বেয়াড়া ল্যাপটপে উত্তেজনাময় হাতুড়ে টেকিগিরির বিরক্তিকর রকম লম্বা কাহিনী

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: শুক্র, ১৭/০২/২০১২ - ৪:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে (১৫-ফেব্রুয়ারী-২০১২) চরম একটা কাজ করলাম। সেইটা বলার আগে একটু পুরানা কাসুন্দি ঘেটে নেই, নাহলে এই কাজটা চরম কাজ হইলো কিভাবে সেটা পুরাপুরি বোঝা যাবে না।

১.
আমার ল্যাপটপের নাম হল NEC Lavie। কামলা খাটানোর সুবিধার্থে আজ থেকে প্রায় ৬-৭ বছর আগে আমার জাপানি প্রফেসর কিনে দিয়েছিলো এটা। ফলে যথারীতি এটা একটা জাপানি ল্যাপটপ, যার অপারেটিং সিস্টেম হল জাপানি উইন্ডোজ, সাথে জাপানি মাইক্রোসফট অফিস সহ বিবিধ সফটওয়্যার যার বেশিরভাগই আমি কখনো ব্যবহার করতে পারিনি। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় ছিল এই সিস্টেমের জাপানিকে ইংলিশ করা যায়না। অতি কষ্টে এবং ঠেকে ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষা'র জাপানি ক্যারেকটার (কাঞ্জি) চিনে রেখেছিলাম, তাই বায়োসটার ভাষা পরিবর্তন করে ইংলিশ করতে পেরেছিলাম, কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমে নো-চান্স। দেশে থাকার সময়ে পাইরেটেড উইন্ডোজ চালানোর অভিজ্ঞতা থাকার ফলে মোটামুটি আন্দাজে ভর করে এটা চালিয়ে নিতাম --- আর এতে আমার প্রফেসর ম্যালা খুশি হয়েছিলো বলে মনে হয়েছিলো --- বলতো তুমি তো জাপানি সিস্টেম চালাচ্ছ দারুনভাবে; তবে আমি বুঝতাম এটার কষ্ট। ইংলিশ ফায়ারফক্স, ওপেন অফিস, গিম্প ইত্যাদি সফটওয়্যার (ফ্রী) তখন কিছুটা উদ্ধার করেছিলো আমাকে।

তবে ভাষাজনিত সমস্যা থাকলেও এটার মধ্যে নানান রকম কেরামতি ছিলো\আছে। এটাকে হোম এন্টারটেইনমেন্ট মেশিন হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছিলো। তাই এটার সাথে একটা ডকিং পোর্ট/ফ্রেম দিয়েছিলো, যেটাতে ল্যাপিটাকে লাগালে সেটা রনপা লাগানো মানুষের মত উঁচু হয়ে যেত। ডকিং পোর্টটা ছবির স্ট্যান্ডের মত হেলান দিয়ে রাখা যায়, এর মধ্যে আবার বেশ ভাল স্পিকারও আছে। আর দুর থেকে এটাকে চালানোর জন্য আছে একটা বিরাট লম্বা রিমোট কন্ট্রোলার (টিভির রিমোটের মত), যা দিয়ে ডিভিডি চালানোর সমস্ত বিষয় আরামে নিয়ন্ত্রন করা যায়।

ইন্টেল সেন্ট্রিনো মোবাইল টেকনোলজির প্রসেসর (১.২ গিগাহার্জ), ৫১২ মেগা র‍্যাম, আর ১২ ইঞ্চি ওয়াইড স্ক্রিনের এই মেশিনটা সেই সময়ের হিসেবে বেশ ভাল মেশিনই ছিল বলা চলে। পড়া শেষ করে দেশে আসার পর আমার বউ এবং মাঝে মাঝে আমি এটা দিয়ে ধুমসে ডিভিডি দেখতাম।

২.
তবে সুখের দিন বেশি স্থায়ী হল না। এক দিন সন্ধ্যায় এটার স্ক্রিন ইন্তেকাল করলো। এটার ভিডিও আউটপুট থেকে ডেস্কটপের সাথে ব্যবহার করা মনিটর লাগিয়ে দিলে এটা দিব্যি চলছে দেখা যেত। তাই চিকিৎসার জন্য এটাকে অতি সত্বর ডাক্তার দেখানো হল। ছোট ভাইয়ের বন্ধুর কম্পিউটারের ব্যবসা - ওর পরামর্শে এটাকে গুলশান-২ এ ইব্রাহিম টেকনোলজি নামক দোকানে এক কামেল কারিগরের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু বাংলাদেশে এই অপ্রচলিত মডেলের জিনিষ তো নাই, তাই এর উপযুক্ত পার্টসও নাই। তারপরেও তিনি এটাকে সুস্থ করার চেষ্টা করলেন। আমার সামনেই মনিটরের সামনের প্যানেল খুঁচিয়ে তুলে অপারেশন শুরু করলেন। ওখানকার আই.সি টাকে খুলে সেটার কাছাকাছি মাপের আরেকটা আই.সি ঝালাই করে লাগালেন। কিন্তু এতে মেশিনটায় ভুতে ধরা রোগীর মত নিজে নিজে পাওয়ার আসা যাওয়া করতে থাকলো। ভয়ে বেচারা রোগী ছেড়ে দিলেন - আর আমাকে বললেন এটার ইনপুট আউটপুট ডিভাইসও নষ্ট হয়েছে। আমি আর কী করা ... ওটাকে নিয়ে বাসায় আসলাম।

ব্যর্থ চিকিৎসা নিয়ে এখন ওটা মনিটরে লাগিয়েও কাজ করার উপায় থাকলো না। ফলে ছোট ভাইয়ের বন্ধু বললো: ভাইয়া এক কাজ করি, এটার সিডি ড্রাইভ আর হার্ডডিস্ককে পোর্টেবল কেসিং লাগিয়ে পোর্টেবল করে দেই - অন্তত ওগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। তা-ই করা হল। হার্ডডিস্কটা দেখি আবার SSD বা সলিড স্টেট ড্রাইভ, অর্থাৎ কোন ঘূর্ণনশীল ডিস্ক না বরং পেনড্রাইভের মত কারবার --- এই রকম একটা সলিড স্টেট ড্রাইভ দিয়ে পুরাদস্তর কম্পিউটারের মূল হার্ডডিস্ক হতে পারে তা আগে কখনো জানতাম না - জাপানিদের কাজ কারবারই আলাদা। আবার ডিভিডি রাইটার ড্রাইভটার কোন ট্রে নাই, এটা স্লট টাইপ স্লিম একটা জিনিষ। বাজারে দেখেছি, এগুলোর দাম ট্রেওয়ালাগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুন! -- ইশ্ সেনসেই ভাল জিনিষ কিনে দিয়েছিলেন, শুধু যদি এটা ইংলিশ হত!!

৩.
দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়। এভাবে প্রায় বছর খানেক পর, সেই ছোট বন্ধু খবর দিল যে, ভাইয়া ওটার পার্টস এবার পাওয়া যেতে পারে, এবার আরেকবার চান্স নিয়ে দেখি। এবার অবশ্য অপারেশনের সময় সামনে থাকার রিস্ক নেই নাই। কিন্তু ল্যাপিটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরল। খরচও খুব একটা বেশি লাগে নাই। তবে ইতিমধ্যে পোর্টেবল হিসেবে ঘুরাঘুরি করার সময় ডিভিডি রাইটার দুই এক বার মেঝেতে লাফিয়ে নেমেছিলো, এবং এতে এর সুন্দর চেহারা এবং কর্মশক্তি হ্রাস পেয়েছিলো। ল্যাপিতে লাগানোর পর দেখি এটা দিয়ে আর বুটেবল সিডি থেকে মেশিন বুট করাতেই পারি না। ঘাড়ে সিকিউরিটির রিস্ক এবং সেজন্য লিনাক্সের ভুত স্থায়ী আসন পেয়েছে -- তাই লিনাক্স ইনস্টলের জন্য চেষ্টার অন্ত নাই। কারণ লিনাক্স ছাড়া এটার উইন্ডোজ এক্সপি দিয়ে এই অরক্ষিত দেশে নেট কানেক্ট হয়ে আমার এ্যাত কষ্টের সব ডেটা আর অরিজিনাল সফটওয়্যারগুলো হারানোর ইচ্ছা ছিল না। জাপানে এটার এন্টিভাইরাসের লাইসেন্স ঠিক ছিল, আর ইউনিভার্সিটির সার্ভারও অনেক রকম ফায়ারওয়াল দিয়ে সুরক্ষিত ছিল।

সমস্যা হল সিডি\ডিভিডি ড্রাইভ কাজ না করুক, ইউএসবি ড্রাইভ থেকেও এটাকে বুট করাতে পারি নাই। এটার ইস্পেশাল বায়োসে সেই অপশন নাই। ঠিক করলাম বায়োস আপডেট করবো ..... কিন্তু কিসের কী! এর বায়োসের ভার্সন পুরাপুরি এলিয়েন .... গুগল মামাও কিচ্ছু কইতে পারে না। কাজেই বায়োস আপডেটের প্রজেক্টও ফেইল। এর মধ্যে আকীক নামের এক লিনাক্স পাগল (আসলে ভাল ছেলে) বললো উপায় আছে ভাইয়া, Plop ব্যবহার করেন। কিন্তু প্লপ আবার কী জিনিষ -- গুগলে গুতাগুতি , ঘুটাঘুটি করে তেমন একটা সুবিধা করতে পারলাম না। আর বেশি ঘুটাঘুটির সময়ও পাচ্ছিলাম না। এটার কথা ভুলতেই বসেছিলাম।

৪.
অন্য সব দিকের মতই এই আইটি বা কম্পিউটারের বিষয়টাতে অনেকদিন ধরেই কোনরকম ঘাটাঘাটি বা চ্যালেঞ্জ নাই। নাই কোন ভাইরাসের ঝামেলা, নাই কোন টেনশন - এক্কেবারে ম্যাড়মেড়ে লাইফ! তবে কথায় আছে যে, সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। আমারও তাই হয়েছে হয়তো, ভাবলাম অফিসের ডেস্কটপটাতে আরেকটা অপারেটিং সিস্টেম রাখি পাশাপাশি। কারণ দেড় বছর ধরে ঝামেলাহীন উবুন্টুর এই ভার্সনের চেহারা দেখতে দেখতে বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। ছয় মাস পরপর (এপ্রিল আর অক্টোবরে) উবুন্টুর নতুন ভার্সন বের হলেও আমি দুই বছর পর পর সিস্টেম আপগ্রেড করে নতুন লং টার্ম সাপোর্ট ভার্সন লাগানোর পক্ষে। কিন্তু এবার উবুন্টুর নতুন ভার্সনে সম্পুর্ণ নতুন লুক দিয়েছে বলে ভাবছিলাম এই বয়সে অত পরিবর্তনের উত্তেজনা সহ্য হবে না। আমার পুরাতন লুকই ভাল লাগে। এদিকে লিনাক্স মিন্ট দেখতে ভাল হলেও উবুন্টুর চেয়ে একটু বেশি ভারী। মিন্টের ডেবিয়ান এডিশন বের হয়েছে, যা উবুন্টুর বদলে সরাসরি ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে বানানো ---- তবে চেহারা একই রয়েছে। এই ভার্সনটা নাকি রোলিং ডিস্ট্রো, অর্থাৎ কখনই নতুন ভার্সনে যাওয়ার জন্য সিস্টেম ইনস্টল করে আপগ্রেড করতে হবে না, বরং এটা নিয়মিত আপডেট আপগ্রেড হতে থাকবে।

