ভাবলাম নিজেদের জন্যও এটা জানা দরকার।

- বিরক্ত হলে দয়া করে নিজগুনে ক্ষমা করে দিবেন।


মন্তব্য

সুজন চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ খুব খুশি হলাম।
আমি কিছুদিন থেকে বিষয়টা খুব ভাবছিলাম,
১টা কমিক বুক ডেভেলপ করছি --
আসলে গ্রাফিক নভেল বলা ভাল। একেবারে রাফ লেভেলে
আছে, চাচ্ছি ব্লগে শেয়ার করতে কিন্তু টেনশান হচ্ছে
কপি রাইট নিয়ে ।
সম্ভবত এটাই বাংলায় ১ম গ্রাফিক নভেল ।
এই বিষয় কিছু বললে খুব উপকার হতো।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

শামীম এর ছবি

ভয়ে ভয়ে দিয়েছিলাম। যা হোক কয়েকজন পাঠক পাওয়া গেছে। তাই ফ্রন্টপেজে জ্বালাতন না করে পরের অংশটা এখানেই দিলাম:


ইতিহাস:
বিরাটাকার পরিব্যাপ্তিতে ছাপাখানার প্রসার হওয়ার আগে পর্যন্ত মেধাস্বত্ব উদ্ভাবিত হয়নি। আঠারো শতকের শুরুর দিকে ছাপাখানাগুলোর একচেটিয়া আচরণের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমে ব্রিটেনে এরকম একটা আইনের ধারণা জন্ম নেয়। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় চার্লস বইগুলির অনৈতিক অনুলিপি তৈরীর ব্যাপারটা সম্পর্কে সচেতন হয়ে, রাজকীয় বিশেষাধিকার প্রয়োগ করে লাইসেন্স বিধিমালা ১৬২২ জারি করেন; এর ফলে লাইসেন্স প্রাপ্ত/অনুমোদিত বইগুলির একটি নিবন্ধন তালিকা প্রতিষ্ঠা করতে হয়, এবং এটার একটা অনুলিপি সমস্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে হয়, এবং প্রয়োজন অনুসারে সুপ্রতিষ্ঠিত সমস্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অনুমোদন দেয়া চালু করা হয়। 'দা স্টাচু অব অ্যান' ছিল মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত প্রথম কাজ, এবং এটা এর লেখককে নির্দিষ্ট সময়ের মেধাস্বত্ব প্রদান করেছিল, এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ের পরে মেধাস্বত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল। মেধাস্বত্ব/কপিরাইট বই এবং মানচিত্র প্রকাশের এবং অনুলিপি নিয়ন্ত্রণের একটি আইনগত বিষয় থেকে বেড়ে একটি প্রায় সকল আধুনিক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাববিস্তারকারী বিষয় হয়েছে, যার আওতাভুক্ত হয়েছে শব্দ রেকর্ডিং, ফিল্ম/চলচ্চিত্র, ছবি (ফটোগ্রাফ), সফটওয়্যার এবং স্থাপত্যের কাজ।

দি বার্ন কনভেনশন
১৮৮৬ সালের বার্ন কনভেনশন প্রথমে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মেধাস্বত্বের স্বীকৃতি দেয়। এই বার্ন কনভেনশন অনুসারে, মৌলিক কাজের মেধাস্বত্ব অর্জন করতে বা ঘোষণা করতে হবে না, কারণ সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সৃষ্টির সাথে কার্যকর হয়: বার্ন কনভেনশন গ্রহণকারী রাষ্ট্রের একজন লেখককে মেধাস্বত্বের জন্য কোন আবেদন বা নিবন্ধন করার প্রয়োজন হবে না। যখনই কাজটা সম্পন্ন হবে, অর্থাৎ লিখিত কিংবা কোন মাধ্যমে রেকর্ড করা হবে, এর স্রষ্টা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেই কাজ এবং সেখান হতে উৎপন্ন অন্যান্য কাজের সমস্ত মেধাস্বত্বের অধিকারী হবেন, যদি না সেই স্রষ্টা সুনির্দ্দিষ্ট ভাবে সেটার স্বত্ব ত্যাগ করার ঘোষণা করেন কিংবা মেধাস্বত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। বিদেশী লেখকের মেধাস্বত্বের অধিকারও বার্ন কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ স্বদেশী লেখকদের মতই সমভাবে নিশ্চিত করে।
যুক্তরাজ্য ১৮৮৭ সালে বার্ন কনভেনশনে স্বাক্ষর করে কিন্তু কপিরাইট ডিজাইন এন্ড প্যাটেন্ট বিধিমালা ১৯৮৮ অনুমোদিত হওয়ার আগের ১০০ বছর এটার বিরাট অংশের প্রয়োগ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৯ সালের আগ পর্যন্ত বার্ন কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।
বার্ন কনভেনশনের বিধিমালা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার TRIP চুক্তিতে একত্রীভূত করা হয়েছে, এবং এভাবে বার্ন কনভেনশন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

‌উইকিপিডিয়াতে পাঠকের মাপকাঠি কী? এরকম সর্বসাধারণের জন্য লেখাগুলো সাধারণত: অস্টম শ্রেণীর ছাত্রকে মাথায় রেখে লেখা হয়।
শামীমের লেখাটি বা অনুবাদ সে তুলনায় কঠিন।
এই লেখা যাক। তবে পরের লেখাগুলোয় শামীমকে মনে হয় ভাষার এই দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আরো অনেক সহজ করে লেখা দরকার। বিষয়টাই কঠিন। সুতরাং সহজ করতে অনেক কষ্ট করতে হবে নি:সন্দেহে।

বাংলাদেশের কপিরাইট আইনটায় চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। কিছু পরিভাষাও বোধহয় পাবেন। আইনের ছাত্রদের কাছে খোঁজ নিতে পারেন। ইন্টারনেটে হয়তো ইংরেজিটা পাওয়া যাবে সার্চ দিলে।
অন্যরকম একটা লেখার জন্য শামীমকে ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

শামীম এর ছবি

ভালো কথা বলছেন বস।

এইটুক করতেই জান কয়লা হয়ে গেছে। আপাতত উইকিতে আপলোড করছি। ওখানকার প্রশাসক আর সম্পাদকদের উপর ভরসা...

এইটার পরের অংশে একটা ইংরেজি শব্দ (আসলে সম্ভবত ইতালীয়) prima facie - এর বাংলা আর পাইলাম না (হয়ত ভাষান্তর করলে প্রাথমিক প্রামাণ্য দলিল বলা যায় -- কিন্তু ওতে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করি)। দেশে ফোন করলাম... ছোটভাই আইনের ছাত্র ছিল + সুপ্রীম কোর্টেও একজন এডভোকেটের অধীনে কাজ করছে কিছুদিন -- সেও পারলো না। আপাতত ঐ প্রিমা-ফেসি লিখে ছেড়ে দেব। মন খারাপ

ব্লগে দেয়ার একটা গোপন ইচ্ছা হল, নির্ঘাৎ আইনের ছাত্র বা পেশাদার কিংবা অভিজ্ঞ কারো চোখে পড়বে এবং এগিয়ে আসবে।

যাউগ্গা ... আপাতত এভাবে ছাড়ি। দেখি আইনজ্ঞ কারো সহায়তা পাই কি না.. তা না হলে নিজেকেই বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধতে হবে (আইন পড়তে হবে)।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

যাক এইরকম একটা কঠিন বিষয়ও লোকজন পড়ছে।
মন্তব্য করলে অনেকে পড়তে আগ্রহী হয়।
ভাবে দোকানে যখন ভিড় দেখা যায়, জিনিস নিশ্চয়ই ভালো বেচে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

অসাধারণ সব বিষয় নিয়ে লিখছেন ... কোনদেশে কপিরাইট কত বছর থাকে সেই তথ্যের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল ... পেটেন্টশীপ নিয়েও লিখবেন আশাকরি

আপনার ব্লগটা 'সবচেয়ে গঠনমূলক বাংলা ব্লগ'গুলোর একটিতে পরিণত হচ্ছে ...

অভিনন্দন হাসি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শামীম এর ছবি

কত কিছুই তো ইচ্ছা করে.. কিন্তু সীমাবদ্ধ ক্ষমতায় কতটুকু কুলায় দেখি...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি এর ছবি

ভাল লিখেছেন। দেশে দেশে কপিরাইট আইন এক নয়, পার্থক্যের কথা কিছু লিখলে আরো খুশী হতাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।