যানজট বা যাতায়ত ব্যবস্থাপনায় বাস সবসময়ই প্রাইভেট কারের চেয়ে বেশি আদরনীয় কারণ, একই সংখ্যাক যাত্রী বহন করার জন্য যতগুলো বাস লাগে সেগুলোর বদলে কার ব্যবহার করলে তা অনেক বেশি রাস্তা দখল করে যানজট বাড়ায়। যেমন: ১২০ জন যাত্রী বহন করতে ৩০টা কার কিংবা ৩টা বাস লাগবে। ৩০টা প্রাইভেট কারের চেয়ে ৩টা বাস রাস্তায় এবং পার্কিংএ অনেক কম জায়গা নেয়। এছাড়া জ্বালানী খরচের কথা চিন্তা করলেও ৩০টা কারের চেয়ে ৩টা বাসে চলাচল করা সাশ্রয়ী। তাই সীমাবদ্ধ আকারের রাস্তা দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা পেতে/দিতে ট্রাফিক ম্যানেজারগণ প্রাইভেট কারের বদলে বেশি বেশি বাস চান। এছাড়া একটা পাবলিক বাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরা সময়েই যাত্রী বহন করে। কিন্তু প্রাইভেট কার দুই বা তিন ট্রিপ দেয় আর বাকী সময়ে রাস্তার জায়গা দখল করে থেমে থাকে (পার্কিং)।
কিন্তু ট্রাফিক ম্যানেজার চাইলেই তো হবে না। বাসে খরচ অনেক কম হলেও সেটাই বাসে চড়ার জন্য যথেষ্ট ভাল কারণ নয়। আরো অনেক কারণেই মানুষ বাসে না চড়ে অধিক খরচ করে প্রাইভেট কার ব্যবহার করে। সময়মত বাস না পাওয়ার সমস্যা যেমন রয়েছে (অপ্রতুলতা), তেমনি সাধারণ বাসে যাতায়ত কম আরামদায়ক (গরম, ধূলাবালি), সময়ও অনেকসময় বেশি লাগে। বাস আকারে বড় হওয়াতে এটা প্রাইভেট কারের মত সহজে এঁকে বেঁকে বিভিন্ন বাঁধা পার হয়ে দ্রুত যেতে পারে না। মানুষ প্রাইভেট কার বাদ দিয়ে বাসে চড়তে আগ্রহ পাবে যখন এটা দিয়ে আরামে এবং দ্রুততর গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।
এমন যদি হত, যে আমি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বাস স্ট্যান্ডে গেলাম এবং টিকিট কেটে অপেক্ষায় থাকলাম। লাইনে প্রায় ১০ জনের পেছনে দাঁড়াতে হল। ৫ মিনিটের মধ্যে বাস আসলো। হুড়হুড় করে সকলে গাড়িতে উঠলাম। বাস এসে থামা থেকে আমাদের নিয়ে আবার চলতে শুরু করার পুরা ঘটনাটায় সর্বমোট ৩০ সেকেন্ড সময় লাগলো। বাসটা এয়ার কন্ডিশনড, কোনরকম ঘাম, ধুলাবালি নাই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এটা কোন জ্যামে পড়ছে না, সিগনালেও এটাকে আগে ছেড়ে দিচ্ছে। রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকলেও বাসটা এর জন্য নির্দিষ্ট করা আলাদা লেন দিয়ে সমস্ত জ্যামকে পাশ কাটিয়ে সাবলিলভাবে চলে আসলো। মিরপুর থেকে মতিঝিল আসতে ৩০ মিনিট লাগলো। বাসা থেকে বের হয়ে স্ট্যান্ডে আসা, টিকিট কাটা, অপেক্ষা, বাস ভ্রমন, বাস স্ট্যান্ড থেকে অফিসে আসা সব মিলিয়ে আমার ৫৫ মিনিট সময় লাগলো। ওদিকে আমার বন্ধু একই পথ জ্যাম ঠেলে প্রাইভেট কারে আসতে প্রায় সোয়া এক ঘন্টা লাগলো।
হ্যাঁ ভাই, মেট্রো রেলের এই রকম সুবিধা বাসেও পাওয়া সম্ভব, আর এটা মেট্রো রেলের চেয়ে কম খরচেই করা যায়। পৃথিবীর অনেকগুলো বড় শহরে এই পদ্ধতি দারুন কাজে দিয়েছে। মেট্রোরেলের নাম অনেক জায়গাতেই এমআরটি বা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট - আর এই নাম থেকেই এই পদ্ধতির নাম হয়েছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি।
বিআরটি সিস্টেমে ব্যবহৃত বাসগুলি প্রচলিত বাসের চেয়ে একটু অন্যরকম হয়।
যেহেতু এই বাসের আলাদা লেন থাকে তাই আসা ও যাওয়ার লেনগুলো রাস্তার মাঝের দিকে হলে সেটা সুবিধাজনক হয়। সেক্ষেত্রে প্লাটফর্ম হয় রাস্তার মাঝামাঝি ডিভাইডারের জায়গায়। ফলে এই বাসগুলোর দরজা উল্টা দিকে হয়। যাত্রীদেরকে ফুটওভার ব্রীজ দিয়ে এই স্থানে আসতে হয়।