ওহ্ এই বিষয়টা বেশ ভাল মনে হল। কারণ নতুন ভার্সন ইনস্টল করলে সেটাকে আবার নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে সময় লাগে। এছাড়া সিডি বা ডিভিডির সাথে থাকে না অথচ আমি ব্যবহার করি এমন সফটওয়্যারগুলোও (ক্যাড, পিডিএফ শাফলার ইত্যাদি) আবার নতুন করে ইনস্টল করা লাগে। রোলিং ভার্সনে এই ঝামেলাটুকু এড়ানো যাবে মনে হল। আর খুলনার জাহিদ সুমন ভাই ইমেইলে জানালেন তার অফিসের কয়েকটা পিসি এই সিস্টেম দিয়ে বেশ ভাল চলছে - এটা মূল মিন্টের চেয়ে হালকা। তাই দিলাম ডাউনলোড (লিনাক্স মিন্ট ডেবিয়ান এডিশন = lmde)। ১.২ গিগা ডাউনলোডের লোডটা অফিসের নেটের উপর চাপিয়ে দিলাম (হিঃ হিঃ)। ডাউনলোড হওয়ার পর সেটাকে আমার মাল্টিবুট ইউএসবি ড্রাইভে যোগ করে নিলাম।

৫.
১৩ই ফেব্রুয়ারী আমার অফিসের ডেস্কটপটা সেই ইউ এস বি দিয়ে বুট করে দেখলাম ..... দারুন। আসলেই দেখি এটা মেমরি খায় কম। বাসার ৫১২ মেগা র‍্যামের ডেস্কটপও এটা দিয়ে বুট করে দেখলাম .... ভাল চলছে। এমন সময় মাথায় ভুত চাপলো ... সুখে থাকলে যেই ভুত কিলায়, এইটা সেই ভুত। অবশ্য ভুত চাপার সাথে এইটার জটিল সম্পর্ক আছে। কাহিনী হইলো, আমি যখন মাল্টিবুট ইউএসবিটা এটা(lmde) দিয়ে ঠিক করছিলাম তখন মাল্টিবুট করার সফটওয়্যারটার (নাম multisystem) বিভিন্ন মেনুগুলো খুলে খুলে দেখছিলাম - আরো কত কী অপশন আছে! ওখানেই একটা অপশনে এই ভুতটা লুকিয়ে ছিল!! অপশনটায় লেখা ছিল "আসুন প্লপ ইনস্টল করি" (ইংরেজিতে)।

কৌতুহল খারাপ জিনিষ; এই ভয়ংকর প্রবৃত্তিটা (কৌতুহল) আমাকে ঐ অপশনে ক্লিক করিয়ে ফেললো। না না ..... এটা প্লপ ইনস্টল করতে পারে নাই, বরং বললো - ঠিক আছে এখন প্রথমে প্লপ ডাউনলোড করি। কিন্তু বললেই তো আর হল না, আমার অফিসের সার্ভারে কেরামতি করা আছে - সরাসরি ডাউনলোড করা যায়, কিন্তু অন্য সফটওয়্যার কাউকে ডেকে ডাউনলোড হতে বললে করতে দেয় না (সিকিউরিটির জন্য এমন করা মনে হয়)। কাজেই ডাউনলোড হল না, কিন্তু এটার ভুত স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রাউজার খুলে আমাকে প্লপের ওয়েবসাইটেও নিয়ে গেল।

ডাউনলোড হচ্ছেনা বলে ছেড়ে দিলেই হতো কিন্তু আমি ভুতের আছড় পরা লোকের মত ওখান থেকে সরাসরি প্লপ ডাউনলোড করলাম। তারপর অনলাইনে ওটার ডকুমেন্টেশন খুলে বায়োসে ইউএসবি বুট সাপোর্ট না থাকলে উইন্ডোজ থেকেই সেটা কিভাবে আনানো যায় সেটা পড়লাম। এই উইন্ডোজের ব্যাপারটা মাথায় আসার কারণ ল্যাপটপটা অফিসে আমার টেবিলেই রাখা ছিল। বাসার টেবিলে পড়ে থেকে থেকে ধুলা জমে যাওয়া এটা আমার অফিসের টেবিলে আসার পেছনেও আরেকটা ছোট কাহিনী আছে।

আগামী মাসের ৩ তারিখে একটা এক দিন ব্যাপী সার্টিফিকেট কোর্স অফার করেছি যেটাতে লিব্রে অফিস, লিব্রে ক্যাড আর গিম্প দিয়ে ছাত্র বা সাধারণ চাকুরীজীবিদের দৈনন্দিন কাজ করার উন্নততর টেকনিকগুলো শিখিয়ে দেব। এই ফ্রী সফটওয়্যারগুলোর আবার উইন্ডোজ ভার্সনও পাওয়া যায়। আমি নিশ্চিত যে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর প্রশিক্ষণার্থীরা এগুলো বাসায় চালিয়ে দেখতে চাইবে। লিনাক্স চালালে তো কথাই নাই - এগুলো প্রায় সবই বিল্ট ইন থাকে, উইন্ডোজ হলে যেন ডাউনলোড না করেই আমার কাছ থেকে কপি করে নিতে পারে সেজন্য এগুলোর উইন্ডোজ ভার্সন ডাউনলোড করে রাখলাম। ল্যাপটপটাতে উইন্ডোজে ওপেন অফিসের পুরাতন ভার্সন ছিল - এটাতে মাইক্রোসফট অফিস লাইসেন্স করা কপি হলেও জাপানি ভাষার ইন্টারফেস, তাই বাধ্য হয়ে ওপেন অফিস (ইংরেজিতে) ব্যবহার করতাম। তাই ভেবেছিলাম, লিব্রে অফিসের সর্বশেষ ভার্সনটা ঐ ওপেন অফিসের বদলে ইনস্টল করা দরকার। তাছাড়া লিব্রে ক্যাডের উইন্ডোজ ভার্সনও এর আগে চালিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি, সেটাও চালিয়ে দেখা দরকার। এসব কাজ বাসায় করা মুশকিল, মেয়ে এসে বাপের সম্পত্তি পেয়ে যা খুশি তাই করার চেষ্টা চালাতে পারে - তাই ঐ ল্যাপটপটা অফিসে নিয়ে এসেছিলাম।

