আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারীকে নিয়ে কয়েকদিন আগেই একটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখলাম। এ ব্যাপারে আমরা যেমন জানি, পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেনারেশনের ছেলেপেলেরা তেমন জানে না। এরকম একটা প্রতিবেদন দেখালো যেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রবীন লোকজন বললেন, তাঁদের জীবদ্দশায় এটা ঘটেছে - ভোলার প্রশ্নই উঠেনা; অপরদিকে একজন তরুণ/তরুণী বললেন যে ২১ জন মারা গিয়েছিলো (!), আরেকজন বললো যে ২১শে ফেব্রুয়ারীতে মাতৃভাষার দাবীতে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলো কিন্তু এটা তাঁদের কোন পাঠ্যবইয়ে নাই। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আজ রাতে আমার শ্বশুরবাবার কাছেএকটা ব্যাপার জেনে অবাক হলাম যে বাংলা ভাষার জন্য শুধু বাংলাদেশেই পাকিস্থানী শাসকের গুলিতে বাঙালীরা প্রাণ দেয়নি। ভাষার দাবীতে ৫২'র পরেও শাসকের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে মানুষের - সেটা ভারতে। সুতরাং শুধু পাকিস্থানীরাই নয় ভারতীয় শাসকগণও একই ভাবে ভাষাকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। ইন্টারনেট ঘাটলে অনেক তথ্যই বের হয়ে আসবে। পাকিস্থানীদের দমণনীতির পাশাপাশি ভারতীয়দের দমণনীতিও সর্বসম্মুখে প্রকাশিত থাকা উচিত। উইকিপিডিয়াতে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পেলাম না।
প্রথমবার ১৯৬১ সালের ১৯শে মে আসামের কাছারহাটের শিলচরে শুধুমাত্র অসমীয়াকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে এবং বাংলাকে স্বীকৃতির দাবীতে ১১ জন পুলিশের গুলিতে মারা যান। তাঁরা হলেন: (নামগুলোর বানান ভুল হতে পারে - সেজন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী)
১. শহীদ কমলা ভট্ট্যাচার্য (বাংলা ভাষার জন্য প্রথম মহিলা শহীদ)
২. শহীদ শচীন্দ্র পাল
৩. শহীদ বীরেন্দ্র সূত্রধর
৪. শহীদ কানাই লাল নিয়োগী
৫. শহীদ চাঁদিচরণ সূত্রধর
৬. শহীদ সত্যেন্দ্র দেব
৭. শহীদ হিতেশ বিশ্বাস
৮. শহীদ কুমুদ রঞ্জন দাস
৯. শহীদ তারানি দেবনাথ
১০. শহীদ সুনীল সরকার
১১. শহীদ সুকুমার পুরকায়স্থ
এর ফলে আসাম সরকার বাংলাকে আসামের ৩টি জেলায় স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
এরপর ১৯৮৬ সালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় অসমীয়াকে একমাত্র শিক্ষাদান মাধ্যম করতে চাইলে আবার আন্দোলন হয়। করিমগঞ্জের আরোও দুই জন এর প্রতিবাদে ২১শে জুলাই, ১৯৮৬ পুলিশের হাতে শহীদ হন। এছাড়া আহত এবং পঙ্গু হয়ে যান বেশ কিছু লোক। আসামের কাছাড়, শিলচর ও হাইলাকান্দি জেলায় অসমীয়ার পাশাপাশি বাংলাও (মূলতঃ সিলেটি) স্বীকৃত ভাষা।
এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৬ই মার্চ, আসামের করিমগঞ্জে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীদের ভাষা স্বীকৃতির দাবীতে আরোও একজন শহীদ হন। উনি হলেন সুদেষ্ণা সিংহ (বুলু) - মাতৃভাষার জন্য ২য় মহিলা শহীদ।