এবার এই ধরণের সিস্টেম ও বাসের কিছু ছবি দেখুন:
চীনের একটা শহরের স্কেচ, রাস্তার মাঝে বিআরটি আলাদা লেনে হলে স্টপেজগুলো এমন হতে পারে (স্কেচ সূত্র:http://www.lifeofguangzhou.com)
ব্রাজিলের ইকো সিটি কুরিতিবা: দরজা আর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানের জায়গাটা লক্ষ্য করুন। (ছবি: উইকিপিডিয়া)। এখানে সাধারণ বাসের মত দুইপাশে আলাদা প্লাটফর্ম।
জাকার্তা (ইন্দোনেশিয়া) (ছবি: উইকিপিডিয়া)
বোগোটা, কলম্বিয়া (ছবি:http://urbanplacesandspaces.blogspot.com ) আহা জ্যাম এড়িয়ে বাসে আগে যাওয়া যায়।
সিয়াটলে মেট্রোর মত টানেল বা সুড়ঙ্গে ট্রেন না করে বিআরটি করেছে। (ছবি উইকিপিডিয়া)
প্লাটফর্ম আর দরজা হবে এক লেভেলে এমন: (সূত্র: http://transitmy.org/)
বাস বলে কি আর ট্রেনের আমেজ পাওয়া যাবে না? ব্যবহার করুন আর্টিকুলেটেড বাস। (সূত্র:http://nexus.umn.edu/Courses/Cases/CE5212/F2008/CS3/CS3.html )
বিআরটি সিস্টেম প্রায় মেট্রো রেলের মতই। তবে এটা তৈরী করতে অত বড় কোনো আয়োজনের দরকার হয় না। তাই এটা বানাতে মেট্রোর মত অত বাজেট দরকার হয় না। পিক আওয়ার আর অফ পিক আওয়ারে প্রয়োজনমাফিক বাসের সংখ্যা কমানো বাড়ানো যায় বলে এটা অফপিক আওয়ারে মেট্রোর মত খালি যেতে হয় না। আর ট্রামের মত এটা আলাদা কোন সিস্টেম না বলে প্রচলিত লোকবল দিয়েই বাসগুলো এবং রাস্তাগুলো দেখাশোনা (মেইনটেনেন্স) করানো যায়। লাইট রেইলের চেয়েও বিআরটির খরচ কম। যুক্তরাস্ট্রের একটা সরকারী গবেষণামতে বাসের রাস্তা বানাতে প্রতি মাইলে ১৩.৫ মিলিয়ন ডলার লাগে যেখানে লাইট রেইল লাইন বানাতে খরচ ৩৪.৮ মিলিয়ন ডলার/মাইল। তবে সাধারণ হিসাব হল: বিআরটি প্রতি মাইলে - ২লক্ষ থেকে ৫.৫ কোটি ডলার আর লাইট রেইলে সেটা ১.২৪ কোটি থেকে ১১.৮৮ কোটি ডলার। (সূত্র: উইকিপিডিয়া - http://en.wikipedia.org/wiki/Bus_rapid_transit)
বিআরটি সিস্টেমটা ট্রাফিক সমস্যার খুব ভাল সমাধান বলে বিশ্বের অনেক বড় শহরে এটা গড়ে উঠছে। কতগুলো শহরে চালু আছে সেগুলোর নাম লিখলে এই ব্লগের আকার ৩গুন হয়ে যাবে। কৌতুহলী হল উইকিপিডিয়ার লিস্টটা দেখে আসতে পারেন (http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_bus_rapid_transit_systems)।
ঢাকায় গাজীপুর থেকে উত্তরা পরীক্ষামূলক ভাবে বিআরটি করার কথা শুনেছিলাম কোন একটা টক শো তে। ওটা কি আদৌ হবে কি না কে জানে। তবে উইকির লিস্টে কোন দুষ্টু জানি বাংলাদেশের নামও দিয়ে রেখেছে!
পেপার পত্রিকা তেমন পড়া হয়না বলে এই রিপোর্টগুলো চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো:
জনকন্ঠ: ১০-জুলাই-২০১১ গাজীপুর থেকে সদরঘাট বাস পৌঁছাবে আধা ঘন্টায়
কালের কন্ঠ ২৩-জানুয়ারী-২০১০ আসছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট
অনলাইন মিডিয়া সার্ভিস: ২৫-জুন-২০১১ এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট চালু হচ্ছে
বাংলার চোখ ২৮-সেপ্টেম্বর-২০১০? রাজধানীর যানজট কমাতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ
দেশের খবর ১১-এপ্রিল-২০১১ রাজধানীর যানজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ বাস র্যাপিড ট্রানজিট
মন্তব্য
ওবায়দুল কাদেরকে এই পোস্টটা পড়ানো যায় না?
ছি: পর্নোগ্রাফী
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ওটা ছিলেন সা.সম্পাদক সাহেব (যারে সবচেয়ে আধুনিক ভাবতাম!)