৬.
ল্যাপটপ রাখা ছিল চোখের সামনেই টেবিলে; ঐদিকে প্লপের ডকুমেন্টেশন পড়ে বুঝলাম প্রথমে ডাউনলোড করা ফাইলটা এক্সট্রাক্ট করে সেখানকার একটা নির্দিষ্ট ব্যাচ ফাইল চালালেই মাস্টার বুট রেকর্ড নামক সুরক্ষিত জায়গায় প্লপ ইনস্টল হয়ে যাবে, তখন বুট করার সময় ইউএসবি ব্যবহার করার অপশন দেখাবে। দিলাম ব্যাচ ফাইলে এক ক্লিক -- "এটা একটা কঠিন অপারেশন, ক্ষয়ক্ষতি হলে দায় দায়িত্ব নিতে পারবো না' -- এমন একটা মেসেজ আসলো। তাই এটা না করে বরং চেক করে দেখলাম এই ল্যাপটপে এমন কী ফাইল আছে যার ব্যাকআপ কপি রাখি নাই অন্য কোথাও। খুঁজে খুঁজে বুলেট ট্রেনে বসে ক্যামেরায় রেকর্ড করা কয়েকটা পুরাতন ভিডিও পাইলাম - যার ব্যাকআপ রাখা হয় নাই বলে মনে হল। ওগুলো পেনড্রাইভে ভরে নিলাম প্রথমে। জীবনের রিস্ক নিয়ে ডাক্তারদের বন্ডে সই করে এসেছি কত, এই কম্পুর জীবন তো আর তার চেয়ে বেশি দামী না --- তাই এরপর প্লপ ইনস্টলারকে দিলাম ওক্কে। ব্যাস ইনস্টল হয়ে গেল।

এরপর ল্যাপি চালু হলে দেখি কথামত উইন্ডোজ আর প্লপ দুইটা অপশন এসেছে। প্লপ সিলেক্ট করার পর আবার বলে - এবার আসল ইনস্টল হবে। ইনস্টল করতে হলে ১ চাপুন, হ্যান করলে ২ চাপুন, ত্যান করলে ৩ চাপুন, ... ... .... বের হয়ে যেতে চাইলে ৯ চাপুন। এখানেও ব্যাপারগুলো কমন পড়লো .... কারণ কোন জরুরী জায়গায় ফোন করলেই এরকম কথা শুনায় - দিলাম ১। এবার, আপনি ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন, কিংবা এই নম্বরটি খালি আছে -- এরকম কিছু হল না, সত্যিই ইনস্টল হয়ে গেল। তারপর ঐ মেনুতে ঢুকতে সম্ভবত Esc চাপলাম। আহ্ কি শান্তি --- ইউ এস বি থেকে বুট করার অপশন দেখা যাচ্ছে।

৭.
শান্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। কারণ ঐ অপশন দেয়ার পর মেসেজ আসলো ১নং পোর্টে মাউস আর ৩ নং পোর্টে ইউএসবি ড্রাইভ পেয়েছি -- তারপর সব খামোশ ... হ্যাং। উফ্ এ কি জ্বালা! আচ্ছা ঠিকাছে: মাউস বাবাজী অফ যাও, আর ইউএসবি বাবাজি আপনি ১ নং পোর্টে আসেন .... রিস্টার্ট -- নাহ্ তা-ও হল না। আবার অফিসের পিসি থেকে গুগলে গুতাগুতি ... সার্চ দ্যা খোঁজ = প্লপ কাজ করছে না --- দেখি আরও আদমের এই সমস্যা হয়েছিলো। বিভিন্ন রকম সমাধান/অপশন - শিফট চেপে ধরে করুন, অল্টার কী চেপে ধরে করুন -- ফোরামে উত্তর আসে হচ্ছে না হচ্ছে না .... তাহলে এই নতুন ইনস্টলারটা বানালাম -- ডাউনলোড করে দেখেন এটাতে কাজ হয় কি না। ফোরামে তাদের বিশাল সব আলাপ সালাপগুলো পড়াশোনা করে একটু বেদিশা হয়ে গেলাম। ভুতের আছড় ছুটার মত অবস্থায় পৌঁছে গেলাম। কিন্তু এ্যাতদুর এসে চ্যালেঞ্জে হেরে যাব? হঠাৎ প্রায় ভৌতিকভাবেই কিছু না ভেবে Shift চেপে ইউএসবি থেকে বুট করুন‌-এ দিলাম এন্টার। বাহ্ .... এইবার এইবার খুকু চোখ খুললো। ইউএসবি থেকে সুন্দর বুট করলো। নপিক্স চালালাম, মিন্ট ডেবিয়ান চালালাম - শান্তি শান্তি। সবে তো যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের ফলাফল পেলাম .... লক্ষ্য এখনও বেশ দুরে।

৮.
এবার শুরু হল ফাইনাল ঘর গুছানোর পালা। উইন্ডোজ চালু করে সি ড্রাইভ ডিফ্র্যাগমেন্ট করতে দিলাম। এটাতে অনেক সময় লাগবে, তাই ওটা করতে দিয়ে অন্য কাজ করতে লাগলাম। সব শেষ হতে হতে সন্ধা পেরিয়ে গেল। সব গুটিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে সব শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে মূল অপারেশনে বসলাম। ইউএসবি থেকে বুট করলাম তারপর একটু দুশ্চিন্তা নিয়েই ইনস্টল বোতামে চেপে দিলাম। এর আগে প্রচুর সংখ্যক বার লিনাক্স ইনস্টল করেছি। এমনকি আমার নেটবুক এবং ক্লাসরুমের দুর্বল পিসি কয়েকটিতে ডেবিয়ান ভিত্তিক নপিক্সও সফলভাবে ইনস্টল করেছি এবং চালাচ্ছি। কিন্তু ডেবিয়ান মিন্ট ইনস্টলেশনের যেই টিউটোরিয়াল দেখেছিলাম সেটাতে বুট সেক্টর আলাদা একটা ৫১২মেবা পার্টিশন করে রেখেছিল। আমার তেমন কোনো ইচ্ছা ছিল না। যা হোক ইনস্টলেশনের ডিস্ক পার্টিশন পর্যায়ে এসে সি ড্রাইভের ডেটা সহ সেখানে আরও কয়েক গিগা জায়গা ছেড়ে দিয়েও সেখান থেকে প্রায় ২৯ গিগা জায়গা আলাদা করতে পারলাম। তারপর যেই না সেখানে নতুন পার্টিশন বানাতে বলি, ব্যাটা বলে আমার নাকি ৪টা প্রাইমারী পার্টিশন ইতিমধ্যেই আছে, দরকার হলে একটা মুছে তারপর সেটাকে এক্সটেন্ডেড পার্টিশন বানিয়ে তার ভেতরে যত খুশি পার্টিশন বানানো যাবে।

ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম কথা তো সত্যি, আসলেই ৪টা পার্টিশন যা আগে খেয়াল করি নাই ---- উইন্ডোজ থেকে একটাই পার্টিশন দেখায়, বাকিগুলো লুকানো থাকে। আর আগে থেকেই ৪ পার্টিশনের ফ্যাকড়াটা জানা ছিল। প্রথমে সি ড্রাইভ ৩১ গিগা - উইন্ডোজ এক্সপি, তার পাশে ফাঁকা করা ২৯ গিগা (আনএলোকেটেড), এর পাশে ২ গিগার ইনস্ট্যান্ট ফ্ল্যাগ দেয়া একটা ড্রাইভ, এরপর ৭ গিগার একটা ড্রাইভ আর সর্বশেষে ১১ গিগা NEC-Restore। শেষের ড্রাইভটা দেখে বুঝলাম সেটাতে অরিজিনাল অপারেটিং সিস্টেমের ব্যাকআপ, যা অরিজিনাল ডিভিডি দেয়ার বদলে এভাবে দিয়ে থাকে -- অত দামী জিনিষ মোছার প্রশ্নই ওঠে না। মাঝের ২ গিগার ড্রাইভটাতে হোম এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমের অপারেটিং সিস্টেম রাখা - যা এই ল্যাপটপের নিজস্ব বৈশিষ্ট --- এটার কারণেই বন্ধ ল্যাপির ড্রাইভে মিডিয়া সিডি ঢুকালে উইন্ডোজ চালু না করেই ওগুলো চালাতে পারে এবং ইন্টারফেস আসে। এইটাও মুছলে আর কোথাও পাব না। বাকী রইলো ৭ গিগার ড্রাইভটা। ইনস্টলার থেকে বের হয়ে গিয়ে ব্রাউজারে ওটা খুলে দেখলাম ওতে কয়েকটা ফোল্ডার আছে যা দেখে মনে হচ্ছে এটা দিয়ে সিস্টেম ব্যাকআপ নেয় বা রিস্টোর করে। এটা আসলেই আমার কখনো কাজে লাগেনি। তাই এটাই মুছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

৯.
ইনস্টলারে না ঢুকে জিপার্টেড নামক পার্টিশনার দিয়ে এই কাজটা সহজেই করলাম। জিপার্টেড মিন্টের লাইভ ডিভিডিতে দেয়াই থাকে। এখন আমার ডিস্কের অবস্থা হল: ৩১ গিগা উইন্ডোজ - ২৯ গিগা ফাঁকা - ২ গিগা ইনস্ট্যান্ট - ৭ গিগা ফাঁকা - ১১ গিগা রিস্টোর। ফাঁকা জায়গা দুইটার মাঝখানে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে ইনস্ট্যান্ড ড্রাইভ। এখন তিনটা প্রাইমারী ড্রাইভের পর আমি শুধু একটা এক্সটেন্ডেড বানাতে পারবো -- তাই ফাঁকা জায়গাগুলো একসাথে থাকা দরকার।

এই সময় মনে পড়লো যেভাবে সি ড্রাইভ রিসাইজ করেছি সেই মেনু আইটেমটা আসলে "রিসাইজ/মুভ পার্টিশন" লেখা। তাহলে এটা দিয়ে নিশ্চয়ই মাঝের কাবাবমে হাড্ডি পার্টিশনটাকে এক পাশে সরিয়ে ফেলা যাবে। এইনা ভেবে আমি ওটা সিলেক্ট করে সেই কমান্ড দিলাম, তারপর গ্রাফিকালি ড্রাইভটাকে মাউস দিয়ে ধরে টেনে ফাঁকা জায়গার ডান পাশে নিয়ে আসলাম। এতে এর বামে ২৯+১১ = ৪০ গিগার মত জায়গা একসাথে হল। সেখানে পুরা অংশ নিয়ে প্রথমে একটা এক্সটেন্ডেড পার্টিশন বানালাম। তারপর এর ভেতরে একে একে ১১ গিগা সিস্টেমের জন্য ১ গিগা সোয়াপ ড্রাইভ আর বাকীটুকু হোম ড্রাইভ বানানোর জন্য বললাম। বলামাত্রই কিন্তু এখানে কাজ হয় না। সব বলার পর আবার কনফার্ম করতে হয়। তাই সব ফরমায়েশগুলো দেয়ার পর সেটাকে কাজে পরিণত করতে বললাম। সাথে সাথে প্রথম হাড্ডি ড্রাইভটাকে সরানো শুরু করলো। শুরু করলো তো করলো .... কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এদিকে আমার তো খারাপ লাগা শুরু হয়ে গেছে -- ড্রাইভের ইস্পেশাল সিস্টেমটা মনে হয় মারা পড়লো। ডেটা সহই সরাতে পারবে নাকি খালি ড্রাইভ সরাবে - ডেটা কি গোল্লায় যাবে? টেনশনে ডেস্কটপে গুগল করা শুরু করলাম ---(সার্চ দ্যা খোঁজ =) জিপার্টেড দিয়ে পার্টিশন মুভ করানো। সেখানে ডকুমেন্টেশনে দেখলাম এক হার্ডডিস্ক থেকে কপি করে একটা ড্রাইভ আরেক সেকেন্ডারি হার্ডডিস্কে সরিয়ে ফেলার টিউটোরিয়াল দিয়ে রেখেছে। একটু টেনশনও লাগে আবার মনে হয় নাহ কিচ্ছু নষ্ট হবে না .... এমন সময় ....

১০.
সামথিং ওয়েন্ট রং, অল টাস্কস কুড নট বি কমপ্লিটেড --- মেসেজ দিয়ে জিপার্টেড থেমে গেল। গ্রাফিকালি দেখাচ্ছে পার্টিশন সরে গেছে কিন্তু নতুন তিনটা ড্রাইভ তৈরী হয়নি। আমি সন্দেহ করলাম রোগী মারা গেছে - ওটা মৃতদেহ। তবুও সাহস করে ওর টাস্ক লিস্টটাকে খুলে দেখলাম --- ওখানে মুভ করার কাজটাকে তিনভাগে করেছে। প্রথমে ঐ পার্টিশনটাকে ফাঁকা জায়গার ডান প্রান্ত পর্যন্ত বড় করেছে। তারপরের ধাপে এই বড় ড্রাইভের ডেটা বাম প্রান্ত থেকে অন্য দিকে বা ডান প্রান্তে কপি করে এনেছে, সবশেষে বাম প্রান্ত থেকে আগের সমান করে ড্রাইভটাকে ছোট করে ফেলেছে। সন্দেহ মিটানোর জন্য জিপার্টেড বন্ধ করে আবার চালু করলাম -- দেখাল যে ঠিকই ঐ ড্রাইভটা ডেটাসমেত সরে গিয়েছে আর ৪০ গিগা ফাঁকা জায়গা দেখাচ্ছে। সিরিয়াস রকম টেনশনটা মিলিয়ে গেল। যদিও কাজ এখনও শেষ হয়নি, তবে এর পরের কাজটুকু আগে অনেকবার অনেক জায়গায় করেছি ...

আবার ফাঁকা জায়গায় একটা এক্সটেন্ডেট পার্টিশন বানিয়ে সেটাকে আগের মত ভাগ করলাম, মানে করতে বললাম --- সুবোধ বালকের মত জিপার্টেড সেগুলো করে ফেললো। এবার একটু রিল্যাক্স ভাবেই জিপার্টেড বন্ধ করে আবার ইনস্টলার চালু করলাম এবং এবার শুধু পার্টিশনিং স্টেপে কোন ড্রাইভে সিস্টেম, কোনটা সোয়াপ (র‍্যামের সহায়ক) আর কোনটা হোম সেগুলো লেবেল দিয়ে দিতে হল। তারপর বাকিটুকু নিজে নিজেই হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই রাত ৩টা পার হয়ে গেছে।

মেশিন রিস্টার্ট করে মন ভাল হয়ে গেল। প্রথমেই অতি পরিচিত GRUB আসলো। সেখানে লিনাক্সের পাশাপাশি অন্য তিনটা ড্রাইভে তিনটা সিস্টেমের লিংকও আছে। মিন্ট চালালাম, এক্সপি চালালাম, এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম চালালাম সবই চললো, খালি সিস্টেম পুরা রিস্টোর করাটা চালাই নাই - ওটা আবার পুরা ডিস্ককে ক্রয় করার মত অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে -- থাক পাগলকে সাঁকো ঝাকানোর কথা মনে করিয়ে কী লাভ!

কাহিনী কিন্তু একটু বাকী আছে এখনও ...

১১.
আবার মিন্ট ডেবিয়ান চালালাম। সি ড্রাইভে রাখা সব ফাইল অক্ষত আছে দেখে একটু ভাল লাগলো, কারণ ডিফ্র্যাগমেন্ট করার সময় এক দুষ্টু ফাইল ক্লাস্টার সবার সাথে না থেকে বরং ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে উল্টা মাথায় একা দাঁড়িয়ে ছিল -- ড্রাইভ রিসাইজ করে ছোটো করার সময় ওটা কাটা পরতে পারতো। কাটা পরেও থাকতে পারে -- কারণ ফাইলগুলো যে কোন ফাইল সেটা তো আর ডিফ্র্যাগমেন্টের গ্রাফিকাল রিপোর্ট দেখে বোঝা যায় না। ভাবলাম হার্ডডিস্কে থাকা ভিডিও চালিয়ে দেখি। ভিডিও চালিয়ে দেখা গেল -- কিন্তু শব্দ নাই। ল্যাপির স্পিকারেও নাই, বড় স্পিকারে দিলাম তা-ও নাই। আবার গুগলে খোঁজা খুঁজি। ---- এটাতেও দেখি আদমের অভাব নাই; আরও অনেকেই এটার মুখোমুখি হয়েছে। সেখানেও পরামর্শের ছড়াছড়ি। অনেকগুলো মাতব্বরী করলাম সেগুলো দেখে দেখে। প্রথম মাতব্বরী করার সময় যেই না sudo কমান্ড লিখেছি (এটা হল অ্যাডমিন প্রিভিলেজ) - সাথে সাথে মেসেজ আসলো " ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই তুমি সিস্টেম এডমিনের কাছ থেকে ঘন্টাখানেকের লেকচার শুনে এসেছো। দেখ বাছা, তোমার হাতে এখন অনেক ক্ষমতা ... আর গ্রেট পাওয়ার ব্রিংস গ্রেট রেসপন্সিবিলিটি।" রসিক ব্যাপারটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো -- বেশ কিছুক্ষণ হো হো করে একা একাই হাসলাম।

যা হোক অনেক গুতাগুতি করেও সাউন্ড আসলো না। ভাবলাম ক্ষ্যামা দেই, কারণ বাইরে ফযরের আজান পড়তেছে। আবার ভাবি নাহ্ কোনো ড্রাইভার আপডেট করলে এটা ফিক্স হয়ে যাবে। যাই আপডেট করি।

নেটের কানেকশনটা ডেস্কটপ থেকে ছুটিয়ে নিয়ে ল্যাপিতে লাগালাম। আপডেট মেসেজও আসলো .... মোটামুটি ৫ বছরের বেশি সময় লিনাক্স চালাই, তাই ব্যাপারটায় নতুনত্বের কিছু নাই। দিলাম আপডেট। কিছুক্ষন পর দেখি বলে ৪৭৭টা ফাইল আপডেট করবো -- ওকে করো। তারপর সময় দেখায় ৩ ঘন্টা লাগবে (কিউবির ৬৪কেবি লাইন)... ... ... আচ্ছা, তাহলে একটু ঘুমিয়ে নেই। সকাল ৫টায় ঘুম দিলাম।

সাড়ে আটটায় ঘুম থেকে উঠে দেখি সব ডাউনলোড শেষ, ইনস্টলের জন্য মাঝপথে আরও দুই একবার ওকে করা লাগলো। এখন ল্যাপির কার্ণেল লিনাক্স ৩.০.০.০-১-৪৮৬, গনোম ৩.০.২ --- এটাতে একটু চমকাতেই হল।