যতদুর জানি, আসামের বর্ণমালা এবং বাংলা বর্ণমালার অক্ষরগুলো একটি অক্ষর বাদে অভিন্ন - অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণ একটু আলাদা। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষা মিশনের সম্মানে সিয়েরা লিওনে বাংলা সহকারী রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা।
সূত্র:
http://www.freewebs.com/may19/
আরো সূত্র:
এ ব্যাপারে আরো জানতে আগ্রহী।
মন্তব্য
শামীম ভাই,
এরকম একটা অজানা তথ্য সামনে নিয়ে আসার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সহমত।
আমরা যখন ৯৮ সালে আসামে নাটক করতে যাই , তখন শিলচর ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রধান ( নাম মনে পড়ছে না ) কয়েকটি মূল্যবান বই দিয়েছিলেন এবিষয়ে । বইগুলো সিলেটে আছে , এক সময় এনে আরো তথ্য দিতে পারব আশা করি ।
হাসান মোরশেদের কাছেও অনেক তথ্য থাকার কথা । ও বেশ কয়েকবছর ঐ অঞ্চলে ছিল । আমাদের লিটিলম্যাগ "সহবাস" এর একটা সংখ্যা উৎসর্গ হয়েছিল এই শহীদদের নামে ।
ব্লগে লেখালেখির শুরুতেই কমলা ভট্টাচার্য'কে নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম । সচলায়তন আর্কাইভে লেখাটা খুঁজে পেলাম ।
ভাষাই ধর্ম,ভাষাই দেশ ।। আরেক ফাগুনের গল্প
১৯ মে'র ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ন । ভারতরাষ্ট্রে যেখানে প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাই হিন্দী'র আগ্রাসনে বিপর্যস্ত সেখানে বাংলা ভাষার সম্ভ্রম রক্ষার আন্দোলন-বাঙ্গালী অধ্যুষিত কলকাতায় গড়ে উঠেনি । ঘটনা ঘটেছে একেবারেই প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে । উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের ক্ষুদ্র এক মফস্বলে । শিলচর এখনো সামান্য এক মফস্বল । রেফারেন্ডামের মাধ্যমে বিভক্তির আগে বৃহত্তর সিলেটের অংশ ছিলো । বাঙ্গালী সবাই মুলতঃ সিলেটী বাংলাভাষী ।
আমার কাছে ঐ শহীদদের ডিটেইলস ছিলো । ১১ জনের সকলেই বর্তমান সিলেটের গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন, যাদের পরিবার পার্টিশনের পর শিলচরে অভিবাসী হয়েছিলেন ।
১৯ মে'র ঘটনা খোদ কলকাতাতেই উপেক্ষিত ।
আসামের শিলচর- করিমগঞ্জ এবং ত্রিপুরার আগরতলা,শিবসাগর এলাকায় সসম্মানে ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় । আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারী ও এই এলাকায় একই রকম সম্মানে পালিত হয় । শিলচরে একটা শহীদ মিনার ও আছে ।
'সহবাস' এর প্রথম সংখ্যা এই শহীদদের নামে উৎসর্গ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভাষার জন্য যুগে যুগে অঞ্চলে অঞ্চলে অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে, তারচেয়েও ভায়বহ ব্যাপার হলো অসংখ্য মানুষ নির্যাতিত হয়েছে, হচ্ছে।
কিছু কিছু অর্বাচীন (ইউনিভার্সিটিটর বড় বড় পদওয়ালাদেরও বলতে শুনেছি) যখন বলে ভাষার জন্য একমাত্র প্রাণ দেয়া জাতি আমরাই -- তখন হাসি পায়।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আরও দুটি অসম্পুর্ন তথ্য জানালেন শ্বশুরসাহেব।
১.
তামিলগণও নাকি ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে ভারতে .... .... কারো কাছে কি কোনো তথ্য আছে?
২.
