দেশ থেকে ঘুরে আসলে কিছুদিন কাজে মন বসানো যায় না। নানবিধ হেঁকড়ি করে শেষ পর্যন্ত্য প্রস্তাবনা পেশ করেই ফেললাম গত পরশু। অনেককাল বাদে পরীক্ষা নিয়ে টেনশনে ভুগলাম। এর আগে শেষবার টেনশনে ভুগেছিলাম অর্নাস এর ফাইনাল ভাইভার সময়। সেই সময় আর এই সময়, মাঝখানে অনেক পানি বয়ে গেলো। টেনশনের চেহারা, আকার কি হতে পারে সেটা পুরোদস্তুর টের পাইলাম এইবার। এর মধ্যে খাওয়া দাওয়ার যাচ্ছেতাই অবস্থাটা আরো যাচ্ছেতাই হইলো। এক হাঁড়ি ভেজিটেবল খিচুড়ি রাইন্ধা খাইলাম ছয়দিন। এখনো কিছু আছে কারো লাগলে আওয়াজ় তুইলেন। এক পর্যায়ে মনে হইতাছিলো বসন্তের কুহু কুহু ডাকা পাখি ধইরা খাই। গবেষণা প্রস্তাবনা পেশের সময় সাধারণত ছাত্রকে কড়া ভাজা করা হয়। আমার প্রফেসরের ভাষ্য হইতাছে ছাত্ররে টেস্ট করবার সময় এইটাই। পাঁচজন কমিটি জনা দশের বদমাইশ ছাত্র-দর্শক। আমি ধারণা করলাম নিশ্চিত গণধর্ষণের শিকার হচ্ছি। এই ধরণের একটা সময়ে পেটে যাই ঢালি সব পাথর হয়ে যায়। বের ও হতে চায় না থাকতে চায় না, কিম্ভুত একটা গুমোট আবহাওয়া তৈরি করে। যাই হোক শেষ পর্যন্ত্য আবিষ্কার করলাম পরম করুণাময় তার কৃপা, আমার জন্য ও কিছু রাখছেন।
ঝড়ের বেগে প্রেজেন্টেশন দিলাম। কারণ বৈকালিক প্রেজেন্টেশন, পল হুরে যদিও প্রস্তাবনা পড়ে খুব উত্তেজিত কপারের উপরে সাইলেন কোটিং দেওয়া নিয়া, কিন্তু তার ঘুম আসতাছে সেটা টের পাইলাম। প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে আমি একটা কিছু মূলনীতি চেষ্টা করছি সেইটা হইলো।
এক.
স্লাইডে যথা সম্ভব কম তথ্য দেওয়া। তথ্য যা দেবার সেটা নিজে বলাই ভালো। তাতে দর্শক ভাবে যে ব্যাটা শুধুই স্লাইড মারতাছে না, আরো কিছু আছে ভেতরে। স্লাইড হবে ছবি এবং মূল পয়েন্ট নিয়া।
দুই.
কেন আমি এই কাজ করতে চাই ? কেন আগের হারামজাদাদের কাজ অপেক্ষা আমার কাজ ভালো ? সেইটার একটা লজিক্যাল অর্ডারে স্লাইড রাখা।
তিন.
দর্শকের মনে প্রশ্ন উত্থিত হবার আগেই সেই প্রশ্ন নিজে করা এবং নিজেই উত্তর দেওয়া। আমি নিজে দর্শক হিসেবে দেখছি তাতে দর্শকের মনে একটা সন্তুষ্টির ভাব আসে যে, "আরে এই প্রশ্নটাতো আমি নিজেই করতে চাইছিলাম, ওতো উত্তরই দিয়া দিলো। যাক আর কিছু নাই জিগানোর"।
এই পদ্ধতিটাটা ভীষণ কার্যকরী হইছে।
চার.
আজাইরা কথা কম বলা। কারণ হুদা কথা কইলেই কথা বাড়ে।
প্রেজেন্টেশন শেষে সবাই কিছুক্ষণ ঝাঁকাইল আমারে কালবৈশাখীতে আম গাছের মতো। শেষতক গাছের আম যখন শেষের দিকে, তখন উনারাও ক্ষ্যামা দিলেন। হাজার হইলেও বৈকাল গড়াইয়া সন্ধ্যা হইতাছে। বদ পুলাপান সব বাইর কইরা দিয়া এইবার কমিটি খুব সিরিয়াসলি কিছু প্ল্যান অফ এ্যাকশন জিগাইলো, এবং দিলো। এরপর বিলিতী কায়দায় আমারেও রুম থেইকা বাইরা কইরা দিলো। পিছন থেইকা কইলো যাওনের সময় রুমের দরজা ভিড়াইয়া দাও। আমি নিজের পকেটের টাকায় কিনা একটা ব্লু -বেরী মাফিন হাতে নিয়া বাইর হয়া গেলাম। বাইরে দেখি দুই হারামজাদা দাঁত হাতে নিয়া দাঁড়াইয়া আছে আমার দশা দেখনের লাইগা।
এরপর অবশ্য খারাপ কিছু ঘটে নাই। পনের মিনিট বাদে কমিটি আমার হাত ঝাঁকাইয়া দিয়া গেলো।
মন্তব্য
অভিনন্দন। খিচুড়ি পাঠায় দ্যান ডাক মারফত। পরশুদিন আর তার পরের দিন দু'দু'খানা বাজে পরীক্ষা। প্যাটে খিদা।
হাঁটুপানির জলদস্যু
অভিনন্দন! আচ্ছা গাঁটের পয়সা খরচ করে এ এক্সাম এর জন্য এই মাফিন, ক্রোসা, কুকি নাওয়াটা তুলে দেয়া যায় না? আমার তো মনে হয় এডভাইযারের উচিৎ এগুলো নিয়ে আসা, বিধ্বস্ত এডভাইযীকে সহমর্মিতা জানাতে......।
সহমর্মিতা ? এডভাইযরদের অভিধানে এই শব্দটা নেই।
আজাইরা কথা কম বলা। কারণ হুদা কথা কইলেই কথা বাড়ে।
লেখা ভালো হয়েছে। তবে এই লাইনে হিমুই ওস্তাদ।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
অভিনন্দন। আমিও খিচুরীর ভাগ চাই।
এ এক বিরাট যন্ত্রণা। বিশ মিনিট প্রেজেন্টেশন, তারপর ১৫ মিনিট অপোজিশনের অ্যাটাক, ১০ মিনিট দর্শকের প্রশ্নবাণ, এরপর ২০ মিনিট এক্সামিনার আর সুপারভাইসরের মিলিত বাঁশ, সবশেষে আরো পাঁচ মিনিট গোপন শলা-পরামর্শ শেষে যদি বলে এইটা ওইটা চেইঞ্জ করতে তাইলে হইছে আর কি।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
অভিনন্দন .... তারপর? কতঘন্টার ঝাড়া ঘুম দিলেন?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
অভিনন্দন ভাইজান!
এইবার বাকি খিচুড়ি নিয়া মালেশিয়া চলে আসেন। ঝাল-ঝাল করে গরুর মাংস রান্না করব আজকে রাতে।
লেখাটা বিশেষ সুস্বাদু হয়েছে।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
একটু অগ্রিম হয়ে গেল অরুপ।
মামু তাইলে ডাক্তর হয়া গেলেন মাশাল্লা।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অভিনন্দন। যদি ঠিকঠাক মত বুঝে থাকি তাহলে এটি থিসিস প্রপোজাল এর ডিফেন্স, থিসিসের ডিফেন্স নয়।
আমার মনে পড়লো যে আমি আমার প্রপোজাল এর একটি গবেষণাও না করে ডিগ্রী পেয়ে গিয়েছিলাম। কোন একদিন লিখতে হবে কাহিনীটি।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
আমারো তো সেরমই লাগলো
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
আপনি ঠিকই ধরেছেন। অরুপ সবার আগে চলে তাই অগ্রিম ধন্যবাদ দিয়েছে।
হযু কাকা। স্প্রীং ব্রেকে আইয়া পড়। কইছিলাতো আইবা। তুমিও ফোন্দাওনা, আমিও ফোন্দেই না। এইটা কোন কথা হইলো? যাও আমিই ফোন্দিমুনে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
- দ্রোহী ভাতিজা, আপনের বানানে কিঞ্চিৎ ভ্রান্তি আছে জনাব।
প-বর্গীয় বর্ণের প্রথমটার জাগায় দ্বিতীয়টা ব্যবহার করিয়াছেন।
পত্রপাঠ বানান সমূহ ঠিক করিয়া লিখিবেন, এই আশাবাদ ব্যক্ত করিতেছি!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মন্তব্যখানা লিখিবার সময়ই ধারণা করিয়াছিলাম ধুসর গোধূলী /হিমুর নিকট হইতে প/ফ বিষয়ক একখানা কথা শুনিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে। অবশেষে আমার ধারণাই সত্য বলিয়া প্রতীয়মাণ হইলো। হিমু বাঁচিয়া গেল, ধুসর আসিয়া ধরা খাইলো।
কি মাঝি? ডরাইলা?
অভিনন্দন ভাইটু। এখনও ঘুমাচ্ছেন?
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
নতুন মন্তব্য করুন