এখনও সাউন্ড আসে নাই। তবে এটা নিয়ে আমি আরও অন্তত দুই সপ্তাহ কোন ঘাটাঘাটির মধ্যে নাই। ল্যাপি পূর্ণমাত্রায় কর্মক্ষম হয়েছে। এতে লিব্রে ক্যাড ইনস্টল করে নিয়েছি।

১২.
ল্যাপটপ মেরামতের পর যখন ফেরত পেয়েছিলাম সেটা ছিল অকেজো। কারণ এটাতে কোন পেনড্রাইভ লাগানোর আগে ডেস্কটপ থেকে ভাইরাস আছে কি না সেটা দেখিয়ে আনতে হত। নেট ব্যবহারের ভয় ছিল। এখন সবই টনটনা। আরেকটা সমস্যা ছিল। কীবোর্ডটার ডান প্রান্ত কোন কারণে লাগেনি - লুজ। ঐ অংশের কী প্রেস করলে অদ্ভুদ খারাপ অনুভুতি হত। অফিসে আসার পর আইটি সেকশনে গিয়ে বললাম স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুলে এটা ঠিক করি। একজন হৃদয়বান আইটি অফিসারের সহায়তায় পেছন থেক ৫-৬ টা স্ক্রু খোলার পর কীবোর্ডটা ছুটে আসলো। এর নিচে তিনটা স্ক্রু লাগানোর জায়গা দেখলাম। আর ৫-৬ টা স্ক্রু যে খুলেছিলাম সেগুলো সবগুলো সমান না -- দৈর্ঘ্য কম-বেশি আছে। মনে হল যে, যে দিকটা ফিট ছিলনা সেটিকে ভুলক্রমে ছোট স্ক্রু দিয়েছিলো হয়তো। এই হাইপোথেসিস পরীক্ষা করতে, লম্বা তিনটা স্ক্রু কীবোর্ডের স্ক্রুর গর্ত বরাবর লাগানোর জন্য রেখে বাকিগুলো লাগিয়ে দিলাম। এই লম্বা তিনটা দিয়ে কীবোর্ড আটকানোর পর আসলেই কীবোর্ডের সমস্যা ঠিক হয়ে গেল .... .... আহ্ এই ত্যানা প্যাচানি কাহিনীও শেষ।


মন্তব্য

কুমার এর ছবি

ভাললাগছে, (গুড়) ।
একবার বাসার টিভি খুলছিলাম (নষ্ট ছিল বলে), পরে ধুলা ময়লা পরিস্কার করে আবার জোড়া দেওয়ার পরও দেখি অনেকগুলো স্ক্রু বাড়তি।

শামীম এর ছবি

স্ক্রু বেশি হওয়ার ব্যাপারটা কমন পড়ছে ভাই। আগে বাসায় ছোট চাচা রেডিও খুলে জোড়া দিলে স্ক্রু বেশি পড়তো। ওগুলো পেছনের ব্যাটারীর কম্পার্টমেন্টে ঢুকিয়ে রাখতো। তাই মুভ করার সময় ওগুলোর খুটুর খুটুর শব্দ হত। শয়তানী হাসি

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

তারেক অণু এর ছবি
মেঘলা মানুষ এর ছবি

সুবিশাল ঘটনা দেখছি হাসি
প্লপ নামে কিছু আছে সেটাই জানতাম না। জানলাম মেলা কিছু।

শামীম এর ছবি

সুবিশাল ঘটনা যে ধৈর্য নিয়ে পড়েছেন সে জন্য ধন্যবাদ। লইজ্জা লাগে

কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে কিছু জ্ঞান দানের চেষ্টাটা মাস্টারি পেশার সাইড ইফেক্ট মনে হয়। চোখ টিপি

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

হিমু এর ছবি

জীবন অনিত্য।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেস্ট

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই ধরণের গুঁতাগুঁতি ছাইড়া দিছি। মজা হয় ঠিকি কিন্তু খামাখা সময় নষ্ট। তাছাড়া এখানে মেশিন এতো সহজলভ্য হয়ে গেছে যে পুরোনো মেশিন নিয়ে গুতানোর প্রয়োজন পড়ে না।

শামীম এর ছবি

ভাইরে, গত বছরেই ২১% মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে কিন্তু বেতনের বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ১০%ও না। প্রতিবছরই এভাবে ক্রয়ক্ষমতার বিচারে গরীব হয়ে যাচ্ছি। ইয়ে, মানে...

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

আমি এত কিছু জানিনা, কিন্তু পড়তে বিশাল মজা পাইলাম। হাসি কিন্তু সাউন্ড কি পরে এসেছিল? কম্পিউটার বিষয়ে আমি অকাট মূর্খ। শুধু চালাতে আর বন্ধ করতে পারি। চোখ টিপি

শামীম এর ছবি

আপাতত সাউন্ড নিয়ে চিন্তা করছি না। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে - কোন একটা আপডেটের পর এটা হঠাৎ করেই ঠিক হয়ে যাবে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

গৌতম এর ছবি

বিশাল ঘটনা! পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।

অফটপিক: বাংলালায়ন নামক ওয়াইম্যাক্সের ঝামেলাতে অনেকদিন উবুন্টু ব্যবহার করতে পারছিলাম না। কয়েকদিন আগে আশিকুর নূর সেই সমস্যার সমাধান করে দিলেন। এখন আবার উবুন্টুতে। সবকিছু যথারীতি অসাম! হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শামীম এর ছবি

হাততালি আপনার সমস্যা দুর হয়েছে জেনে খুশি লাগলো।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

আমিও আমার পিসি নিয়ে এমনি একটা লেখা দেবো ভাবতেসি হাসি

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

শামীম এর ছবি

দিয়ে ফেলেন পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সাফি এর ছবি

উবুন্টু ১১।১০ এর নতুন চেহারা দেখে উইন্ডোজ ৭ আর ওএসএক্স লায়ন এর কথা মনে পরে খালি।

শামীম এর ছবি

আশা করছি ইউনিটিযুক্ত ঐটা ডেস্কটপে লাগাবো ১২.০৪ লং টার্ম এডিশন থেকে। নতুন ইন্টারফেস দেখে বাসায় বউয়ের কী রিয়্যাকশন হবে সেটা একটা চিন্তার বিষয় ... ...

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সম্ভবত ৩/৪ বছর আগে উবুন্টু ব্যবহার শুরু করি। প্রথমে ওয়েবভিত্তিক নানা সমস্যা ছিল। এখন ১১।১০ এ উন্নীত করেছি। প্রথম কাজে আসে যখন উইন্ডোজ্ ভিস্তার সার্ভিস প্যাক টু ইন্সটল করতে গিয়ে ভিস্তা মারা যায় তখন। তখন উবুন্টু দিয়ে ঢুকে ল্যাপটপের সব ফাইল কপি করে ভিস্তা মুছে ফেলে পাইরেটেড ভিস্তা আলটিমেট ইন্সটল করি। পরে ডেস্কটপ ল্যাপটপ সব মেশিনেই উবুন্টু ইন্সটল করে রাখি।

এখন আমার পুরনো আমলের ডেস্কটপ ডেল ডাইমেনশন ২৪০০ মেশিনে যখন উবুন্টু ১১।১০ এ আপগ্রেড করি তখন কোন এক সময় সে আমাকে গ্রাফিক্স কার্ডের ব্যাপারে কিছু একটা সাবধানবাণী শুনিয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছি আপগ্রেড করো। আপগ্রেড করার পর দেখি পুরাতন গ্রাফিক্স কার্ডের ড্রাইভার ইন্সটল করতে পারে নাই। তাই ভিডিও দেখলে ছবি ফ্রেম ধাক্কাইয়া ধাক্কাইয়া রিফ্রেশ করে। ভিডিও আর দেখা যায় না। কিংবা পেইজ স্ক্রল করলেও তেমন আচরণ।

আপনার লেখা বরাবরের মত ম্যারাথন হলেও এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম।

মিন্টের ডেবিয়ান না কি ভার্সনের কথা বললেন - তার মাজেজাসহ আরেকটা পোস্ট দেন।
ধন্যবাদ।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

শামীম এর ছবি

গ্রাফিক্স কার্ডের সমস্যাটা নিয়ে যদি উবুন্টু-বিডি মেইলিং লিস্টে একটা মেইল দেন তাহলে এটার একটা কিনারা হইলেও হইতে পারে (ubuntu-bd এট lists.ubuntu.com)। এই পাতা থেকে সেখানে সাবস্ক্রাইব করা যায়।

উবুন্টু ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে তৈরী, আর মিন্ট উবুন্টু ভিত্তিক। উবুন্টুর নিজস্ব রিপোজিটরি আছে, যা ডেবিয়ানের থেকে ভিন্ন। সাধারণ মিন্টের আপডেট সেই উবুন্টু রিপজিটরি ব্যবহার করে, অবশ্য মিন্টের নিজস্ব রিপোজিটরিও ব্যবহার করে কিছু ক্ষেত্রে। ডেবিয়ানের জিনিষগুলোকে অনেক পরীক্ষা করে এবং উবুন্টুর জন্য হয়তো কিছুটা কাস্টমাইজ করে সেই সফটওয়্যারের খনিতে রাখা হয়।

কিন্তু লিনাক্স মিন্ট ডেবিয়ান এডিশন সরাসরি ডেবিয়ানকে ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া এটা সফটওয়্যারের জন্য সরাসরি ডেবিয়ানের রিপজিটরি ব্যবহার করে। ওরাই বলে রেখেছে যে এটা একটু অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য। তাছাড়া এটা মূল মিন্টগুলোর মত অনেকদিন পর পর আপডেট না হয়ে সবসময়ই দৌড়ের উপর থাকতে পারে, এটাতে কখনই নতুন করে সিস্টেম ইনস্টল করা লাগবে না। তবে এটাতে মূল মিন্টের মত সহজ সুবিধা পাওয়া যাবে না। লিনাক্স মিন্টের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত আরও অনেক তথ্য পাবেন।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মরুদ্যান এর ছবি

খাইসে, বিরাট এ্যাডভেঞ্চার! চলুক

শামীম এর ছবি

হ্যাঁ লেখার দৈর্ঘ আর আমার উত্তেজনা - দুই বিচারেই বিরাট

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বর্জ্যখোর বাজারসভ্যতায় আপনের ল্যাপটপ উদ্ধারের গল্পটা বিশেষ ভাল্লাগল। দেরিতে জানাইলাম। টেকনলিজকাল পন্য সাস্টেইনেবল কইরা বানানোই হয় না। এইটা বাজারসভ্যতার মূলসূত্রকে ব্যহত করে।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শামীম এর ছবি

আজ থেকে ২৫- ৩০ বছর আগেও খুব টেকসই করে টেকনোলজিক্যাল পণ্যগুলো বানানো হত। এখন দুই বছর পর পাল্টাতে হবে এমন করেই ডিজাইন করা হয় মনে হয় -- এজন্য গ্যারান্টি ওয়ারেন্টি সবই লিমিটেড মন খারাপ

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এই বিষয়ে একটা লিখা দেন শামীম ভাই।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

তাসনীম এর ছবি

বাসার পুরানো বিপথগামী ল্যাপটপে উবুন্টু ইন্সটল করে ওটাকে পথে এনেছি। উবুন্টুই মুক্তির একমাত্র পথ। আপনার ল্যাপটপ উদ্ধারের গল্প বেশ উত্তেজনাকর, হ্যাপি এন্ডিং যদিও হাসি

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শামীম এর ছবি

হ্যাপি এন্ডিং হওয়ার পরেও পরের সিক্যূয়েল করার মত একটা গিট্টু রয়েই গিয়েছে। তবে সেটার কাহিনী শেষ হইলে এ্যাত বড় ত্যানা প্যাচানী লেখা লেখার রিস্কে যাব বলে মনে হয় না। হাসি

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুদীপ এর ছবি

উবুন্টু ও লিনাক্স শিখতে চাই, কেউ ভাই কোচিং দেন হাসি

শামীম এর ছবি

আপনি অভ্রনীল ভাইয়ের ব্লগ থেকে সিলেবাস শুরু করতে পারেন।

লিংক: http://adnan.quaium.com/ubuntu

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।