মরহুম জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক (যিনি পৃথিবীর একজন সেরা দার্শনিক, এবং ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও দার্শনিক রাধাকৃষ্ণর চেয়ে বেশি রেটিং প্রাপ্ত) বলেছিলেন যে, আমাদের ৫ জন ভাষা শহীদের মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশের ইনফর্মার। উনি কে ছিলেন?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
শহীদ বরকত । কিন্তু এটার পক্ষে কোন তথ্য হাজির করতে পারেননি মুসলিম লীগার দার্শনিক
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
উনি কি আসলেই মুসলিম লীগার ছিলেন নাকি ঐ বক্তব্যকে হালকা করার জন্য এটা জুড়ে দেয়া হয়েছে। (ব্যক্তিগতভাবে আমি এইসব রাজনৈতীক ব্যাপারে পুরা আন্ধারে)। ঢা.বি.'র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এই দার্শনিকের উপর আহমদ ছফা সাহেবের লেখা নাকি একটা বই আছে (ভেতরে কী আছে আমি জানিনা)।
ওনার এই বক্তব্যের বিরূদ্ধে তখনই অন্য বুদ্ধিজীবিরা প্রতিবাদ করেছিল। তারপর চাপে পড়ে উনি ওনার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
বইটার নাম, যদ্যপি আমার গুরু। চমৎকার বই, পড়ে দেখতে পারেন।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
উনি মুসলিম লীগারই ছিলেন ।
যদ্যপি আমার গুরু' তে পাওয়া যায়- আহমদ ছফা এ প্রসংগে তার গুরুকে প্রশ্ন করতে ছাড়েননি । উত্তর যা সে গতানুগতিকই । ভারত ভাগের আগে মুসলমানদের প্রতি হিন্দু অভিজাতদের উন্নাসিকতা মুসলমান তরুনদের মুসলিম লীগ তথা ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের প্রতি মোহগ্রস্ত করেছিল ।
এই মোহ অনেকের কেটে গেলে ও রাজ্জাক সাহেবের থেকে গিয়েছিল । তিনি স্পষ্টই নিজেকে জিন্নাহ'র ফলোয়ার বলতেন ।
আরো ভয়ংকর তথ্য হলো(এই তথ্য সর্দার ফজলুল করিমের বয়ান থেকে জানা যায়) যে বংগবন্ধু হত্যাকারী ডালিম কেবল তার আত্নীয় ছিলো তাই নয়, হত্যাকাণ্ডের পর তার সাথে ডালিমদের সাক্ষাৎ করতে দেখা গেছে ।
যদি ও মুজিব আমলেই তিনি জাতীয় অধ্যাপক হয়েছিলেন ।
নিঃসন্দেহে তিনি অনেক বড় পন্ডিত ছিলেন ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মেঘ সরানোর জন্য ধন্যবাদ।
.... আসলেই ডালিম সংক্রান্ত তথ্যটা ভয়ংকর!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
এই তথ্যটা আমি প্রথম জেনেছিলাম হাসান মোরশেদের সহবাস থেকে। বিষয়টা এভাবে ছড়িয়ে পড়ছে দেখে আনন্দ হচ্ছে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
আসামের বরাক উপত্যকায় বাংলা-অহমিয়া দ্বন্দ্ব যে প্রাচীন তা হাসান মোরশেদ আগেই জানিয়েছেন। এই সমস্যা বোডো অঞ্চলে ততটা না। বরাক উপত্যকায় বাংলা-অহমিয়া দ্বন্দ্ব এখনো বিদ্যমান এবং এর পেছনে শুধু ভাষা নয়, কোথাও অর্থনীতি, কোথাও ধর্ম ইত্যাদি আরো অনেক ফ্যাক্টর জড়িত। পশ্চিম বঙ্গের ইটিভি বাংলায় প্রথম ১৯শে মে'র শহীদদের কথা জানতে পারি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পশ্চিম বঙ্গে ২১শে ফেব্রুয়ারী পালিত হলেও ১৯শে মে নিয়ে প্রায় কিছু হয় না। বাংলা ভাষা নিয়ে দ্বন্দ্ব ঝাড়খণ্ডে আছে, ছোট নাগপুরে আছে, মীরপুর-হাজারীবাগ-ধানবাদে আছে। বাংলা ভাষা নিয়ে দ্বন্দ্ব দার্জিলিং-এ আছে, মেঘালয়ে আছে, ত্রিপুরাতে আছে। এই দ্বন্দ্বগুলো প্রতিদিনের জীবন-যাপনের অংশ হয়ে গেছে সেসব জায়গায়। পশ্চিম বঙ্গের বাংলা ভাষার হর্তা-কর্তারা এসব না দেখার চেষ্টা করেন। তাই পশ্চিম বঙ্গের বাংলার ভবিষ্যত নিয়ে বিক্রমণ নায়ারের জানানো সেই উক্তিটি মনে করাই যথেষ্ঠ, "হাতে ক্রিকেট ব্যাট আর মুখে হিন্দী গান নিয়ে কলকাতা উত্তর ভারতের একটা অপ্রধান শহরে পরিণত হবে"।
কয়েকটা নামের বানান সম্ভবতঃ এমন হবেঃ-
শহীদ সচীন্দ্র পাল = শহীদ শচীন্দ্র পাল
শহীদ কানাই লাল নিওগি = শহীদ কানাই লাল নিয়োগী
আসামের চাঁচাড়, শিলচর ও হাইলাকান্দি = আসামের কাছাড়, শিলচর ও হাইলাকান্দি
সুদেশ্না সিনহা (বুলু) = সুদেষ্ণা সিংহ (বুলু)
ভুল বলে থাকলে ক্ষমা করবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
বানানগুলো ঠিক করে দিচ্ছি ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
এ ব্যাপারে এক বন্ধুর মুখে শুনেছিলাম একবার। তবে এত বিস্তারিত জানা ছিল না।
ধন্যবাদ শামীম ভাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আসামের প্রথম ঘটনাটা মোটামুটি জানতাম। তবে, ডিটেইল পেলাম এই লেখায়।
দুঃখ এবং বিস্ময় দু'টোই লাগে ভাবতে, কতো লম্বা সময় ধ'রে এক আসামেই ভাষার দাবির কারণে পুলিশের হাতে একদম হত্যাই হ'লো এতগুলো!
হায়রে অধিকারবোধ! হায়রে গণতন্ত্র!! হায়রে সেন্স অব প্রপোর্শন!!!
ধন্যবাদ শামীম ভাই।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ভাষা নিয়ে ভারতে যার কথা আগে বলা হয় তিনি হলেন পট্টি শ্রীরামালু। ১৯৫২ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী পট্টি শ্রীরামালু তেলেগুভাষী অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ৫৮ দিন অনশনের পরে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু এক আন্দোলনের সুচনা করে যার ফলশ্রুতিতে গঠিত হয় সহায়তা কমিশন। কমিশনের বক্তব্য অনুসারে গঠিত হয় কেরল, অন্ধ্র ও কর্নাটক। পরে বাকি রাজ্যগুলোও পুনর্বিন্যস্ত হয় একই প্রক্রিয়ায়। ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সাথে সাথে সব রাজ্যকে নিজস্ব ভাষায় রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার ফলে আজও হিন্দিকে জাতীয় বা সরকারি ভাষা হিসাবে কেন্দ্র চাপিয়ে দিতে পারেনি।
রাগিবভাইয়ের সাথে একমত, বাঙালীরা যেভাবে হিন্দিকে মেনে নিয়েছে, সেভাবে দক্ষিণিরা মানে নি। তাই তারা সংস্কৃতিকে অনেকটা ধরে রাখতে পেরেছে। দক্ষিণের সব রাজ্যে হিন্দি সিনেমা সারা ভারতে রিলিজ হবার দু'সপ্তাহ পরে আসে - সরকারী নিয়ম মেনে। নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার এও এক চেষ্টা।
আবার অন্যভাবে বললে বাঙালী সংষ্কৃতি খুব চটজলদি গ্লোবালাইজ হচ্ছে, ইংরেজী মাধ্যমও খুব তাড়াতাড়ি চলে আসছে। দক্ষিণিরা মনে হয়না এই সুবিধাটা পাবে। অর্থনীতির দিক থেকে ব্যাপারটা লাভজনক।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
Shamim ke antorik dhonyobaad, Barack valley r bhasha shohid der naam er tothyo tule deoyay. amader blog Tir link debar jonyo'o janai dhonyobaad.
comments section e apnader aro aneker comments porchhilam. anek ajana tothyo jaante parlam, bharate bhasha andolon er poriprekkhite.
sachalayatan er lekhok o paThok der "Bangalnama" blog (http://bangalnama.wordpress.com) er pokkho theke amontron janie gelaam - amader blog Ti dekhben, ar lekha dile amra khub khushi habo.
ধন্যবাদ সোহিনী। আপনাদেরও আমন্ত্রণ রইলো সচলে লেখার। সচলের প্রকাশনীতিমালা যেহেতু একটু অন্যরকম, তাই শুরুতেই তা পড়ার অনুরোধ জানাই। আর কন্ট্রোল + অল্ট + পি চাপলে ফোনেটিক কীবোর্ডে বাংলা হরফে লিখতে পারবেন। কোন সমস্যা দেখা দিলে জানাতে পারেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
লেখাটির খবর ওখানে জানানোর জন্য এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
একতার শক্তি দেখে মুগ্ধ হচ্ছি।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
“মাতৃভাষার জন্য ভারতেও শহীদ হয়েছে কত প্রাণ” পোষ্টটি জন্য প্রথমেই শামিম ভাইকে ধন্যবাদ জানাই।
দেখুন, ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখে যে জনগোষ্ঠীর সক্রিয় ইচ্ছা, তা স্থান ও কাল নিরপেক্ষ নয়। অর্থাৎ, ভাষার ক্ষেত্রে ভৌগলিক সীমানার মতোই সামাজিক-রাজনৈতিক (socio-political) অবস্থা বা প্রেক্ষাপট সমান গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে আসা জনজোয়ারে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তা পরবর্তী এক দশক কেন তিন দশক অব্দিও কাটিয়ে ওঠা যায় নি। এই পরিস্থিতিতে তৎকালীন (১৯৫২-র আগের এবং পরের দশকেও) কোন রাজনৈতিক নেতা বা বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্বের পক্ষেই ভাষাকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের “এক জাতি তত্ত্ব” নীতি, যা ভারতের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, তার বিরোধিতা করা ছিল নিতান্তই অলীক, অবাস্তব ও পুরোমাত্রায় অসম্ভব। জনবিস্ফোরণে আক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গে তখন খাবারের হাহাকার। ষাটের খাদ্য আন্দোলন ও তার পরিপ্রেক্ষিতে “নবান্ন” নাটক নিশ্চয়ই ভোলেন নি।
এবার এর সঙ্গে তুলনা করুন দক্ষিণ ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। তখন সেখানকার নিস্তরঙ্গ জনজীবন যেন ভারত মহাসাগরের মতোই অবাধ, বিস্তৃত ও উজ্জ্বল। সুতরাং “এক জাতি তত্ত্ব” মুখোশের আড়াল থেকে যখন “এক ভাষা তত্ত্ব”-এর দৈত্য বেরিয়ে এল সারা দক্ষিণ ভারতের প্রতিরোধ হয়ে দাঁড়ালো বিন্ধ্যপর্বতের মতোই দুর্ভেদ্য ও অটল। হ্যাঁ, এর সুফল কিন্তু পেয়েছিল সারা ভারতবর্ষ।
ফলে ঠিক কি পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের আপামর বাঙালি সেদিন মানিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল হিন্দির আগ্রাসনের সাথে, আর দক্ষিণের লোকেরা হিন্দিকে ঠেকিয়ে নিজের নিজের ভাষার “সম্ভ্রম রক্ষার আন্দোলন”-এ (হাসান মোরশেদ), মূলতঃ তেলেগু ভাষা-ভিত্তিক অন্ধ্রপ্রদেশের দাবীতে, ঠিক আপনাদের মতোই ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছিল (নাকি আমাদের মতোই), তা অল্পকথায় তুলে ধরলাম, রাগিব ভাই।
মহাহারাজ, কলকাতা
আমি এখানে নতুন। কয়েকটা ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করতে চাই।
'যতদুর জানি, আসামের বর্ণমালা এবং বাংলা বর্ণমালার অক্ষরগুলো একটি অক্ষর বাদে অভিন্ন'
অসমিয়াতে দুটো বর্ণ আলাদা। 'র' আর 'w'। র-কে ওরা লেখে 'ব'-র পেট কেটে। আর 'w'-র উচ্চারণওয়ালা একটা বর্ণ আছে। দেখতে 'ব'-এর মত, নীচে র-এর পুটকির জায়গায় লম্বা একটা দাগ।
'অহমিয়া রা ও হিন্দু, আসামের বাঙ্গালীরা ও প্রধানতঃ হিন্দু ।'
আসামের বাঙালীরা প্রধানত মুসলমান। অবশ্য ওরা অনেকেই নিজেদের অসমিয়া বলে পরিচয় দেন, যাতে অত্যাচারিত হতে না হয়। কিন্তু অসমিয়া বলতে না পারার জন্য আদমসুমারীতে ওদের জন্য 'ন-অসমিয়া' (নতুন অসমিয়া) নামে নতুন টার্ম বানানো হয়েছে।
আমার ধারনা আসামে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা বনাম বরাক উপত্যকা (অসমিয়া-বাঙালী) দ্বন্দ্বটা স্তিমিত আগের চেয়ে। বেশি উদবেগের কারণ হল আসামের হিন্দু বাঙালীরা সাম্প্রদায়িক বিজেপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ছেন।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
'র' - এর মত দেখতে ওটার উচ্চারণ যে 'য়' - এর মত সেটা জানতাম। তবে নিচে ফুটকির বদলে ছোট দাগ -- এই ব্যাপারটা খেয়াল করিনি; তাই একটা অক্ষরের কথা বলছিলাম। আর 'ষ' এর মত 'ব' এর পেট কেটে যে অক্ষরটা (যেটার নাম সম্ভবত উওব্ব) সেটার উচ্চারণ বাংলায় 'র' এর মত সেটাও জানতাম। 'সম্ভবত' বলতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ শেষবার আসামে গিয়েছিলাম ১৯৯৫ সালে, তা-ও মাত্র দুই দিনের জন্য (ধুবড়ী); সেই সময়ে ভাষা বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখানোর মত অবস্থা ছিল না।
তবে, আমার সবসময়ই মনে হয়েছে যে বাংলা আর অসমীয়া (উচ্চারণ অখমিয়া; ঠিক খ-ও না খ-টাকে গলার ভেতর থেকে উচ্চারণ করা হয়, অনেকটা অহমিয়ার মত শোনায়) ভাষার তুলনাটা ইংরেজি আর ফরাসী ভাষার মত (বছরখানেক আলিঁয়াজ ফ্রাঁসেজ-এ ভাষা শিখেছিলাম - সেই অভিজ্ঞতাই সম্বল)। বর্ণমালা প্রায় এক, অথচ উচ্চারণ প্রয়োগে বেশ ভিন্নতা। যেমন রাস্তায় সাইনবোর্ডে দেখেছি "লাহে লাহে গাড়ি চলাব' = ধীরে ধীরে গাড়ি চালাবেন। টেলিভিশনের খবরের ভাষা না বুঝলেও মোটামুটি ৫০% অর্থ বুঝতে পারতাম বলে মনে হত।
আমার নানীবাড়ি আসামের ধুবড়ী জেলা শহরে (রংপুর/কোচবিহার সংলগ্ন) ... ওখানে স্থানীয়ভাবে রংপুর অঞ্চলের কথ্য ভাষা ব্যবহৃত হতে শুনেছি। এছাড়া আমার নানার পিতৃপুরুষরা যেখানে বসতি গড়েছিলেন (ধুবড়ীর উত্তরে, গোয়ালপাড়া জেলায়) সেই গ্রামের স্থানীয় ভাষা আর সিরাজগঞ্জের স্থানীয় ভাষা পুরাপুরি এক, কারণ ওখানকার অধিবাসীরা ৪৭-এর দেশ বিভাজনের আগে নদী-ভাঙ্গন কবলিত সিরাজগঞ্জ থেকে মাইগ্রেট করেছিল।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ভুলে গেছিলাম, এই তথ্যাবলীকে বৃহৎ পরিসরে প্রচারে জন্য আমার ধন্যবাদ জানবেন। অনেক ভারতীয় বাঙালীদের মধ্যেই নিজের ভাষা সম্পর্কে আত্মসন্তুষ্টি বা অমনোযোগ কাজ করে স্বীকার করতে বাধা নেই।
বা: ! দিব্যি লিখতে পারছি বাংলায়! কিভাবে এই ctrl+alt+p ব্যপারটি আপনারা করলেন একটু ্যদি কায়দাটা বলেন..
সে এক বিরাট গল্প। ঘরে ছিলো না কেরোসিন ... ...
হাঁটুপানির জলদস্যু
২০০৫ এ বিবিসি বাংলা রেডিও এ নিয়ে বিশাল অনুষ্ঠান করেছিলো, তখন প্রথম জানতে পারি আসামের ভাষা আন্দোলনের কথা। এ পোস্টেও অনেক কিছু জানলাম...।
ধন্যবাদ শামীম ভাই। ব্যপারগুলো অজানা ছিল। জানার জন্য। লালনের একটা গান কদিন ধরে কাজে বাজছে, "জাত গেল, জাত গেল বলে"। তো এই জাত নিয়ে দেখছি পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই দ্বন্দ লেগেই আছে। নরমাল মানুষের মত যদি কথা বলি, 'আমি যেমন আছি ভাই, অমনই ভালো। কিসের কি!'। তবে সত্যি বলতে এভাবে হয় না, আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিৎ অন্তত ভাষার প্রতি। শামীম ভাই বাদে অনেক্কে অনেক অনেক ধন্যবাদ, বিশেষ বিশেষ ব্যপারগুলো জানানোর জন্য।
শামীম,
যতদূর জানি, ধুবড়ি, গোয়ালপাড়া দেশভাগের আগে উত্তর-পূর্ব বাংলার অংশ বলে পরিগণিত হত। উত্তর বাংলাদেশের সাথে অর্গানিকালি যুক্ত ছিল বলতে পারেন।
বাংলা-অসমিয়ার তুলনাটা ইংরিজি-ফরাসীর সাথে করায় একটু মুশকিল আছে। ইংরিজি আর ফরাসী দুটো আলাদা ভাষাগোষ্ঠির অন্তর্গতঃ জার্মানিক আর ল্যাটিন। বাংলা-অসমিয়ার মূল একঃ পূর্ব-প্রাকৃত।
হ্যাঁ, অসমিয়া 'স'-এর উচ্চারণ বাংলা হ আর খ-এর মাঝামাঝি। বস্তুত, অসমিয়ার উচ্চারণ পূর্ব বাংলার উপভাষার সাথে মেলে, বিশেষ করে সিলেটি। চ, ছ > S, স > হ।
শামীম ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ব্যাপারটা নিয়ে লেখার জন্য। অনেকেই এগুলো ভাসা ভাসা জানে।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
শামিম ভাই এবং অন্যান্য দের জানাই অভিনন্দন এত তথ্য সমৃদ্ধ লেখা উপহার দেবার জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন