প্রথমেই বলে রাখি, আমি শেয়ার ব্যবসা করি না - এ সম্পর্কে জানি খুবই কম। আরও জানার জন্য হা করে তাকিয়ে থাকি যে কখন এই লাইনে দক্ষ ও অভিজ্ঞরা কিছু লিখবেন। না পেয়ে নিজের কীবোর্ড চুলকানো শুরু করলো। আমি শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে প্রথম ধারণা পেয়েছিলাম টিভি সিরিয়াল পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস থেকে - বলাই বাহুল্য আশেপাশে যা দেখি তার সাথে কোনো মিল খুঁজে পাই না এখন। তাও একটু বকবক করা ...
১.
পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস আমার দেখা অন্যতম সেরা একটা কমেডি সিরিয়াল ছিল। ইতালি থেকে দুর আত্মীয়তার আবছা সূত্র ধরে আমেরিকায় আধুনিক কাজিন ল্যারির কাছে আসে সহজ সরল বাল্কি। তাদের কাজ কারবারের মধ্য আধুনিক সভ্যতার হাস্যকর কিছু দিক নিয়ে মজা করা হত ওটাতে। আবছা স্মৃতি থেকে একটা পর্ব রিকনস্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করি ...
একবার বাল্কি ৬ ডলার দিয়ে পপকর্ন কম্পানির একটা শেয়ার কিনে নিয়ে আসলো। ল্যারি তো হায় হায় করে উঠলো। বাল্কির কথা হইলো আমি শেয়ারের ব্যবসা করবো ... আর এই কম্পানি প্রতিটা পপকর্ন প্যাকেটে একটা করে কুকি দেয় যেটা আমার পছন্দ হয়েছে - তাই এটার শেয়ার কিনলাম। ল্যারি বলে - আরে বোকা ওগুলো ভুয়া প্রচারণা। বাল্কি খুব সিরিয়াস (যথারীতি) ... ... না এসব কি কও আমি ঐ পপকর্ণ খেয়েও কুকি পাইছি, দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি।
এই বলে কাবার্ড থেকে আরেকটা প্যাকেট বের করে সেটা খুলে বাটিতে ঢেলে কুকি খুঁজতে লাগলো। কিন্তু এইটাতে আর কুকি খুঁজে পায় না। আরে ... ... আগেরটাতে তো কুকি ছিল - এইটাতে নাই কেন?
এভাবে কয়েকটা প্যাকেট খুলে দেখলো ওরা - বেশিরভাগেই কুকি নাই। অথচ প্যাকেটের গায়ে কোন এক জায়গায় ছোট ছোট করে কুকির কথা লেখা আছে। এহেন অসততায় বাল্কি খুবই আপসেট - শান্তনা দিতে ল্যারি বলে যে ওদেরকে একটা অভিযোগ জানাতে। এতে কেমনে কেমনে বাল্কি উৎসাহিত হয়ে একেবারে ঐ কম্পানির কর্পোরেট অফিসে। সাথে অবশ্যই ল্যারি -- যথারীতি এই খ্যাত্ ভাইটাকে সাহায্য করার দায় এড়াতে না পেরে।
রিসিপশনে বলে আমরা মালিকের সাথে কথা বলতে চাই। কারণ আমি এর একটা শেয়ার ... ... মাঝপথে ল্যারি থামিয়ে বলে - আমরা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার। শুনে রিসিপশনিস্ট ওদের ভেতরে নিয়ে গেল। ম্যানেজার তখন জিজ্ঞাসা করে - কী ব্যাপার? তখন ওরা অভিযোগ বলে। এমন সামান্য ব্যাপারে অভিযোগ শুনে ম্যানেজার ওদের রাস্তা মাপতে বলে - কিন্তু বাল্কি যথারীতি সিরিয়াস: অভিযোগ নিতেই হবে। ম্যানেজার বলে আপনাদের শেয়ার কত পার্সেন্ট -- তখন বাল্কি সত্য জানিয়ে খুব গর্বের সাথে বলে "একটা শেয়ার"। শুনে ম্যানেজার তো আরও খাপ্পা - মিয়া ইয়ার্কি মারো ... ...
ইতিমধ্যে গ্যাঞ্জাম শুনে মালিক ওখানে চলে আসে। সব শুনে বলে - যত সামান্যই হোক উনি আমাদের ব্যবসার শেয়ার হোল্ডার। তার মতামতের মূল্য আছে - কাজেই অভিযোগ, পরামর্শ শুনবো। পরের সিনে দেখা গেল ঘরময় পপকর্নে সয়লাব - একের পর এক প্যাকেট খুলছে আর কুকি খুঁজছে। এবং বেশিরভাগ প্যাকেটে প্রতিশ্রুত কুকি না দেখে মালিক হতবাক। তখন ম্যানেজার কাঁচুমাচু করে খরচ কমানোর জন্য এমন করিয়েছেন জানালেন। মালিক ব্যবস্থা নেবেন এবং জানানোর জন্য বাল্কি ও ল্যারিকে অনেক ধন্যবাদ জানালেন।
......
......
সেই সময়ে একটা বিষয়ই বুঝতে পেরেছিলাম। শেয়ার হোল্ডার মানে মালিকানার অংশিদার।
২.
অনেক বছর আগে বাবার বুদ্ধিতে প্রাইমারি শেয়ারের জন্য আবেদন করে ৫০০০ টাকার ৫০টা শেয়ারের একটা শেয়ার-লট পেয়েছিলাম। একটা টেক্সটাইল মিল ওদের ব্যবসা/কারখানা সম্প্রসারনের জন্য এভাবে ফান্ড জোগার করেছিলো। এক বছর পর দেখি ১২% হারে লভ্যাংশ দিল - অথচ কারখানা সম্প্রসারনের কাজই শেষ হয়নি; উৎপাদনে যাওয়া তো দুরের ব্যাপার। কার কাছ থেকে জানি জানলাম - অবুঝ ও অধৈর্য বিনিয়োগকারীদের ম্যানেজ করার জন্য এটা ঠেকামূলক ব্যবস্থা। পেপারে দেখি ১০০ টাকা ফেসভ্যালু শেয়ারের দাম তখন ৪৪ টাকা। মনটা খারাপ হয়। আব্বা বলেন - চিন্তা করিস না; এদের মালিক দুই ভাইকে আমি চিনি, এরা খুবই কর্মঠ লোক - অবশ্যই সময়মত লাভ করবে।
কখনো সাভারের দিকে গেলেই রাস্তার পাশে আমার কোম্পানিকে বাসের জানালা দিয়ে আত্মপ্রসাদ নিয়ে দেখি। চোখ ওদিকে যাবেই - আফটার অল আমি সামান্য হলেও তো মালিক - পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার তো তাই শিখাইলো।
ইদানিং ঐ শেয়ারের মূল্য দেখি প্রতিটা ৬-৭ শ টাকা।
৩.
তারপরেও শেয়ার মার্কেট কী জিনিষ আমি ঠিক বুঝি না .... কেউ যদি বেসিক আইডিয়া দিতে পারতো ... .... (এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ডিসক্লেইমার: মরহুম অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া আমার কেউ নয়)। মনের মধ্য প্রশ্ন ঘুরঘুর করে: একটা শেয়ারের মূল্য বাড়ে বা কমে কখন ... ... এর পেছনের বেসিক কারণ কী?
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলাম - ঐটাই ঠিকমত বুঝি না আর শেয়ার ...... তবে এখন এই বিষয়ে আগ্রহী অনেক বান্দা আছেন মনে হয়। নিশ্চিতভাবেই অনেকে ভাল বুঝেন। তাই কোন সহৃদয় যদি এটা নিয়ে লিখতেন তবে একটু কৌতুহল মিটতো। আমি যা জানি সেটাকে সহজ সরল ভাবে দেখলে -
একটা কম্পানির মূলধন দরকার ধরুন ১০ কোটি টাকা। কিন্তু মালিক/উদ্যোক্তার হাতে আছে ৬ কোটি। বাকি টাকা সে ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে, অথবা পাবলিকের কাছ থেকে শেয়ার বিক্রি করে নিতে পারে। ধরুন ঐ ৪ কোটি টাকা ১০০ জন লোক প্রত্যেকে ৪ লাখ করে দিল। শেয়ার বিক্রি অর্থ হল এখন ১০ কোটি টাকা মূলধনের ৬ কোটি একজনের - কাজেই কম্পানির মালিকানার ৬০% মালিক সে। আর বাকী ৪০% মালিকানা শেয়ার করা হয়েছে। প্রতিজন ৪ লাখ টাকা করে দেয়াতে ঐ ১০০ জনের প্রতিজন ০.৪% করে মালিকানা পাবে।
বছর শেষে ঐ কম্পানি ধরি ৫ কোটি টাকা মুনাফা করে, এবং এ থেকে ২ কোটি টাকা ব্যবসা সম্প্রসারনে ব্যয় / পূণর্বিনিয়োগ করলো। তাহলে বাকি ৩ কোটি টাকার মধ্যে
মালিক/উদ্যোক্তা পাবে - ১কোটি ৮০ লাখ (যেহেতু ৬০% মূলধন তার)
শেয়ার হোল্ডার প্রতিজন পাবে - ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে। (১০০ জনে = ১কোটি ২০ লাখ = ৪০% লাভ)
এখন কেউ যদি তার শেয়ার রাখতে না চায় তবে ঐ লাভ নেয়ার পর ৪ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার ৪লাখ ৮০ হাজারে বিক্রি করতে পারবে। কারণ এখন ব্যবসার মূল্য ১০+২=১২ কোটি। কাজেই ১২ কোটি x ০.৪% = ৪ লাখ ৮০ হাজার। আর লভ্যাংশ না নিয়েই বিক্রি করলে দাম পাবে ৬ লাখ।
এভাবে ৪ লাখ টাকা ১ বছরে ৬ লাখ হল। কারণ মূল ব্যবসা একই অনুপাতে লাভ করেছে।
৪.
শেয়ার মার্কেটে যখন মানুষ বিনিয়োগ করে তখন এগুলোর কোন নাম নিশানা আমি দেখিনা। তার মানে ইহা ভিন্ন কোনো জিনিষ। এখানে হু হু করে দাম কেন বাড়ে, হুট করে কমেই বা কেন? ১০ টাকার ফেসভ্যালুর শেয়ারের মূল্য যখন দেখি ৩০০ টাকা - এর অর্থ আমার বুঝামতে ঐ কোম্পানি যখন শেয়ার ছেড়েছিলো তখনকার তুলনায় ব্যবসা ৩০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ... ... আসলেই কি তাই ঘটেছে? ঐ শেয়ারের ক্রেতা কি এই তথ্যের ভিত্তিতেই আরো প্রবৃদ্ধিজনিত লাভের আশায় শেয়ারের মালিক হয় নাকি এর পেছনে অন্য কোনো শক্ত থিওরী আছে? এ্যাত টাকা বিনিয়োগ যখন করছে তখন নাড়ি নক্ষত্র না জেনে নিশ্চয়ই করেনি ... ... সেই নাড়ি নক্ষত্র কী কী -- কোন পুরাতন কেস স্টাডি করে দেয়া যাবে কি?
আমার বুঝা ঠিক কি না জানিনা। তবে এটা ঠিক হলে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই হুজুগে চলে - যাদের মূলধন হল লোভ; বিনা পরিশ্রমে বড়লোক হওয়ার দিবাস্বপ্ন। আর এর সুযোগ নেয় ঘাঘু ঠকবাজরা। লোভ করে নিজের কল্লা জবাই হওয়ার রিস্ক নিয়ে পেতে দিলে সেটা কাটা পড়তেই পারে। এজন্য কার ঘাড়ে দোষ চাপাবেন? --- মাইন্ড খাইয়েন না -- পাগলের সুখ মনে মনে -- আমি এইসব ভেবে ও থেকে দুরে থাকার বুঝ নেই মনে মনে।
৫.
কয়েকশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যমুনা ফিউচার পার্ক টাইপের বিপনন কেন্দ্র বানানো দেখে একজন দুঃখ করে আমাকে আরো কিছু জ্ঞানগর্ভ কথা বলেছিলেন:
একটা বস্তুর দাম বাড়ে যখন কোন ভাবে এটাতে ভ্যালু এডিশন বা মূল্য সংযোজন হয়। সবচেয়ে বেশি ভ্যালু এডিশন হয় শিল্প কারখানাতে: ১০০ টাকার লোহার টুকরাতে আরো ৪০০ টাকার মেশিন/লেবার খরচ করে সেটা ৫০০০ টাকা মূল্যের বস্তুতে পরিণত হয়। কিংবা ধরুন ৬০ টাকার তুলাতে ৩০ টাকার মেশিন / লেবার খরচ করে ১২০ টাকার সুতা তৈরী হয়। সেই সুতা থেকে কাপড় বা কাপড় থেকে তৈরী পোশাক -- সবই ওরকম। এছাড়াও ভ্যালু এডিশন হয় বিপননে। ৫০০০ টাকার বস্তু এনে সেটার পেছনে আরো ৩০০০ টাকার চমৎকার আলোকসজ্জা, ডিসপ্লে, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি দিয়ে ১০০০০ টাকায় বিক্রয় করা হয়। কিংবা ধরুন ১২০ টাকার সুতা ১৫ টাকার পরিবহন, গোডাউন, প্যাকেজিং, ডিসপ্লে ইত্যাদি পার হয়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
মোদ্দা কথা হল, শিল্প কারখানায় ভ্যালু এডিশন হয় বিপননের চেয়ে অনেক বেশি। সেজন্য বিনিয়োগ করতে হলে ঐ খাতে করাই বেশি বুদ্ধিমানের লক্ষণ। কিন্তু আমাদের এখানে শিল্প কারখানা বাদ দিয়ে বিপনন কেন্দ্র বানানোতে বেশি আগ্রহ দেখিয়ে কম্পিটিশন দিয়ে এ্যাত টাকা খাটায় ব্যবসায়ীগণ।
আমার প্রশ্ন হল, এসেট ভ্যালুর সাথে শেয়ারের মূল্য যদি সংগতিপূর্ণ না হয় তবে এর ভ্যালু এডিশন হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে? যতদুর বুঝি তাতে - সত্যিকার অর্থে যদি এর ভ্যালু এডিশন না হয়, তাহলে সেটা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।
কিছুদিন আগে বিশ্বমন্দা এ ধরণের কিছু শেয়ার কেলেংকারির জন্যই হয়েছিলো। তখন যা ঘটেছিলো তা সচলায়তনেই দারুন কিছু পোস্টের মাধ্যমে জেনেছিলাম। ওতে মেকানিজম ছিল অনেকটা এমন:
একজন ১০০ টাকা মূলধনে ব্যবসা করে ৩০ টাকা লাভ করলো - ফলে শেয়ারের মূল্য বাড়লো ৩০%। আরেকজন নিজের ৫০ টাকা মূলধনের সাথে আরো ৫০ টাকা লোন নিয়ে ১০০ টাকার মূলধন বানিয়ে সেটা দিয়ে ব্যবসা করে সে-ও ৩০ টাকা লাভ করলো। কিন্তু হিসাবে দেখালো - আমার ৫০ টাকা মূলধন কিন্তু লাভ ৩০ টাকা .... অর্থাৎ শেয়ারের মূল্য ৬০% বৃদ্ধি পেল - যেটা আসলে ঠিক নয় (কারণ তারও ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি আসলে ৩০%)। ব্যবসার জন্য লোনগুলোতে অনেক জায়গাতেই প্রথম কয়েক বছর সুদ দেয়া লাগে না - তাই এর সুযোগ নিয়েছিল কেউ কেউ। ফলে কী হল? যে শেয়ারের আসল ভ্যালু এডিশন ৩০% সেটা ম্যানিপুলেট করে ৬০% এ কেনা বেচা হচ্ছে --- --- এভাবে কতদিন আর ধামাচাপা দেয়া যায়? এক সময় না এক সময় আসল থলের বেড়াল বের হয়ে পড়ে, আর এর আগেই আসল খেলোয়ারগণ নিজের শেয়ারগুলো বিক্রয় করে দেয়।
ফলে সাধারণ বিনিয়োককারীর অবস্থা হয় কৃষিকাজ বাদ দিয়ে বেশি দামে বানর কিনে বসে থাকা মানুষের সেই গল্পের মত। আসল জায়গায় ভ্যালু এডিশন না হয়ে যদি দাম বাড়ে তাহলে সেই অতিরিক্ত টাকা কারো না কারো পকেট থেকেই যাবে।
৬.
পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস: http://en.wikipedia.org/wiki/Perfect_Strangers_(TV_series)
কিছু পড়ার লিস্ট
http://en.wikipedia.org/wiki/Fundamental_analysis
http://en.wikipedia.org/wiki/Technical_analysis
http://money.howstuffworks.com/personal-finance/financial-planning/stock.htm
মন্তব্য
শেয়ার নিয়ে বেসিক আন্ডার্স্টান্ডিংটা আমারও এমনই। তবে এটা মনে হয় 'প্রাইমারি মার্কেট'। সেকেন্ডারি মার্কেটের কাহিনি আলাদা। অন্য অভিজ্ঞ কেউ সেটা নিয়ে বলবেন আশা করি।
আমার যেটা খারাপ লাগে সেটা হলো, এত লোক 'টাকা খাটাতে চাচ্ছে' তাহলে কেন প্রাইমারি মার্কেট বাড়ে না? নতুন নতুন মিল-কারখানা করে সেই প্রাইমারি শেয়ারই বিক্রি করা হোক। ক্রেতা যে আছে সেটাতো দেখাই যাচ্ছে। একটা পুরো বাজারের বেশিরভাগ লোকই সেই বাজার সম্পর্কে বেসিক আন্ডার্স্টান্ডিং না নিয়েই নিজের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করছে। এই চিত্র হতাশার। সরকার এবং শিক্ষিত জনগোষ্টির কিছু দায়িত্ব ছিলো এগুলো নিয়ে সহজ ভাষায় কিছু প্রচারণা চালানোর।
কত-শত লোক নিঃস্ব হয়ে গেল... না হয় তারা বোঝেনি... কিন্তু টাকা ব্যাঙ্কে জমিয়ে না রেখে 'বিনিয়োগ' করতে উৎসাহীতো ছিলো। এই টাকা উৎপাদন মুখী খাতে চ্যানেল করাই তো শেয়ারবাজারের কাজ বলে জানতাম। কিন্তু এসব কী হচ্ছে! পুরো ব্যাপারটাই দুঃখ জনক।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমার ধারনা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা শ্রেনীর অভাব আছে। এছাড়া নতুন যারা কিছু করতে চায় তারাও কলকে পায় না। মার্কিন দেশে শূণ্য থেকে যেসব কোম্পানি উঠে আসে সেগুলোর প্রথম দিকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগ আছে। বাংলাদেশে সেটাও নেই। আইনি কাঠামো এর একটা কারণ। আরো একটা বড় কারণ মানুষের কোন কষ্ট ছাড়া টাকা উপার্জনে উৎসাহ। যেটা আমরা শেয়ার মার্কেটে দেখি। অল্পদিনে ১ টাকা ১০ টাকায় রূপ নিতে বেশি কষ্ট করতে হয় না। ১ টাকা আট আনায় নামলে পোড়ানোর জন্য কাগজটায়ারকাঠ, ভাঙার জন্য গাড়ি তো রয়েছেই!
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সেকেন্ডারি মার্কেটের বেসিক ডিজাইনটাই খুচরা বিনিয়োগকারীদের ধরা খাওয়ানোর জন্য করা? এইজন্যই বোধহয় খুচরা বিনিয়োগকারীদের টাকাকে 'ডাম্ব মানি' বলে। ডাউ সাহেবের নাকি ফেজ ফেজ ভাগ করে দেখায়া গেসে। পাবলিক শেয়ার কিনা শুরু করলে দাম উঠতে থাকে। আর দাম চরমে পৌছাইলে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করা শুরু করে। দাম পড়তে দেইখা খুচরাওয়ালারা প্যানিকড হয়ে সেলিং শুরু করে। দাম গোত্তা খেতে খেতে মাটিতে নেমে আসে। এইটা সম্ভবত ব্যতিক্রম না। এইটাই নিয়ম। খুচরাওয়ালারা ৬মাসের প্লেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ীরা বছরে বছরে খেলে।
আর অনুৎপাদনশীল খাতে আবার 'বিনিয়োগ' কী? মার্কেট ফোরকাস্টিংএর ফান্ডামেন্টাল বা টেকনিকাল কোনো অ্যানালিসিসই এদের অনেকেই করে না। পারেও না। আগ্রহও নাই। জুয়া খেলতে আইসে। খেলায় হারলাম, তো রাস্তায় নাইমা পিটাপিটি করলাম।
রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্বের এরচেয়ে দৃশ্যমান কোনো প্রমাণ আর নাই।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
- প্রাইমারি মার্কেট না বাড়ার কারণ বাংলাদেশে নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ কম হয়। বড় বড় বিনিয়োগ করবে এরকম উদ্যোক্তার সংখ্যা সীমিত। নতুনরা পাত্তা পান না। বছর পাঁচেক আগে শুনতাম ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে আছে। ব্যাংককে এই অলস টাকা শেয়ার ব্যবসায়ে খাটানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে। রেশনাল ইনভেস্টর হিসেবে সে এখানে বিনিয়োগ করবেই। গত বছরের শুরু ইনডেক্স ৪৫০০ থেকে এখন ৯,০০০ ছুই ছুই করছে। শুধু মার্কেট পোর্টফোলিওতে ইনভেস্ট করলেও এক বছরে তাদের টাকা দ্বিগুন হবার কথা। আরেকটু বুঝে শুনে পোর্টফোলিও ডিজাইন করলে এটা ৫ গুন করতে পারলেও অবাক হবার কিছু নেই। অপরদিকে এই টাকা শিল্পে বিনিয়োগ করলে তারা পেতো ১০-১২% লাভ। এই অবস্থায় শেয়ার মার্কেটই লক্ষী।
- সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপ্তি বাড়ানোর বা এর দক্ষতা বাড়ানোর বদলে বাংলাদেশের সরকার বিশ্বব্যাংক আর ভারতীয় লোনের টাকায় ঘি খেতেই অতি উৎসাহি। এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বাড়বে কেমন করে!
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সহমত।
সরকারী প্রতিষ্ঠানে আমলারা এবং ট্রেড-ইউনিয়নও লিস্টেড হওয়ার বিরোধিতা করে আসছে সঙ্গত কারণে।
সেদিন দেখলাম বাংলাদেশে খুব প্রতিষ্ঠিত কিছু ‘পরিবার-পরিচালিত’ conglomerate ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল ‘ডাইলিউট’ হয়ে যাওয়ার ভয়ে লিস্টেড হচ্ছে না ।
ম্যানেজমেন্ট ডাইলিউট হবার এই আতঙ্ক একটা বাস্তব ও বহুবার দেখা দেওয়া একটা সমস্যা। এটা বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের অদুরদর্শিতার একটা নমুনা। পুরো পৃথিবীতেই বড় বড় ব্যবসার নিয়ন্ত্রন পরিবারকেন্দ্রিক হবার উদাহরণ আছে। ঐসব পরিবার নিজের বিনিয়োগ করে, শেয়ার মার্কেটেও যায়, নিয়ন্ত্রনটাও নিজের কাছে রাখতে পারে। বাংলাদেশের ঐ পাতিউদ্যোক্তারাই এটা পারে না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
পোস্টে যা বলতে চাইলেন সেই বক্তব্য সম্পর্কে একমত। তবে,
ব্যবসার মূল্যটা আসলে এভাবে হিসেব করে না। একটা ব্যবসার মূল্য হলো ঐ ব্যবসা থেকে যতটুকু আয় (আরো সঠিকভাবে বললে নগদ অর্জন) ভবিষ্যতে করা সম্ভব তার নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু। ধরা যাক,
এখন এই মুহুর্তে এই ইনফরমেশনগুলো জেনে আমি আশা করতে পারি সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ারের দাম ১৫৫.৬৫ টাকা হবে। শেয়ারের মূল্য এর থেকে বেশী হওয়া মানে অতিমূল্যায়ন, এর থেকে কম হলে আন্ডারভ্যালুয়েশন (এর বাংলা কী হবে?)। শেয়ারের মূল্য এর থেকে এদিক স্বল্প সময়ের জন্য এদিক ওদিক হলেও শেয়ার মার্কেটের তত্ত্ব অনুযায়ী এটা সঠিক মূল্যে (intrinsic value) ফেরত আসবে। ফেরত আসার এই বিষয়টাকে বলে মার্কেট কারেকশন বা বাজার সংশোধন।
এখানেই থামি এইবেলা। ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছি। কাজের ফাকে ফাকে আরোও দু'পয়সা দিয়ে যাবো। বাকিরা আলোচনাটা এগিয়ে নিন।
শামীমকে ধন্যবাদ আলোচনার একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে দেয়ার জন্য।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অবমূল্যায়ন হতে পারে।
হাসিভ ভাই, একটা অনুরোধ, এই পোস্টে আপনার মন্তব্যগুলো এবং সাথে আরো কিছু যোগ করে আপনি একটা পোস্ট দেন। একটা ডেফিনিটিভ ওয়ার্ক হয় তাইলে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মাথার ওপর দুইটা ডেডলাইন এই সপ্তাহে। নাহলে লিখতাম। শেয়ার মার্কেটের এই নাটক আবারও আমাদের সামনে হাজির হবে। অতএব টপিক বাসি হবার চিন্তা নেই ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অসাধারন। আমার কয়েক বন্ধু শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে গেলে আমিও একই কথা বলেছি। শেয়ার বাজার হচ্ছে ১টা ক্লোজড সিস্টেম যেখানে ১মাত্র লাভের পথ হচ্ছে কোম্পানির মুনাফা। মুনাফার বাইরে ঐ সিস্টেমের সবাই লাভ করবে, এটা কোনভাবেই সম্ভব না। কাউকে না কাউকে লস করতেই হবে। কিন্তু অবুঝ বাঙ্গালী। বিনা পরিশ্রমে কোটিপতি হবার স্বপ্নে সবাই বিভর। এজন্যই লটারি, এমএলএম ব্যবসা আমাদের দেশে এতো চলে। এতকিছু হল, তারপরেও কয়েক বছর পরে দেখবেন সেই একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি। আমাদের শিক্ষা কখনোই হবে না। যারা পূঁজি হারালেন, তাদের জন্য আমার কোন সহানুভুতি নেই। না জেনে ব্যবসায় নামলে লস করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তারপরেও যখন নেমেছেন, তখন ফল ভোগ করতে হবে
আমি শেয়ার ব্যবসা বুঝিনা, করিওনা, যদিও পরিচিত প্রায় সবারই শেয়ারে বিনিয়োগ আছে। তবে বিনিয়োগে ধরা খেয়ে রাস্তায় নেমে ভাংচুড় করাটা কোনভাবেই সমর্থন করিনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
বিষয়টা একটু অন্যভাবেও ভাবা যায়। শিল্পে ঝুঁকি বেশী, দোকানদারিতে লাভ কম হলেও ঝুঁকি কম। হয়তো কম ঝুঁকির ব্যবসায়ে উদ্যোক্তাদের ঝোক বেশী। এছাড়া শিল্পেই বিনিয়োগ করতে হবে এমন কথা নেই। শুধুমাত্র সেবাখাত দিয়েই ভালো করা সম্ভব।
সাম্প্রতিক বিশ্ব মন্দার শুরুটা আসলে সাবপ্রাইম মর্টগেজ কেলেংকারি দিয়ে শুরু। ব্যাংকগুলো এতে প্রচুর ইনভেস্ট করেছিলো সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে। এরা ধরা খাওয়ার ফলটা শিল্পকারখানার উপর দিয়ে যায় পরবর্তীতে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আজকে এই প্রথম আমি শামীম ভাই এর কাছে থেকে শেয়ার সম্বন্ধে কিছু জানতে পারলাম। আসলে ব্যাপারটা আমার কাছে সম্পূর্ণ অজানা ছিল এর আগে। তবে লোকমুখে কিছু শুনে আমার যেটা মনে হয়েছে
আর তাই এখানে বোকার বিন্দুমাত্র চান্স নাই।
যাইহোক এ নিয়ে গতকাল এক বন্ধুর কথায় ব্যাপক মজা পেলাম। সে নতুন কম্পিউটার কিনেছে। কেমন বলাতে কয় ওর উইন্ডোজের এক রিফ্রেশের মূল্য ২ হাজার টাকা! আমি ঠিক না বুঝে জিজ্ঞাসা করলাম শানেনুযূল কী? পরে বলল তার একটা শেয়ার ছিল প্রায় ৫০ হাজার টাকার। দুইদিন আগে অনলাইন এ চেক করতে গিয়ে দেখে ব্রাউজার একবার রিফ্রেশ করার সময়কালের মধ্যে সেখান থেকে দুই হাজার করে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সেটা ৭ হাজারে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে।
-অতীত
তলে তলে শামীম ভাই যে শেয়ার সম্পর্কে এতকিছু জানেন, তা তো আগে জানতাম না ! এইবার কিছু পুঁজি জোগাড় করতে পারলে আমিও শেয়ার ব্যবসা করবো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমিও জানতাম না - ঈমানে কৈলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
শেয়ার মার্কেটের এই উত্থান-পতনের পেছনে যে আসল নায়ক, টাকা- এই টাকা গেলো কোথায়? টাকা তো ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার জিনিস না। বাড়তি শেয়ারের দাম মাটিতে নেমে আসার পর অতিরিক্ত টাকার অবস্থানটা নির্ধারণ করতে পারলেই বোধ'য় শেয়ার বাজার ধ্বসের পেছনের কলকাঠিনাড়ানেওয়ালার ঠিকানা মিলবে।
যতোদূর জানি, এই ব্যাপারে লুল্ছিব্বাই লিখতে পারেন, বিশদাকারে, আমাদের জন্য, সহজ করে। অনুরোধ করবো, ব্যস্ততার অজুহাত বাদ দিয়ে ল্যাখেন। নাইলে কলাম হাটে হাড়ি ভাঙুম!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এই দফা টাকা খুব বেশি পরিমাণে বিদেশে যেতে পারেনি বোধহয়। একটু অপেক্ষা করুন বাজারে আরো হাফ ডজন ব্যাংক, এক ডজন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী, দেড় ডজন লিজিং কোম্পানী, দুই ডজন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী দেখতে পাবেন। এগুলোর পরিশোধিত মূলধন (যা অবশ্যই সাদা রঙের হতে হবে) কারো পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে আসবেনা, এই বাজার থেকেই আসবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কালকে থেকে আবার ড্রামাটিক চেঞ্জ হয়ে গেছে। রকেটের মতো উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে সূচক। এটা যে কৃত্রিম, সেটা বুঝতে তো মনে হচ্ছে রকেট সাইন্টিস্ট হতে হবে না শেয়ার বিজনেসে। এখান থেকে আরেকদফা জুয়ার দান ঘুরে 'নায়ক' বাবাজী অন্যকারো ব্রিফকেসে গিয়ে ঠাঁই নেবে। যার ফলস্বরূপ আপনার আশঙ্কারই বাস্তবায়ন দেখতে হবে পাণ্ডব'দা।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
শুনলাম সরকার নাকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে শেয়ার কেনাচ্ছে যাতে বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হয় ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
পাণ্ডবদা, আপনি গ্রুপে যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো এখানে অনুগ্রহ করে আরেকবার আলোচনা করবেন?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভাই সহজ করে জিনিশগুলা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
শেয়ারবাজার বুঝেন না বলে হতাশ হয়েন না। SEC, BB এমনকি অর্থমন্ত্রীও বুঝেন না। পত্রিকায় যারা রিপোর্ট করে তারাও বোঝে না। পৃথিবী চালায় টাকা, ভাল করে বললে পূঁজিবাদী পৃথিবী চলে টাকায়। এ খেলা এত সহজে বুঝে গেলে ক্যামনে হবে?
খুবই তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টিকোণ!
কিন্তু ... কিন্তু ... আমি যে বুঝতে চাই
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
প্রাইমারি মার্কেট বা IPO: লটারি। পেলে খরচ আছে, না পেলে পয়সা ফেরত। ওভারল সবসময় লাভ দেবে।
সেকেন্ডারি মার্কেট মূলত দুধরনের-
প্রথমত: ছ'মাস থেকে একবছরের জন্য কেনা (কোম্পানির ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি দেখে কেনা) যাকে বিনিয়োগ (invest) বলা হয়। বিনিয়োগের জন্য শেয়ার কেনার সময়, দৃষ্টি থাকে কোম্পানির দিকে, শেয়ারের দিকে না।
দ্বিতীয়ত: এক/কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক দিনের জন্য কেনা যেটাকে ট্রেডিং বলে। ট্রেডিং করার সময় কোম্পানির চেয়ে দৃষ্টি থাকে শেয়ারের দামের মুভমেন্টের দিকে। ট্রেডিং সিম্পলি জিরো-সাম গেম (ব্রোকারের কমিশন, মার্জিন সুদ ধরলে মাইনাস সাম গেম)। আপনি এক টাকা লাভ করলে, সেটা অন্য কারো পকেট থেকে আসবে। কেউ এটাকে হালকা আনএথিকেল মনে করে, তবে ধর্মে কোন বাধা নেই। ভাল ট্রেডিংএর জন্য: বাই/সেল সিদ্ধান্ত, মানি মেনেজমেন্ট, রিস্ক ক্যালকুলেশন, পজিশন সাইজিং সহ প্রচুর বিষয় আছে। বই পড়ে শেখা যায়, তবে সমস্যা হলো, ট্রেড করতে গিয়ে মানুষ সেগুলো ভুলে যায়। একেকটা লস করে একেকটা শিক্ষা হয়। কোন কোন লসে ভাল টাকা চলে যায়।
পড়ার জন্য:
1. Stock Investing for Dummies
2. Beyond Candlesticks - Steve Nison
3. Technical Analysis of Stock Trends- Robert Edward, John Magee
4. A beginner giude to Short term trading - Toni Turner
5. Trading in the Zone- Mark Douglas
6. Trading for a Living- Alexander Elder
7. The undeclared secrets that drive the stock market- Tom Williams
এর মধ্যে ১, ৩, ৪ সহজবোধ্য। ২ ক্লাসিক, ৭ একটু কঠিন। ট্রেডিং সাইকোলজি বোঝার জন্য ৫, ৬ পড়া বাধ্যতামূলক। নেটে গোপন+প্রকাশ্যে কিছু ফোরাম আছে, বাড়তি ম্যাটেরিয়াল মিলে।
বেসিক ধারণা হলে, পুরনো ডাটা নিয়ে ডামি প্র্যাকটিস করতে পারেন। stockbangladesh.com একটা কোর্স দেয়, করতে পারেন। বেসিক ৮,০০০/= এডভান্সড ১৫,০০০/=। ফিলান্টা নামে আরেকটা প্রতিষ্ঠানও ট্রেনিং দেয়। অনেকে ভারত থেকে করে আসে।
------------
কিছু রুঢ় কথা:
১. যেহেতু এটা গেম, হার-জিত আছে। রিস্ক যত বেশী, সম্ভাব্য হার/জিতের পরিমাণও তত বেশী। যে টাকা হারালে আপনার লাইফস্টাইল পাল্টে যাবে না, বা আপনি পথে বসবেন না, সেটা দিয়ে খেলুন।
২. বাংলাদেশে কে কার, কী করে তা জানা প্রয়োজন আছে। DSE, SEC, Bangladesh Bank, Marchent Bank Association, ICB, Mutual Fund Association : কে কী রোল প্লে করে জানলে, পরিস্থিতি বুঝে নিজে নিজে সিন্ধান্ত নিতে পারবেন।
গুডলাক।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আরো একটা রুঢ় কথা বলতে ভুলে গেছি:
১০-২০% লোক এ খেলায় জয়ী হয়, বাকী সবাই হারে। গত কয়দিনে যারা ভাঙচুর করেছে তারা সম্ভবত এই হারু দলের। যারা হারে, তারা হয় ভাগে, না হয় আবার টাকা জোগার করে চেষ্টা করে। যারা ভাগে তাদের রিপ্লেস করে প্রতি বছর নতুন লোক আসে।
আজ দুই কলিগের এবং অফিসের গাড়ির চালকের কাছ থেকেও অনেক জ্ঞান লাভ করলাম।
প্রথমজনের কথায় www.dsebd.org তে ঢুকে বামের প্যানেলের নিচের দিকে সেই টেক্সটাইলের নাম দিয়ে সার্চ দিলাম (HR Textile)। একই অদ্যক্ষরের ৩টা নাম আসলো; সেখান থেকে উদ্দিষ্টটায় ক্লিক করে ঢুকলাম।
তারপর ... অনেক ডেটা দেখলাম।
P/E রেশিও ৭১.৯৫ দেখে বললো অতিমূল্যায়ন। এটা ৪০ এর নিচে থাকা ভালো।
আরো অনেক কিছু। এ্যাত নম্বর টম্বর দেখে বেশ আমোদ লাগলো - কারণ কিছু সিমুলেশন গেম খেলার সময় এমন প্রচুর নম্বর টম্বর দেখা লাগতো, সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
গাড়িচালক জানালো একাউন্ট খুলে তারপর IPO (প্রাইমারি শেয়ার)এর জন্য অনলাইন থেকে ফর্ম নিয়ে আবেদন ব্যাংকে জমা দেয়া লাগে। কয়েকবার খেলা হয় (লটারি) ... ইত্যাদি।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
বুঝলাম যে বুঝব না।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা। তিন নম্বর সেকশনে যেটা বলেছেন, সেটা মনে হয় প্রাইমারি মার্কেট। আর টিভিতে যেটা নিয়ে তোলপাড় করা নিউজ চলছিল সেটা মনে হয় সেকেন্ডারি মার্কেট। আরেকটা ব্যাপার প্রচুর টাকা থাকলে সিন্ডিকেশন করে মার্কেট ম্যানিউপুলেট করা যায়। লোভ যেই ব্যবসার চালিকাশক্তি সেটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চমৎকার সহজবোধ্য লেখা! হাসিব ভাইয়ের কাছ থেকে একটা পোস্ট আশা করতেছি।
নতুন মন্তব্য করুন