বাসায় বসে বসে ভাবছিলাম পরের শুক্রবার কোথায় আড্ডা দেব, এমন সময় আমার কাজিন আনন্দ হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে ঢুকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল: নাহ শামীম ভাই, ঘুসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না দিলে আর চলতেছে না।
আমি তো হতবাক - এই পোলা কয় কি! অলরেডী দেশে যেমনে ঘুসের মহোচ্ছব চলতাছে... এর উপর আবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে তো, ঐ রূপের ঝলকে চোখ আন্ধা হইয়া যাইবো; মনের কথাটা কোৎ করে গিলে ফেলে জিজ্ঞেস করলাম: ক্যান?
আনন্দ বেশ ঝাঁঝের সাথে বলতে লাগল: দ্যাখেন যে অফিসেই কোন কাজের জন্য যাই, চা-নাস্তা করার জন্য কিছু চায়। আমিতো নিরূপায় হয়ে এক জায়গায় চা-সিঙ্গারা আনার জন্য ঐ অফিসের পিয়নকে ডেকে ৫০টাকা হাতে দিসলাম - তখন ঐ অফিসার ব্যাটা বলে কি... আরে আপনি দেহি কিসুই বোজেন না, এমুন করলে তো আপনার কাম হইবো না; বেরেনটা এট্টু খরচ করেন - আমি কি কই বোজার চ্যাষ্টা করেন। তখন আমি ঐ ৫০ টাকা পিয়নের কাছ থেকে ফেরৎ নিয়ে ঐ ব্যাটার টেবিলে রাখলাম। ব্যাটা টাকা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলে, ১০০০ টাকা দিতে হইবো। আরে আমি কি পকেটে অত টাকা নিয়ে ঘুরি? ....
ও আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো, আমি বাধা দিয়ে বললাম: তুইতো বেকুবি করছিস, শুরুতেই ৫০ টাকার নোট দেখাইছিস ... ১০০০ টাকা তো চাবেই; উচিৎ ছিলো ১০ টাকা বের করা, তাইলে ঐ ব্যাটা ২০০ টাকার বেশি চাইতো না ---- বলে ঘুষ বিষয়ক বিশেষজ্ঞের মতো ভাব নিলাম।
আনন্দ নিজের ভুল স্বীকার করে বলল: আসলেই ভুল হইছে; কিন্তু যেসব অফিসে ডাইরেক্ট কিসু মাল ছাড়তে বলে? ------- বলে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
বললাম: ডাইরেক্ট জিগাবি - রেট কত? আমরা তো টেলিফোনের লাইনম্যানের সাথে এভাবেই ডীল করছি, কারণ হুদা কামে বেশী পয়সা দিয়ে তো লাভ নাই, আবার কম দিলেও ধুনফুন করবো; তাই লজ্জা শরম করে লাভ নাই, ডাইরেক্ট রেট জিগাইতে (জিজ্ঞেস করতে) হবে; বি প্রোফেশনাল ম্যান!
ও লা জওয়াব দেখে আমি জিজ্ঞ্যেস করলাম: তা ... তুই প্রাতিষ্ঠানিক রূপের ব্যাপারে কি জানি বলতেছিলি?
দম নিয়ে আনন্দ বেশ সোসৎসাহে বলা শুরু করল: এমন হলে ভালো হতো না যে, প্রতি অফিসে কোন কাজের কত রেট তা সাইনবোর্ড দিয়ে ঝুলায় রাখবে; তাহলে কাউকেই আর কাজটা করানোর জন্য কত পয়সা পকেটে নিয়ে যেতে হবে তা নিয়ে টেনশন করতে হবে না, আর ওদেরকেও নির্লজ্জ চামারের মত চাইতে হবে না।
আমি আবার ওকে বাধা দিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললাম: হুঁ তা তো বুঝলাম, কিন্তু ওভাবে সাইনবোর্ড টাঙ্গাতে হলে তো আইনের ব্যাকআপ লাগবে।
ও তো দমে গেলই না, বরং আরো উৎসাহের সাথে বলতে থাকল: আরে সেই কথাটাই তো বলতে চাচ্ছিলাম। এটার আইনগত বৈধতা থাকবে।
শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ুম, কোনমতে বললাম: কক্ কিভাবে?
ও বলতে থাকল: বুঝলেন না .... এটা হবে ট্যাক্সেবল ইনকাম। তাতে সাপও মরল আর লাঠিও ভাঙ্গলো না। তবে এ বিষয়ে আইন পাশ করতে হবে আগে।
আমি বললাম: তাহলে তো ওরা আইন দ্যাখায় ইচ্ছামত লোকের গলা কাটবে ......
আনন্দ: না... না... ব্যাপারটা হলো, ওরা এখন যে রেটে ঘুস নেয় সেই রেটই ফিক্স থাকবে। প্রথমে ক্লায়েন্ট সরকারি ফী যথারীতি জমা দেবে, তারপর নির্ধারিত ঘুস ফী অফিসেই একজনের কাছে জমা দিবে এবং এখান থেকেও একটা রিসিট নেবে। তারপর সেই রিসিট দেখায় কাজ করায় নেবে। আর অফিসের সংগৃহীত ঘুসফী সেন্ট্রালি ডিসট্রিবিউট হবে - পুলিশের মত। তাতে দ্যাখেন কত লাভ .... ক্লায়েন্টকে অযথা হয়রান হতে হল না .... দেশের অর্থনীতি মজবুত হল ....ঘুসখোরগুলা লাইনে থাকল ..... আর, আপনাদের মত মানুষ যারা সাধারণ মোরালিটির কারণে ঘুস খেতে পারেনা কিন্তু বাটে পড়ে ঘুস দিতে বাধ্য হন তারাও খুশি থাকলেন ....
