যখন খুব ছোট ছিলাম ভাবতাম প্লেন কেমন করে ওড়ে? কেমন লাগে ভেতরে বসে থাকতে। একটু বড় হবার পর দুয়েকজনকে দেখলাম যারা নিত্য প্লেনে যাওয়া আসা করেন। তাদের মুখে শুনি কতখানি বিরক্ত তারা প্লেনে চড়ে চড়ে। আমি ভাবি ইশ একবার চড়তে পারতাম। এই জীবনে একবার অন্তত চড়তে হবে প্লেনে। এখন পেছনে ফিরে সেই সময়ের আমিকে নতুন করে আবিষ্কার করি। ভাবতে ভালো লাগে শৈশবে, কৈশোরে আমরা কত হাজার স্বপ্ন ধারণ করি। এখনো অনেক স্বপ্নের বীজ আমার মনে প্রোথিত। হয়তো সেসব একদিন চারা গাছ হবে। আমার আমি কে, আমি আবার আবিষ্কার করবো।
প্লেনে বসে থাকাটা কতটা বিরক্তিকর কেউ আমায় জিজ্ঞাসা করুক। নীল আলুর চিপস আর ক্যাশু খেয়ে কিছুক্ষণ রোমান পলিগ্যামিজম হিস্ট্রি দেখলাম। এরপর ফুড চ্যানেলে দেখলাম Giada in Paradise। গ্রীস জায়গাটা ঘুরবার জন্য কতখানি চমৎকার সেটাই দেখাচ্ছিলো। সেইসাথে গ্রীসের খাবার। গ্রীক’রা মূলত ভেজিটেরিয়ান, আমিষ বলতে শুধু মাছ। রেড মিট ওরা খায় খুব কম, কিংবা খায় না বললেই চলে। ওদের ট্রাডিশনাল বাখলাভা বানানোর প্রক্রিয়া দেখলাম। বিভিন্ন ধরণের বাদাম, লবঙ্গ, চিনি, দারুচিনি, অলিভ অয়েল সব গুলোর গুড়ো/টুকরো মিশিয়ে একটা ঝরঝরে ড্রাই ফিলার বানানো হয়। এবার একটা এলুমিনিয়াম ট্রে’তে পাতলা রুটির একটা চাদর বিছানো হয়। এইটা দেখতে চারকোণা চাপাতির মত। সোজা কথা খুব পাতলা চতুষ্কোন রুটি বানানো হয়। প্রথম রুটির ওপর খুব করে বাটার দেওয়া হয় এরপর বাদাম, চিনি’র ফিলার। এরপর নতুন রুটি সেটার উপর অলিভ অয়েল এবং ফিলার। এভাবে বেশ অনেকগুলো রুটির লেয়ার। এই বাখলাভা দেখতে অনেকটা পেটিস এর মতো। এবার পুরো জিনিসটাকে বরফি আকারে কেটে নিই। প্রত্যেকটা বরফির উপর একটা করে লবঙ্গ দিয়ে দিই। চারকোণা এই বাখলাভা সমগ্রের উপরে অলিভ অয়েক ঢেলে দিই। দেড় ঘন্টা ওভেনে বেইক করলেই হয়ে গেল গ্রীক ওল্ড স্টাইল বাখলাভা। বাখলাভার উপর মধু আর পছন্দের ফলের টুকরো দিয়ে পরিবেশন করুন।
জিয়াডা যে ট্রাভেল লজে ছিলো সেটা মূলত একটা ক্রেটার। ক্রেটার এখন পরিণত হয়েছে চমৎকার হ্রদে। হ্রদের চারপাশ ধরে ছোট্ট ছোট্ট লজ, ঘরবাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ীগুলো সব সাদা। গ্রীকদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে সালাদ এবং মাছ। ভালো লাগলো অনুষ্ঠানটা দেখে। খুব অল্পবয়স থেকেই আমি ভ্রমণ এবং খাওয়া বিষয়ক যেকোন কিছু পছন্দ করি। আমার একসময়কার সবচেয়ে প্রিয় প্রোগ্রাম ছিলো বিবিসি’র ফুড এন্ড ড্রিংক।
যাই হোক কি বলতে গিয়ে কি বলা শুরু করলাম। জেট ব্লুর ভালো দিকটা হচ্ছে, প্রত্যেকটা সিটের সামনে একটা করে ছোট্ট স্ক্রিন। অনেক চ্যানেল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর টিভি না দেখার কারণে, টিভি দেখে আগের মত মজা পাই না। জানালা দিয়ে মেঘ দেখা এরচেয়ে আনন্দের। আমার সিট যদিও আইলের ধারে, আমার ডান পাশের সিট দুটোয় মধ্যবয়স্ক এক আমেরিকান দম্পতি। খাচ্ছে গুজগুজ করছে, ঝিমোচ্ছে, মেঘ ভেদ করে উঁকি দেওয়া সূর্যের লালিমা দেখাচ্ছেন মিসেস মাঝে মাঝে মিস্টার কে ডেকে। আমি পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি কোণে ডিম্বাকার একটু আকাশ দেখবার সুযোগ পাচ্ছি সেই সুবাদে।
মন্তব্য
কই থাইকা কই যান?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
বিমানের আইলের কাছের সীটে বসে যাওয়া আর বুড়ো টাকলুর হাতে বন্দী তন্বীকে উঁকি দিয়ে দেখা-সমপর্যায়ের জ্বালা যন্ত্রনা ।
হযবরল নিয়মিত হবেন শিগগির আশা করি ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হযুর মাথা কি ল্যাব এর এক্সপিরিমেন্ট এর জন্য পুরা দান করে দেয়া হয়েছে!!
আমিও ভাবলাম ভ্রমন কাহিনী হবে। পরে দেখি গ্রীক রন্ধনপ্রনালী।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হযু ভাই মাত্র প্লেনে উঠল, এরপর এল এ যাবে, তারপর সান ফ্রানসিসকো। এখনো অনেক দেরী।
হযুর উপাদের লেখা পড়লাম অনেকদিন পর
সাথে উপাদেয় খাদ্য
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
নতুন মন্তব্য করুন