ও.কাদের মনে হয় পর্ণোগ্রাফি ভালো পেতে পারে।
facebook
শুধুমাত্র লুটপাট করার জন্য বিআরটি না করে উড়াল সড়ক, মেট্রো-এসব বড় বড় প্রজেক্টে সরকারের উৎসাহ বেশি। বিআরটি করলে তো বখরার টাকা অনেক কমে যাবে।
তাইতো মনে হয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
বিআরটি সিস্টেমটা ভালো। বর্তমান ঢাকার রাস্তার যে হযবরল অবস্থা তাতে বিআরটি চালু আদৌ সম্ভবকীনা সেটা একটা ভাববার বিষয়। তবে সরকার যেটা করতে পারে মানে এখনই করা উচিত তা হলো নুতন যেসব আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে (যেমন পূর্বাচল/ঝিলমিল) সেসব ঘীরে বিআরটি লাইন চালু করা মানে বিআরটির জন্য আলাদা লেন নিদৃষ্ট রাখা।
...........................
Every Picture Tells a Story
হুমম, এই কথাটা আমারও মনে হয়েছে। আমি ঢাকা ভাল চিনিনা। তবে এই রাস্তাগুলোতে বিআরটি চলতে পারে মনে হয়
মিরপুর, মাটিকাটা দিয়ে জিয়া কলোনী (নতুন রাস্তা + ফ্লাইওভার) --- এটা দিয়ে উত্তরা পর্যন্ত।
হাতিরঝিল প্রজেক্টের নতুন রাস্তা বনশ্রী থেকে ধানমন্ডি মোহাম্মাদপুর (পান্থপথ মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড)
উত্তরা - কুড়িল - রামপুরা - সায়েদাবাদ।
এই প্রতিটা রাস্তায় কমপক্ষে ৩টা করে লেন আছে। যার ১টা বা দুইটা সবসময়ই থেমে থাকা রিক্সা, প্রাইভেট কার, ট্রাক, ঠেলা, আর নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে দখল হয়ে থাকে (রামপুরার রাস্তা)। ফলে গাড়িগুলোর জন্য আসলে একটাই প্রহবমান লেন পায় - সবগুলো লেন দিয়ে বাধাহীন গাড়ির প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বাস লেন আলাদা করা যেতে পারে।
এসব জায়গায় চিন্তাভাবনা এবং ইন্টেলিজেন্ট প্লানিংএর অবকাশ আছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
চমৎকার পোস্ট।
আহাহাহাহাহা...... এমন যদি হতোরে...
আলাদা লেনের কথাটা পড়েই হাসি পেয়ে গেল, no offense। অন্য লেন আর বাসের লেনের মাঝখানে বিশাল উঁচা, কমপক্ষে কোমরসমান, ডিভাইডার জাতীয় কিছু না দিলে দেখা যাবে ঐখানেই অন্য কিছু উঠে গেসে। ঢাকায় মিরপুর রোডে রিকশার লেন চালু করার পরে যেমন দেখা যাইত, রিকশা কম থাকলে গাড়িই উঠায়ে টান দিসে, তারপরে কোন একটা চিপায় রিকশার পাশ কাটাইতে গিয়া আটকায়ে গেসে।
আমার মনে হয়, ঢাকায় এত কিছু লাগবে না, কেবল ড্রাইভার, রিকশাওয়ালা, বেবিট্যাক্সি ড্রাইভার সব কয়টারে কান ধরে লেন মেইন্টেন করাইতে পারলে আর গাড়ি থামায়া সিগারেট টানতে যাওয়া ট্রাফিক পুলিশ উঠায়ে অটোসিগনাল মানাইতে পারলে অনেক জ্যাম ছুটে যাবে।
অবশ্য এইগুলা করলে টাকা মারার জায়গা কমে যায়। ঠিক যেই কারণে জেব্রা ক্রসিংয়ের মত সিম্পল জিনিসটা না করে বিশাল বিশাল ফুটওভার ব্রিজ বানানো হয়, আর তারপরে সেটা কেউ সিড়ি ভেঙ্গে ব্যবহার করতে চায় না বলে হকার-হাইজ্যাকারের আড্ডা হয়ে যায়।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
ঢাকার রাস্তায় আলাদা লেন কোমর সমান উঁচু ডিভাইডার দিয়েই করতে হবে, এবং এর কোনো ফাঁক ফোকর থাকা চলবে না। উপরের ছবিগুলো দেখুন, বেশিরভাগ জায়গাতেই এরকম ভৌত ডিভাইডার ব্যবহার করা হয়েছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
হুমমম।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
ড়্যাপিড ট্রাঞ্জিট হলে তো ভালই হত, কিন্তু ভাল কাজে কে কবে উৎসাহ দেখিয়েছে এই দেশে? বিআরটিসির কিছু ভাল বাস সার্ভিস ছিল, আমরা যখন কলেজে পড়তাম, নটরডেম থেকে মোহাম্মদ্পুর। কিন্তু ক্ষমতায় যেয়ে সবাই দেখা যায় নিজেরা বাসের মালিক হয়ে গেছে, তখন মারো সরকারি বাস এর পেটে লাথি
ডুপ্লি ঘ্যাচাং
পেপার পত্রিকা তেমন পড়া হয়না বলে এই রিপোর্টগুলো চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো:
জনকন্ঠ: ১০-জুলাই-২০১১ গাজীপুর থেকে সদরঘাট বাস পৌঁছাবে আধা ঘন্টায়
কালের কন্ঠ ২৩-জানুয়ারী-২০১০ আসছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট
অনলাইন মিডিয়া সার্ভিস: ২৫-জুন-২০১১ এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট চালু হচ্ছে
বাংলার চোখ ২৮-সেপ্টেম্বর-২০১০? রাজধানীর যানজট কমাতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ
দেশের খবর ১১-এপ্রিল-২০১১ রাজধানীর যানজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ বাস র্যাপিড ট্রানজিট
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
বিআরটি করলেও ঢাকার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এখন যে কয়েক হাজার সংখ্যক 'পরিবহন' আর 'গেটলক' সার্ভিস আছে সেগুলোর কী হবে? এগুলো তো সাধারণ লেনে ঠিকই জ্যাম বাধিয়ে বসে থাকবে এক্সিসটিং রাস্তায় একটা লেন কমে যাওয়ার কারণে! আবার সব বাসের জন্য যদি বিআরটি লেন ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে বিআরটি লেনেও জ্যাম বেধে যাবে। উপায় কী তাহলে!
জার্মানীতে যেটা দেখি, তা হলো- প্রতিটা শহরের ট্রান্সপোর্টের জন্য একটা নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারাই সেখানে রুট সিলেক্ট করে বাহনের ব্যবস্থা করে। ঢাকার ক্ষেত্রে সব কর্তৃত্ব বিআরটিসির হাতে রেখেও সবগুলো পরিবহন আর গেটলক সার্ভিসকে এরকম একটা কোম্পানীর আওতায় আনতে পারলে হতো। বিআরটি'র পাশাপাশি এরা বাস সাপ্লাই দিয়ে নির্দিষ্ট বিআরটি লেন ব্যবহার করতে পারে। এতে করে যাত্রী হাতাতে পরিবহন গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে আগে যাওয়ার মানসিকতা থামবে। বাসের সংখ্যাও বাড়বে, যাত্রীদের অপেক্ষা করার সময়ের পরিমান কমবে। রাস্তার অন্য লেনে জ্যামও বাধবে না, অন্তত বাসের বেপরোয়া নাক বাড়ায়ে দেয়ার কারণে।
বাসগুলোকে এয়ারকন্ডিশন্ড হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। লক্করঝক্কর মার্কা না হলেই হলো। প্রচলিত নেটওয়ার্কে বাস যুক্ত করার প্রধান শর্ত হবে 'গুড কন্ডিশন্ড' বাস। বাতিল হয়ে যাওয়া ১৩ নাম্বার আর ৯ নাম্বার মুড়ির টিন বাসে লাল সাদা ডিস্টেম্পার করে সেগুলো যাতে নেটওয়ার্কে যুক্ত করা না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখলেই হবে। আর যদি প্রতি মিনিটে- দেড় মিনিটে একটা করে বাস আসে, তাহলে শহরের অধিক সংখ্যক রুট কাভার করা যাবে আর যাত্রীদের মধ্যেও রীতিমতো হাডুডু খেলে বাসে ওঠার ঐতিহ্য দূর হবে। বাসে যাতাযাতি গাদাগাদি না হলে গরমের দিনেও পরিস্থিতি অতো খারাপ হবে না, যেমনটা এখন হয়।
কিন্তু আসল সমস্যা হলো, এইসব করলে ঢাকা শহর আর পাবলিকের জীবনযাত্রার মান ভালো হয়ে যেতে পারে। এবং মেট্রোরেল, পাতাল রেল, উড়াল রেল, পানিরেল-সব কিছুর তুলায় টাকা মেরে দেওয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে কম। সুতরাং, মন্ত্রী-আমলারা এইসবে পাত্তা দিবেন, এমনটা চরম আশাবাদী কেউও ভাবতে পারবেন বলে মনেহয় না।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার কথা একেবারে ঠিক সমস্যাটাকে পয়েন্ট করেছে। এই বিষয়টা সরকারী কর্তাব্যক্তিরাও জানেন। টক শো তে বাস মালিকদের একীভূত করে কয়েকটা সমবায় সমিতির মত করে তারপর ব্যবসা করানোর জন্য মিটিং সিটিং চলছে বলেও জানিয়েছিলেন।
বর্তমানে যেই বাসগুলো রাস্তায় চলে, ঠিক সেগুলোকেই বিআরটি নাম দিয়ে চালালে সেটা হয়তো প্রচলিত সিস্টেমের চেয়ে ভাল সার্ভিস দেবে কিন্তু বিআরটির সমস্ত সুবিধা দেবে না। কারণ এই বাসগুলোর দরজা ছোট যা দ্রুত ওঠানামা করতে একটা বাধা। এছাড়া দরজা দিয়ে উঠে দুই ধাপ সিড়ি ভাঙ্গতে হয় -- এটাও দ্রুত উঠা নামা করতে একটা বাধা। আর, ভেতরের সিটের আয়োজন এবং দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা বাসের ভেতর দ্রুত নড়াচড়া করতে বাধা দেয়। দ্রুত সার্ভিস দেয়ার জন্য বাসগুলো হওয়া উচিত মেট্রোর বগির মত।
প্রথম দিকে এগুলো দিয়েই আরম্ভ করে পর্যায়ক্রমে পুরাতন বাস অথবা বাসের বডি বদলিয়ে নতুন এবং অধিক উপযুক্ত গড়নের বাস আনাটা একটা ভাল স্ট্র্যাটেজি হতে পারে। (কারণ বাসের বডি এদেশেই তৈরী হয়)
প্রাইভেট কার আরোহীদের বাসে চড়াতে হলে শুধুমাত্র দ্রুত সার্ভিস হলেই হবে না সেটা আরামদায়ক হওয়াও দরকার। তাই এসি বাস হলে সেটা বিশেষ আরেকটা শ্রেণীকেও বাস সার্ভিস ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করবে -- যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে সেটা জরুরী নয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
গাড়ির উপর ট্যাক্স বাড়াতে হবে, পার্কিং যেখানে সেখানে করা যাবেনা, এইটা এনফোর্স করতে হবে। রাস্তায় পার্কিং এ ভাল দামী টিকেট বসাতে হবে তাহলে বাপ বাপ করে সবাই বাস এ চড়বে। ঢাকার মতন ফ্ল্যাট শহর সাইকেল বান্ধবনা, এইটা আরেকটা রহস্য
এই রহস্যের কারণটা কী বলতে পারবেন? আমি নিজে কম দুরত্বে যাতায়াত করি সাইকেলে, এবং আমার মতে সাইকেলে যাতায়াত অনেক বেশি সুবিধাজনক।
'প্রেস্টিজ ইস্যু' ছাড়া আর কোনো কারণ আমার মাথায় আসে না! আমি এখানে একটা মোটামুটি নামী সফ্টওয়্যার কোম্পানির এমডি'কে চিনি, যিনি গরমের দিনে সাদামাটা রূপসা স্যান্ডেল পরে সাইকেল চালায়ে অফিসে চলে আসেন। মাঝে মধ্যে হাফপ্যান্ট পরেই অফিস করেন তিনি। আমাদের দেশের এরকম বহির্বিশ্বে নামী কোনো সফ্টওয়্যার কোম্পানির জনৈক এমডি (নাম বলছি না) কি রূপসা হাওয়াই চপ্পল পরে অফিসে চলে আসার কথা চিন্তা করতে পারবেন কখনো? প্রেস্টিজ থাকবে তাইলে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমার মনে হয় নিরাপত্তার ব্যাপার ও আছে। আমি ছোট থাকতে সাইকেল চালানোর নিয়ম ছিল ছুটির দিন অথবা হরতালের সময়ে। সেই সাথে বড় রাস্তায় ওঠা যাবেনা এই ক্লজ। ঢাকা শহরে তো বাসগুলো প্রাইভেট কারকেই গণ্য করেনা, সাইকেলকে পাত্তাই দিবেনা। আলাদা বাইকলেন করতে পারলে ভাল হত। ঢাকা শহরের বেশীরভাগ দূরত্বই ধরেন ৫কিমি। এইরকম ফ্ল্যাট ৫ কিমি রাস্তায় চলা কোন ব্যাপার ই না কিন্তু।
আমরা সেসোনাল ক্লাসে বিআরটির জন্য সায়েদাবাদ থেকে গাবতলী পর্যন্ত ডিজাইন করেছিলাম।আমার ফাইনাল রিপোর্ট নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু সাহসে কুলোয়নি।বিআরটি ব্লগের মানুষদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ২০০২ তে বিআরটির প্রস্তাবনা থাকলে ও পরে কেউ এটা নিয়ে কথা বলেনি।
তবে শুধু বিআরটি দিয়ে স্থায়ী সমাধান সম্ভব না।ডিসেন্ট্রালাইজেসনের উপর জোড় দেয়ার সময় এসেছে।ছোটো একটা দেশের এক প্রান্ত থেকে আরকে প্রান্তে যেতে ২৪ ঘন্টা লাগে না সেখানে "আলু-কচু" সব ঢাকায় এনে বসিয়ে রাখলে কোনো সলভ কাজে লাগবে না।
আপনার ফাইন্যাল রিপোর্টটি কী নিয়ে ছিলো? নতুন কিছু হলে নিঃসংকোচে লিখুন।
ভাইয়া আমাদেরকে দিয়ে বিআরটির জন্য প্রস্তাবিত তিনটি রুটের একটির জন্য ডিজাইন করানো হয়েছিলো।বলতে পারেন একটি রুটের জন্য সবরকম ডাটা কালেকসন করেছিলাম এবং বিআরটি সাকসেফুলী ইমপ্লিমেন্ট করতে হলে আরো যেসব ব্যাপার আছে যেমন আলাদা পলিসি,আলাদা সিগন্যাল সিস্টেম সবকিছুই ছিলো।পুরো ক্লাসকে সায়েদাবাদ থেকে গাবতলী পর্যন্ত ১ কিলোমিটার করে ভাগ করে দেয়া হয়েছিলো।পুরো ক্লাসের রিপোর্ট স্যার একসাথে করে রেখেছিলেন।স্যারের ইচ্ছে ছিলো এই রিপোর্ট নিয়ে কনফারেন্স করবেন এবং সরকারকে জানানোর চেষ্ট করবেন।পরে সবকিছু কিভাবে যেন চাপা পড়ে গেলো।আপনি সাহস দিয়েছেন তাই আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে পুরো রিপোর্ট এর সামারী এখানে পোস্ট করার চেষ্টা করে দেখবো।
আপনি তাহলে গুছিয়ে লিখে ফেলুন। যেহেতু আপনি প্রযুক্তি আর প্রকৌশলগত বিশেষায়িত শব্দগুলোর সাথে পরিচিত, এবং আপনার পাঠকের বহুলাংশ সেগুলোর সাথে পরিচিত নয়, তাই লেখাটা আমপাঠকের বোঝার উপযোগী করে লিখুন প্লিজ।
এ ব্যাপারে আরো একটা আইডিয়া আছে আমার মাথায়। আপাতত সেটা প্রকাশ্যে বলছি না। আপনার সাথে যোগাযোগের ঠিকানাটা মন্তব্যে জানান, সেটা অপ্রকাশিত থাকবে, কিন্তু মডারেটররা জেনে নিয়ে আমাকে দেবেন। বাকিটা মেইলে বা মেসেজে বিস্তারিত বলছি।
সাধারণ পরিচয় তো হল। এবার ঢাকার পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটি করতে হলে কী কী বাস্তব সমস্যা আসে এবং সেগুলোর টিপিকাল সমাধান কী? ঢাকায় কোন পন্থায় করলে কার্যকর হতে পারে এসব বিষয়ে বিশ্লেষন ধর্মী একটা পোস্ট দিলে আমরা বিষয়টা আরেকটু ভালোভাবে জানতে পারতাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ঢাকার আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, এর যোগাযোগ সমস্যা সমাধানের জন্যে কোনো একক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন নেই, তেমনই এই সমস্যার সমাধানের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্যে কোনো প্ল্যাটফর্মও নেই। লক্ষ লক্ষ লোক রোজ ঘামতে ঘামতে ছুটছে, মনে মনে বা প্রকাশ্যে কর্তৃপক্ষকে বকাবকি করছে, একে অন্যের সাথে হাউকাউ করছে, কিন্তু সুসংগঠিত হয়ে দাবিদাওয়া জানানোর জন্যে সংঘবদ্ধ হতে পারছে না।
দারুন একটা ব্যাপারে জানলাম তো !
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ভীষণ প্রয়োজনীয় একটি লেখা। পরিশ্রম করে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা গণ পরিবহন ব্যবস্থার সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দেবার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
লেখার বিষয়বস্তুর সাথে খুব জুতসইভাবে না গেলেও কয়েকটি তথ্য যোগ করার লোভ সামলাতে পারছি না।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যানবাহন চলাচলের জন্য যেকোনো শহরের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা আবশ্যক। ঢাকা শহরের মোট আয়তন ৮১৫ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার। মানদণ্ড অনুযায়ী ২০৪ কিলোমিটার রাস্তার প্রয়োজন হলেও ঢাকা শহরে প্রধান রাস্তার পরিমাণ ৮৮ কিলোমিটার। বর্তমানে ৮৮ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় পাঁচ লাখ যানবাহন চলাচল করছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকার প্রধান রাস্তাগুলোতে দুই লাখ ১৬ হাজার যান চলাচল করতে পারে। (তথ্য সূত্র- জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর/২০১০)
ঢাকা শহরে ভ্রমণকারীগণের ভেতর ৬২ ভাগ পদব্রজে, রিক্সায় ১৪ ভাগ আর বাসে ১০ ভাগ ভ্রমণ করেন। ত্রিচক্রযান ৬ ভাগ এবং মোটরগাড়িতে চেপে ভ্রমণকারীর সংখ্যা মাত্র ৪ ভাগ। অথচ এই ৪ ভাগেরও কম যাত্রী বহনকারী মোটরগাড়িগুলো শহরের সড়কপথের কমপক্ষে ৭০ ভাগ দখল করে রাখে। (২০১০ সালের শেষে বুয়েট-এর একটি গবেষণা প্রতিবেদন, যা ডেইলি স্টার-এ ২৩ জানুয়ারি, ২০১১ এ প্রকাশিত হয়েছিল।)
ধন্যবাদ, ভ্রমনকারীদের ব্যবহৃত মাধ্যম বনাম ওগুলোর রাস্তা দখল সংক্রান্ত শেষের তথ্যগুলো রেফারেন্স মনে না থাকাতে মিস করছিলাম।
হাতের কাছে রেফারেন্সটা থাকলে এর সাথে ট্রিপ ডিসটান্সের তথ্যগুলোও দিতে পারেন।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ওপরের তথ্যগুলো থেকে ঢাকা শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার একটা করুণ পরিকল্পনাহীন অবস্থার কিছুটা আঁচ করা যেতে পারে। এর উপর এই শহরে প্রতিদিন গড়ে ২৩০ টি গাড়ি যোগ হচ্ছে।
পুরনো গাড়ি উচ্ছেদের অভিযানে দেখা গেছে এতে করে জনভোগান্তি বেড়ে যায়। কারণ এসময় অধিকাংশ গাড়ি বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু মানুষের প্রয়োজন থেমে থাকে না। ফলে এধরনের উদ্যোগে ইতোপূর্বে তেমন সাফল্য আসেনি। বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা না করে যানবাহন তুলে দেয়াটাও খুব গ্রহণযোগ্য নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বিকল্পগুলো কি কি হতে পারে। বি আর টি একটি বিকল্প। তবে এর জন্য উপযোগী রাস্তা শহরের ভেতর কতোটুকু পাওয়া যাবে টা ভেবে দেখার বিষয়। শহরের ব্যস্ততম সড়কের একটি বা দুইটি লেন বি আর টির জন্য ছেড়ে দেবার মত অবস্থা খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না। এর সাথে যোগ হবে চালকদের নিয়ম না মানার সর্বগ্রাসী প্রবণতা। লেন ফাঁকা পেলেই তারা যে কোন দিকে চেপে যায়। একারনে বেশ কয়েকবার লেন সিস্টেম চালু করেও টেকানো যায় নাই। গণপরিবহন কোম্পানিগুলোকে একটা ছাতার নিচে এনে ফেলার জন্য ধুগোদার প্রস্তাবটি খুবই উপযুক্ত মনে হয়েছে। এরকমটি করা গেলে বাসগুলোর যাত্রী ধরার ইদুর দৌড় থামানো যেত। আর তারা সময়মত চলতেও উৎসাহিত হত বলে মনে হয়।
মেট্রো রেলের দুর্নীতির যে ইঙ্গিতটি বিভিন্ন মন্তব্যে এসেছে, এ বিষয়ে আশঙ্কা না থাকলে বোধ হয় ঢাকা শহরে এটি এখনো পর্যন্ত শেষ উপায়। এটি বাস্তবায়নের সাথে যে করেই হোক, ব্যক্তিগত মোটরগাড়ি, যা কিনা শহরের ৭০ ভাগ জায়গা দখল করে থাকে, কমাতে হবে। এর জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ ভেবে দেখা যেতে পারে-
১। ব্যক্তিগত গাড়ি সি এন জিতে রুপান্তরিত না করা
২। ব্যক্তিগত গাড়ির উপর ট্যাক্স বৃদ্ধি করা (তবে তার আগে বিকল্প যানের ব্যবস্থা করতে হবে)
৩। পারকিং প্লেস নির্দিষ্ট করা এবং রঙ পারকিংএর জন্য ফাইন আদায় করা।
----------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি কেবল...
ঢাকায় মনে হয় না র্যাপিড ট্রানসিটের জন্য আলাদা লেন তৈরি করাটা সম্ভবপর হবে। যেটা করা যেতে পারে সেটা হলো উপকন্ঠ (আউটস্কার্টস) দিয়ে তৈরি করা। কারো যাত্রাবাড়ী থেকে ফার্মগেট যাবা দরকার হলে ওটা ধরে শহরের বাইরে দিয়ে দ্রুত কাছাকাছি স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে বাকিটা জেনারেল ট্রান্সপোর্টেশনের মাধ্যমে হলো।
দুবাই মেট্রো বা শিকাগো এল (আরো অনেক উদহারন আছে, তবে আমি এই দুটোতেই চড়েছি শুধু) এর মতন এলিভেটেড মেট্রো লাইনের কথা চিন্তা করে দেখা যেতে পারে। জায়গার কথা চিন্তা করে (এবং ধরে নিলে যে নিউইয়র্ক, আটলান্টা, বোস্টনের মতন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রানজিটের ফিজিবিলিটি ঢাকায় নাই) এটা একটা ভালো পদ্ধতি।
আমার মনে হয় আলাদা লেন তৈরী করা যাবেনা -- এটা খুব জোড়ালো ভাবে দাবী করা যায় না। যখন মহাখালী উড়াল রাস্তা করলো তখন চেয়ারম্যান বাড়ীর দিকের মূল রাস্তাটা (৩+৩=) ৬ লেনের রাস্তা ছিল। কিন্তু এখন সেটা (৪+৪=) ৮ লেন। রেললাইন আর রাস্তার মাঝের একসারি ভবনগুলোও আমার ধারণা অবৈধ ভাবে রেলওয়ে বা রাস্তার জায়গার উপরে গড়ে উঠেছে। কাজেই চাইলে এখানে উচ্ছেদ করে আরো জায়গা বানানো সম্ভব। একই ভাবে অন্য রাস্তাগুলোতেও এমনভাবে জায়গা অব্যবহৃত বা কম ব্যবহৃত অবস্থায় থাকাটা স্বাভাবিক। কয়েকটা হয়তে জটিল বা ক্রিটিকাল স্থান আছে, কিন্তু সেগুলো সমাধানের অযোগ্য কিছু না।
মিরপুরের প্রায় সব মেইন রাস্তার পাকা এলাকা আর ফুটপাথের মাঝখানে প্রতিপাশে এখনও আরও ২টা করে লেইন করার জায়গা রয়ে গেছে বলে মনে হয়। অন্ততপক্ষে ১+১ লেইন করলেও সেখানকার গাছপালা কাটা পড়বে না।
একসময় (১৯৯০ এর দিকে) ফার্মগেটের জ্যামকে সমাধানের অযোগ্য সমস্যা মনে হত। এখন কিন্তু সেই জ্যাম নাই। গ্রীন রোডে তখন নিউমার্কেট ফার্মগেট টেম্পুগুলো প্রধান সড়ক পার হয়ে এদিকের হলিক্রশের কোনা পর্যন্ত আসতো। ফলে জ্যাম বাধ্যতামূলক ছিল। এখন সেই রকম কিছুই নাই।
আনন্দ সিনেমা হলের সামনের জায়গাটা আগে এমন ছিল না। ওখানে ইতর স্টাইলে গাড়ি রেখে জ্যাম তৈরী হত। এখন বিভিন্ন রুটের গাড়ির জন্য ৩টা চ্যানেল বা পথ আলাদা করে দিয়েছে। ফলে বাসগুলোর সেরকম ইতরামী পার্কিং করার সুযোগ থাকে না।
জাপানে আমি যেখানে থাকতাম সেখানকার এলাকাগুলোকে সংযোগকারী অনেক প্রধান রাস্তাই মাত্র ২ লেনের (আসা ১ + যাওয়ার ১)। ওগুলোতে কখনও জ্যাম লাগতো না। কারণ সকলে স্পিড লিমিট মানে এবং কেউ নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া রাস্তায় গাড়ি থামায় না। বাস থামে বাস-বে তে (bus bay), ফলে রাস্তার যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। কিছু কিছু জায়গায় বামে একটা অতিরিক্ত লেন আছে, কিছু জায়গায় ডানে অতিরিক্ত লেন আছে ... ... এগুলো হল ওভারটেকিং এর জন্য। বড় বড় ট্রাকগুলোকে ওভারটেক করার জন্য ঐ এলাকাগুলো ব্যবহার করতাম।
এরকম ভাবে অনেক রাস্তাতেই আরো অনেক কিছু করা সম্ভব। একজন ট্রাফিক প্লানার তার চোখে অনেক সমাধান ও সমস্যা দেখতে পাবে যেটা সংশ্লিষ্ট নয় এমন আমাদের চোখে পড়বে না। কাজেই আমি সম্ভাবনার আশা ছাড়ছি না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আলাদা লেন অবশ্যই তৈরী করা যাবে। আমাদের প্রস্তাব ছিলো ঢাকা উড়াল সড়কের জন্য নির্ধারিত জায়গায় উড়াল সড়কের পরিবর্তে বিআরটি চালু করলে তা অনেক সাশ্রয়ী ও টেকসই হবে।
উফ্ এই দুধর্ষ লেখাটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো ব্যস্ততায়। এসটিপিটা ডাউনলোড করে রেখেছি অনেকদিন হল, কিন্তু পড়ার সময় করে উঠতে পারি নাই এখনো
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
সমস্যা তো সব এক জায়গাতেই। আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞান এখন এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে সকল সমস্যারই সমাধান সম্ভব, দরকার শুধু সমাধান করার ইচ্ছে ও চেষ্টা যেটাই আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আমলাদের মধ্যে নেই। আগে প্রয়োজন ক্ষমতার দখল, তারপর সব করতে পারবেন।
চমৎকার প্রস্তাবনা ! তবে এর আগে মানে এখন যদি আরেকটা ব্যবস্থা নেয়া যেতো, যেমন ভালো কিছু বিআরটি বাস (বর্তমান বিআরটিসির সর্বশেষ সংস্করণগুলোর আদলে) রাস্তায় নামিয়ে ঢাকায় ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা যেতো। তাহলে কিন্তু এখনো বর্তমান যানজটের পঞ্চাশভাগ বা তারও বেশি কমে যাবে বলে ধারণা করি। রাস্তায় বেরুলেই দেখা যায় একটা পাবলিক বাসের সাথে সত্তরটা প্রাইভেট কার। এতে করে বর্তমান চারলেনের রাস্তা বা কোথাও কোথাও দুই লেনেই অনেক বেশি শৃঙ্খলা আনা যেতে পারে মনে হয়।
যেদিন রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ি খুব কম থাকে সেদিন মিরপুর থেকে শাহবাগ আসতে সর্বোচ্চ আধঘণ্টা সময় নেয় দেখেছি। তবে প্রাইভেট যান নিয়ন্ত্রণের আগে অবশ্যই বিকল্প হিসেবে মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক সার্ভিস চালু করা অবধারিত।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
শুধুমাত্র স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাস সার্ভিস বাড়িয়ে সেটার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলে ঢাকার জ্যাম ২৫% কমে যাবে বলে আমার ধারণা।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
নতুন মন্তব্য করুন