আনন্দ আরো কিছু বলার আগেই জিজ্ঞেস করলাম: অর্থনীতি নিয়া টান দিলা যে?
ও বলতে থাকল: দাড়ান, আগে উপকারের লিস্টটা শেষ করে নেই তারপর ব্যাখ্যা দিচ্ছি, যদি লাগে ..... কই জানি ছাড়লাম ... ও মনে পড়ছে .... আপনারা খুশি থাকলেন .... বৈষম্য দুর হবে ... দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া লাগবে না .. ইত্যাদি। এখন বলতেছি, ইকোনমিকাল পয়েন্ট অব ভিউ .... .... দেখেন এ দেশে লিগালি যত লেনদেন হয় তার চেয়ে বেশী হয় ইল্লিগালি - এ কথাটা তো মানেন?
বললাম: তা না হয় আপাতত মেনে নিলাম ..... তো?
আনন্দ: এই ইল্লিগাল লেনদেনের ম্যাক্সিমাম হলো ঘুস ....... আর এটা যদি ট্যাক্সেবল হয় তাহলে রেভিনিউ কত বাড়বে চিন্তা করেন!
আমি: কিন্তু ...
আনন্দ: কিন্তু কিন্তু করেন ক্যান ... এর আগেও তো কালো টাকা সাদা করার অনেক পলিসি করছে সরকার ... কি করে নাই?
আমি: আচ্ছা এটা নাহয় আপাতত মেনে নিলাম কিন্তু বৈষম্য?
আনন্দ: আরে আপনি আবার আপাতত আপাতত করতেছেন ক্যান ... বৈষম্য বুঝলেন না ... এটাতো সবচেয়ে সোজা। অফিসগুলাতে সৎলোকগুলা একই পরিমান কাজ করে কিন্তু ওই কম বেতনে টানাটানি করে সংসার চালায়, অথচ তাদের চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোক ঘুসের জোরে কি করে ফেলতেছে ... এখন সেন্ট্রালি ডিসট্রিবিউট হলে তো সেই বৈষম্য দুর হবে ... কি ঠিক বলি নাই?
আমি: এটাও নাহয় বুঝলাম, কিন্তু প্রমোশন বানিজ্যের কি হবে? আমরা আর কতদিন এভাবে নিজেদের আকামগুলো ঢাকতে তত্বাবধায়ক সরকার টাইপের নিত্যনতুন সিস্টেম বের করব?
আনন্দ এ্যাতক্ষনে একটু ব্রেক মারল মনে হল ...
(এস.এম.৩ এর পোস্ট: এগিয়ে যাচ্ছে স্বদেশ দেখে পুরানো একটা সমাধান সন্ধানী ব্রেইনস্টর্মিং টাইপ লেখা নিয়ে আসলাম)
মন্তব্য
- ফাটাইয়া লেখছেন।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বুয়েটে কনসালটেন্সিতে এই ধরণের মডেল ফলো করে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
এটা তো সামহোয়্যারইনে পড়েছিলাম। আলোচনা শুরু করেন একটা বস। মজা হবে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আগামীকাল আমার থিসিস ডিফেন্স।
দোয়া কইরেন।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আমাদের এখানে একটা টাইফুন হিট করবে। প্রথমে ভাবা হয়েছিলো আগামীকাল রাত্রে আঘাত করবে। কিন্তু শেষ আবহাওয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এটা অনেক দ্রুত চলে আসছে এবং আগামীকাল দুপুরে আঘাত করবে। তাই থিসিস ডিফেন্স পেছানো হয়েছে (সন্ধা ৬:১৫তে খবর আসলো)... হবে ২০শে অগাস্ট । সবসময়ই কোন না কোন পেজগি লাগে।
দূর্নীতির আলোচনা চলুক।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আমেরিকায় ড্রাগ লিগালাইজ করার একটু মৃদু আন্দোলন আছে। এদের যুক্তিগুলিও অনেকটা এই লাইনে যায়।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে বুয়েটে চাকরী করার সময় দেখতাম, বেতনের বাইরেই আইনগতভাবে কনসালটেন্সির ভাগ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রফেসর থেকে শুরু করে ল্যাবের যে বীকার ধোয় সে ও কিছু পায়। তাই ওখানকার ল্যাবের লোকজন পয়সা খেত না.... কারণ তাতে সুনাম নষ্ট হবে। আবার টাকার একটা অংশ যেত যারা অফিসে এগুলো ভাগাভাগি করে ওদের খাতে। কাজেই A - Z সকলেই পয়সা পায়, তাই গ্যাঞ্জাম কম। তবে, বুয়েটের ভেতরের লোকজন বলতে পারবে আসল অবস্থা কী।
সেই আইডিয়া থেকেই এ ধরনের একটা লেখা বের হয়েছে। লিখতে গিয়ে নিজেই বুঝলাম যে এটা ফুলপ্রুফ সিস্টেম না।
আসলে, ছোটবেলা থেকে আদর্শিক ব্যাপারটা মনে গেঁথে দিতে না পারলে হবে না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
সবই তো বুঝলাম, কিন্তু ঘুষ থাকলে গরিবকে দেখার কেউ থাকবে না। যে সরকার এই নিয়ম করবে, তাই গরিব লোকে তাকে ভোট দেবে না। আমাদের দেশগুলোতে যেহেতু বেশি লোক গরিব, তাই কোনও সরকার এই আইন পাশ করাবে না ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন