১. বাতাস দেখে কীভাবে?!
ছোটবেলায় দাদীবাড়ির রান্নাঘরের মাটির চুলার ধোঁয়াগুলো বোকা বোকা চোখে উপরের চাল এবং বেড়ার ফাঁক গলে বের হয়ে যেতে দেখতাম। মাঝে মাঝে ঝাপটা বাতাস এলে ধোঁয়াগুলো ওলটপালট হয়ে যেত ঠিকই ... কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার আগের মতই একটা নির্দিষ্ট পথে বের হয়ে যেত। সকালে চুলা ধরানোর সময় যখন প্রচুর ধোঁয়া হত তখন ধোঁয়াগুলো জানালা দিয়েও কিছু বের হয়ে যেত। চুলা নেভানো অবস্থাতেও বেড়া এবং চালের কালি পড়া অংশ দেখে ধোঁয়া বের হওয়ার রাস্তা বুঝা যেত।
আমরা প্রতিনিয়তই কোন চিমনি থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার গতিপথ দেখে বাতাসের গতিপথ বুঝে থাকি। কোন উঁচু ভবনে ঝড়ো বাতাসের গতিপ্রকৃতির ফলে কী হতে পারে কিংবা একটা উড়ন্ত বস্তুর উপরে বাতাসের প্রভাবে কী হতে পারে সেটা উইন্ড টানেল নামক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। সেখানেও ছোট মডেলটার দিকে বড় বড় পাখা দিয়ে বাতাস প্রবাহ করানো হয় .... বাতাসের গতিপথ দেখার জন্য ওখানেও কিছু ধোঁয়া ছাড়া হয়। পানির স্রোতের এ ধরণের পরীক্ষাতে পানিতে রঙের ধারা দেয়া হয় (dye-test)। আবার আমাদের দেহের ভেতরে রক্ত চলাচলের পথে কোথায় সমস্যা সেটা বোঝার জন্য এক্স-রে করার আগে ইনজেকশন দিয়ে নিরাপদ একরকম তেজষ্ক্রিয় পদার্থ রক্তে মিশিয়ে দেয়া হয়, এক্স-রে তে সেই পদার্থগুলোর চলাচল দেখেই রক্তের প্রবাহ এবং এ সংক্রান্ত রোগ নির্ণয় করা হয়।
ঘরে ফ্যান চলছে .... কোন এলাকায় বাতাস কোনদিকে যায় দেখতে চান? ঠিক আছে ..... যে কোন একটা অ্যারোসল স্প্রে নিয়ে আসুন। মশার থাকলে মশা মারার স্প্রে নেন আর না থাকলে এয়ার ফ্রেশনার কিংবা বডি স্প্রে-ও নিতে পারেন। ফ্যানের তলে আনুভুমিক ভাবে স্প্রে করুন .... নিঃসন্দেহে সব স্প্রে নিচের দিকে যাচ্ছে। এবার দেয়ালের দিকে স্প্রে করুন .... উপরের দিকে যাচ্ছে নাকি! কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার ঘরে বাতাসের গতিপ্রকৃতি আপনার কাছে ফকফকা হয়ে যাবে। আমি খাটের তলের মশা মারতে চাইলে ফ্যান হালকা করে ছেড়ে মেঝে বরাবর একটু স্প্রে করি, বাকী কাজ বাতাস করে .... আবার পর্দার পেছনের মশা মারতে পর্দার নিচের দেয়াল বরাবর স্প্রে করি -- কেন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!
ভেন্টিলেটর দিয়ে বাতাস যায় না আসে? --- ধোঁয়া নাই তো কি হয়েছে .... এর পাশে একটা জ্বলন্ত মোমবাতির শিখা ধরলেই সেটারও রহস্য ভেদ হয়ে যাবে।
২. আচ্ছা, .... ধোঁয়া উপরের দিকে যায় কেন?
আগে উত্তরটা না জানলেও এখন জানি ..... ঝাপটা বাতাসে কোথাও জমে থাকা কয়লার গুড়া উড়লেও সেটা ধোঁয়ার মতই দেখাবে কিন্তু সেটা উপরে যাবে না। কিন্তু রান্নাঘরের যেখানে ধোঁয়াগুলো তৈরী হয়, সেখানে আগুন আছে ..... আর তাই বাতাসটা গরম হয়ে যায়, সেই গরম বাতাস ধোঁয়ার উপাদানগুলোকে সাথে নিয়ে যায়। তাপে বাতাস গরম হয়ে আয়তনে প্রসারিত হয়। ফলে এর ঘনত্ব কমে হালকা হয়ে যায়, তাই সেগুলো উপরে উঠে যায় (একই ভাবে - পানির চেয়ে বাতাস হালকা বলে বাতাসের বুদবুদ উপরে উঠে আসে)। অর্থাৎ ধোঁয়াগুলো আসলে গরম বাতাসের গতিপথই আমাদের চোখে দৃশ্যমান করে দেয়।
৩. ঘরের ভেতরে গরম হাওয়ার ময়না-তদন্ত
বাইরে বাতাসের তেমন প্রবাহ বা চাপ না থাকলেও ঘরের ভেতরে কিন্তু বায়ু প্রবাহ হয়। আমাদের দেহের তাপে বাতাস গরম হয়, ঘরের বেশি লোক থাকলে ব্যাপারটা আরো বেশি ঘটে। রান্নাঘরে যখন চুলা জ্বলে তখন এই ব্যাপারটা সবচেয়ে প্রবল হয়। বের হওয়ার কোন রাস্তা না থাকলে এভাবে গরম বাতাস ঘরের উপরের দিকে জমা হতে থাকে। রান্না ঘরে চুলা জ্বলা অবস্থায় একজস্ট ফ্যান না চালিয়ে কিছুক্ষণ পরে হাত তুলে দিলে দেখবেন যে উপরের বাতাস গরম, কিংবা একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে উপরের শেলফ থেকে কিছু নামাতে যান .... টের পাবেন গরম কাকে বলে!
জাপানে থাকার সময় বাসায় এয়ারকন্ডিশনার ছিল না, তাই শীতকালে ঘরে তেলের হীটার চালাতাম। শোয়ার ঘরটার সব দরজা/জানালা বন্ধ করার পরও প্রায় আধাঘন্টা পর বিছানায় আরাম লাগতো। ব্যাপারটা অনেকটা কলের পানি জমে একটা বিশাল চৌবাচ্চা ভরার মত .... শুধু ব্যাপারটা হয় উল্টা দিকে - গরম বাতাস দিয়ে উপর থেকে নিচের দিকে ধীরে ধীরে পুরা ঘরটা ভরে। খাট মেঝের কাছাকাছি; তাই ছাদ থেকে গরম বাতাস জমে জমে এই পর্যন্ত আসতে সময় লাগতো। মাঝে মাঝে খাটের উপর দাঁড়ালে বোঝা যেত কতটুকু পর্যন্ত গরম হয়েছে।
আমাদের এখানেও যদি ঘরের দেয়ালের উপরের দিকে ভেন্টিলেটর না থাকে তাহলে গরম বাতাস জমতে থাকে। তারপর যখন উপর থেকে ভরতে ভরতে জানালা পর্যন্ত আসে তখন (পানি উপচিয়ে পড়ার মত) সেদিক দিয়ে বের হয়ে যায়। আর উপরের দিকে বাতাস চলাচলের রাস্তা থাকলে সেগুলো দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে ঘরে বাতাসের অভাব পূরণ করতে জানালা বা অন্য কোন খোলা জায়গা দিয়ে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করে।
ছাদ একটু উঁচু হলে গরম বাতাস আমাদের শরীরের কাছাকাছি না থেকে ছাদের গায়ে জমা হয় বলেই ঐ ঘরগুলো ঠান্ডা মনে হয়। খরচ কমানোর জন্য এখনকার বাড়িগুলোতে পুরানা দিনের বাড়িগুলোর মত ছাদ অত উঁচুতে করে না, কিন্তু এগুলোও একই রকম ঠান্ডা রাখা যায় যদি ছাদের কাছে জমে থাকা গরম বাতাস দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার উপায় থাকে।
===========
বেশি জ্বালাবো না আগামী পর্বে সমাপ্য ... ঐ পর্বের বকবকানিতে থাকবে
৪. এসি লাগবে না ... কেমনে কী?
৫. বাতাস নিয়ে এত প্যাচাল কেন?
৬. যদি আরো পড়তে চান .... (তথ্যভাণ্ডার)
মন্তব্য
শ্বশুড়ের একমাত্র মেয়ে শ্বশুড় বাড়িতে, এদিকে অফিসও বন্ধ। অফিস খুলতে এখনও ২ দিন বাকি ..... কী আর করা ... চামে একটা ব্লগ ঝেড়ে দিলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ভালৈছে শামীম ভাই। আরো ঝাড়েন
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
এসি ছাড়া থাকার কায়দাটা আগে ছাড়েন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- দুইটা কায়দা আছে।
একটা কষ্টকর আরেকটা কষ্টহীন।
কষ্টকর হইলো - তালের পাংখা। আর
কষ্টহীন হইলো - পরনের লুঙ্গি খুইলা পানিভর্তি বালতিতে গলা পর্যন্ত ডুবাইয়া বইসা থাকা।
বিফলে মূল্য ফেরত গ্যারান্টী।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
"অহরহ" পত্রিকাটা কি এখন বের হয়?
শুধু এরকম কার্যকারণ জানার লোভেই পড়তাম।
ধন্যবাদ।
না পড়ে কিভাবে পাশ করা যায় সেরকম কোন কায়দা আছে নাকি? থাকলে ব্লগে ঝেড়ে দেন, শুক্রবারের আগেই।
তদ্বির! - তবে ১০০% ক্ষেত্রে কার্যকর না।
বিপরীত লিঙ্গের শিক্ষক হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে আরেকটা পদ্ধতি কাজে লাগে ...... ।
নকল তো সবজায়গাতেই হয় .... .... তবে সেটার জন্যও সামান্য পড়তে হয়।
-- সবগুলোই আনফেয়ার মিনস্ ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
এরকম জ্বালানো মন্দ না। আগামী পর্ব তাড়াতাড়ি ঝাড়েন।
সব গরমই যখন বিষয়সংশ্লিষ্ট করে নিচ্ছেন, তাহলে মাথাগরমের বিষয়টাও একটু ভাবেন।
মাথার ভিতর গরম বাতাস ঢুকলে সেইটাকে কীভাবে নামানো যায় !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নিদ্রাকুসুম তেল!
এছাড়া খুলিটা একটু ফাটিয়ে দিলেই সব বাতাস বের হয়ে যাবে ......
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
- বাতাস দেখছিলাম একবার, তিনতলা থেকে।
পাশের দোতলার ছাদের পরে জমে থাকা অল্প বৃষ্টির পানির গুড়িগুড়ি ঢেউতে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
চিন্তায় পইড়া গেলাম।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
জার্মানিতে এখন নতুন টেকনিক অনুযায়ী হীটার বসাচ্ছে মেঝের নিচে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
মেঝের নীচে হিটার বসানো নতুন টেকনিক নাকি? আমেরিকায় তো মান্ধাতার আমলের সব বাড়িতে মেঝের নীচে হিটার। আমাদের আগের ঝরঝরা মসজিদের মেঝেতে এইরকম হিটার ছিল। কপালে যেদিন খারাবি থাকত সেদিন ওই হিটারের উপর দাঁড়ানো লাগত
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
টেকনিক পুরানো, ইমপ্লিমেন্টেশন নতুন। তবে এখন থেকে নতুন যে বাড়ি তৈরি হবে, তাতেই এভাবে হীটিং বসাতে হবে। নাহলে গার্হস্থ্য শক্তিভোগ আইন অনুযায়ী বাড়তি পয়সা গুণতে হবে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
কানাডাতে অনেক বাড়িতেই মেঝের নিচে হিটার।
- এতো টেনশন রাইখা হিটারযুক্ত লোহার জামা-কাপড়, অন্তর্বাস-বহির্বাস- এগুলা ব্যবহার শুরু করা যেতে পারে। মহা সাশ্রয়ী হবে নির্ঘাৎ!
উদাহরণঃ বিছানায় ব্যবহৃত হিটার।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠান্ডা এলাকা আর গরম এলাকার চাহিদা বিপরীত। একজায়গায় কার্যকরভাবে তাপ ধরে রাখার কৌশল দরকার, আরেক জায়গায় দরকার অতিরিক্ত শক্তি খরচ ছাড়াই তাপ হারানো।
জাপানে হিটার-কম্বল দেখেছি। বিছানাতেও বিছানো যায়, গায়েও দেয়া যায়। কম্বলের একপাশে তার ও প্লাগ আছে। লাগিয়ে দিলে কম্বল মশায় নিজেই গরম হয়ে যায়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
দারূণ লেখা...
______________________________________
চোখ যে মনের কথা বলে, চোখ মেরেছি তাই
তোমার চোখের শূল হয়েছি, এখন ক্ষমা চাই
______________________________________
লীন
নতুন মন্তব্য করুন